প্রসঙ্গ – ঘুষের পরিণতি ———- মোশারফ হোসেন
- Update Time : ০৩:১৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
- / ১২৯ Time View

ঘুষ একটি অন্যায় কাজ একথা দেশের সকলেই স্বীকার করেন। অথচ দুঃখজনক এটি
দেশের সর্বত্র বহাল তবিয়তে চালু রয়েছে। এতে অন্যায়ভাবে একজনের প্রাপ্তি এবং
অন্যজনের ক্ষতি। এতে করে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা ও সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্য
দিয়ে পুরো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বিপর্যয়ের দিকে। আমার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সব
দেখেন ও নির্দেশে ফেরেশতাগন সব লেখেন। পৃথিবীতে এর অশুভ পরিণতি এক সময়
নিজের উপর ও পরবর্তী প্রজন্মের উপর বর্তায়। তাই স্বভাবতঃই এর নগ্ন চেহারা ও
অশুভ পরিণতি নিয়ে আলোচনা এখন খুবই প্রাসঙ্গিক এবং সময়ের দাবী। ঘুষের চরিত্র
ও পরিচয় প্রায় সকলেরই জানা। এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউই এটিকে ঘুষ
বলতে রাজী না। তারা এটিকে ৫%, ১০% অফিস খরচ, বখ্শিশ, চা চক্র , এসব নামে
বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একেকটি অফিস বা প্রতিষ্ঠানে এক এক নামে এটি
এজন্যই বুঝি ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেছিলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে
উপঢৌকন হাদিয়া ছিল। এখন তা ঘুষ নামে প্রচারিত কিন্তু অহী-র জ্ঞানের ফায়ছালার
দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে একজন
কর্মচারী কিছু মাল এনে বলল, এটা আপনাদের (সরকারী) মাল, আর এটা আমাকে দেয়া
হাদিয়া। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, সে তার বাবা-মার
ঘরে বসে থাকল না কেন, তখন সে দেখতে পেত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি-না অতঃপর
এর মন্দ দিক তুলে ধরে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন। এ থেকে বুঝা যায়, জনগণ
খুশি হয়ে প্রদান করুক অথবা কাজের বিনিময় দিয়ে থাকুক, অর্পিত দায়িত্ব পালনের
বিনিময়ে বেতন-ভাতা বাদে অন্যের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয় তার
সবই ঘুষ এবং অন্যায়। ঘুষের মাধ্যমে অন্যের প্রতি আর্থিক ও মানসিক জুলুমকারী
জালেম হিসাবে অপরাধী। যারা মানুষের প্রতি জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে
বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (শূরা ৪২/৪২) । এরশাদ
হচ্ছে, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৮৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে আল্লাহর সম্পদ আত্মসাৎ
করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। এত কষ্টের
রোজগারকৃত হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত সুন্দর শরীর বেহেশতে প্রবেশ করবে না। ছোট
একটি ঘটনা লিখছি। রায়পুরার চাঁনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ওসমান গণী সাহেবের কাছে
এক কৃষক সম্পত্তি নামজারী করতে কাগজপত্র দাখিল করলে তিনি সযত্নে ফাইল
বানিয়ে ভোক্তাকে বললেন আপনি উপজেলা ভূমি অফিসে জমা দেন। পরে নথি আমার
কাছে আসলে আমি আমার কাজ শেষ করে দিব। ভোক্তা খুশি মনে কিছু টাকা দেওয়ার
চেষ্টা করলে তিনি টাকা গ্রহন না করে বললেন, ভাই এটা সরকারী দায়িত্ব। আমার
কোন টাকা লাগবে না। সরকার আমাকে বেতন দেয়। আমার অফিসে চায়ের বন্দোবস্ত না
থাকায় চা পানকরাতে পারলাম না। এই নেন পাঁচটি টাকা বাজার থেকে চা পান করে নিবেন।
আমি বললাম টাকা নিলেন না কেন? উত্তরে সে বলল আমার কবরে আমাকেই জবাব
দিতে হবে। এ কথা শুনে চুপ করে বসে রইলাম। তিনি এখন অবসরে। এই অফিসেরই
দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা শান্তিরঞ্জন দাস চাকুরী করে আজ কোটিপতি। ঘুষের
পরিণতি ও প্রতিকার মাত্র দু’টি। বিশ্বাস ও আল্লাহরভয় এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন।
কোন শাসনই কখনো নিরপেক্ষ প্রশাসন উপহার দিতে পারে না, যদি সেখানে
আল্লাহরভীতি না থাকে। কেননা দল ও ব্যক্তিভীতি কখনো মানুষকে অন্যায় থেকে
ফেরাতে পারেনা । ন্যায়বিচার ও সুশাসন দু’টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং পরস্পরের
পরিপূরক। বর্তমানে কোনটাই যথার্থভাবে নেই। আল্লাহ্ আমাদেরকে ন্যায়পথে চলার
তৌফিক দান করুন।























