০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শফিউর_রহমান_ফারাবির মুক্তি ও ন্যায়বিচারের দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি
- Update Time : ০২:৫১:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
- / ৪১৩ Time View
মাওলানা আনোয়ার আনসারী , সাধারণ সম্পাদক মাজলুমের ডাক : শফিউর রহমান ফারাবি—একটি নাম যা বাংলাদেশের ব্লগিং জগতে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিত। তবে এই পরিচিতি তাকে আজ দীর্ঘ দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারের অন্ধকারে বন্দি করে রেখেছে। তার বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোর প্রকৃতি, তদন্ত প্রক্রিয়া এবং রায় নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। অনেকেই মনে করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভুয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ঈদের মধ্যে, অর্থাৎ আজ ৩০ মার্চ ২০২৫ অথবা আগামীকালের মধ্যে তার মুক্তির দাবি উঠেছে জোরালোভাবে। এই লেখায় আমরা তার জেলে থাকার কারণগুলো, মামলার সত্যতা এবং মুক্তির দাবির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করব। ফারাবিকে অনন্ত হত্যার মামলা দেয়া হয়েছিল, অথচ তখন ফারাবি জেলে কারাবন্দী , মামলার ভিত্তি না থাকায় তাকে মামলা হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। কেন জেলে শফিউর রহমান ফারাবি? শফিউর রহমান ফারাবি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রাক্তন ছাত্র, যিনি ব্লগিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্পষ্টবাদী মতামতের জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রথম গ্রেপ্তার হয় ২০১৩ সালে, যখন তিনি ফেসবুকে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজায় ইমামকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আটক হন। এই ঘটনার পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালে এই মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আরেকটি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলাগুলো কতটা ভুয়া? শফিউর রহমান ফারাবির বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোর সত্যতা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, ২০১৩ সালের মামলায় তার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এই পোস্টগুলোর প্রকৃতি এবং তার বক্তব্য কতটা সরাসরি হুমকি হিসেবে গণ্য হতে পারে, তা নিয়ে আইনি ও নৈতিক বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি ছিল তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং তৎকালীন সরকারের বিরোধী মত দমনের একটি কৌশল। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার এই মামলায় স্পষ্ট বলে অনেক আইনজ্ঞ দাবি করেছেন। দ্বিতীয়ত, অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফারাবি ফেসবুকে অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে হত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই মামলায় তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো শারীরিক জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অন্য আসামিরা দোষ স্বীকার করলেও তারা ফারাবির নাম উল্লেখ করেনি। আদালতের রায়ে স্বীকার করা হয়েছে যে, ফারাবি অভিজিৎ রায়কে অনুসরণ বা হত্যার পরিকল্পনায় সরাসরি অংশ নেননি। তাহলে কীভাবে তাকে এই অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন দেওয়া হলো? এটি অনেকের কাছে একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তৃতীয়ত, ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেওয়া সাত বছরের সাজা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই মামলায় অভিযোগ ছিল, তিনি সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় কটূক্তি ও উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণের দুর্বলতা এবং মামলার তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আরেকটি মামলায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে আদালত বলেছে, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। এটি তার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য মামলার ভিত্তিহীনতার একটি ইঙ্গিত দেয়। কারাগারে দশক পার: ন্যায়বিচার কোথায়? শফিউর রহমান ফারাবি প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের পরিবর্তে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে বন্দি রাখা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তৎকালীন সরকারের সময়ে বিরোধী মতকে দমন করতে এ ধরনের মামলা সাধারণ ছিল। ফারাবির ক্ষেত্রে তার ব্লগিং এবং সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী অবস্থান তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। তার সমর্থকরা দাবি করেন, তিনি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন না; বরং তার লেখনী ও মতপ্রকাশই তাকে এই পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই ঈদে মুক্তির দাবি ঈদ একটি সময় যখন মানুষ ক্ষমা, সম্প্রীতি ও ন্যায়ের প্রত্যাশা করে। শফিউর রহমান ফারাবির মুক্তির দাবি এই ঈদে আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। তার সমর্থকরা বলছেন, দশ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটানোর পর এখন সময় এসেছে তার মামলাগুলো পুনর্বিবেচনা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে দায়ের করা ভুয়া মামলাগুলো প্রত্যাহার করে ফারাবিকে মুক্তি দেওয়া হোক। এই ঈদের মধ্যে, অর্থাৎ আজ বা আগামীকালের মধ্যে তার মুক্তি নিশ্চিত করা হলে তা হবে ন্যায়বিচারের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উপসংহার শফিউর রহমান ফারাবির কারাবাস একটি ব্যক্তির শাস্তির চেয়েও বেশিএটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। তার বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোর দুর্বল ভিত্তি, সাক্ষ্যের অভাব এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সম্ভাবনা এটিকে ভুয়া মামলা হিসেবে চিহ্নিত করে। এই ঈদে তার মুক্তি শুধু একজন ব্যক্তির জন্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের জন্য একটি জয় হবে। আমরা আশা করি, সরকার এই দাবির প্রতি সাড়া দেবে এবং ফারাবি তার পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ ।
মাওঃ আনোয়ার
Tag :