০১:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

ঈদে মুরগির দাম বৃদ্ধির পিছনের আসল কারণ – কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মুরগির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিঃবিপিএ

Reporter Name
  • Update Time : ০৬:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৭০ Time View

ঈদে মুরগির দাম বৃদ্ধির পিছনের আসল কারণ – কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মুরগির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিঃবিপিএ
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে এক চরম সংকটের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুরগির দাম বৃদ্ধির পেছনে যে কারণগুলো
রয়েছে, তা দেশের পোল্ট্রি খামারিদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির বাজারদর বেড়েছে, তবে এর পেছনে রয়েছে কর্পোরেট
কোম্পানির সিন্ডিকেট ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির একটি জটিল সম্পর্ক। ডিম-মুরগির দাম বাড়লেই সকল মহলে হইচই পড়ে যায় বাজারে
অভিযান,পরিচালিত হয়। অথচ ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লেও সরকার নীরব—এটা কি দ্বৈত নীতি নয়? বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ফিড
মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যদি ডিম-মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলে, তবে ফিড ও বাচ্চার
বাজারেও একইভাবে অভিযান চালিয়ে উৎপাদন খরচ কমানো উচিত। নইলে খামারিরা টিকে থাকবে কীভাবে?বাজার অস্থিরতা কাটবে না।
প্রান্তিক খামারিরা বর্তমানে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ করছেন ১৭০-১৮০ টাকা, যেখানে কর্পোরেট কোম্পানির উৎপাদন খরচ ১৩০-১৩৫
টাকা। এর ফলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩০-৪০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে ক্ষুদ্র খামারিদের। উৎপাদন খরচের এই বৈষম্যের কারণে তারা বাজারে
প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না এবং প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ছেন। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৪৫-৫৫ টাকা, তখন
১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ছিল ১৫৫ টাকা, আর বাজারদর ছিল ১৮০-১৯০ টাকা। বর্তমানে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে ৭০-৮০ টাকা
হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ১৭০-১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাজারে মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকায়, যা অনেকের কাছে ন্যায্য মনে হলেও
প্রকৃতপক্ষে প্রান্তিক খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না।
মুরগির বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পোল্ট্রি শিল্পে সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। ঈদের আগে হঠাৎ করেই বাচ্চার দাম ৪৫-৫৫ টাকা থেকে ৭০-৮০
টাকায় বেড়ে গেছে। এর ফলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে, অথচ কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তুলনামূলকভাবে কম দামে উৎপাদন করতে
পারছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য বাচ্চার দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, যা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে
রাখার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সিন্ডিকেটের আরেকটি বড় কৌশল হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন প্রান্তিক খামারিরা মুরগি উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ বাড়ান, তখন কর্পোরেট
কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েন। কিন্তু যখন প্রান্তিক খামারিরা লোকসানের কারণে উৎপাদন
কমিয়ে দেন, তখন বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে একচেটিয়া সুবিধা পায় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো, আর সাধারণ
খামারিরা টিকে থাকতে পারেন না।
ঈদুল ফিতর ও শবে কদরের সময় দেশে মাংসের চাহিদা বাড়ে, আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাচ্চা, খাদ্য ও উৎপাদন সামগ্রীর
দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে খামারিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি সাধারণ ভোক্তার ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব
খামার ও চুক্তিভিত্তিক খামারের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম দামে মুরগি উৎপাদন করলেও বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা করে।
বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রায়ই লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায়, কিন্তু খামারিদের দাবি, এটি মূলত একটি পরিকল্পিত
কারসাজি। সিন্ডিকেটের কারণে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
একসময় এই খাতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি খাত একটি গুরুতর সংকটের মুখে পড়েছে।
ঈদ উপলক্ষে মুরগির দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হলো কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট এবং প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। খামারিরা ন্যায্য মূল্য না
পাওয়ায় তারা ধীরে ধীরে এই ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছেন। যদি এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না হয়, তাহলে দেশের পোল্ট্রি শিল্পের স্থিতিশীলতা নষ্ট
হয়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। এই সংকট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
ধন্যবাদান্তে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “ঈদে মুরগির দাম বৃদ্ধির পিছনের আসল কারণ – কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মুরগির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিঃবিপিএ

  1. You really make it appear really easy together with your presentation however I to find this topic to be actually something which I feel I’d never understand. It kind of feels too complicated and very extensive for me. I am taking a look ahead on your subsequent publish, I¦ll attempt to get the grasp of it!

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

ঈদে মুরগির দাম বৃদ্ধির পিছনের আসল কারণ – কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মুরগির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিঃবিপিএ

Update Time : ০৬:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫

ঈদে মুরগির দাম বৃদ্ধির পিছনের আসল কারণ – কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মুরগির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিঃবিপিএ
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে এক চরম সংকটের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুরগির দাম বৃদ্ধির পেছনে যে কারণগুলো
রয়েছে, তা দেশের পোল্ট্রি খামারিদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির বাজারদর বেড়েছে, তবে এর পেছনে রয়েছে কর্পোরেট
কোম্পানির সিন্ডিকেট ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির একটি জটিল সম্পর্ক। ডিম-মুরগির দাম বাড়লেই সকল মহলে হইচই পড়ে যায় বাজারে
অভিযান,পরিচালিত হয়। অথচ ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লেও সরকার নীরব—এটা কি দ্বৈত নীতি নয়? বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ফিড
মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যদি ডিম-মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলে, তবে ফিড ও বাচ্চার
বাজারেও একইভাবে অভিযান চালিয়ে উৎপাদন খরচ কমানো উচিত। নইলে খামারিরা টিকে থাকবে কীভাবে?বাজার অস্থিরতা কাটবে না।
প্রান্তিক খামারিরা বর্তমানে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ করছেন ১৭০-১৮০ টাকা, যেখানে কর্পোরেট কোম্পানির উৎপাদন খরচ ১৩০-১৩৫
টাকা। এর ফলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩০-৪০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে ক্ষুদ্র খামারিদের। উৎপাদন খরচের এই বৈষম্যের কারণে তারা বাজারে
প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না এবং প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ছেন। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৪৫-৫৫ টাকা, তখন
১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ছিল ১৫৫ টাকা, আর বাজারদর ছিল ১৮০-১৯০ টাকা। বর্তমানে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে ৭০-৮০ টাকা
হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ১৭০-১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাজারে মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকায়, যা অনেকের কাছে ন্যায্য মনে হলেও
প্রকৃতপক্ষে প্রান্তিক খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না।
মুরগির বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পোল্ট্রি শিল্পে সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। ঈদের আগে হঠাৎ করেই বাচ্চার দাম ৪৫-৫৫ টাকা থেকে ৭০-৮০
টাকায় বেড়ে গেছে। এর ফলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে, অথচ কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তুলনামূলকভাবে কম দামে উৎপাদন করতে
পারছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য বাচ্চার দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, যা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে
রাখার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সিন্ডিকেটের আরেকটি বড় কৌশল হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন প্রান্তিক খামারিরা মুরগি উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ বাড়ান, তখন কর্পোরেট
কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েন। কিন্তু যখন প্রান্তিক খামারিরা লোকসানের কারণে উৎপাদন
কমিয়ে দেন, তখন বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে একচেটিয়া সুবিধা পায় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো, আর সাধারণ
খামারিরা টিকে থাকতে পারেন না।
ঈদুল ফিতর ও শবে কদরের সময় দেশে মাংসের চাহিদা বাড়ে, আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাচ্চা, খাদ্য ও উৎপাদন সামগ্রীর
দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে খামারিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি সাধারণ ভোক্তার ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব
খামার ও চুক্তিভিত্তিক খামারের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম দামে মুরগি উৎপাদন করলেও বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা করে।
বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রায়ই লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায়, কিন্তু খামারিদের দাবি, এটি মূলত একটি পরিকল্পিত
কারসাজি। সিন্ডিকেটের কারণে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
একসময় এই খাতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি খাত একটি গুরুতর সংকটের মুখে পড়েছে।
ঈদ উপলক্ষে মুরগির দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হলো কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট এবং প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। খামারিরা ন্যায্য মূল্য না
পাওয়ায় তারা ধীরে ধীরে এই ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছেন। যদি এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না হয়, তাহলে দেশের পোল্ট্রি শিল্পের স্থিতিশীলতা নষ্ট
হয়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। এই সংকট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
ধন্যবাদান্তে