০৭:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

জীবন এক বিস্ময়কর স্রোতধারা

মতামত
  • Update Time : ০৭:০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৯৫ Time View

             

মোহাম্মদ হানিফ  নোয়াখালী  প্রতিনিধি :এই পৃথিবী এক অদ্ভুত নাট্যমঞ্চ। এখানে একই সময়ে জন্ম আর মৃত্যু পাশাপাশি হেঁটে চলে। একজন মা যখন হাসপাতালের বেডে নতুন প্রাণের কান্না শুনে হাসেন, ঠিক তখনই অন্য একটি পরিবার প্রিয়জনকে হারানোর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। নতুন শিশুর প্রথম কান্না আর বৃদ্ধের শেষ নিঃশ্বাস এই দুটি দৃশ্য যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জীবন
জীবন নামের এক অলৌকিক স্রোতধারা কখনো আনন্দের ফুল ফোটায়, আবার কখনো বেদনার বালুচরে আটকে পড়ে।
খাচ্ছেন বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়। এই সবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি জীবনের গল্প আলাদা, প্রতিটি কষ্ট ভিন্ন, প্রতিটি আনন্দ স্বতন্ত্র।
এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে প্রতিটি মুহূর্তে দৃশ্যপট বদলে যায়। কেউ হয়তো চাকরির জন্য রাতের পর রাত জেগে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর কেউ হয়তো সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও একাকীত্বের যন্ত্রণায় ভুগছেন। একজন কৃষক রোদের নিচে ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন, আর একজন ধনকুবের সেই ফসল দিয়ে তৈরি খাবার খাচ্ছেন বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়। এই সবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি জীবনের গল্প আলাদা, প্রতিটি কষ্ট ভিন্ন, প্রতিটি আনন্দ স্বতন্ত্র।
আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতে এই পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে কোটি কোটি ঘটনা ঘটছে। আমরা হয়তো একে অপরের খবর রাখি না, তবুও একটি অদৃশ্য সুতায় আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। যখন আমরা কোনো ভূমিকম্প বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াই, তখন আমরা সেই অদৃশ্য বন্ধনেরই সাক্ষ্য দিই। দুনিয়ার এই চিরচঞ্চলতা আমাদের শেখায়, জীবন থেমে থাকে না, তা এগিয়ে চলে আপন ছন্দে।
এই পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যেকের কষ্ট আলাদা, প্রত্যেকের আনন্দ ভিন্ন। এক মুহূর্তে যে সন্তান তার মায়ের কোল আলোকিত করে তোলে, একই মুহূর্তে আরেকটি কোল হয়তো চিরতরে শূন্য হয়ে যায়। একজন শিক্ষার্থী যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর আনন্দে বিভোর, তখন হয়তো অন্য একজন অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এই বৈচিত্র্য, এই বৈপরীত্য, এই সহাবস্থানই জীবনকে রহস্যময় এবং শিক্ষণীয় করে তোলে।
এই জীবন আমাদের শেখায় কৃতজ্ঞতা, সহানুভূতি এবং সংবেদনশীলতা। যখন আমরা কোনো রিকশাচালককে দেখি প্রচণ্ড গরমে প্যাডেল ঠেলতে, তখন আমাদের তার কষ্ট অনুভব করা উচিত। যখন দেখি কোনো পথশিশু বৃষ্টির দিনে আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে, তখন আমাদের মনে   সংবেদনশীলতা জাগা উচিত। অন্যের দুঃখে কাঁদতে পারা এবং নিজের আনন্দে বিনয়ী হওয়া এই চলমান পৃথিবী আমাদের এই মানবিক গুণগুলো অর্জন করতে শেখায়।
তাই আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে উপলব্ধি করা। নিজের ব্যথা ও সুখের মাঝেও মনে রাখা, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে কেউ হয়তো আপন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন কিংবা আনন্দে উদ্বেল হচ্ছেন। এই অনুভবই আমাদের প্রকৃত মানুষ করে তোলে।
পরিশেষে বলবো, জীবন নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এই অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবীর বহুমুখী অনুভূতিগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করি। কারণ এই দুনিয়া, এই জীবন এ এক মহান আল্লাহর সবচেয়ে রহস্যময় সৃষ্টি। আমরা কেবল তাতে এক ক্ষণিক যাত্রী। আমাদের উচিত এই ক্ষণস্থায়ী যাত্রাকে অর্থপূর্ণ করে তোলা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই জীবনের শিক্ষা থেকে উপলব্ধি অর্জন করার তৌফিক দান করুন। তিনি যেন আমাদের সবাইকে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসিতা ছেড়ে আখেরাতের ফিকির করার তৌফিক দান করেন। আমাদের অন্তরকে আখিরাতমুখী করে দিন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ দান করুন। আমিন।

লেখক ও সাংবাদিক গুলজার হানিফ  ( মোহাম্মদ হানিফ)

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

জীবন এক বিস্ময়কর স্রোতধারা

Update Time : ০৭:০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

             

মোহাম্মদ হানিফ  নোয়াখালী  প্রতিনিধি :এই পৃথিবী এক অদ্ভুত নাট্যমঞ্চ। এখানে একই সময়ে জন্ম আর মৃত্যু পাশাপাশি হেঁটে চলে। একজন মা যখন হাসপাতালের বেডে নতুন প্রাণের কান্না শুনে হাসেন, ঠিক তখনই অন্য একটি পরিবার প্রিয়জনকে হারানোর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। নতুন শিশুর প্রথম কান্না আর বৃদ্ধের শেষ নিঃশ্বাস এই দুটি দৃশ্য যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জীবন
জীবন নামের এক অলৌকিক স্রোতধারা কখনো আনন্দের ফুল ফোটায়, আবার কখনো বেদনার বালুচরে আটকে পড়ে।
খাচ্ছেন বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়। এই সবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি জীবনের গল্প আলাদা, প্রতিটি কষ্ট ভিন্ন, প্রতিটি আনন্দ স্বতন্ত্র।
এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে প্রতিটি মুহূর্তে দৃশ্যপট বদলে যায়। কেউ হয়তো চাকরির জন্য রাতের পর রাত জেগে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর কেউ হয়তো সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও একাকীত্বের যন্ত্রণায় ভুগছেন। একজন কৃষক রোদের নিচে ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন, আর একজন ধনকুবের সেই ফসল দিয়ে তৈরি খাবার খাচ্ছেন বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়। এই সবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি জীবনের গল্প আলাদা, প্রতিটি কষ্ট ভিন্ন, প্রতিটি আনন্দ স্বতন্ত্র।
আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতে এই পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে কোটি কোটি ঘটনা ঘটছে। আমরা হয়তো একে অপরের খবর রাখি না, তবুও একটি অদৃশ্য সুতায় আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। যখন আমরা কোনো ভূমিকম্প বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াই, তখন আমরা সেই অদৃশ্য বন্ধনেরই সাক্ষ্য দিই। দুনিয়ার এই চিরচঞ্চলতা আমাদের শেখায়, জীবন থেমে থাকে না, তা এগিয়ে চলে আপন ছন্দে।
এই পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যেকের কষ্ট আলাদা, প্রত্যেকের আনন্দ ভিন্ন। এক মুহূর্তে যে সন্তান তার মায়ের কোল আলোকিত করে তোলে, একই মুহূর্তে আরেকটি কোল হয়তো চিরতরে শূন্য হয়ে যায়। একজন শিক্ষার্থী যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর আনন্দে বিভোর, তখন হয়তো অন্য একজন অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এই বৈচিত্র্য, এই বৈপরীত্য, এই সহাবস্থানই জীবনকে রহস্যময় এবং শিক্ষণীয় করে তোলে।
এই জীবন আমাদের শেখায় কৃতজ্ঞতা, সহানুভূতি এবং সংবেদনশীলতা। যখন আমরা কোনো রিকশাচালককে দেখি প্রচণ্ড গরমে প্যাডেল ঠেলতে, তখন আমাদের তার কষ্ট অনুভব করা উচিত। যখন দেখি কোনো পথশিশু বৃষ্টির দিনে আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে, তখন আমাদের মনে   সংবেদনশীলতা জাগা উচিত। অন্যের দুঃখে কাঁদতে পারা এবং নিজের আনন্দে বিনয়ী হওয়া এই চলমান পৃথিবী আমাদের এই মানবিক গুণগুলো অর্জন করতে শেখায়।
তাই আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে উপলব্ধি করা। নিজের ব্যথা ও সুখের মাঝেও মনে রাখা, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে কেউ হয়তো আপন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন কিংবা আনন্দে উদ্বেল হচ্ছেন। এই অনুভবই আমাদের প্রকৃত মানুষ করে তোলে।
পরিশেষে বলবো, জীবন নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এই অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবীর বহুমুখী অনুভূতিগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করি। কারণ এই দুনিয়া, এই জীবন এ এক মহান আল্লাহর সবচেয়ে রহস্যময় সৃষ্টি। আমরা কেবল তাতে এক ক্ষণিক যাত্রী। আমাদের উচিত এই ক্ষণস্থায়ী যাত্রাকে অর্থপূর্ণ করে তোলা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই জীবনের শিক্ষা থেকে উপলব্ধি অর্জন করার তৌফিক দান করুন। তিনি যেন আমাদের সবাইকে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসিতা ছেড়ে আখেরাতের ফিকির করার তৌফিক দান করেন। আমাদের অন্তরকে আখিরাতমুখী করে দিন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ দান করুন। আমিন।

লেখক ও সাংবাদিক গুলজার হানিফ  ( মোহাম্মদ হানিফ)