দেওপাড়া ইউনিয়নের জিওর মারিগ্রামে অবৈধ দেশি মদের রমরমা ব্যবসা, যুবসমাজ বিপথগামী—বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা
- Update Time : ০৩:১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৫৫ Time View

স্টাফ রিপোর্টার , মো: আতিকুর রহমান : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের জিওর মারিগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দেশি মদ উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়–প্রশ্রয়ে এই অবৈধ নেশা–কারবার দিন দিন বাড়ছে, আর এর হানিকর প্রভাব পড়ছে এলাকার যুবসমাজের ওপর।
রাত নামলেই শুরু হয় নেশা–কারবার
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর জিওর মারিগ্রামের নির্দিষ্ট কিছু বাড়িঘর ও ঝুপড়ি ঘরকে কেন্দ্র করে দেশি মদের কেনাবেচা চলে। দূর–দূরান্ত থেকেও নেশাগ্রস্তদের এখানে আসতে দেখা যায়। অন্ধকারকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে খুব সাবধানতার সঙ্গে চলে পুরো লেনদেন।
যুবকরা দলবদ্ধভাবে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে আড্ডা দেয় বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এতে গ্রামে এখন নৈশ–নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে।
পরিবারে অশান্তি, নষ্ট হচ্ছে তরুণদের ভবিষ্যৎ
এক অভিভাবক অভিযোগ করেন,
“আমাদের ছেলেরা কলেজে যায় না, টাকার জন্য চাপ দেয়। না দিলে রাগারাগি করে। বুঝতে পারছি—ওরা নেশার জন্য টাকা চায়।”
স্কুল–কলেজ পড়ুয়াদের একটি অংশ দেশি মদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় তাদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। কেউ কেউ নেশার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেও ভয়ে পরিবার প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছে না।
গ্রামে বাড়ছে চুরি, বখাটেপনা ও ছোটখাটো অপরাধ
স্থানীয় মানুষ বলছেন, নেশার কারণে গ্রামের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। রাতের বেলা হাঁটাচলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য সামগ্রী চুরির ঘটনাও বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
একজন বৃদ্ধ কৃষক জানান,
“আগে আমাদের গ্রামে এভাবে ভয় ছিল না। এখন রাতে বাইরে বের হতে সাহস পাই না।”
কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এলাকাবাসীর দাবি, বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও উল্লেখযোগ্য অভিযান বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে মদ ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“অভিযোগ আমরা শুনেছি। কিন্তু বড় ধরনের অভিযানের জন্য পুলিশের সহযোগিতা দরকার। কয়েকবার জানানো হলেও বড় কোনো অভিযান হয়নি।”
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ দেশি মদ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে জীবনের ঝুঁকি, লিভার বা স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি, বিষক্রিয়া এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে।
সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন অবৈধ নেশা ছড়িয়ে পড়লে তরুণ প্রজন্ম শুধু অপরাধে জড়িয়েই পড়ে না, বরং পুরো সমাজের স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়ে।
এলাকাবাসীর দাবি—অবিলম্বে অভিযান ও কঠোর ব্যবস্থা
জিওর মারিগ্রামের সাধারণ মানুষ বলেন,
“আমরা শান্তি চাই। আমাদের ছেলেদের বাঁচাতে হবে। প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
তারা দ্রুত পুলিশ প্রশাসন, মাদকদমন অধিদপ্তর ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যুগপৎ অভিযান দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তারা বিকল্পভাবে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসীকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।




















