০৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

টাকার বিরোধে প্রাণ গেল: ব্যবসায়ী রহিম হত্যা মামলায় ১২ জন আসামি, প্রধান অভিযুক্ত নান্টুসহ বাকিরা পলাতক

Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৩৪ Time View
 মোহাম্মদ হানিফ  (নোয়াখালী) প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এজাহারনামীয় আসামি মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে দিদার (৪০) কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে নিহতের স্ত্রী জোবেদা খাতুন (৫২) সোনাইমুড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০–১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।আমিশাপাড়া ইউনিয়নের আফুলশী গ্রামের মো. বেলাল হোসেন ওরফে সুদি নান্টু, তার মেয়ে মুন্নী আক্তার ও স্মৃতি আক্তার, একই গ্রামের জাহিদ, পিয়াস, শহিদুল ইসলাম, সৈকত, রাকিব ওরফে সাব্বির, মামুন, নারায়নভট্ট গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন দিদার, পাটোয়ারী বাড়ির বাবু ওরফে কাবিলা ও মুন্সী কাজী বাড়ির লিমন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, টাকার লেনদেন নিয়ে মূল অভিযুক্ত সুদি নান্টুর সঙ্গে নিহত রহিমের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সুদি নান্টুসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা আমিশাপাড়া বাজারের মিতালী বেকারির সামনে গিয়ে ব্যবসায়ী রহিমকে দোকান থেকে জোরপূর্বক বের করে।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে মুখে, ডান হাতের গোড়ালিতে এবং বুকের বাম পাশে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। পরে গুরুতর আহত রহিমকে নুর মোহাম্মদ বেডিং স্টোর নামের একটি দোকানের ভেতরে আটকে রেখে জোরপূর্বক অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন।
ঘটনার প্রতক্ষদর্শী স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দিদার জানান, ছেড়া পোশাকে আহত অবস্থায় তার দোকানের সামনে থেকে নান্টু সহ কয়েকজন ব্যক্তি আব্দুর রহিমকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখেন আহত রহিমকে একটি তোশকের দোকানের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে রহিমের বুকে লাথি দিতে থাকেন নান্টু এবং অন্ডকোষে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন তার স্ত্রী। মারধোর করতে দেখে কৌশলে নান্টু বাহিনীর হাত থেকে রহিমকে মুক্ত করেন। এসময় নান্টু বাহিনীর দাবি অনুযায়ী দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হয় আহত রহিমকে। পরে মুক্ত করে পার্শ্ববর্তী সেন্ট্রাল হসপিটালের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আমিশাপাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদ আহম্মদের জানান, বুধবার সকালে আহত অবস্থায় আব্দুর রহিমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান ওষুধ ব্যবসায়ী দিদার। এসময় আহতের মাড়ি ও ঠোট ফেটে রক্ত পড়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হামলাকারীরা সরে গেলে তিনি  বজরা দীঘিরজান মসজিদে আশ্রয় নেন এবং সেখানে অচেতন হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে স্ত্রী জোবেদা খাতুন স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথমে তাকে বজরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ নভেম্বর রাত ২টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ লক্ষ্মীপুরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারধর ও জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে আমিশাপাড়া বাজারে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, পেনাল কোডের১৪৩/৩৪২/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩০২/৩৮৬/৩৪ ধারায় মামলা (নম্বর–২৪) রুজু করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই এজাহারনামীয় আসামি মো. ইসমাইল হোসেন দিদারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

টাকার বিরোধে প্রাণ গেল: ব্যবসায়ী রহিম হত্যা মামলায় ১২ জন আসামি, প্রধান অভিযুক্ত নান্টুসহ বাকিরা পলাতক

Update Time : ১১:৫২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
 মোহাম্মদ হানিফ  (নোয়াখালী) প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এজাহারনামীয় আসামি মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে দিদার (৪০) কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে নিহতের স্ত্রী জোবেদা খাতুন (৫২) সোনাইমুড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০–১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।আমিশাপাড়া ইউনিয়নের আফুলশী গ্রামের মো. বেলাল হোসেন ওরফে সুদি নান্টু, তার মেয়ে মুন্নী আক্তার ও স্মৃতি আক্তার, একই গ্রামের জাহিদ, পিয়াস, শহিদুল ইসলাম, সৈকত, রাকিব ওরফে সাব্বির, মামুন, নারায়নভট্ট গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন দিদার, পাটোয়ারী বাড়ির বাবু ওরফে কাবিলা ও মুন্সী কাজী বাড়ির লিমন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, টাকার লেনদেন নিয়ে মূল অভিযুক্ত সুদি নান্টুর সঙ্গে নিহত রহিমের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সুদি নান্টুসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা আমিশাপাড়া বাজারের মিতালী বেকারির সামনে গিয়ে ব্যবসায়ী রহিমকে দোকান থেকে জোরপূর্বক বের করে।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে মুখে, ডান হাতের গোড়ালিতে এবং বুকের বাম পাশে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। পরে গুরুতর আহত রহিমকে নুর মোহাম্মদ বেডিং স্টোর নামের একটি দোকানের ভেতরে আটকে রেখে জোরপূর্বক অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন।
ঘটনার প্রতক্ষদর্শী স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দিদার জানান, ছেড়া পোশাকে আহত অবস্থায় তার দোকানের সামনে থেকে নান্টু সহ কয়েকজন ব্যক্তি আব্দুর রহিমকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখেন আহত রহিমকে একটি তোশকের দোকানের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে রহিমের বুকে লাথি দিতে থাকেন নান্টু এবং অন্ডকোষে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন তার স্ত্রী। মারধোর করতে দেখে কৌশলে নান্টু বাহিনীর হাত থেকে রহিমকে মুক্ত করেন। এসময় নান্টু বাহিনীর দাবি অনুযায়ী দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হয় আহত রহিমকে। পরে মুক্ত করে পার্শ্ববর্তী সেন্ট্রাল হসপিটালের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আমিশাপাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদ আহম্মদের জানান, বুধবার সকালে আহত অবস্থায় আব্দুর রহিমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান ওষুধ ব্যবসায়ী দিদার। এসময় আহতের মাড়ি ও ঠোট ফেটে রক্ত পড়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হামলাকারীরা সরে গেলে তিনি  বজরা দীঘিরজান মসজিদে আশ্রয় নেন এবং সেখানে অচেতন হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে স্ত্রী জোবেদা খাতুন স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথমে তাকে বজরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ নভেম্বর রাত ২টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ লক্ষ্মীপুরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারধর ও জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে আমিশাপাড়া বাজারে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, পেনাল কোডের১৪৩/৩৪২/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩০২/৩৮৬/৩৪ ধারায় মামলা (নম্বর–২৪) রুজু করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই এজাহারনামীয় আসামি মো. ইসমাইল হোসেন দিদারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।