০১:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

চড়া সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব: নান্টু বাহিনীর নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

Reporter Name
  • Update Time : ০১:৫০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৬৯ Time View
মোহাম্মদ হানিফ ,নোয়াখালী প্রতিনিধি : 
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। দিনে-দুপুরে জনসম্মুখে মারধোর শেষে রক্তাক্ত অবস্থায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুটি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর থেকে উপজেলায় চলছে নানা আলোচনা।
সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে গত বুধবার(২৬ নভেম্বর) সকালে আমিশাপাড়া বাজারের আব্দুল মতিন ভবন সংলগ্ন রাস্তার ওপরে তাকে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দিদার কৌশলে নান্টু বাহিনী হাত থেকে রহিমকে উদ্ধার করেন। এসময় নান্টুর থেকে মুক্ত হওয়ার শর্তে দুটি সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হন আব্দুর রহিম।ওষুধ ব্যবসায়ী তাকে আমিশাপাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাদেন। পরবর্তীতে আব্দুর রহিম নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ভিডিও তথ্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আফুলশী গ্রামের বাসিন্দা সুদি নান্টু চড়া সুদে ঋণ দেয়। আমিশাপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে এর আগেও মারধর করেছেন নান্টু। নিহত আব্দুর রহিম দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলে নান্টুর থেকে। টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে কয়েকদিন পূর্বে আব্দুর রহিম তার দোকানের ওপরের বাসায় নিয়ে নান্টুকে মারধোর করে। এরই জেরে গত বুধবার সকালে নান্টু তার স্ত্রী, মেয়ে রিমা, মেয়ের জামাই সাদ্দাম হোসেন রাজু, আফুলশী গ্রামের সিয়াম, সাওন, জাহিদ, পিংকন, মামুন, সাব্বির সহ ১০-১৫ জনকে নিয়ে আমিশাপাড়া বাজারের মিথিলা বেকারিতে গিয়ে আব্দুল রহিমের ওপরে হামলা চালায়। চার দফা মারধোর শেষে সিএনজিতে উঠিয়ে নান্টুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ঘটনার প্রতক্ষদর্শী স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দিদার জানান, ছেড়া পোশাকে আহত অবস্থায় তার দোকানের সামনে থেকে নান্টু সহ কয়েকজন ব্যক্তি আব্দুর রহিমকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখেন আহত রহিমকে একটি তোশকের দোকানের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে রহিমের বুকে লাথি দিতে থাকেন নান্টু এবং অন্ডকোষে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন তার স্ত্রী। মারধোর করতে দেখে কৌশলে নান্টু বাহিনীর হাত থেকে রহিমকে মুক্ত করেন। এসময় নান্টু বাহিনীর দাবি অনুযায়ী দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হয় আহত রহিমকে। পরে মুক্ত করে পার্শ্ববর্তী সেন্ট্রাল হসপিটালের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আমিশাপাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদ আহম্মদের জানান, বুধবার সকালে আহত অবস্থায় আব্দুর রহিমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান ওষুধ ব্যবসায়ী দিদার। এসময় আহতের মাড়ি ও ঠোট ফেটে রক্ত পড়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানা যায়, নিহত ব্যবসায়ী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ উল্যার ছেলে। তিনি সাবেক বিডিআর সদস্য ছিলেন।
পিলখানা ট্র্যাজেডির সময় আব্দুর রহিম সরাইলে দায়িত্ব পালন করতেন। ওই ঘটনার পর তিনি চাকরিচ্যুত হন এবং ৯ মাস কারাভোগ করেন। পরে আরেক সাবেক বিজিবি (তৎকালীন বিডিআর) সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে আমিশাপাড়া বাজারে বেকারি ব্যবসা শুরু করেন। গতকাল জানাজা শেষ আব্দুর রহিমের মরদেহ লক্ষ্মীপুর মর্গে রাখা হয়েছিলো। দুপুরে পোস্টমর্টেম শেষে লাশ বাড়িতে আনা হয়।
এবিষয়ে কথা হলে নিহতের ছেলে মিনহাজ জানান, শক্রবার(২৮ নভেম্বর) বিকালে আসরবাদ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তবে মামলার বিষয়ে কোন তথ্য দেননি তিনি।
লক্ষ্মীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ঝলক মোহন্ত জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার  নোয়াখালী থেকে একটি লাশ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামে দাফনের জন্য নিয়ে আসা হয়। জানাজা শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। সকালে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে- ঘটনাস্থল সোনাইমুড়ী থানায় মামলা হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোরশেদ আলম ও
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনির হোসেনের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সোনাইমুড়ী থানার ডিউটি অফিসার।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

চড়া সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব: নান্টু বাহিনীর নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

Update Time : ০১:৫০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
মোহাম্মদ হানিফ ,নোয়াখালী প্রতিনিধি : 
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। দিনে-দুপুরে জনসম্মুখে মারধোর শেষে রক্তাক্ত অবস্থায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুটি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর থেকে উপজেলায় চলছে নানা আলোচনা।
সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে গত বুধবার(২৬ নভেম্বর) সকালে আমিশাপাড়া বাজারের আব্দুল মতিন ভবন সংলগ্ন রাস্তার ওপরে তাকে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দিদার কৌশলে নান্টু বাহিনী হাত থেকে রহিমকে উদ্ধার করেন। এসময় নান্টুর থেকে মুক্ত হওয়ার শর্তে দুটি সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হন আব্দুর রহিম।ওষুধ ব্যবসায়ী তাকে আমিশাপাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাদেন। পরবর্তীতে আব্দুর রহিম নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ভিডিও তথ্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আফুলশী গ্রামের বাসিন্দা সুদি নান্টু চড়া সুদে ঋণ দেয়। আমিশাপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে এর আগেও মারধর করেছেন নান্টু। নিহত আব্দুর রহিম দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলে নান্টুর থেকে। টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে কয়েকদিন পূর্বে আব্দুর রহিম তার দোকানের ওপরের বাসায় নিয়ে নান্টুকে মারধোর করে। এরই জেরে গত বুধবার সকালে নান্টু তার স্ত্রী, মেয়ে রিমা, মেয়ের জামাই সাদ্দাম হোসেন রাজু, আফুলশী গ্রামের সিয়াম, সাওন, জাহিদ, পিংকন, মামুন, সাব্বির সহ ১০-১৫ জনকে নিয়ে আমিশাপাড়া বাজারের মিথিলা বেকারিতে গিয়ে আব্দুল রহিমের ওপরে হামলা চালায়। চার দফা মারধোর শেষে সিএনজিতে উঠিয়ে নান্টুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ঘটনার প্রতক্ষদর্শী স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দিদার জানান, ছেড়া পোশাকে আহত অবস্থায় তার দোকানের সামনে থেকে নান্টু সহ কয়েকজন ব্যক্তি আব্দুর রহিমকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দোকান থেকে বেরিয়ে দেখেন আহত রহিমকে একটি তোশকের দোকানের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে রহিমের বুকে লাথি দিতে থাকেন নান্টু এবং অন্ডকোষে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন তার স্ত্রী। মারধোর করতে দেখে কৌশলে নান্টু বাহিনীর হাত থেকে রহিমকে মুক্ত করেন। এসময় নান্টু বাহিনীর দাবি অনুযায়ী দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হয় আহত রহিমকে। পরে মুক্ত করে পার্শ্ববর্তী সেন্ট্রাল হসপিটালের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আমিশাপাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদ আহম্মদের জানান, বুধবার সকালে আহত অবস্থায় আব্দুর রহিমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান ওষুধ ব্যবসায়ী দিদার। এসময় আহতের মাড়ি ও ঠোট ফেটে রক্ত পড়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানা যায়, নিহত ব্যবসায়ী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ উল্যার ছেলে। তিনি সাবেক বিডিআর সদস্য ছিলেন।
পিলখানা ট্র্যাজেডির সময় আব্দুর রহিম সরাইলে দায়িত্ব পালন করতেন। ওই ঘটনার পর তিনি চাকরিচ্যুত হন এবং ৯ মাস কারাভোগ করেন। পরে আরেক সাবেক বিজিবি (তৎকালীন বিডিআর) সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে আমিশাপাড়া বাজারে বেকারি ব্যবসা শুরু করেন। গতকাল জানাজা শেষ আব্দুর রহিমের মরদেহ লক্ষ্মীপুর মর্গে রাখা হয়েছিলো। দুপুরে পোস্টমর্টেম শেষে লাশ বাড়িতে আনা হয়।
এবিষয়ে কথা হলে নিহতের ছেলে মিনহাজ জানান, শক্রবার(২৮ নভেম্বর) বিকালে আসরবাদ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তবে মামলার বিষয়ে কোন তথ্য দেননি তিনি।
লক্ষ্মীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ঝলক মোহন্ত জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার  নোয়াখালী থেকে একটি লাশ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামে দাফনের জন্য নিয়ে আসা হয়। জানাজা শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। সকালে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে- ঘটনাস্থল সোনাইমুড়ী থানায় মামলা হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোরশেদ আলম ও
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনির হোসেনের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সোনাইমুড়ী থানার ডিউটি অফিসার।