০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্য: বাঁশখালীর বখশী হামিদ মসজিদ – মোঘল স্থাপত্যের জীবন্ত দলিল

Reporter Name
  • Update Time : ০২:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩২ Time View
​আনিছুর রহমান ,নিজস্ব (প্রতিবেদক) চট্টগ্রাম:  চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর ইলশা গ্রামে প্রায় ৪৫৪ বছরের পুরনো এক ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে – যার নাম বখশী হামিদ মসজিদ। প্রাচীন এই তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি কেবল একটি উপাসনালয় নয়, এটি মোঘল স্থাপত্যরীতি, স্থানীয় ইতিহাস ও মুসলিম সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতীক। অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে এটি আজও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
​শিলালিপি থেকে জানা যায় নির্মাণের সঠিক সময়
​মসজিদের মূল প্রবেশপথের ওপরে স্থাপিত একটি আরবি শিলালিপি থেকে এর নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়। শিলালিপি অনুসারে, মসজিদটি ৯ রমজান ৯৭৫ হিজরি (৯ মার্চ ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দ) তারিখে কররাণী রাজবংশের শাসক সুলাইমান খাঁন কররাণীর আমলে নির্মিত হয়েছিল।
​যদিও শিলালিপিতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুলতান সুলাইমান কররানীর নাম উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় জনসাধারণের কাছে এটি বখশী হামিদ মসজিদ নামেই সমধিক পরিচিত। এই নামকরণের পেছনে দুটি প্রধান জনশ্রুতি প্রচলিত আছে:
​মুহাম্মদ আবদুল হামিদ (বখশী) স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন এলাকার কালেক্টর বা করগ্রহীতা (ফার্সি শব্দ ‘বখশী’) এবং একজন প্রভাবশালী প্রশাসক ও সুফী ধর্মপ্রচারক। ইসলাম প্রচার এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি এই মসজিদ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাঁর নামেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে।
সুলতান সুলাইমান কররানী, অপর এক জনশ্রুতি অনুসারে, গৌড় থেকে আগত সুফী দরবেশ সুলাইমান ছিলেন একজন সাধক জ্ঞানী ব্যক্তি, যাকে স্থানীয়রা সম্মানের সঙ্গে ‘সুলতান’ বলে ডাকতেন। তিনিই মসজিদ নির্মাণের মূল উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
​মোঘল স্থাপত্যের অনবদ্য নিদর্শন ​ইট, পাথর ও সুরকি দিয়ে নির্মিত বখশী হামিদ মসজিদটি মোঘল স্থাপত্য কৌশলে এক অনন্য উদাহরণ। এর প্রধান স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলো এর নির্মাণশৈলীকে বিশেষত্ব দান করেছে। এটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি স্থাপনা। মাঝের গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ থেকে অপেক্ষাকৃত বড় এবং সকল গম্বুজের শীর্ষভাগ সুন্দর পদ্ম ও কলসচূড়া দ্বারা সুসজ্জিত। কেন্দ্রীয় গম্বুজের ভেতরের দিকে পাতা ও প্রস্ফুটিত সংঘবদ্ধ রোজেটের চমৎকার অলংকরণ দেখা যায়। পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশপথ রয়েছে, যা স্থাপত্যে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
​স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মসজিদের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে ঢাকার শায়েস্তা খান মসজিদ এবং নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদের স্থাপত্যরীতির যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়।
​বর্তমান গুরুত্ব ও কমপ্লেক্স ​ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই মসজিদটি বর্তমানে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে রয়েছে। ১৯৭৫ সালে এটি ‘প্রটেকটেড মনুমেন্ট এন্ড মৌন্ডস ইন বাংলাদেশ’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
​বর্তমানে মসজিদটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল ‘দারুল কোরআন মুহাম্মদিয়া শাহ বখশী হামিদ কমপ্লেক্স’, যেখানে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে। মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে প্রাচীনকালের একটি সুবিশাল দীঘি, যার জল আজও মুসল্লিদের ওজু করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
​প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে নামাজ আদায় ও ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দে
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্য: বাঁশখালীর বখশী হামিদ মসজিদ – মোঘল স্থাপত্যের জীবন্ত দলিল

Update Time : ০২:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
​আনিছুর রহমান ,নিজস্ব (প্রতিবেদক) চট্টগ্রাম:  চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর ইলশা গ্রামে প্রায় ৪৫৪ বছরের পুরনো এক ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে – যার নাম বখশী হামিদ মসজিদ। প্রাচীন এই তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি কেবল একটি উপাসনালয় নয়, এটি মোঘল স্থাপত্যরীতি, স্থানীয় ইতিহাস ও মুসলিম সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতীক। অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে এটি আজও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
​শিলালিপি থেকে জানা যায় নির্মাণের সঠিক সময়
​মসজিদের মূল প্রবেশপথের ওপরে স্থাপিত একটি আরবি শিলালিপি থেকে এর নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়। শিলালিপি অনুসারে, মসজিদটি ৯ রমজান ৯৭৫ হিজরি (৯ মার্চ ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দ) তারিখে কররাণী রাজবংশের শাসক সুলাইমান খাঁন কররাণীর আমলে নির্মিত হয়েছিল।
​যদিও শিলালিপিতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুলতান সুলাইমান কররানীর নাম উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় জনসাধারণের কাছে এটি বখশী হামিদ মসজিদ নামেই সমধিক পরিচিত। এই নামকরণের পেছনে দুটি প্রধান জনশ্রুতি প্রচলিত আছে:
​মুহাম্মদ আবদুল হামিদ (বখশী) স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন এলাকার কালেক্টর বা করগ্রহীতা (ফার্সি শব্দ ‘বখশী’) এবং একজন প্রভাবশালী প্রশাসক ও সুফী ধর্মপ্রচারক। ইসলাম প্রচার এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি এই মসজিদ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাঁর নামেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে।
সুলতান সুলাইমান কররানী, অপর এক জনশ্রুতি অনুসারে, গৌড় থেকে আগত সুফী দরবেশ সুলাইমান ছিলেন একজন সাধক জ্ঞানী ব্যক্তি, যাকে স্থানীয়রা সম্মানের সঙ্গে ‘সুলতান’ বলে ডাকতেন। তিনিই মসজিদ নির্মাণের মূল উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
​মোঘল স্থাপত্যের অনবদ্য নিদর্শন ​ইট, পাথর ও সুরকি দিয়ে নির্মিত বখশী হামিদ মসজিদটি মোঘল স্থাপত্য কৌশলে এক অনন্য উদাহরণ। এর প্রধান স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলো এর নির্মাণশৈলীকে বিশেষত্ব দান করেছে। এটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি স্থাপনা। মাঝের গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ থেকে অপেক্ষাকৃত বড় এবং সকল গম্বুজের শীর্ষভাগ সুন্দর পদ্ম ও কলসচূড়া দ্বারা সুসজ্জিত। কেন্দ্রীয় গম্বুজের ভেতরের দিকে পাতা ও প্রস্ফুটিত সংঘবদ্ধ রোজেটের চমৎকার অলংকরণ দেখা যায়। পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশপথ রয়েছে, যা স্থাপত্যে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
​স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মসজিদের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে ঢাকার শায়েস্তা খান মসজিদ এবং নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদের স্থাপত্যরীতির যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়।
​বর্তমান গুরুত্ব ও কমপ্লেক্স ​ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই মসজিদটি বর্তমানে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে রয়েছে। ১৯৭৫ সালে এটি ‘প্রটেকটেড মনুমেন্ট এন্ড মৌন্ডস ইন বাংলাদেশ’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
​বর্তমানে মসজিদটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল ‘দারুল কোরআন মুহাম্মদিয়া শাহ বখশী হামিদ কমপ্লেক্স’, যেখানে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে। মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে প্রাচীনকালের একটি সুবিশাল দীঘি, যার জল আজও মুসল্লিদের ওজু করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
​প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে নামাজ আদায় ও ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দে