০৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

রাজনীতির নতুন মেরুকরণ: সোনাইমুড়ীতে বিএনপি-জামায়াতের রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব!

Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৬২ Time View
মোহাম্মদ  হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি :  নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী এখন শুধু একটি স্থানীয় সংঘাতের কেন্দ্র নয়, এটি বিএনপি ও জামায়াতের দীর্ঘ  বছরের পুরোনো রাজনৈতিক জোটের ঐতিহাসিক ভাঙনের এক রক্তক্ষয়ী দলিল। একসময়ের এক পতাকার নিচে থাকা এই দুই দল এখন স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে সহিংস সংঘাতে লিপ্ত, যার উত্তাপ গড়িয়েছে জাতীয় রাজনীতি পর্যন্ত। দেওটি ইউনিয়নে শুরু হওয়া হুমকি, হামলা ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পালা এখন কার্যত রাজনৈতিক যুদ্ধে’ রূপ নিয়েছে, যা দেশের রাজনীতিতে এক নতুন এবং বিপজ্জনক মেরুকরণের জন্ম দিচ্ছে।
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা আন্দোলন, সংগ্রাম, জেল-জুলুম এবং দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন একসঙ্গে, তারা এখন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দাঁড়িয়েছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। একসময় ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের দাবিতে যারা ছিল একাট্টা  আজ ভোটের মাঠ ও সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের সম্পর্ক তিক্ততা থেকে পরিণত হয়েছে খোলাখুলি শত্রুতায়। কেন্দ্রীয় জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই সম্পর্কের এই ফাটল তৈরি হচ্ছিল, কিন্তু সোনাইমুড়ীতে তা প্রথম সহিংস বিস্ফোরণ ঘটালো।এটাই কি সেই ভাঙন, যা জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ আনবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনাইমুড়ীর এই সংঘাত দেশের বিরোধী রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত।
 দেওটি ইউনিয়নকে ঘিরে। জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রনিকে হত্যার হুমকির অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপি নেতারা প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল এবং একাধিক কর্মসূচি পালন করে জামায়াতকে সরাসরি ‘অন্তর্ঘাতকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দিদার হোসেন দিদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুল আলমের কঠোর মন্তব্য: একসময় তারা আমাদের মিত্র ছিল, এখন প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নেমেছে। আমরা দীর্ঘ সময় একসাথে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে রাজাকার বলে গালি খেয়েছি আমরা।জামায়াত এখন বিএনপির রাজনীতিতে অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ, গত ২৯ অক্টোবর উত্তর দেওটি গ্রামে মহিলা জামায়াতের কোরআন তালিম প্রোগ্রামে বিএনপি কর্মীরা হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছে এবং মহিলাদের ওপর নির্যাতনের চেষ্টা করেছে। মহিলা জামায়াতের সভানেত্রী ফাতেমা বেগমের অভিযোগের পর, মহিলা জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর পাশাপাশি বিএনপি কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তি ও উসকানিমূলক পোস্ট দুই দলের কর্মীদের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিএনপির অভিযোগ. জামায়াত কর্মীর পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রনিকে হত্যার হুমকি। জামায়াত এখন ‘অন্তর্ঘাতকারী’ ও প্রতিপক্ষ । জামায়াতের অভিযোগ বিএনপি কর্মীদের পক্ষ থেকে মহিলা জামায়াতের কোরআন তালিম প্রোগ্রামে হামলা, ভাঙচুর ও হেনস্তা। বিএনপি জামায়াতের উত্থান রুখতে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ভোটের মাঠের দখলদারি
এই সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে একই রাজনৈতিক স্পেস এবং ভোটের মাঠের দখলদারিত্বের লড়াই। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে জোট ভেঙে যাওয়ার পর উভয় দলই এখন এককভাবে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।একসময়ের মিত্র হওয়ায় তাদের ভোটার ভিত্তি প্রায় একই, ফলে সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ ও ভোট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা উভয় দলকে অনিবার্যভাবে প্রতিপক্ষ করে তুলেছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ আলম যখন বলেন, জামায়াত এখন বিএনপির কর্মীদের টার্গেট করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, তখন উপজেলা জামায়াতের আমির হানিফ মোল্লা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি কর্মীরা আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রোগ্রামে বাধা দিচ্ছে। তারা জামায়াতের উত্থান রুখতে মাঠে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। দুই পক্ষের এই বক্তব্যই প্রমাণ করে, তারা এখন আর মিত্র নয় তারা একই মাঠে বিপরীতমুখী শক্তি।
সোনাইমুড়ীর এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় যে, বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাঙন এখন কেবল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং মাঠ পর্যায়ে সহিংস রক্তক্ষয়ী বিভাজনে রূপ নিচ্ছে। এই সংঘাতের ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং এটি জাতীয় পর্যায়ে বিরোধী রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সংঘাতের ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখা দেবে কিনা, সেই বিষয়ে এখন দেখার বিষয় ?
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম উভয় পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এই সংঘাতের রেশ উপজেলা ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ ১৭ বছরের রাজনৈতিক পথচলার পর এমন সহিংস সংঘাত তাদের সম্পর্কের ভাঙনকে আরও গভীর ও স্থায়ী করে তুলবে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

রাজনীতির নতুন মেরুকরণ: সোনাইমুড়ীতে বিএনপি-জামায়াতের রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব!

Update Time : ০৮:০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
মোহাম্মদ  হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি :  নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী এখন শুধু একটি স্থানীয় সংঘাতের কেন্দ্র নয়, এটি বিএনপি ও জামায়াতের দীর্ঘ  বছরের পুরোনো রাজনৈতিক জোটের ঐতিহাসিক ভাঙনের এক রক্তক্ষয়ী দলিল। একসময়ের এক পতাকার নিচে থাকা এই দুই দল এখন স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে সহিংস সংঘাতে লিপ্ত, যার উত্তাপ গড়িয়েছে জাতীয় রাজনীতি পর্যন্ত। দেওটি ইউনিয়নে শুরু হওয়া হুমকি, হামলা ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পালা এখন কার্যত রাজনৈতিক যুদ্ধে’ রূপ নিয়েছে, যা দেশের রাজনীতিতে এক নতুন এবং বিপজ্জনক মেরুকরণের জন্ম দিচ্ছে।
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা আন্দোলন, সংগ্রাম, জেল-জুলুম এবং দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন একসঙ্গে, তারা এখন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দাঁড়িয়েছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। একসময় ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের দাবিতে যারা ছিল একাট্টা  আজ ভোটের মাঠ ও সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের সম্পর্ক তিক্ততা থেকে পরিণত হয়েছে খোলাখুলি শত্রুতায়। কেন্দ্রীয় জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই সম্পর্কের এই ফাটল তৈরি হচ্ছিল, কিন্তু সোনাইমুড়ীতে তা প্রথম সহিংস বিস্ফোরণ ঘটালো।এটাই কি সেই ভাঙন, যা জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ আনবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনাইমুড়ীর এই সংঘাত দেশের বিরোধী রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত।
 দেওটি ইউনিয়নকে ঘিরে। জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রনিকে হত্যার হুমকির অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপি নেতারা প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল এবং একাধিক কর্মসূচি পালন করে জামায়াতকে সরাসরি ‘অন্তর্ঘাতকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দিদার হোসেন দিদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুল আলমের কঠোর মন্তব্য: একসময় তারা আমাদের মিত্র ছিল, এখন প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নেমেছে। আমরা দীর্ঘ সময় একসাথে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে রাজাকার বলে গালি খেয়েছি আমরা।জামায়াত এখন বিএনপির রাজনীতিতে অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ, গত ২৯ অক্টোবর উত্তর দেওটি গ্রামে মহিলা জামায়াতের কোরআন তালিম প্রোগ্রামে বিএনপি কর্মীরা হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছে এবং মহিলাদের ওপর নির্যাতনের চেষ্টা করেছে। মহিলা জামায়াতের সভানেত্রী ফাতেমা বেগমের অভিযোগের পর, মহিলা জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর পাশাপাশি বিএনপি কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তি ও উসকানিমূলক পোস্ট দুই দলের কর্মীদের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিএনপির অভিযোগ. জামায়াত কর্মীর পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রনিকে হত্যার হুমকি। জামায়াত এখন ‘অন্তর্ঘাতকারী’ ও প্রতিপক্ষ । জামায়াতের অভিযোগ বিএনপি কর্মীদের পক্ষ থেকে মহিলা জামায়াতের কোরআন তালিম প্রোগ্রামে হামলা, ভাঙচুর ও হেনস্তা। বিএনপি জামায়াতের উত্থান রুখতে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ভোটের মাঠের দখলদারি
এই সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে একই রাজনৈতিক স্পেস এবং ভোটের মাঠের দখলদারিত্বের লড়াই। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে জোট ভেঙে যাওয়ার পর উভয় দলই এখন এককভাবে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।একসময়ের মিত্র হওয়ায় তাদের ভোটার ভিত্তি প্রায় একই, ফলে সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ ও ভোট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা উভয় দলকে অনিবার্যভাবে প্রতিপক্ষ করে তুলেছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ আলম যখন বলেন, জামায়াত এখন বিএনপির কর্মীদের টার্গেট করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, তখন উপজেলা জামায়াতের আমির হানিফ মোল্লা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি কর্মীরা আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রোগ্রামে বাধা দিচ্ছে। তারা জামায়াতের উত্থান রুখতে মাঠে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। দুই পক্ষের এই বক্তব্যই প্রমাণ করে, তারা এখন আর মিত্র নয় তারা একই মাঠে বিপরীতমুখী শক্তি।
সোনাইমুড়ীর এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় যে, বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাঙন এখন কেবল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং মাঠ পর্যায়ে সহিংস রক্তক্ষয়ী বিভাজনে রূপ নিচ্ছে। এই সংঘাতের ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং এটি জাতীয় পর্যায়ে বিরোধী রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সংঘাতের ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখা দেবে কিনা, সেই বিষয়ে এখন দেখার বিষয় ?
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম উভয় পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এই সংঘাতের রেশ উপজেলা ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ ১৭ বছরের রাজনৈতিক পথচলার পর এমন সহিংস সংঘাত তাদের সম্পর্কের ভাঙনকে আরও গভীর ও স্থায়ী করে তুলবে।