রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা : এক কিংবদন্তির স্মৃতিচারণ
- Update Time : ০৩:৪০:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
- / ৪১ Time View

(৪ নভেম্বর) রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, কিংবদন্তি রাজনীতিক, খ্যাতিমান ক্রীড়া সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণে কাজ করা এই কালজয়ী ব্যক্তিত্বকে আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে পুরো জাতি।
তিনি ছিলেন একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, ক্রীড়ানুরাগী এবং মানবিক এক নেতা — যাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে ফুটে উঠেছিল দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা।
মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক
১৯৭১ সালে এক তরুণ ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদেক হোসেন খোকা, একদিন মাকে না জানিয়েই পা বাড়ান মুক্তির যুদ্ধে।
ভারতের আগরতলায় কর্নেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে কুমিল্লার সালদা নদী ও মন্দবাগ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
পরবর্তীতে তাঁকে কমান্ডারের দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়— যেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
একাত্তরের অক্টোবরে ঢাকায় পাকিস্তানি তথ্য অধিদপ্তর কার্যালয় উড়িয়ে দেওয়া, পশ্চিম পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন অফিস, বিমান বাহিনীর রিক্রুটিং অফিস এবং পিলখানার গেটে দুঃসাহসিক অভিযান—সব কিছুরই নেতৃত্বে ছিলেন এই সাহসী যোদ্ধা।
ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনীতির শীর্ষে
১৯৬৮-৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী গণআন্দোলনে তরুণ সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন অগ্রভাগের সৈনিক।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পরিচালিত ছাত্র আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৭ সালে বিপুল ভোটে ঢাকা পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নব্বইয়ের দশকে তিনি হয়ে ওঠেন এক অপ্রতিরোধ্য নাম।
সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও মেয়র
দীর্ঘ নয় বছরের সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা — এবং তাঁকে পরাজিত করে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন খোকা।
এরপর পান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, যেখানে তিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিকতার সূচনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক
১৯৭১ সালে এক তরুণ ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদেক হোসেন খোকা, একদিন মাকে না জানিয়েই পা বাড়ান মুক্তির যুদ্ধে।
ভারতের আগরতলায় কর্নেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে কুমিল্লার সালদা নদী ও মন্দবাগ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
পরবর্তীতে তাঁকে কমান্ডারের দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়— যেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
একাত্তরের অক্টোবরে ঢাকায় পাকিস্তানি তথ্য অধিদপ্তর কার্যালয় উড়িয়ে দেওয়া, পশ্চিম পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন অফিস, বিমান বাহিনীর রিক্রুটিং অফিস এবং পিলখানার গেটে দুঃসাহসিক অভিযান—সব কিছুরই নেতৃত্বে ছিলেন এই সাহসী যোদ্ধা।
ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনীতির শীর্ষে
১৯৬৮-৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী গণআন্দোলনে তরুণ সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন অগ্রভাগের সৈনিক।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পরিচালিত ছাত্র আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৭ সালে বিপুল ভোটে ঢাকা পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নব্বইয়ের দশকে তিনি হয়ে ওঠেন এক অপ্রতিরোধ্য নাম।
সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও মেয়র==
দীর্ঘ নয় বছরের সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা — এবং তাঁকে পরাজিত করে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন খোকা।
এরপর পান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, যেখানে তিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিকতার সূচনা করেন।
১৯৯৬ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে দায়িত্ব নেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে। সরকারের নিপীড়নের সময়ও তিনি রাজপথে ছিলেন কর্মীদের সঙ্গে।
২০০১ সালে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পান মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে, এবং সেখানে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি হন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।
তাঁর মেয়াদকালে নগর পরিসেবায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।
গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের কাজ শুরু, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের নান্দনিক ফোয়ারা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনদের নামে সড়ক ও স্থাপনার নামকরণ — তাঁর সময়েই বাস্তবায়িত হয় এসব ঐতিহাসিক উদ্যোগ।
মানবিক ও কর্মীবান্ধব নেতা
সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন এক জনমানুষের নেতা।
নেতা-কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছেন, কর্মীদের পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে গেছেন নিজে।
বাংলাদেশের গর্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নগরবাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগও ছিল তাঁর।
বাংলার এই বীর ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হলে লক্ষ জনতা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান — যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল সম্মান।===
স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
আজ তাঁর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজধানীর জুরাইন গোরস্তানে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি, বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা এক বিবৃতিতে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন—
“জাতির এই গভীর সংকটে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার বেশি প্রয়োজন ছিলো। তিনি ছিলেন সাহস, সততা ও আদর্শের প্রতীক।”
ঈসা আরও স্মৃতিচারণ করে বলেন—
“তাঁর জীবদ্দশায় আমি ‘মায়ের ডাক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সানজিদা ইসলাম তুলিদের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে অনেক স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছিলেন। মেয়র থাকাকালীন সময়ে পিএস মনির ও এপিএস মান্না ভাইয়ের মাধ্যমে প্রায়ই যোগাযোগ ছিল। একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি নিজ গাড়ি থামিয়ে আমাকে ডাকতেন উপস্থাপনার জন্য। মহাখালী টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ফোয়ারার উদ্বোধন আমি উপস্থাপনা করেছিলাম তাঁর উপস্থিতিতে।”
তিনি আরও জানান—
“ফ্যাসিবাদের কঠিন সময়েও বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির পক্ষ থেকে আমি প্রথম এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকাকে মরণোত্তর স্মারক সম্মাননা প্রদান করি, যা তাঁর পুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন গ্রহণ করেন।”
সাদেক হোসেন খোকা শুধু একজন রাজনীতিবিদ বা মেয়র ছিলেন না — তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা, যিনি দেশকে ভালোবেসেছিলেন কর্মে, নেতৃত্বে, ত্যাগে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর নাম চিরকাল উচ্চারিত হবে এক অনন্য মর্যাদায়।
মানুষের ভালোবাসা, কর্মীদের শ্রদ্ধা আর ইতিহাসের পাতায় তিনি অমর হয়ে থাকবেন।
মো.মঞ্জুর হোসেন ঈসা
চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি।






















