০১:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী (রহ:) সংক্ষিপ্ত জীবনী

বিশেষ প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:৫৭:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৫৮ Time View
জন্ম : ১মার্চ১৯৪৭ইং নরসিংদী জেলার  শিবপুর থানার অন্তর্গত পূর্ব সৈয়দ নগরে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি। বাবার নাম মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং মাতার নাম মোসা. জোবেদা খাতুন।
শিক্ষাজীবন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি এর বয়স যখন ছয় বছর, তখন তার মা-বাবা ইন্তেকাল করেন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি। তার কোন আপন ভাইবোন ছিলো না। ছিলো না কোন আপন চাচাও। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী কুমরাদী ফাজিল মাদ্রাসার হেড মাওলানা সিরাজুল ইসলাম রহ. তাকে কুমরাদী ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি করান। এক বাড়িতে লজিং থেকে শুরু হয় তার প্রাথমিক লেখাপড়া। লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য কারো কাছে হাত পাততেন না। প্রথমে সম্পত্তি বর্গা দিয়ে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যেতেন। পরবর্তীতে লেখাপড়া করার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
কুমরাদী ফাজিল মাদরাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে দাখিল, আলিম, ফাজিল পাশ করেন। উক্ত মাদরাসায় তার সাথে লেখাপড়া করতেন মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, মাওলানা আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুল আহাদ মোল্লা। ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কুমরাদী মাদরাসার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া করতেন।
তারপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল পাশ করেন।
বিয়ে
১৯৭০ সালে বিয়ে করেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামি। তার স্ত্রীর নাম খাদিজা বেগম। তাদের দুজনের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই ছেলে— মো. ওবায়দুল হক, মোহাম্মদ ফারুক। দুই মেয়ে—শাহিনা আক্তার, হালিমা আক্তার।
কর্ম জীবন:
দৈনিক অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতা। তারপর দৈনিক শক্তি, পিপলস-সহ আরো বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও দৈনিক সরকার পত্রিকা প্রকাশ করেন
 হাইস্পিড গ্রুপে স্টেনু গ্রাফার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় আশির দশকে বাংলাদেশ শাইখুল ইসলাম আল্লামা আতহার আলী রহ. এর হাতে গড়া উপমহাদেশের ইসলামি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন।
রাজনৈতিক জীবন
সাংবাদিকতা ও কর্ম জীবন শেষে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিয়ে ইসলামি রাজনীতির অঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। এবং নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও ৭ টি ইসলামি রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন। ইসলামী ঐক্যজোট গঠনকালে উলামায়ে দেওবন্দ আল্লামা আশরাফ আলী ধরমন্ডলী, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, সৈয়দ মো. ফজলুল করিম, মুফতি ফজলুল হক আমিনি, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি রহ. মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে মিনার প্রতীক নিয়ে সিলেট থেকে মাওলানা ওবায়দুল হক এমপি নির্বাচিত হন। মাওলানা নেজামি প্রথমে ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব এবং পরবর্তীতে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. যখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অমায়িক সুন্দর চরিত্রের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য হিসেবে তিনিও মহাসচিব নির্বাচিত হন। তারপর সৈয়দ মো. ফজলুল করিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনিও  তার মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপিতে যোগদান করেন। তারপর ইসলামী ঐক্যজোট থেকে ৪ জন এমপি নির্বাচিত হন। মুফতী আমিনি রহ. যখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন থেকে তার ইন্তেকাল পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব হিসেবে সুনামের সাথে ১ যুগেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টিকে সারা দেশে প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বরে মুজাহিদে মিল্লাত মুফতি আমিনি রহ. ইন্তেকালের পর ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি হিসেবে আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ইন্তেকাল
বর্ণাঢ্য জীবনের শেষে ১৭ রমজান, ১১ মে, ২০২০ ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ৬ টা ৩৫ মিনিটে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, নেতা, কর্মী, ভক্তদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী (রহ:) সংক্ষিপ্ত জীবনী

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী (রহ:) সংক্ষিপ্ত জীবনী

Update Time : ০৪:৫৭:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
জন্ম : ১মার্চ১৯৪৭ইং নরসিংদী জেলার  শিবপুর থানার অন্তর্গত পূর্ব সৈয়দ নগরে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি। বাবার নাম মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং মাতার নাম মোসা. জোবেদা খাতুন।
শিক্ষাজীবন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি এর বয়স যখন ছয় বছর, তখন তার মা-বাবা ইন্তেকাল করেন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি। তার কোন আপন ভাইবোন ছিলো না। ছিলো না কোন আপন চাচাও। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী কুমরাদী ফাজিল মাদ্রাসার হেড মাওলানা সিরাজুল ইসলাম রহ. তাকে কুমরাদী ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি করান। এক বাড়িতে লজিং থেকে শুরু হয় তার প্রাথমিক লেখাপড়া। লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য কারো কাছে হাত পাততেন না। প্রথমে সম্পত্তি বর্গা দিয়ে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যেতেন। পরবর্তীতে লেখাপড়া করার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
কুমরাদী ফাজিল মাদরাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে দাখিল, আলিম, ফাজিল পাশ করেন। উক্ত মাদরাসায় তার সাথে লেখাপড়া করতেন মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, মাওলানা আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুল আহাদ মোল্লা। ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কুমরাদী মাদরাসার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া করতেন।
তারপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল পাশ করেন।
বিয়ে
১৯৭০ সালে বিয়ে করেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামি। তার স্ত্রীর নাম খাদিজা বেগম। তাদের দুজনের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই ছেলে— মো. ওবায়দুল হক, মোহাম্মদ ফারুক। দুই মেয়ে—শাহিনা আক্তার, হালিমা আক্তার।
কর্ম জীবন:
দৈনিক অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতা। তারপর দৈনিক শক্তি, পিপলস-সহ আরো বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও দৈনিক সরকার পত্রিকা প্রকাশ করেন
 হাইস্পিড গ্রুপে স্টেনু গ্রাফার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় আশির দশকে বাংলাদেশ শাইখুল ইসলাম আল্লামা আতহার আলী রহ. এর হাতে গড়া উপমহাদেশের ইসলামি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন।
রাজনৈতিক জীবন
সাংবাদিকতা ও কর্ম জীবন শেষে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিয়ে ইসলামি রাজনীতির অঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। এবং নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও ৭ টি ইসলামি রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন। ইসলামী ঐক্যজোট গঠনকালে উলামায়ে দেওবন্দ আল্লামা আশরাফ আলী ধরমন্ডলী, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, সৈয়দ মো. ফজলুল করিম, মুফতি ফজলুল হক আমিনি, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি রহ. মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে মিনার প্রতীক নিয়ে সিলেট থেকে মাওলানা ওবায়দুল হক এমপি নির্বাচিত হন। মাওলানা নেজামি প্রথমে ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব এবং পরবর্তীতে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. যখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অমায়িক সুন্দর চরিত্রের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য হিসেবে তিনিও মহাসচিব নির্বাচিত হন। তারপর সৈয়দ মো. ফজলুল করিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনিও  তার মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপিতে যোগদান করেন। তারপর ইসলামী ঐক্যজোট থেকে ৪ জন এমপি নির্বাচিত হন। মুফতী আমিনি রহ. যখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন থেকে তার ইন্তেকাল পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব হিসেবে সুনামের সাথে ১ যুগেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টিকে সারা দেশে প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বরে মুজাহিদে মিল্লাত মুফতি আমিনি রহ. ইন্তেকালের পর ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি হিসেবে আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ইন্তেকাল
বর্ণাঢ্য জীবনের শেষে ১৭ রমজান, ১১ মে, ২০২০ ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ৬ টা ৩৫ মিনিটে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, নেতা, কর্মী, ভক্তদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন।