০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মাইজদির সুজাউল কবিরের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

Reporter Name
- Update Time : ০২:৩৭:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
- / ১৩৩ Time View
মোহাম্মদ হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি : দুই শিশু সন্তানকে রেখে ২০০৬ সালে ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে মারা যান হুমায়ুন কবির আজাদ। অগাধ সম্পত্তি থাকলেও শিশুদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন তার স্ত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত দেবর সুজাউল কবির রিয়াদ তার স্বামী-সন্তানের সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছেন। কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মৃত হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী নুর আক্তার। স্বামী মারা যাওয়ার পরে কিভাবে সবকিছু থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে, কিভাবে অভাব-অনটনের সাথে লড়াই করে দুই সন্তানকে বড় করেছেন সেই কষ্টের কথাও তুলে ধরেন প্রতিবেদকের কাছে।
তিনি জানান, শ্বশুর মৃত লুৎফুল কবিরের নোয়াখালীর মাইজদি পশ্চিম আলিপুর এলাকায় ৭২ শতক ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৪ একর জমি রয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরে তাদের সম্পত্তি বন্টন হলেও তা ভোগদখল করছেন দেবর সুজাউল কবির। চর এলাকায় ১৪ একর জমি থাকলেও সেই সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে আদালতের মামলার দোহাই দিয়ে সুজাউল কবির রিয়াদ ও তার ছেলে ফয়সাল কবির সবকিছু দখল করে ভোগ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত আব্দুল মজিদের চার ছেলে ছিলেন যথাক্রমে আজিবল হোসেন, জহুরুল হক মিয়া, লুৎফুল কবির ও সর্বকনিষ্ঠ আজিজুল হক। তাদের মধ্যে লুৎফুল কবিরের পাঁচ সন্তান যথাক্রমে মোঃ হুমায়ুন কবির (আজাদ), ফজলুল কবির(ফরহাদ), বদরুল কবির (মুরাদ), সুজাউল কবির (রিয়াদ) ও মোসার্রাত আক্তার বেবি। লুৎফুল কবিরের বড় ছেলে হুমায়ুন কবির আজাদ ও সেজো ছেলে বদরুল কবির মুরাদ চাকরির সুবাদে ঢাকাতে থাকেন। ছোট মেয়ে মোসার্রাত আক্তার বেবি ঢাকায় স্বামীর সংসারে আর মেজো ছেলে ফজলুল কবির ফরহাদ দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। আর ছোট ছেলে সুজাউল কবির রিয়াদ নোয়াখালীতে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে ১০ তারিখে মারা যান লুৎফুল কবির। আর ২০০৬ সালে লিকোমিয়া ক্যান্সারে মারা যান হুমায়ুন কবির আজাদ।
অভিযোগ রয়েছে লুৎফুল কবির মারা যাওয়ার পর থেকেই সকল সম্পত্তি ভোগদখল করছেন তার ছোট ছেলে সুজাউল কবির রিয়াদ। অন্য ভাই-বোনেরা সম্পত্তির ভাগ দাবি করলে নানা ভাবে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কাগজে-কলমে সম্পত্তি বন্টন করা হলেও মামলার ওজুহাতে তা ভোগ করছেন সুজাউল কবির রিয়াদ। এছাড়া বন্টন নামায় ছোট বোন মোসার্রাত আক্তার বেবির নাম ষড়যন্ত্র করে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে মোসার্রাত আক্তার বেবি জানান, তার বাবা অনেক সম্পত্তি রেখে গেলেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে সম্পত্তির কানাকড়িও তাদের দেওয়া হয়নি। ভাই সুজাউল কবির রিয়াদ ও তার ছেলে ফয়সাল কবির সকল সম্পত্তি ভোগ দখল করছে। গত দুই মাস পূর্বে ঢাকা থেকে বাবার বাড়ি মাইজদি পশ্চিম আলিপুরে আসলে ভাতিজা ফয়সাল কবির তার সাথে মারমুখী আচরণ করে। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। এছাড়া সম্পত্তি বন্টন নামায় তার নাম ষড়যন্ত্র করে বাদ দেন সুজাউল কবির রিয়াদ। পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সুজাউল কবির রিয়াদের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন থেকে পরিবারের অন্য সকল অংশীদারদের সম্পত্তি অন্যায় ভাবে ভোগ করে আসছেন। বিভিন্ন সময় এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকেও মৌখিক ভাবে ত্যাজ্য করা হয়েছে। তার বাবা ও ভাই পরিকল্পিত ভাবে দাদার সম্পত্তি থেকে চাচা-ফুপুদের বঞ্চিত করে রেখেছে। চাচা ফজলুল কবির ফরহাদ নিখোঁজ থাকায় তার সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন তার বাবা সুজাউল কবির।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েত ও ফরিদা খানম সাকী তাদের আত্মীয়। ওনাদের রাজনৈতিক প্রভাবকে অপব্যবহার করে সকল সম্পত্তি দখল করে ভোগ করছেন। তার ছোট ভাই ফয়সাল কবির বিভিন্ন সময় তার ফুপু ও চাচাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। সম্পত্তি দাবি করলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি ও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
সম্পত্তির আরেক অংশিদার বদরুল কবির মুরাদ জানান, সম্পত্তির দাবি করায় তার বিরুদ্ধে ছোট ভাই সুজাউল কবির আদালতে মামলা দিয়েছেন। ঢাকা থেকে নোয়াখালী গিয়ে সেই মামলার হাজিরা দিতে হচ্ছে। সম্পত্তির অংশ দাবি করায় এভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, সুজাউল কবিরের সাথে তার ভাই-বোনদের জমিজমা সংক্রান্ত বিভেদ অনেকদিন থেকেই। তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সুজাউল কবিরই তার পৈতৃক সম্পত্তির দেখাশোনা করছেন। জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকলেও সেই জমির ওপরে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন। আদালতে জমি বন্টন নিয়ে মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে সম্পত্তি নিয়ে এই দ্বন্দ্ব চলছে বলেও জানান তারা।
এসকল অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে সুজাউল কবির রিয়াদ স্বীকার করেন দীর্ঘদিন থেকে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলার রায় অনুযায়ী সকলেই তাদের সম্পত্তির অংশ পাবেন। নিজের মেয়ে মার্জিয়া আক্তারকে ত্যাজ্য করা করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “মেয়ের সাথে রাগারাগি হয়েছে তবে তাকে ত্যাজ্য করা হয়নি।”
Tag :