০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

বাড্ডায় তরুনী গৃহবধু রিমু হত্যাঃ অসহায় বাবা-মা মানবাধিকার চায় খুনীদের বিচার হবে কি?

Reporter Name
  • Update Time : ১২:০২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬৫ Time View


মানবাধিকার রিপোর্ট-১

বাড্ডা থানা, মামলা নং-৩৭-২৩/২৫ অপমৃত্যুর মামলা। বিচারের বানী নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে। সন্তানহারা বাবা-মা কন্যা হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, দেখতে দেখতে ২ মাস চলে গেল, কিন্তু খুনের আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইন তাদেরকে স্পর্শও করতে পারছে না, খুনীদের কোন বিচার আচারের আলামতও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি এই অসহায় দরিদ্র বাবা-মা ন্যায় বিচার পাবে না? আইন-আদালত কি তাদের পাশে দাড়াবে না? বিবেক কি এই সন্তান হারা বাবা-মার জন্য একটুও সহানুভূতি দেখাবে না? বিবেক নীরব থাকবে কেন?

ঢাকার বাড্ডা থানার অন্তর্গত একটি ছোট পরিবার। স্ত্রী রুহামা আক্তার রিমু (২৫) তরুনী রিমুকে অনেক আশা-ভরসা নিয়ে বিয়ে দিয়েছিল বাবা-মা। স্বামী আব্দুর রহমান আলম (৩৫), ছোট খাটো ব্যবসায়ী, গ্রামের বাড়ী মুলাদী, বরিশাল। বিয়ের পর ৮ বছরে ঘর আলো করে দুটি সন্তান এলো, নাম আনাছ (৬ বছর পুত্র) এবং কন্যা আমাতুন (৩ বছর) কিন্তু এতেও সুখের পাখিটা ধরা দিল না। বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় নানারূপ বকা-ঝকা, নির্যাতন-নিপীড়ন। সুন্দরী তরুনী রিমু সব কিছু চোখবুঝে সহ্য করেছে। বাবা-মা কেও নির্যাতন-নিপীড়নের কথা জানাতো না। যাতে যৌতকের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। গত ৭ জুন ২০২৫ইং কোরবানীর ঈদ রাত ১১টায় মৃত্যু ঘটে রিমুর। রহস্যজনক এই মৃত্যুকে আড়াল করতে নানারূপ ছলচাতুরী করেছে তরুনীর স্বামী ও শ^শুর বাড়ীর লোকেরা। কোরবানীর গোসত বিলি করতে টঙ্গী চেরাগ আলীর বাড়ীতে যায় ঘাতক স্বামী আঃ রহমান। স্বাভাবিক শান্ত থেকেছে ঐ ঘাতক। খাওয়া-দাওয়া সেরে হাত ধুঁতে গিয়ে হঠাৎ সে বলে উঠে “ইনালিল্লাহ……..। কি ব্যাপার কি হলো? শ^শুর-শাশুড়ী অজানা আতঙ্কে আর্তনাদ করে উঠে। কি হল জামাই? কি ঘটেছে? ঘাতক ঠান্ডা মাথায় শান্ত স্বরে বলে “আপনাদের মেয়ে মারা গেছে। ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে”। এরপর মেয়েকে দেখার জন্য টঙ্গী থেকে বাড্ডায় ছুটে আসেন স্বজনেরা। তখনও লাশ ঝুলেছিল। অথচ তরুনীর শ^শুড় বাড়ীর লোকজন হাসপাতালে যায়নি, ডাক্তারও ডাকেনি। থানা-পুলিশ করেনি। কিন্তু কেন?
চলমান পাতা-০২
পাতা-০২

রিমুর হতদরিদ্র বাবা-মা আজো জানে না কেন তাদের মেয়ে রিমু মারা গেল? কি তার অপরাধ? সদা হাস্য তরুনী রিমুর দুটি সন্তান, সুখে দুখে কষ্টে মিসে গিয়ে মেয়েটি বেঁচে ছিল সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলার মেয়ে রিমু, বরিশাল জেলার স্বামী আব্দুর রহমানের সাথে ১ লক্ষ টাকা দেনমোহরে কাজী অফিসে বিয়ের বাসর সাজিয়েছিল ৮ বছর আগে। তা আর চলমান রইল না। কচি কচি ২টি বাচ্চার চোখের পানিতে সয়লাব হয়েগেল রিমুর সংসার। অথচ পাষন্ড স্বামী ও শশুড়বাড়ীর স্বজনেরা এতে যেন বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। চোখে তাদের অশ্রু নেই, কষ্ট নেই, ভয় নেই, যেন কিছুই ঘটে নাই। এরকম একটি নো চিন্তা, ডু ফুর্তি ভাব। রিমু মারা গেছে এটাই সত্য। কে মারলো, কেন মারলো কি তার অপরাধ? সেটা জানার জন্য আইন-আদালত, থানা-পুলিশ কিংবা প্রতিবেশীরা কেউই এগিয়ে আসেনি। অবশেষে গত ১১ জুলাই ২০২৫ইং রিমুর বৃদ্ধা মা বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে এই লোমহর্ষক রহস্যজনক হত্যাকান্ডের তদন্ত কাজ শুরু হয় ধীরগতিতে, যা আজো চলমান। দীর্ঘ দুই মাস গেল, অথচ বিচারতো হলো না। কেন এতো ধীর গতি। রিমুর বাবা-মা চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে গত ১৫ আগস্ট বাড্ডার কবরস্থানে রিমুর কবরে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। লিখেছে- আসসালামু আলাইকুম ইয়া হালাল কুবুর। এটাই রিমুর কবর। ইতোমধ্যে তদন্তের মাধ্যমে হালকা-পাতলা জেরা শুরু হয়েছে কিন্তু খুনীরা গ্রেপ্তার হয় নাই। তারা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেন?

গত ২৭/০৪/২০১৮ইং রিমুর বিবাহ হয়েছে এবং ০৭/০৬/২০২৫ইং রাত ১১টায় তার জীবনাবসান ঘটেছে। একটি ন¤্র-ভদ্র দরিদ্র পরিবারের সন্তান রিমু। দুই বোন এক ভাইকে নিয়ে বাবা-মা টঙ্গীর দত্তপাড়ায় ছোট কুড়েঘরে জীবন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু, অকালে কন্যা হারিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন বাবা-মা। বাবা আবু সাঈদ স্ট্রোকের রোগী, মা মোসাম্মদ নাজমা বেগম, শুধু কাদছেন আর অশ্রু জ¦রাচ্ছেন। জামাতা আব্দুর রহমান কিছু বললেই শুধুই হাসে। স্পষ্ট কোন কথাও বলছে না। মা-হারা বাচ্চা দুটির ভবিষ্যত কি? আনাছ আমাতুন ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে। অবুঝ শিশু ২টি কি যেন বলতে চায় অথচ বলতে পারছে না। বাড্ডা থানার দারোগা আশ্রাফুল এই মামলা তদন্ত করছেন। অথচ খুনের এই মামলা যেন খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে। ধীরে ভয়ে মেঘনা এই অশ্রু ধারা আদৌ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সমাপ্তি হবে কি না সেটি সকল মানবাধিকার কর্মী ও বিবেকবানদের একমাত্র জিজ্ঞাসা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

বাড্ডায় তরুনী গৃহবধু রিমু হত্যাঃ অসহায় বাবা-মা মানবাধিকার চায় খুনীদের বিচার হবে কি?

Update Time : ১২:০২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫


মানবাধিকার রিপোর্ট-১

বাড্ডা থানা, মামলা নং-৩৭-২৩/২৫ অপমৃত্যুর মামলা। বিচারের বানী নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে। সন্তানহারা বাবা-মা কন্যা হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, দেখতে দেখতে ২ মাস চলে গেল, কিন্তু খুনের আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইন তাদেরকে স্পর্শও করতে পারছে না, খুনীদের কোন বিচার আচারের আলামতও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি এই অসহায় দরিদ্র বাবা-মা ন্যায় বিচার পাবে না? আইন-আদালত কি তাদের পাশে দাড়াবে না? বিবেক কি এই সন্তান হারা বাবা-মার জন্য একটুও সহানুভূতি দেখাবে না? বিবেক নীরব থাকবে কেন?

ঢাকার বাড্ডা থানার অন্তর্গত একটি ছোট পরিবার। স্ত্রী রুহামা আক্তার রিমু (২৫) তরুনী রিমুকে অনেক আশা-ভরসা নিয়ে বিয়ে দিয়েছিল বাবা-মা। স্বামী আব্দুর রহমান আলম (৩৫), ছোট খাটো ব্যবসায়ী, গ্রামের বাড়ী মুলাদী, বরিশাল। বিয়ের পর ৮ বছরে ঘর আলো করে দুটি সন্তান এলো, নাম আনাছ (৬ বছর পুত্র) এবং কন্যা আমাতুন (৩ বছর) কিন্তু এতেও সুখের পাখিটা ধরা দিল না। বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় নানারূপ বকা-ঝকা, নির্যাতন-নিপীড়ন। সুন্দরী তরুনী রিমু সব কিছু চোখবুঝে সহ্য করেছে। বাবা-মা কেও নির্যাতন-নিপীড়নের কথা জানাতো না। যাতে যৌতকের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। গত ৭ জুন ২০২৫ইং কোরবানীর ঈদ রাত ১১টায় মৃত্যু ঘটে রিমুর। রহস্যজনক এই মৃত্যুকে আড়াল করতে নানারূপ ছলচাতুরী করেছে তরুনীর স্বামী ও শ^শুর বাড়ীর লোকেরা। কোরবানীর গোসত বিলি করতে টঙ্গী চেরাগ আলীর বাড়ীতে যায় ঘাতক স্বামী আঃ রহমান। স্বাভাবিক শান্ত থেকেছে ঐ ঘাতক। খাওয়া-দাওয়া সেরে হাত ধুঁতে গিয়ে হঠাৎ সে বলে উঠে “ইনালিল্লাহ……..। কি ব্যাপার কি হলো? শ^শুর-শাশুড়ী অজানা আতঙ্কে আর্তনাদ করে উঠে। কি হল জামাই? কি ঘটেছে? ঘাতক ঠান্ডা মাথায় শান্ত স্বরে বলে “আপনাদের মেয়ে মারা গেছে। ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে”। এরপর মেয়েকে দেখার জন্য টঙ্গী থেকে বাড্ডায় ছুটে আসেন স্বজনেরা। তখনও লাশ ঝুলেছিল। অথচ তরুনীর শ^শুড় বাড়ীর লোকজন হাসপাতালে যায়নি, ডাক্তারও ডাকেনি। থানা-পুলিশ করেনি। কিন্তু কেন?
চলমান পাতা-০২
পাতা-০২

রিমুর হতদরিদ্র বাবা-মা আজো জানে না কেন তাদের মেয়ে রিমু মারা গেল? কি তার অপরাধ? সদা হাস্য তরুনী রিমুর দুটি সন্তান, সুখে দুখে কষ্টে মিসে গিয়ে মেয়েটি বেঁচে ছিল সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলার মেয়ে রিমু, বরিশাল জেলার স্বামী আব্দুর রহমানের সাথে ১ লক্ষ টাকা দেনমোহরে কাজী অফিসে বিয়ের বাসর সাজিয়েছিল ৮ বছর আগে। তা আর চলমান রইল না। কচি কচি ২টি বাচ্চার চোখের পানিতে সয়লাব হয়েগেল রিমুর সংসার। অথচ পাষন্ড স্বামী ও শশুড়বাড়ীর স্বজনেরা এতে যেন বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। চোখে তাদের অশ্রু নেই, কষ্ট নেই, ভয় নেই, যেন কিছুই ঘটে নাই। এরকম একটি নো চিন্তা, ডু ফুর্তি ভাব। রিমু মারা গেছে এটাই সত্য। কে মারলো, কেন মারলো কি তার অপরাধ? সেটা জানার জন্য আইন-আদালত, থানা-পুলিশ কিংবা প্রতিবেশীরা কেউই এগিয়ে আসেনি। অবশেষে গত ১১ জুলাই ২০২৫ইং রিমুর বৃদ্ধা মা বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে এই লোমহর্ষক রহস্যজনক হত্যাকান্ডের তদন্ত কাজ শুরু হয় ধীরগতিতে, যা আজো চলমান। দীর্ঘ দুই মাস গেল, অথচ বিচারতো হলো না। কেন এতো ধীর গতি। রিমুর বাবা-মা চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে গত ১৫ আগস্ট বাড্ডার কবরস্থানে রিমুর কবরে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। লিখেছে- আসসালামু আলাইকুম ইয়া হালাল কুবুর। এটাই রিমুর কবর। ইতোমধ্যে তদন্তের মাধ্যমে হালকা-পাতলা জেরা শুরু হয়েছে কিন্তু খুনীরা গ্রেপ্তার হয় নাই। তারা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেন?

গত ২৭/০৪/২০১৮ইং রিমুর বিবাহ হয়েছে এবং ০৭/০৬/২০২৫ইং রাত ১১টায় তার জীবনাবসান ঘটেছে। একটি ন¤্র-ভদ্র দরিদ্র পরিবারের সন্তান রিমু। দুই বোন এক ভাইকে নিয়ে বাবা-মা টঙ্গীর দত্তপাড়ায় ছোট কুড়েঘরে জীবন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু, অকালে কন্যা হারিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন বাবা-মা। বাবা আবু সাঈদ স্ট্রোকের রোগী, মা মোসাম্মদ নাজমা বেগম, শুধু কাদছেন আর অশ্রু জ¦রাচ্ছেন। জামাতা আব্দুর রহমান কিছু বললেই শুধুই হাসে। স্পষ্ট কোন কথাও বলছে না। মা-হারা বাচ্চা দুটির ভবিষ্যত কি? আনাছ আমাতুন ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে। অবুঝ শিশু ২টি কি যেন বলতে চায় অথচ বলতে পারছে না। বাড্ডা থানার দারোগা আশ্রাফুল এই মামলা তদন্ত করছেন। অথচ খুনের এই মামলা যেন খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে। ধীরে ভয়ে মেঘনা এই অশ্রু ধারা আদৌ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সমাপ্তি হবে কি না সেটি সকল মানবাধিকার কর্মী ও বিবেকবানদের একমাত্র জিজ্ঞাসা।