০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালের বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা আনোয়ার: এক যুগে আঙুল ফুলে কলাগাছ
Reporter Name
- Update Time : ০৫:২৫:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৩ Time View

স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা মো. আনোয়ার হোসেনকে ঘিরে উঠেছে নানা অভিযোগ। এক যুগে তার আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হওয়ার পেছনে রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। শজিমেক হাসপাতাল থেকে পূর্ব দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল রোডের দক্ষিণ কর্নারে একটি তিনকোণা জমি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। সাদা কাপড়ের মতো দেখতে যে বস্তু দিয়ে জমিটি ঘেরা, আসলে তা হাসপাতালের ব্যবহৃত গজ ব্যান্ডেজ—যা সাধারণত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জমির মালিকানা ও পেছনের গল্প খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই জমিটি হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী যৌথভাবে ক্রয় করেছেন। তাদের গঠিত কমিটির সভাপতি ফার্মাসিস্ট মো. আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি গজ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে তিনি ওই জমিতে মাছ চাষ করছেন, যা স্পষ্টতই বেআইনি ও দৃষ্টিকটু। একাধিক সূত্র জানায়, হাসপাতালে রোগীরা প্রায়ই গজ না পেয়ে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য হন, অথচ ওই সরকারি গজ এখন ব্যক্তিগত জমির বেড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে হাসপাতালের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আনোয়ার হোসেনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। করোনা মহামারির সময় তিনি ভ্যাকসিন সনদ ও ফিটনেস সার্টিফিকেট বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিদেশগামী প্রবাসীদের কাছে মডার্না ও ফাইজার টিকার সনদের বিনিময়ে ১০-২০ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য ৫-১০ হাজার টাকা নিতেন তিনি। এ ছাড়াও, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে নানা সুবিধা ভোগ করেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা আলম নান্নুর নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্যে অংশ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতেন এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজেকে ‘ডাক্তার’ পরিচয় দিয়ে রোগী দেখা আরও জানা গেছে, তিনি তিনমাথা রেলগেটের দক্ষিণ পাশে অবস্থানকালে বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজেকে “ডা. মো. আনোয়ার হোসেন” পরিচয়ে রোগী দেখতেন। পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে চাপে পড়ে ওই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন। অবৈধ সম্পদের অভিযোগ বর্তমানে আনোয়ার হোসেন শজিমেক হাসপাতালের লিলেন ও যন্ত্রপাতি স্টোরে কর্মরত। তিনি ছিলিমপুর মৌজায় দুটি প্লট ও গ্রামে একটি বিল্ডিংসহ একাধিক সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। ছিলিমপুরের একটি জমি মেডিকেল সংলগ্ন, যেখানে ৮ জন অংশীদার হলেও সভাপতির দায়িত্বে আছেন আনোয়ার হোসেন। সরকারি সম্পদ ব্যবহারে অনিয়ম হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারি সম্পদ যেমন গজ ব্যান্ডেজ নষ্ট হলেও তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা আইনত নিষিদ্ধ; অফিসে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেক্ষেত্রে আনোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত জমিতে সরকারি গজ ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। স্থানীয়দের দাবি স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, “এই ঘটনায় যদি কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অসাধু কর্মচারী সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ বা অপব্যবহারের সাহস পাবে।” তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
Tag :

























