০৯:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রতীকের লড়াইয়ের আগে প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই: নোয়াখালী-১ এ উত্তপ্ত মনোনয়ন রাজনীতি
Reporter Name
- Update Time : ১২:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
- / ২৭ Time View

মোহাম্মদ হানিফ নিজস্ব প্রতিনিধি :
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে একের পর এক হেভিওয়েট আসনের উত্তাপ বাড়ছে। সেই তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত ও স্পর্শকাতর আসনগুলোর একটি হয়ে উঠেছে নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী)।
এই আসনে বর্তমানে সরাসরি কোনো নির্বাচনী প্রচারণা না শুরু হলেও, মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই দুই প্রধান বিরোধী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ঘিরে। কেন্দ্রীয় ঘোষণার বাইরে চলে যাওয়া তৃণমূলের মতামত, তরুণ বনাম অভিজ্ঞ নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, এবং জনপ্রিয়তা বনাম আনুগত্যের সংঘাতে এখন এখানে দেখা যাচ্ছে এক অনির্ধারিত ‘প্রাক-নির্বাচনী মিনি যুদ্ধ।
জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে এ আসনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে অধ্যক্ষ মাওলানা সাইফুল্লাহকে। দলের দীর্ঘদিনের সংগঠক, চাটখিল জামায়াতের সাবেক আমির ও ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দলের নীতিগত আনুগত্য ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি তার দৃষ্টান্তমূলক শ্রদ্ধা তাকে সংগঠনের প্রিয়পাত্র করে তুলেছে।

তবে মাঠপর্যায়ে জামায়াতের তৃণমূল কর্মী ও সাধারণ জনগণের সমর্থন অন্য দিকে ঝুঁকছে। আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক ব্যতিক্রমধর্মী নাম শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী গোলাম মর্তুজা।
সামাজিকভাবে পরিচিত, উন্নয়নমুখী চিন্তাধারার ধারক ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই নেতা জামায়াতের প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ না করেই নিজেকে উপস্থাপন করছেন পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে।
তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ডা. মোস্তফা হাজেরা ফাউন্ডেশন, যা স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় জনগণের জন্য চিকিৎসা, শিক্ষা, খাদ্য সহায়তা এবং পুনর্বাসনে নিরলসভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে তার ঘোষিত পাঁচ শূন্য কর্মসূচি দারিদ্র্য, মাদক, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা ও দুর্নীতিমুক্ত এলাকা গড়ার লক্ষ্যে নেওয়া পরিকল্পনা তাকে স্থানীয় জনগণের কাছে ভবিষ্যত নেতৃত্বের একটি প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
তবে সমস্যা অন্য জায়গায় তিনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পাননি। জেলা জামায়াত এখনো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেই অনড়। জেলা আমির ইসহাক খন্দকার জানিয়ে দিয়েছেন,আমাদের ঘোষিত প্রার্থী অধ্যক্ষ সাইফুল্লাহ। বিকল্প চিন্তার কেন্দ্রের।
তবে তৃণমূলে গোলাম মর্তুজার প্রতি জনসমর্থন এতটাই প্রবল যে, অনেকেই মনে করছেন, যদি তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হয়, । ইতোমধ্যে জনমানসে তার প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।যদি মর্তুজা এমপি হন, সেবা পাব, দুর্নীতি কমবে, এলাকায় উন্নয়ন হবে এই আস্থা অনেকের মুখে মুখে।
এখানেই প্রশ্ন জামায়াত জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেবে, না শৃঙ্খলা বজায় রাখবে? দলের নায়েবে আমির সাঈদ আহমেদ বলেন,জামায়াতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো সুযোগ নেই, যদি কোন পরিবর্তন আসে কেন্দ্রে সিদ্ধান্তে হবে। এই পরিস্থিতিতে দলের শৃঙ্খলা বনাম জনগণের প্রত্যাশার দ্বন্দ্ব এখন জামায়াতের সামনে কঠিন এক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি এই আসনে পড়েছে আরেক অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায়। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজনই পরিচিত মুখ
সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও উদীয়মান রাজনৈতিক কর্মী মামুনুর রশিদ মামুন।
ব্যারিস্টার খোকন দীর্ঘদিন ধরে দলের হয়ে আইনি লড়াই, সাংগঠনিক কাজ এবং আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন। একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে বিএনপির এই আসনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করে তুলেছে।,দলের জন্য মামলা-হামলা সহ্য করেছি, নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি।
তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মামুন একজন তরুণ ও গতিশীল নেতা, যিনি দলীয় কর্মসূচিতে অগ্রভাগে ছিলেন।পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে।বিএনপির একাংশ মনে করছে, জামায়াতের উত্থান ঠেকাতে খোকনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, অন্য অংশ বলছে, পরিবর্তন আনতে মামুনের মতো তরুণ নেতৃত্ব দরকার। এখনো দল কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দিলেও, এই অভ্যন্তরীণ বিভক্তি স্পষ্ট।
এই দুই বিরোধী দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মনোনয়ন-অভিলাষ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন অন্য দলগুলো অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে। এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন।তবে তার বিরুদ্ধে কিছু জনগণের অসন্তোষ রয়েছে, বিশেষ করে সড়ক ব্যবস্থা ও জনসংযোগে দুর্বলতার কারণে। তবুও তার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কিছু নজির তাকে একেবারে দুর্বল প্রার্থী হিসেবে দেখতে দিচ্ছে না।
যদি বিএনপি ও জামায়াত উভয় দল আলাদা প্রার্থী দেয়, ভোট বিভক্ত হবে এবং এর সরাসরি সুফল পাবে কে। বিপরীতে, বিএনপি-জামায়াত যদি যৌথ প্রার্থী দিতে পারে, এবং মর্তুজার মতো জনপ্রিয় প্রার্থী মাঠে থাকে, তাহলে এখানে এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমনটাই স্থানীয় বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস।
এই নির্বাচনী পরিস্থিতিতে আসল প্রশ্নটি এখন আর দলের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ নেই। প্রশ্ন হলো ভোটাররা কী চান?তারা চাচ্ছেন একজন স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন, জনসেবায় অভিজ্ঞ এবং নেতৃত্বে দক্ষ প্রার্থী। সে প্রার্থী তরুণ হোক বা অভিজ্ঞ, সেটা বড় নয় তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে কাজের দৃষ্টান্ত ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন।চাটখিল-সোনাইমুড়ীর মানুষ এখন পরিবর্তনের অপেক্ষায়। তারা নেতার প্রতীক নয়, প্রতীকের ভেতরের মানুষটিকে মূল্যায়ন করছে।
এই আসনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে একটাই বিষয় বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয় কিনা।যদি মর্তুজাকে জামায়াত গ্রহণ করে,
যদি বিএনপি অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য দূর করে ,ব্যারিস্টার মাহাবুদ্দিন খোকনক বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। ব্যারিস্টার মাহাবুদ্দিন খোকন ও গোলাম মর্তুজার মাধ্যমে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে। এই আসনটি জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে
দুই দলের জন্য ।
Tag :
























