পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে ——– মোশারফ হোসেন

- Update Time : ০১:৩৫:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / ২৪৬ Time View
পুরুষশাসিত এ সমাজে সবসময়ই আলোচনায় আসে নারী নির্যাতনের খবর। তবে জগৎ সংসারে কি শুধুই নারী
তাদের স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন ? পুরুষ কি নারীর দ্বারা নির্যাতিত হন না ? বিভিন্ন মামলার
পর্যালোচনা আর বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, সমাজের অনেক পুরুষ তার নিজ ঘরে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত
হচ্ছেন। চক্ষুলজ্জা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন বউয়ের এসব নির্যাতন-নিপীড়ন আর
হুমকি-ধমকি নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। আমাদের সমাজে অনেক পুরুষই স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে লোকচক্ষুর
আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন । আজ নারী সমাজ পরাধীনতার খোলস ভেঙে, নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে গেছে অনেকটা
পথ। এটা আমাদের গৌরব ও অহংকার। তারপরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের
শিকার হচ্ছেন, যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে নিগৃহীত হচ্ছেন। এছাড়াও ধর্ষণ, অত্যচার, যৌন হয়রানির ঘটনা
ঘটছে অহরহ। সমাজ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বদলে যাওয়া সমাজেরই নতুন রূপ হচ্ছে পুরুষ নির্যাতন। নির্যাতিত
পুরুষের কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, কেউ সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। ঘরে-
বাইরে এ ধররের নির্যাতন প্রায়ই ঘটছে। তুলনামূলক কম হলেও নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা এদেশে নেহায়েত
কম নয়। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে নারী নির্যাতনের
পরিসংখ্যান থাকলেও নেই পুরুষ নির্যাতনের সঠিক তথ্য। ফলে নারী নির্যাতনের খবর ফলাও করে প্রকাশ
করা হলেও অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো। তবে সাম্প্রতিককালে পুরুষ নির্যাতনকে
কেন্দ্র করে বেশকিছু সংগঠন গড়ে উঠছে। বর্তমানে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার বন্ধন আগের চেয়ে
অনেকটা হালকা। এছাড়া সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা,
পরকীয়া, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশ্বায়নের ক্ষতিকর প্রভাব, অবাধ আকাশ সাংস্কৃতিক
প্রবাহসহ নানা কারণেই এমনটা ঘটছে। যার চরম পরিণতি হচ্ছে সংসারের ভাঙন ও নির্যাতন। পারিবারিক
অশান্তি ও সংসার ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত
সমাজের সব অংশই প্রতিনিয়ত ভুগছেন নানা পারিবারিক যন্ত্রণায়। এক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীর পাশে
সমাজের অনেকেই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পুরুষশাসিত এ সমাজে পুরুষও যে নির্যাতিত হতে
পারে সেটি যেন কারও ভাবনাতেই নেই। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যায় পুরুষ নির্যাতনের করুণ
কাহিনী। পুরুষরা স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। অধিকাংশ
ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা, চক্ষুলজ্জা, জেল-পুলিশ আর উল্টো মামলার ভয়ে বাধ্য হয়ে
স্ত্রীর নির্যাতন নীরবে সহ্য করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। পুরুষ চাইলেও নির্যাতনের কথা বলতে
পারছে না। অন্যদিকে একজন নারী আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছে করলেই দেয়ারল তাকিয়ে ঘটনা সাজিয়ে
পুরুষের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে সহজেই নারী নির্যাতনের মামলা বা যৌতুক মামলা দিতে পারছেন।
মানবাধিকার আইনজীবী সালমা সুলতানা বলেন, স্ত্রীরা নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় পুরুষও
স্ত্রী কর্তৃক শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্টভাবে নেই
কোনো আইন। নারী ও শিশু নির্যাতনে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য একটিও নেই। ফলে
ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়াটা দুরূহ হয়ে পড়ছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সমাজের
উচ্চ পদধারী থেকে শুরু করে নিন্মশ্রেণীর মানুষ পর্যন্ত অনেক পুরুষই আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য
আমাদের কাছে আসছেন। কিন্তু পুরুষ আজ বৈষম্যের শিকার হয়ে পথ হারিয়ে বাাঁচার পথ খুজছে। নারী উন্নয়ন
ছাড়া একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাইতো পৃথিবীর অনেক দেশ নারী উন্নয়নের
প্রসার ঘটিয়ে উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। আমাদের দেশও নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে
গেছে। অতীতের অনেক সময় থেকে বর্তমানে আমাদের দেশের নারী সর্বক্ষেত্রে পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে।
আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর
সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ
আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু
দুঃখজনক হলেও সত্য নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এ আইনগুলোকে কিছু নারী
পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সামান্য কিছুতেই স্বার্থান্বেষী নারী স্বামীদের নাজেহাল
করতে এসব আইনের অপপ্রয়োগ করছেন। ঘরে-বাইরে পুরুষরাও নারীদের দ্বারা নানাভাবে লাঞ্ছিত,
নির্যাতিত হচ্ছেন। সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক যুগান্তরকে
বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে ‘বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পর্ক :
একটি সমীক্ষা’ শিরোনামে একটি গবেষণায় যুক্ত ছিলাম। সেখানে দেখা গেছে, শতকরা ৩৬ ভাগ স্ত্রী তাদের
স্বামীদের অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে অপমান করেন, যা ভুক্তভোগী স্বামীরা আমাদের কাছে স্বীকার
করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা, চেহারা, কর্মদক্ষতা এবং বিভিন্ন চাহিদা পূরণ
করতে না পারা নিয়ে অপমানজনক কথা শুনিয়ে স্বামীদের মানসিক নির্যাতনে রাখার বিষয় ওই গবেষণায় ওঠে
এসেছে। সমাজ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় অনেক নারী তার অর্থনৈতিক ক্ষমতা
দিয়ে অন্য জনকে ডমিনেট করতে চায় বা পরিবারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এক্ষেত্রে সাধারণত স্বামীকে
কৌশলে রপ্ত করতে চায়। এই কৌশলে রপ্ত করাটা এক ধরনের নির্যাতন। পরিবার ও সমাজ হওয়া উচিত
সমঝোতার, সমান মর্যাদার। এখানে একজন আরেক জনের ওপর আধিপত্য দেখাতে গেলে এই সমস্যাগুলো
কখনও মিটবে না এবং পরিবারে শান্তিও আসবে না। অন্যদিকে দেশে ‘পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ’ আইন
এখনও সৃষ্টি হয়নি। আশা করি ইনকিলাবের স্পর্শে পুরুষ নারীর হয়রানী থেকে মুক্তি পাবে। নারী নির্যাতন ও
যৌতুক মামলায় হয়রানির শিকার নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুইগড়ের শেখ খায়রুল আলম। একদিনের জন্য ঘরে বউ
তুলতে না পারলেও সেই বউয়ের মামলায় হাজতে থাকতে হয়েছিল ৭৭ দিন। খায়রুল আলম দাবি করেন, কোনো
ধরনের অপরাধ না করেও হাজতে থাকতে হয়েছে। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার পরও ঝুলে আছে ২০১৪
সালের মামলা। প্রতি ২-৩ মাস পরপর দিতে হয় হাজিরা। তিনি বলেন, নারী নির্যাতন মামলা হলেই আগে হাজত
ভোগ, তারপর তদন্ত। ফলে দেশব্যাপী অনেক পুরুষকে বিনা অপরাধে জেল খাটতে হয়। বাংলাদেশে এখন আর
নারী নির্যাতন হয় না,এখন ঘরে ঘরে পুরুষ নির্যাতন হয়। একটু ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখার অনুরোধ রইল।
নারীরা যা বলে তাই সঠিক মনে করে এদেশের আইন আদালত অথচ সত্য জানার বুঝার কোন প্রয়োজন মনে