০৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

চমেকে ভুল চিকিৎসা অবহেলায় সাংবাদিকের মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু

Reporter Name
  • Update Time : ১১:০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • / ৮১ Time View
nip
আনিছুর রহমান : ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি চট্টগ্রামঃ চমেকে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিকের মায়ের মৃত্যু। কত প্রাণ ঝরলে বদলাবে অবহেলার চিত্র? সেবা নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করল চমেক হাসপাতাল। হৃদয়বিদারক পরিণতি সাংবাদিকের মায়ের। চিকিৎসার নামে অবহেলার ছোবলে  সন্তানের শোক। সমাজকে প্রশ্ন রেখে গেলেন এক মা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও চরম অবহেলার ফলে মৃত্যুবরণ করেছেন দৈনিক দেশের কথা পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ মাসুদের প্রিয় মা। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।)  সুস্থ শরীর ও সচল মুখ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একজন মা-কে চোখের সামনেই নিথর হয়ে যেতে দেখলেন তার সন্তান, শুধুমাত্র চিকিৎসকদের গাফিলতি, অবহেলা ও নিষ্ঠুরতায়।
 ৩০ জুলাই (বুধবার) রাত ৯টার দিকে,এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে চমেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে। যেখানে জীবন রক্ষার আশায় মানুষ আসে, সেখানেই চরম দায়িত্বহীনতায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এক মা।
জানা গেছে, ২৭ জুলাই বিকেলে বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মাসুদের মা হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার সময় তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেন, হাঁটাচলা করতেন এবং নিজে খাবার গ্রহণ করতেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসকদের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হন তিনি।
একটি সাধারণ স্যালাইন দিতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টারও বেশি। রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার পর একাধিকবার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের জানানো হলেও তারা উদাসীন থেকে নিজেদের মধ্যে গল্পে মেতে ছিলেন। কেউ মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন, কেউ চিকিৎসার দায়িত্ব না নিয়ে নির্লিপ্ত ছিলেন।
সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয়—একটি জরুরি ওষুধ আনতে রোগীর স্বজনদের তিনবার পাঠানো হলেও সময়মতো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। নার্সরা বলেছিলেন, “ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া কিছু করা যাবে না।” আর চিকিৎসকদের জবাব ছিল—”নার্সরা না শুনলে আমরা কী করব?” এভাবে দায় এড়ানো ও দায়িত্বহীনতার মধ্যে সময় গড়িয়ে যায়, অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।
পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে ঘটতে একসময় রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর প্রায় আধা ঘণ্টা পর নাটকীয়ভাবে স্যালাইন লাগানো হয়। নার্সরা শুরুতে স্যালাইন দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে বলেন—”ডাক্তারের অর্ডার এসেছে, এখন দিতে হবে।” যা থেকে স্পষ্ট, কতটা অবহেলা ও শীতলতা নিয়ে একজন রোগীর জীবনের প্রতি দায়িত্ব পালন করা হয়।
এই ঘটনায় পুরো ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর স্বজন ও অন্যান্য রোগীদের অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকে অভিযোগ করে বলেন—”এখানে প্রতিদিনই কেউ না কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। এটা যেন রুটিন মৃত্যু।”
মৃত্যুর পর ২৮ জুলাই মরহুমার গোসল, জানাজা ও দাফন কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়। সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ সাংবাদিক মাসুদ শুধু একটাই কথা বলেন” এমন অবহেলায় আর কোনো সন্তান যেন মা হারা না হয়।”
এদিকে, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষ ও নিহতের পরিবারের প্রশ্ন—এমন চরম অবহেলার কি কোনো বিচার হবে না? দায়ীরা কি বারবার পার পেয়ে যাবে?
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি হাসপাতালে এসে রোগীরা নানা হয়রানি, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কোম্পানির পণ্যের চাপ, অহেতুক পরীক্ষার ব্যবসা ও চরম দায়িত্বহীনতার শিকার হন। যেখানে প্রয়োজন ছিল যত্ন ও সেবার, সেখানে জুটেছে অবজ্ঞা ও অবহেলা।
প্রতিটি মৃত্যু কেবল একটি সংখ্যা নয়—তারা কারও মা, বাবা বা সন্তান। যদি এমন অবহেলায় তাদের মৃত্যু হয়, তবে প্রশ্ন ওঠে—আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থায় নয়, আমাদের বিবেকেই কি রোগ বাসা বেঁধেছে?
সব চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এমন নয়—এটা সত্য। অনেক চিকিৎসক এখনো রোগীর সেবায় নিবেদিত। তবে কিছু সংখ্যক চিকিৎসকের গাফিলতি, অমানবিক আচরণ ও অবহেলা গোটা পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
প্রত্যাশা একটাই—প্রতিটি মানুষের চিকিৎসা হোক নিরাপদ ও মানবিক। রোগীর প্রতি আচরণ হোক সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বপূর্ণ। রোগীবান্ধব হোক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক।এটাই ভুক্তভোগী পরিবার ও সর্বস্তরের মানুষের দাবি।
উল্লেখ্য    মরহমার এমন আকর্ষিক মৃত্যুতে গভীর শোকাভিভূত মর্মাহত দুঃখ সমবেদনা প্রকাশ করেন পরিবার আত্মীয়-স্বজন চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডের রোগী সাধারণ অভিভাবক। সাংবাদিক সমাজ সচেতন মহল পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই। মৃত্যুর আগেও মরহুমাা অজু গোসল পাক পবিত্র ইবাদত আমলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন ও আমল করেছেন। প্রতিটা মুহূর্তেই সকলের ভাল মন্দ খোঁজ খবর নিতেন। সকলের ভালো চাইতেন। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন মৃতের পরিবার। দুনিয়া ইহকালের নেক আমল কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। আমিন।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

চমেকে ভুল চিকিৎসা অবহেলায় সাংবাদিকের মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু

Update Time : ১১:০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
nip
আনিছুর রহমান : ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি চট্টগ্রামঃ চমেকে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিকের মায়ের মৃত্যু। কত প্রাণ ঝরলে বদলাবে অবহেলার চিত্র? সেবা নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করল চমেক হাসপাতাল। হৃদয়বিদারক পরিণতি সাংবাদিকের মায়ের। চিকিৎসার নামে অবহেলার ছোবলে  সন্তানের শোক। সমাজকে প্রশ্ন রেখে গেলেন এক মা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও চরম অবহেলার ফলে মৃত্যুবরণ করেছেন দৈনিক দেশের কথা পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ মাসুদের প্রিয় মা। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।)  সুস্থ শরীর ও সচল মুখ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একজন মা-কে চোখের সামনেই নিথর হয়ে যেতে দেখলেন তার সন্তান, শুধুমাত্র চিকিৎসকদের গাফিলতি, অবহেলা ও নিষ্ঠুরতায়।
 ৩০ জুলাই (বুধবার) রাত ৯টার দিকে,এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে চমেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে। যেখানে জীবন রক্ষার আশায় মানুষ আসে, সেখানেই চরম দায়িত্বহীনতায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এক মা।
জানা গেছে, ২৭ জুলাই বিকেলে বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মাসুদের মা হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার সময় তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেন, হাঁটাচলা করতেন এবং নিজে খাবার গ্রহণ করতেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসকদের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হন তিনি।
একটি সাধারণ স্যালাইন দিতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টারও বেশি। রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার পর একাধিকবার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের জানানো হলেও তারা উদাসীন থেকে নিজেদের মধ্যে গল্পে মেতে ছিলেন। কেউ মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন, কেউ চিকিৎসার দায়িত্ব না নিয়ে নির্লিপ্ত ছিলেন।
সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয়—একটি জরুরি ওষুধ আনতে রোগীর স্বজনদের তিনবার পাঠানো হলেও সময়মতো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। নার্সরা বলেছিলেন, “ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া কিছু করা যাবে না।” আর চিকিৎসকদের জবাব ছিল—”নার্সরা না শুনলে আমরা কী করব?” এভাবে দায় এড়ানো ও দায়িত্বহীনতার মধ্যে সময় গড়িয়ে যায়, অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।
পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে ঘটতে একসময় রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর প্রায় আধা ঘণ্টা পর নাটকীয়ভাবে স্যালাইন লাগানো হয়। নার্সরা শুরুতে স্যালাইন দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে বলেন—”ডাক্তারের অর্ডার এসেছে, এখন দিতে হবে।” যা থেকে স্পষ্ট, কতটা অবহেলা ও শীতলতা নিয়ে একজন রোগীর জীবনের প্রতি দায়িত্ব পালন করা হয়।
এই ঘটনায় পুরো ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর স্বজন ও অন্যান্য রোগীদের অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকে অভিযোগ করে বলেন—”এখানে প্রতিদিনই কেউ না কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। এটা যেন রুটিন মৃত্যু।”
মৃত্যুর পর ২৮ জুলাই মরহুমার গোসল, জানাজা ও দাফন কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়। সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ সাংবাদিক মাসুদ শুধু একটাই কথা বলেন” এমন অবহেলায় আর কোনো সন্তান যেন মা হারা না হয়।”
এদিকে, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষ ও নিহতের পরিবারের প্রশ্ন—এমন চরম অবহেলার কি কোনো বিচার হবে না? দায়ীরা কি বারবার পার পেয়ে যাবে?
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি হাসপাতালে এসে রোগীরা নানা হয়রানি, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কোম্পানির পণ্যের চাপ, অহেতুক পরীক্ষার ব্যবসা ও চরম দায়িত্বহীনতার শিকার হন। যেখানে প্রয়োজন ছিল যত্ন ও সেবার, সেখানে জুটেছে অবজ্ঞা ও অবহেলা।
প্রতিটি মৃত্যু কেবল একটি সংখ্যা নয়—তারা কারও মা, বাবা বা সন্তান। যদি এমন অবহেলায় তাদের মৃত্যু হয়, তবে প্রশ্ন ওঠে—আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থায় নয়, আমাদের বিবেকেই কি রোগ বাসা বেঁধেছে?
সব চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এমন নয়—এটা সত্য। অনেক চিকিৎসক এখনো রোগীর সেবায় নিবেদিত। তবে কিছু সংখ্যক চিকিৎসকের গাফিলতি, অমানবিক আচরণ ও অবহেলা গোটা পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
প্রত্যাশা একটাই—প্রতিটি মানুষের চিকিৎসা হোক নিরাপদ ও মানবিক। রোগীর প্রতি আচরণ হোক সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বপূর্ণ। রোগীবান্ধব হোক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক।এটাই ভুক্তভোগী পরিবার ও সর্বস্তরের মানুষের দাবি।
উল্লেখ্য    মরহমার এমন আকর্ষিক মৃত্যুতে গভীর শোকাভিভূত মর্মাহত দুঃখ সমবেদনা প্রকাশ করেন পরিবার আত্মীয়-স্বজন চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডের রোগী সাধারণ অভিভাবক। সাংবাদিক সমাজ সচেতন মহল পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই। মৃত্যুর আগেও মরহুমাা অজু গোসল পাক পবিত্র ইবাদত আমলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন ও আমল করেছেন। প্রতিটা মুহূর্তেই সকলের ভাল মন্দ খোঁজ খবর নিতেন। সকলের ভালো চাইতেন। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন মৃতের পরিবার। দুনিয়া ইহকালের নেক আমল কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। আমিন।