Bombay is my city. (সংগ্রহে—- মোশারফ হোসেন)

- Update Time : ০৪:৪২:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
- / ৩০৫ Time View
মানুষের জন্মের ব্যাপারে নিজের কোন ভূমিকা থাকে না। গরীব বা ধনী পরিবারে জন্ম হওয়াটা
তার ইচ্ছা বা কর্মের উপর নির্ভর করে না। কর্ম জিবনে তার ভূমিকা বা অবদান দায় তার
নিজের উপর বর্তায়। পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে তার জন্ম পরিচয় তেমন গুবুত্ব বহন
করে না। কর্ম দ্বারাই পায় মর্যদার আসন, হয় বরনীয় ও স্মরনীয়। তাই জন্ম নয়, কর্মই
মানুষের আসল পরিচয়। তাহলে এবার জানা যাক পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আযম
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বংশ পরিচয়। ভারতের গুজরাট রাজ্যের পানেলি মতি গ্রামে
মেঘজিভাই ঠাকুর নামে এক ব্রাক্ষণ মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। সমুদ্রপাড়ের শহর। মাছের
ব্যবসাপাতি ভালোই চলছিলো। রুজি রোজগার বেশ। এসব দেখে হঠাৎ বাধ সাধলো লোকাল
পুরোহিতরা। ব্রাহ্মণ কিভাবে মাছের ব্যবসা করে ! এজন্য অনেকটা হুট করেই মাছ ব্যবসা
আর আমিষ গ্রহণের অজুহাতে সপরিবারে সেই ব্রাহ্মণকে তারা সমাজচ্যুত করেন
সমাজপতিরা। ধোপা-নাপিত বন্ধ। পূজা আর্চণা-সামাজিক নিমন্ত্রণ বন্ধ। এভবে চলতে থাকলে
একসময় সেই ব্রাক্ষণ মাছের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে আবার তার বর্ণে ফিরে আসার চেষ্টা
করলেন, তবুও বাকিরা তাকে অচ্ছুৎ করে একঘরে ফেলে রেখে দিলো। ফলস্বরূপ, সেই
ব্রাহ্মণের পুত্র পুঞ্জলাল ঠাকুর এইসব অবমাননায় এতটাই ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি নিজে
সহ তাঁর চার ছেলেকে নিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং বোম্বেতে স্থায়ীভাবে চলে
আসেন। এই পুঞ্জলাল ঠাকুরের মেজো ছেলের সাথে আমরা পরিচিত। তিনি কায়েদে আজম
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জিন্নাহ নিজে বিয়ে করেছিলেন এক পার্সী রমনী রতনবাঈকে। তাদের
একমাত্র কন্যা দিনার জন্ম ১৯১৯ সালের ১৫ই আগস্ট। ঠিক ভারত-পাকিস্তানের ভাগের দিন
এবং গণিতের হিসেবে দেশভাগের আটাশ বছর আাগে। ১৯৩৮ সালে এক পার্সি যুবকের প্রেমে
পড়েন উনিশ বছর বয়সী দিনা। নিজে অমুসলিম বিয়ে করলেও একমাত্র মেয়ে এক অমুসলিমকে
বিয়ে করবে এইটা কখনোই মেনে নিতে পারেননি কায়েদে আজম। পাকিস্তানের সর্বেসর্বা হতে
চলছেন তিনি, ক্ষমতার মোহে বিভোর সবকিছু। তবে মেয়ে ছিলেন অনড়। বাবার নিষেধ সত্ত্বেও
তিনি পার্সী- বংশোদ্ভূত ভারতীয় নেভিল ওয়াদিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৪৩ সালে তার স্বামীর
সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বোম্বেতে নিজের পিতামহের বানানো
পৈত্রিক নিবাসে বসবাস শুরু করেন। এরপর কালে কালে দেশ ভাগ হয়। এপারের মানুষ ওপারে
যায়, ওপারের মানুষ এপারে। জিন্নাহ তখন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল। প্রবল
পরাক্রমশালী ব্যক্তি। মেয়েকে বললেন তার কাছে চলে আসতে করাচিতে। তখন মেয়ে বাবাকে
প্রশ্ন করেন- "আমার মায়ের কি হবে ? তুমি কি মায়ের কবর বোম্বে থেকে পাকিস্তানে নিয়ে
যেতে পারবে?"। স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাবাকে যে ভারতেই থাকছেন তিনি। আমৃত্যু বলে গিয়েছেন-
Bombay is my city. হ্যা দিনা গিয়েছিলেন পাকিস্তানে একবার। ১৯৪৮ সালে। পিতার
শেষ্যকৃতি অনুষ্ঠানে। এরপর আর যান নি। ব্যবসাপাতিতে মন দেন। শক্ত হাতে হাল ধরেন।
আজও ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী নাসলি ওয়াদিয়া। দিনা জিন্নাহর ছেলে, মোহাম্মদ আলী
জিন্নাহর নাতি। নাসলি ওয়াদিয়ার দুই সন্তান- জাহাঙ্গীর এবং নেস। বর্তমানে আইপিএলে
কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অন্যতম মালিক নেস ওয়াদিয়া। ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাস-
লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আদায় করে নেওয়া জিন্নাহর সব উত্তরাধিকারই ভারতীয় নাগরিক,
পাকিস্তানে কেউ নেই। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন একজন প্রতারক এবং তার মাতৃভূমি
ভারতের প্রতি একজন মহান বিশ্বাসঘাতক। প্রকৃতপক্ষে, তিনি রক্তে হিন্দু ছিলেন এবং
গোপনে হিন্দু রীতিনীতি পালন করতেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জওহরলাল নেহেরুকে আশ্বস্ত
করেছিলেন যে সদ্য স্বাধীন ভারত প্রজাতন্ত্রকে উগ্র ইসলামী সহিংসতা থেকে মুক্ত রাখা
উচিত। অতএব, জিন্নাহ ভারতীয় মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান নামে একটি পৃথক দেশ দাবি
করেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার পর গান্ধীর কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি এবং
নেহেরু অবশেষে গান্ধীকে শেষ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। জিন্নাহ ভারতকে বাঁচাতে নিজের
জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাকিস্তানে ছিলেন এবং কখনও পিছনে
ফিরে তাকাননি।