০৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

ইসলামী রাষ্ট্র নির্মানের বাংলাদেশী সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেন বাধাগ্রস্ত হলো ? (পর্ব-৩)

মতামত
  • Update Time : ০৩:৩৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৮ Time View

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

খেয়ানত নিয়ামতের সাথে

 

২০২৪ সালে উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ছিল উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহ

পক্ষ থেকে বিশাল নিয়ামত। পাকিস্তান দেয় বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠির স্বাধীনতা, নিরাপত্ত ও ইজ্জত নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ। এ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারতের ন্যায় শত্রুশক্তি এদেশটির  ধ্বংসের পরিকল্পনা করছিল। কারণ ভারত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা যেমন চায়নি, দেশটি বেঁচে থাকুক সেটিও চায়নি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় সর্ব সামর্থ্যের বিনিয়োগ করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমগণ এ বিশাল নিয়ামতকে আপদ ভেবেছে। এবং ভারতের ন্যায় শত্রু শক্তিকে সাথে নিযে সে নিয়ামতকে ধবংস করেছে। এভাবে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করেছে। পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের অপরাধ হলো, তারা ভোট দিয়ে দেশের নেতৃত্ব তুলে দেয় মুজিবের ন্যায় এমন এক ক্ষমতাপাগল ব্যক্তির কাছে যে ষাটের দশক থেকেই RAW’য়ের সাথে মিলে পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র করছিল। জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর ভারতের এজেন্ডাই মুজিবের এজেন্ডা হয়। মুজিব তার গোলপোস্টই পাল্টে ফেলে। স্বায়ত্বশাসনের নামে ভোট নিয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে এবং ভারতকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। পরে সে অপরাধী বিশ্বাসঘাতক নেতাকেই জনগণ নেতা, পিতা ও বন্ধু বলে মাথায় তুলেছে। এরূপ বিদেশে চর এবং গুরুতর দেশদ্রোহী অপরাধীকে যারা সম্মান করে তারা কি নিরপরাধ হতে পারে?

প্রতিটি ঈমনদারকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন নিয়ে বাঁচতে হয়। নিজের দায়িত্বটি কি -সেটিও সঠিক ভাবে জেনে নিতে হয়। ঈমানদারের সে মূলদায়িত্বটি হলো মহান আল্লাহ তায়ালার খলিফা ও তাঁর অনুগত আনসারের। তখন মহান রব’য়ের পক্ষ থেকে সে অর্পিত দায়িত্বের মধ্য এসে যায় নিজ দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্বও। এ দায়িত্ব প্রতিটি ঈমানদার নাগরিকের। ব্যক্তির ঈমান দেখা যায় সে দায়িত্ব পালনের মাঝে। তাই দায়িত্বহীন ব্যক্তি নামাজী, রোজাদার  ও হাজী হতে পারে, কিন্তু সে ঈমানদার হতে পারে না। দায়িত্ব পালনে অবহেলাই বড় অপরাধ, সেটি বেঈমানীর আলামত। যারা দায়িত্বহীন চরিত্রের পৃথিবীর কোথাও কোন প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকুরিতে রাখা হয় না। কোথাও তাদের সম্মান জুটে না। দায়িত্বহীন কোন জনগণকে মহান আল্লাহ তায়ালা কখনোই কোন শক্তিশালী বিশাল রাষ্ট্রের নেয়ামত দেন না। তখন তাদের বাঁচতে হয় শত্রুর পদতলে দাসত্ব নিয়ে। পরিতাপের বিষয় হলো, ১৯৭১’য়ে নিজ ভূমির উপর যখন পৌত্তলিক ভারতের আগ্রাসন হলো তখন সে পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানীরা যুদ্ধে নামেনি। বরং তাদের সীমান্তে যুদ্ধ করেছে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। তারা দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে অথবা ভারতের বিজয় চেয়েছে। বরং ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে ভারতীয় কাফির সৈন্যদের উল্লাস ভরে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে।  সে চিত্র আমি সেদিন স্বচোখে দেখেছি। এটি বাঙালি মুসলিমের এক বিশাল দায়িত্বহীনতা। সে দায়িত্বহীনতার কারণে মহান আল্লাহ তায়লালা পাকিস্তানের ন্যায় বিশাল নিয়ামতটি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ভারতের গোলাম বানিয়েছে। এবং শাস্তি দিয়েছেন তাদের ঘাড়ে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় নৃশংস দাস শাসন চাপিয়ে। বিস্ময়ের বিষয় বহু বোধশূণ্য বাংলাদেশী ভারতের সে গোলামীকেই বিশাল অর্জন মনে করে।

অথচ পাকিস্তান বাঙালি মুসলিমদের জন্য বিশাল সুযোগ এনে দেয়। বাঙালিরা তো কখনো নিজ দেশও শাসন করেনি। অথচ পাকিস্তান বাঙালির জন্য সুযোগ করে দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় বসার। একাত্তরের আগে পাকিস্তানের ৪ জন প্রধানমন্ত্রী ও দুই জন রাষ্ট্রপতি হয়েছে বাঙালি। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতো বিশ্বের তৃতীয বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি; এবং হতো মুসলিম ন্যাটোর প্রধান। তখন সে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে বাঙালি মুসলিম সুযোগ পেত চালকের আসনে বসার। কিন্তু নিজেদের অযোগ্যতার কারণে সে সুযোগ তারা হারিয়েছে।

নবীজী (সা:)’র যুগে পারস্য সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্যের বিশাল বিশাল সেনাদলের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছে তারা কোন সেনানীবাস থেকে উঠে গিয়ে যুদ্ধ করেনি। বরং সে মুসলিম মোজাহিদদের নিজস্ব চাষাবাদ ছিল, ফলের বাগান ছিল, ভেড়ার পাল ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল। জিহাদের ডাক পড়লে তারা সবাই নিজ নিজ পেশা ছেড়ে সৈনিক হয়েছেন। মাল ও জানের কুরবানী পেশ করেছেন। জিহাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকতে পারে -সেটি তারা ভাবতেই পারতেন না। কিন্তু আজকের মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার পেশদারীত্ব, ব্যবসা, চাকুরি, চাষাবাদ, ইত্যাদি। জিহাদে নামার কোন সুযোগ তাদের নাই। অথচ  মুসলিম হতে হলে শুধু নামাজে দাঁড়ালে চলে না, জিহাদেও দাঁড়াতে হয়। জিহাদে না দাঁড়ালে নবীজী (সা:) যুগে মুনাফিক বলা হয়েছে।  কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটি এমন জিহাদী মুসলিম পেতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তানের সকল ব্যর্থতার মূলে হলো এই ব্যর্থতা। মুজিবের ন্যায় পাকিস্তানের চিহ্নিত শত্রুর বিরুদ্ধে খাড়া হওয়া দূরে থাকা, তার বিরুদ্ধে জনগণ ভোট দিতেও রাজী হয়নি। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার দায় যেন শুধু সেনাবাহিনীর, জনগণ যেন দায়মুক্ত।

কিছু বিকলাঙ্গ ব্যক্তি ছাড়া প্রতিটি মানুষকেই মহান আল্লাহ তায়ালা নানাবিধ দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি হলো অর্পিত আমানত। আর যারা ঈমানদার, তাদের ব্যাপারে বিষয়টি ভিন্ন। তাদের জান ও মাল হলো মহান আল্লাহ তায়ালার ক্রয়কৃত সম্পদ -যার ঘোষণা এসেছে সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে। সে গচ্ছিত আমানতকে তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে না লাগানোই তো বড় রকমের খেয়ানত। খেয়ানত তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। অথচ বাঙালি মুসলিমগণ ইতিহাস গড়েছে খেয়ানতে। এমন কি নিজের বিবেক ও মেধাকে কাজে লাগায়নি যোগ্য মানুষকে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে মুজিব-হাসিনার ন্যায় চিহ্নিত দুর্বৃত্তদেরকে।

আজকের মুসলিমদের অবস্থা, দেশের কল্যাণে কিছু করা দূরে থাক, একজন যোগ্য মানুষকে ভোট দিতেও তারা রাজী নয়। বরং ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে মুজিব, হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তদের। এমন দায়িত্বহীন নাগরিকদের কারণে পাকিস্তান কেন, বাংলাদেশও যে ব্যর্থ হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এমন কি সে হুশ ও দায়িত্বজ্ঞান তাদেরও নাই -যারা নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে এবং মোল্লা, মৌলভী, আলেম ও আল্লামা নামে পরিচিত। রাজনীতির লড়াইয়ে কার পক্ষে তারা দাঁড়াচ্ছে -সেটি নিয়ে তারা ভাবতেও তারা রাজী নয়। কোথাও মশা মাছির জটলা দেখলে বুঝতে হবে সেখানে গলিত আবর্জনা আছে। তেমনি দেশের নেতৃত্বে প্রতারক ও ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অপরাধী দেখলে যে কোন বিবেকবান মানুষ সহজে বুঝতে পারে, দেশটির জনগণও ভাল চরিত্রের নয়। শাসন ক্ষমতায় নষ্ট চরিত্রের নেতারা তো উঠে আসে নষ্ট নষ্ট জনগণের কাতার থেকেই।

পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমগণ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ব্যর্থ হয়েছে পৌত্তলিক কাফিরদের হামলা থেকে পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা দিতে। বরং তারা অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে ও ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে মুজিবের ন্যায় ভারতের এজেন্ট এবং হারাম রাজনীতির নেতাকে -যার রাজনৈতিক যুদ্ধটি সব সময়ই ছিল আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব, শরিয়া ও তাঁর ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডার বিরুদ্ধে।

 

ব্যর্থতা অপরাধীদের চেনায় ও নির্মূলে

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, জানমালের নিরাপত্তা ও শান্তি বাড়াতে হলে শুধু হিংস্র পশু, বিষাক্ত জীবাণু ও বিষধর কীটপতঙ্গকে চিনলে চলে না, সমাজের দুর্বৃত্ত ও মিথ্যাচারী প্রতারক নেতাদেরও চিনতে হয়। সেটি দৈনন্দিন জীবনের অতি মৌলিক যোগ্যতা (basic skills)। হিংস্র পশু নির্মূলের ন্যায় দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূলেও নামতে হয়। সে নির্মূলে মধ্যেই নিরাপত্তা। এজন্যই পবিত্র কুর’আন অনুযায়ী মুমিনেরগুণ হলো “আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার ওয়া রুহামাও বায়নাহুম।” অর্থ: কাফিরদের বিরুদ্ধে অতি কঠোর এবং নিজদের মধ্যে দয়াময়।” কারণ, দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের নাশকতা হিংস্র পশু ও  বিষাক্ত জীবাণুর চেয়েও ভয়নাক। একাত্তরের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের  কারণ কোন হিংস্র পশু নয়, বরং মুজিবের ন্যায় নীতিহীন এক দুর্বত্ত নেতা। মুজিবের অপরাধ, সে একাত্তরের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধকে ডেকে এনেছে। পাকিস্তান আর্মির ২৫ মার্চে রাস্তায় নামার আগেই ৭ মার্চ যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। হাতের কাছে যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে নামতে বলেছে। পাকিস্তান আর্মি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ সাল অবধি পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে ছিল। কিন্তু সে ২৩ বছরে আর্মির গুলিতে একজন পূর্ব পাকিস্তানীও মারা পড়েনি। তখন বাঙালির বিরুদ্ধে পাক আর্মির পক্ষ থেকে কোন যুদ্ধ হয়নি। কারণ, তখন RAW’য়ের এজেন্ট, যুদ্ধপাগল এবং ক্ষমতাপাগল মুজিব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে ছিল না। এজন্যই রাজনৈতিক অঙ্গণের দুর্বৃত্তদের সনাক্ত করা এবং তাদের নির্মূলের কাজটি ইসলামে ফরজ। কিন্তু এ কাজে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। তারা মুজিব ও তার সাথীদের ন্যায় ভয়ানক অপরাধীদের চিনতে ব্যর্থ হয়েছে। সে ব্যর্থতা নিয়ে তার মত অপরাধীকে মাথায় তুলেছে।

মহান রাব্বুল আলামীন মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। মুসলিমদের সে বিশেষ মর্যাদা কেন -সে ব্যাখ্যাটিও মহান রব সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে দিয়েছেন। সেটি এ জন্য যে, তাদের  দাড়ি-টুপি আছে এবং বেশী বেশী নামাজ-রাজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে তারা দুর্বৃত্তদের নির্মূল করে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ সে ফরজ মিশন নিয়ে বাঁচে না; বরং বাঁচে এর সম্পূর্ণ বিপরীত মিশন নিয়ে। দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূল  না করে বরং নির্বাচনে তাদেরকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। তারা কাজ করে দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের অবৈতনিক সেপাহী রূপে। তারা দুর্বৃত্ত নেতাদের পক্ষে ভোট দেয়, অর্থ দেয় এবং লড়াই করে। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে বাঙালি ভোটারগণ তো সেটিই করেছিল। সে নির্বাচনে মুজিবের ন্যায় বাঙালির সমগ্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধী ব্যক্তিকে বিপুল ভোটে সেদিন বিজয়ী করেছিল। যার পরিণাম, এ বঙ্গীয় মুসলিম ভূমিতে গণতন্ত্র কবরে গিয়েছিল এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এসেছিল -যা ১৫ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। মুজিবের মিথ্যাচারীতা, দুর্বৃত্তি, ভারত তোষণ এবং ইসলাম বিরোধীতা বাঙালি ভোটারদের কাছ সেদিন দোষের মনে হয়নি। মুজিবের ন্যায় ফ্যাসিস্ট নেতাগণ যদি জনগণে ভোটে ও অর্থে এরূপ প্রশ্রয় পায় তবে কি সেদেশে কল্যাণ আসে? কোন সভ্য দেশে কি এমন অসভ্যরা নির্বাচিত হয়? আরো পরিতাপের বিষয়, মুজিবের ন্যায় ফ্যাসিস্ট নেতাগণ যখন স্বায়ত্বশাসনের নামে ভোট নিয়ে পাকিস্তান ভাঙার যুদ্ধে নেমেছে ,জনগণ তখনও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।  তাকে কোন জবাবদহীতার মুখে পড়তে হয়নি।

 

অপরাধটি দেশ ভাঙার

মুসলিমের ঘর ভাঙাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধ হলো মুসলিম দেশ ভাঙাও। মুসলিম উম্মাহর পতনের শুরু তো তখন থেকেই যখন মুসলিম দেশ ভাঙাটি উৎসবের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটি এক ভয়ানক অপচেতনা। দেশের ভৌগলিক আয়োতন বাড়লে উম্মাহর শক্তিও বাড়ে; অপর দিকে দুর্বলতা বাড়ে দেশের আয়োতন ক্ষুদ্রতর হলে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, তাঁর ঈমানদার বান্দাগণ শক্তি, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করুক। তাই  ভূগোলে লাগাতর বৃদ্ধি আনা তো নবীজী (সা‍) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের সূন্নত। সে পথ ধরেই ইসলামী রাষ্ট্রটি মদিনার ক্ষুদ্র গ্রামীন শহর রাষ্ট্র থেকে বাড়তে বাড়তে বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম দেশের অখণ্ড ভূগোলের সুরক্ষাকে ফরজ করেছেন, এবং হারাম করেছেন সে ভূগোল খণ্ডিত করাকে। মুসলিম দেশের ভূগোল খণ্ডিত করা তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় শয়তানী শক্তির এজেন্ডা। অথচ একাত্তরে মুজিব ও মেজর জিয়া -উভয়ে শয়তানের সে এজেন্ডাকেই বিজয়ী করেছে এবং দুর্বল করেছে মুসলিম উম্মাহকে। আর বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম এরূপ অপরাধী নেতাদের বিপুল সমর্থন দিয়েছে। অথচ অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধীদের সমর্থন করাও গুরুতর অপরাধ। অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে ফিরাউন-নমরুদ হওয়ার জন্য নয়, বরং ফিরাউন-নমরুদদের সমর্থন করার জন্য।

 

সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার নাশকতা

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি সত্য আবিষ্কারে। সত্য আবিষ্কারে যারা ব্যর্থ হয় তারাই মূর্তি পূজা, গরু পূজা, সাপ পূজা, লিঙ্গ পূজার ন্যায় আদিম জাহিলিয়াত নিয়ে বাঁচে। তখন এ জীবনে তাদের বাঁচাটাই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যায়। অঢেল সম্পদ, বড় বড় ডিগ্রি, পেশাদারী নাম যশ -এমন কি নবেল প্রাইজও তখন কাজ দেয়না। মানব জীবনের সবচেয়ে কদর্য ব্যর্থতা হলো সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতা। মানব জাতির সকল ব্যর্থতার এটিই হলো মূল কারণ। শত শত মানুষ নবেল প্রাইজ পেয়েছে, হাজার হাজার মানুষ নানাবিধ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে সত্য আবিষ্কারে। মিশরের পিরামিড ও চীনের প্রাচীর হলো মানব ইতিহাসের সপ্তাশ্চর্যের দুটি বৃহৎ আশ্চর্য। কিন্তু যারা বিস্ময়কর পিরামিড এবং চীনের প্রাচীর গড়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে সত্য আবিষ্কারে। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয় হলো মানুষের সত্য আবিষ্করের সামর্থ্য; তিনি তার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার একমাত্র তাদেরই দেন, যারা সত্য আবিষ্কারে সফল। সে চুড়ান্ত সত্যটি হলো ইসলাম। সে সত্য আবিষ্কারের অর্থ সিরাতাল মুস্তাকীম আবিষ্কার। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের সত্য আবিষ্কারের সামর্থ্য দেখেন বস্তুত ইসলাম আবিষ্কারের সামর্থ্য দেখে, নবেল প্রাইজ পাওয়া দেখে নয়।  সত্য আবিষ্কারে যারা সফল হয় তারাই মুসলিম হয়।  আর সত্য আবিষ্কারের পুরষ্কারটি হলো জান্নাত। সত্য আবিষ্কারে বিস্ময়কর ও বিরল সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ:)। তাঁর সে আবিষ্কারের সামর্থ্যে মহান রব এতোই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি তাকে নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি খলিলুল্লাহ তথা আল্লাহর বন্ধু।

বড় বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও দান খয়রাত অনেক পৌত্তলিক ও নাস্তিক কাফিরও করে। কিন্তু তাদের মূল ব্যর্থতাটি সত্য আবিষ্কারে। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা অতি বিশাল। তারা সে ব্যর্থতায় ইতিহাস গড়েছে। বাংলাদেশের সকল বিপর্যয়ের মূল কারণ এই সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতা। তাদের সে ব্যর্থতা প্রকট ভাবে দেখা যায় ১৯৭১’য়ে।  সে ব্যর্থতার কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বাঙালি ছাত্র ও শিক্ষক কচুরিপানার ন্যায় ভেসে যায় কম্যুনিজম, সেক্যুলারিজম, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ ও হিন্দুত্ববাদের স্রোতে। সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার কারণে তারা পরিণত হয়েছে পাকিস্তানে ঘরের শত্রুতে এবং পৌত্তলিক ভারতের সেবাদাস কলাবোরেটরে। সে ব্যর্থতার কারণে খুনি মুজিবের ন্যায় বাকশালী ফ্যাসিস্ট অপরাধীকে জাতির পিতা, জাতির বন্ধু ও জাতির নেতা বানিয়েছে। সত্য দ্বীন তথা ইসলাম হলো আল্লাহর রশি। যারা সে রশি আঁকড়ে ধরে তারা ভেসে যায় না; বরং অনড় থাকে। সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার কারণেই বিপুল সংখ্যক বাঙালি ১৯৭১’য়ে ভারতীয় পৌত্তলিকদের কোলে গিয়ে উঠেছিল এবং ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে পাকিস্তান ভাঙার যুদ্ধে ভারতের দাস সৈনিকে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যেদেশের ঘরের শত্রুর সংখ্যা এতো বিশাল -সে দেশ কি কখনো বাঁচে? পাকিস্তানের অখণ্ডতা তাই বাঁচেনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

ইসলামী রাষ্ট্র নির্মানের বাংলাদেশী সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেন বাধাগ্রস্ত হলো ? (পর্ব-৩)

Update Time : ০৩:৩৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

খেয়ানত নিয়ামতের সাথে

 

২০২৪ সালে উসমানিয়া খেলাফত বিলুপ্তির পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ছিল উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহ

পক্ষ থেকে বিশাল নিয়ামত। পাকিস্তান দেয় বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠির স্বাধীনতা, নিরাপত্ত ও ইজ্জত নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ। এ রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারতের ন্যায় শত্রুশক্তি এদেশটির  ধ্বংসের পরিকল্পনা করছিল। কারণ ভারত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা যেমন চায়নি, দেশটি বেঁচে থাকুক সেটিও চায়নি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় সর্ব সামর্থ্যের বিনিয়োগ করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমগণ এ বিশাল নিয়ামতকে আপদ ভেবেছে। এবং ভারতের ন্যায় শত্রু শক্তিকে সাথে নিযে সে নিয়ামতকে ধবংস করেছে। এভাবে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করেছে। পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের অপরাধ হলো, তারা ভোট দিয়ে দেশের নেতৃত্ব তুলে দেয় মুজিবের ন্যায় এমন এক ক্ষমতাপাগল ব্যক্তির কাছে যে ষাটের দশক থেকেই RAW’য়ের সাথে মিলে পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র করছিল। জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর ভারতের এজেন্ডাই মুজিবের এজেন্ডা হয়। মুজিব তার গোলপোস্টই পাল্টে ফেলে। স্বায়ত্বশাসনের নামে ভোট নিয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে এবং ভারতকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। পরে সে অপরাধী বিশ্বাসঘাতক নেতাকেই জনগণ নেতা, পিতা ও বন্ধু বলে মাথায় তুলেছে। এরূপ বিদেশে চর এবং গুরুতর দেশদ্রোহী অপরাধীকে যারা সম্মান করে তারা কি নিরপরাধ হতে পারে?

প্রতিটি ঈমনদারকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন নিয়ে বাঁচতে হয়। নিজের দায়িত্বটি কি -সেটিও সঠিক ভাবে জেনে নিতে হয়। ঈমানদারের সে মূলদায়িত্বটি হলো মহান আল্লাহ তায়ালার খলিফা ও তাঁর অনুগত আনসারের। তখন মহান রব’য়ের পক্ষ থেকে সে অর্পিত দায়িত্বের মধ্য এসে যায় নিজ দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্বও। এ দায়িত্ব প্রতিটি ঈমানদার নাগরিকের। ব্যক্তির ঈমান দেখা যায় সে দায়িত্ব পালনের মাঝে। তাই দায়িত্বহীন ব্যক্তি নামাজী, রোজাদার  ও হাজী হতে পারে, কিন্তু সে ঈমানদার হতে পারে না। দায়িত্ব পালনে অবহেলাই বড় অপরাধ, সেটি বেঈমানীর আলামত। যারা দায়িত্বহীন চরিত্রের পৃথিবীর কোথাও কোন প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকুরিতে রাখা হয় না। কোথাও তাদের সম্মান জুটে না। দায়িত্বহীন কোন জনগণকে মহান আল্লাহ তায়ালা কখনোই কোন শক্তিশালী বিশাল রাষ্ট্রের নেয়ামত দেন না। তখন তাদের বাঁচতে হয় শত্রুর পদতলে দাসত্ব নিয়ে। পরিতাপের বিষয় হলো, ১৯৭১’য়ে নিজ ভূমির উপর যখন পৌত্তলিক ভারতের আগ্রাসন হলো তখন সে পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানীরা যুদ্ধে নামেনি। বরং তাদের সীমান্তে যুদ্ধ করেছে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। তারা দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে অথবা ভারতের বিজয় চেয়েছে। বরং ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে ভারতীয় কাফির সৈন্যদের উল্লাস ভরে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে।  সে চিত্র আমি সেদিন স্বচোখে দেখেছি। এটি বাঙালি মুসলিমের এক বিশাল দায়িত্বহীনতা। সে দায়িত্বহীনতার কারণে মহান আল্লাহ তায়লালা পাকিস্তানের ন্যায় বিশাল নিয়ামতটি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে ভারতের গোলাম বানিয়েছে। এবং শাস্তি দিয়েছেন তাদের ঘাড়ে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় নৃশংস দাস শাসন চাপিয়ে। বিস্ময়ের বিষয় বহু বোধশূণ্য বাংলাদেশী ভারতের সে গোলামীকেই বিশাল অর্জন মনে করে।

অথচ পাকিস্তান বাঙালি মুসলিমদের জন্য বিশাল সুযোগ এনে দেয়। বাঙালিরা তো কখনো নিজ দেশও শাসন করেনি। অথচ পাকিস্তান বাঙালির জন্য সুযোগ করে দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় বসার। একাত্তরের আগে পাকিস্তানের ৪ জন প্রধানমন্ত্রী ও দুই জন রাষ্ট্রপতি হয়েছে বাঙালি। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতো বিশ্বের তৃতীয বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি; এবং হতো মুসলিম ন্যাটোর প্রধান। তখন সে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে বাঙালি মুসলিম সুযোগ পেত চালকের আসনে বসার। কিন্তু নিজেদের অযোগ্যতার কারণে সে সুযোগ তারা হারিয়েছে।

নবীজী (সা:)’র যুগে পারস্য সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্যের বিশাল বিশাল সেনাদলের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছে তারা কোন সেনানীবাস থেকে উঠে গিয়ে যুদ্ধ করেনি। বরং সে মুসলিম মোজাহিদদের নিজস্ব চাষাবাদ ছিল, ফলের বাগান ছিল, ভেড়ার পাল ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল। জিহাদের ডাক পড়লে তারা সবাই নিজ নিজ পেশা ছেড়ে সৈনিক হয়েছেন। মাল ও জানের কুরবানী পেশ করেছেন। জিহাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকতে পারে -সেটি তারা ভাবতেই পারতেন না। কিন্তু আজকের মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার পেশদারীত্ব, ব্যবসা, চাকুরি, চাষাবাদ, ইত্যাদি। জিহাদে নামার কোন সুযোগ তাদের নাই। অথচ  মুসলিম হতে হলে শুধু নামাজে দাঁড়ালে চলে না, জিহাদেও দাঁড়াতে হয়। জিহাদে না দাঁড়ালে নবীজী (সা:) যুগে মুনাফিক বলা হয়েছে।  কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটি এমন জিহাদী মুসলিম পেতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তানের সকল ব্যর্থতার মূলে হলো এই ব্যর্থতা। মুজিবের ন্যায় পাকিস্তানের চিহ্নিত শত্রুর বিরুদ্ধে খাড়া হওয়া দূরে থাকা, তার বিরুদ্ধে জনগণ ভোট দিতেও রাজী হয়নি। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার দায় যেন শুধু সেনাবাহিনীর, জনগণ যেন দায়মুক্ত।

কিছু বিকলাঙ্গ ব্যক্তি ছাড়া প্রতিটি মানুষকেই মহান আল্লাহ তায়ালা নানাবিধ দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি হলো অর্পিত আমানত। আর যারা ঈমানদার, তাদের ব্যাপারে বিষয়টি ভিন্ন। তাদের জান ও মাল হলো মহান আল্লাহ তায়ালার ক্রয়কৃত সম্পদ -যার ঘোষণা এসেছে সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে। সে গচ্ছিত আমানতকে তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে না লাগানোই তো বড় রকমের খেয়ানত। খেয়ানত তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। অথচ বাঙালি মুসলিমগণ ইতিহাস গড়েছে খেয়ানতে। এমন কি নিজের বিবেক ও মেধাকে কাজে লাগায়নি যোগ্য মানুষকে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে মুজিব-হাসিনার ন্যায় চিহ্নিত দুর্বৃত্তদেরকে।

আজকের মুসলিমদের অবস্থা, দেশের কল্যাণে কিছু করা দূরে থাক, একজন যোগ্য মানুষকে ভোট দিতেও তারা রাজী নয়। বরং ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে মুজিব, হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তদের। এমন দায়িত্বহীন নাগরিকদের কারণে পাকিস্তান কেন, বাংলাদেশও যে ব্যর্থ হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এমন কি সে হুশ ও দায়িত্বজ্ঞান তাদেরও নাই -যারা নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে এবং মোল্লা, মৌলভী, আলেম ও আল্লামা নামে পরিচিত। রাজনীতির লড়াইয়ে কার পক্ষে তারা দাঁড়াচ্ছে -সেটি নিয়ে তারা ভাবতেও তারা রাজী নয়। কোথাও মশা মাছির জটলা দেখলে বুঝতে হবে সেখানে গলিত আবর্জনা আছে। তেমনি দেশের নেতৃত্বে প্রতারক ও ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অপরাধী দেখলে যে কোন বিবেকবান মানুষ সহজে বুঝতে পারে, দেশটির জনগণও ভাল চরিত্রের নয়। শাসন ক্ষমতায় নষ্ট চরিত্রের নেতারা তো উঠে আসে নষ্ট নষ্ট জনগণের কাতার থেকেই।

পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমগণ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ব্যর্থ হয়েছে পৌত্তলিক কাফিরদের হামলা থেকে পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা দিতে। বরং তারা অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে ও ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে মুজিবের ন্যায় ভারতের এজেন্ট এবং হারাম রাজনীতির নেতাকে -যার রাজনৈতিক যুদ্ধটি সব সময়ই ছিল আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব, শরিয়া ও তাঁর ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডার বিরুদ্ধে।

 

ব্যর্থতা অপরাধীদের চেনায় ও নির্মূলে

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, জানমালের নিরাপত্তা ও শান্তি বাড়াতে হলে শুধু হিংস্র পশু, বিষাক্ত জীবাণু ও বিষধর কীটপতঙ্গকে চিনলে চলে না, সমাজের দুর্বৃত্ত ও মিথ্যাচারী প্রতারক নেতাদেরও চিনতে হয়। সেটি দৈনন্দিন জীবনের অতি মৌলিক যোগ্যতা (basic skills)। হিংস্র পশু নির্মূলের ন্যায় দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূলেও নামতে হয়। সে নির্মূলে মধ্যেই নিরাপত্তা। এজন্যই পবিত্র কুর’আন অনুযায়ী মুমিনেরগুণ হলো “আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার ওয়া রুহামাও বায়নাহুম।” অর্থ: কাফিরদের বিরুদ্ধে অতি কঠোর এবং নিজদের মধ্যে দয়াময়।” কারণ, দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের নাশকতা হিংস্র পশু ও  বিষাক্ত জীবাণুর চেয়েও ভয়নাক। একাত্তরের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের  কারণ কোন হিংস্র পশু নয়, বরং মুজিবের ন্যায় নীতিহীন এক দুর্বত্ত নেতা। মুজিবের অপরাধ, সে একাত্তরের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধকে ডেকে এনেছে। পাকিস্তান আর্মির ২৫ মার্চে রাস্তায় নামার আগেই ৭ মার্চ যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। হাতের কাছে যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে নামতে বলেছে। পাকিস্তান আর্মি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ সাল অবধি পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে ছিল। কিন্তু সে ২৩ বছরে আর্মির গুলিতে একজন পূর্ব পাকিস্তানীও মারা পড়েনি। তখন বাঙালির বিরুদ্ধে পাক আর্মির পক্ষ থেকে কোন যুদ্ধ হয়নি। কারণ, তখন RAW’য়ের এজেন্ট, যুদ্ধপাগল এবং ক্ষমতাপাগল মুজিব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে ছিল না। এজন্যই রাজনৈতিক অঙ্গণের দুর্বৃত্তদের সনাক্ত করা এবং তাদের নির্মূলের কাজটি ইসলামে ফরজ। কিন্তু এ কাজে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। তারা মুজিব ও তার সাথীদের ন্যায় ভয়ানক অপরাধীদের চিনতে ব্যর্থ হয়েছে। সে ব্যর্থতা নিয়ে তার মত অপরাধীকে মাথায় তুলেছে।

মহান রাব্বুল আলামীন মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। মুসলিমদের সে বিশেষ মর্যাদা কেন -সে ব্যাখ্যাটিও মহান রব সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে দিয়েছেন। সেটি এ জন্য যে, তাদের  দাড়ি-টুপি আছে এবং বেশী বেশী নামাজ-রাজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে তারা দুর্বৃত্তদের নির্মূল করে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ সে ফরজ মিশন নিয়ে বাঁচে না; বরং বাঁচে এর সম্পূর্ণ বিপরীত মিশন নিয়ে। দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূল  না করে বরং নির্বাচনে তাদেরকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। তারা কাজ করে দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের অবৈতনিক সেপাহী রূপে। তারা দুর্বৃত্ত নেতাদের পক্ষে ভোট দেয়, অর্থ দেয় এবং লড়াই করে। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে বাঙালি ভোটারগণ তো সেটিই করেছিল। সে নির্বাচনে মুজিবের ন্যায় বাঙালির সমগ্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধী ব্যক্তিকে বিপুল ভোটে সেদিন বিজয়ী করেছিল। যার পরিণাম, এ বঙ্গীয় মুসলিম ভূমিতে গণতন্ত্র কবরে গিয়েছিল এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এসেছিল -যা ১৫ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। মুজিবের মিথ্যাচারীতা, দুর্বৃত্তি, ভারত তোষণ এবং ইসলাম বিরোধীতা বাঙালি ভোটারদের কাছ সেদিন দোষের মনে হয়নি। মুজিবের ন্যায় ফ্যাসিস্ট নেতাগণ যদি জনগণে ভোটে ও অর্থে এরূপ প্রশ্রয় পায় তবে কি সেদেশে কল্যাণ আসে? কোন সভ্য দেশে কি এমন অসভ্যরা নির্বাচিত হয়? আরো পরিতাপের বিষয়, মুজিবের ন্যায় ফ্যাসিস্ট নেতাগণ যখন স্বায়ত্বশাসনের নামে ভোট নিয়ে পাকিস্তান ভাঙার যুদ্ধে নেমেছে ,জনগণ তখনও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।  তাকে কোন জবাবদহীতার মুখে পড়তে হয়নি।

 

অপরাধটি দেশ ভাঙার

মুসলিমের ঘর ভাঙাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধ হলো মুসলিম দেশ ভাঙাও। মুসলিম উম্মাহর পতনের শুরু তো তখন থেকেই যখন মুসলিম দেশ ভাঙাটি উৎসবের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটি এক ভয়ানক অপচেতনা। দেশের ভৌগলিক আয়োতন বাড়লে উম্মাহর শক্তিও বাড়ে; অপর দিকে দুর্বলতা বাড়ে দেশের আয়োতন ক্ষুদ্রতর হলে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, তাঁর ঈমানদার বান্দাগণ শক্তি, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করুক। তাই  ভূগোলে লাগাতর বৃদ্ধি আনা তো নবীজী (সা‍) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের সূন্নত। সে পথ ধরেই ইসলামী রাষ্ট্রটি মদিনার ক্ষুদ্র গ্রামীন শহর রাষ্ট্র থেকে বাড়তে বাড়তে বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম দেশের অখণ্ড ভূগোলের সুরক্ষাকে ফরজ করেছেন, এবং হারাম করেছেন সে ভূগোল খণ্ডিত করাকে। মুসলিম দেশের ভূগোল খণ্ডিত করা তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় শয়তানী শক্তির এজেন্ডা। অথচ একাত্তরে মুজিব ও মেজর জিয়া -উভয়ে শয়তানের সে এজেন্ডাকেই বিজয়ী করেছে এবং দুর্বল করেছে মুসলিম উম্মাহকে। আর বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম এরূপ অপরাধী নেতাদের বিপুল সমর্থন দিয়েছে। অথচ অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধীদের সমর্থন করাও গুরুতর অপরাধ। অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে ফিরাউন-নমরুদ হওয়ার জন্য নয়, বরং ফিরাউন-নমরুদদের সমর্থন করার জন্য।

 

সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার নাশকতা

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি সত্য আবিষ্কারে। সত্য আবিষ্কারে যারা ব্যর্থ হয় তারাই মূর্তি পূজা, গরু পূজা, সাপ পূজা, লিঙ্গ পূজার ন্যায় আদিম জাহিলিয়াত নিয়ে বাঁচে। তখন এ জীবনে তাদের বাঁচাটাই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যায়। অঢেল সম্পদ, বড় বড় ডিগ্রি, পেশাদারী নাম যশ -এমন কি নবেল প্রাইজও তখন কাজ দেয়না। মানব জীবনের সবচেয়ে কদর্য ব্যর্থতা হলো সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতা। মানব জাতির সকল ব্যর্থতার এটিই হলো মূল কারণ। শত শত মানুষ নবেল প্রাইজ পেয়েছে, হাজার হাজার মানুষ নানাবিধ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে সত্য আবিষ্কারে। মিশরের পিরামিড ও চীনের প্রাচীর হলো মানব ইতিহাসের সপ্তাশ্চর্যের দুটি বৃহৎ আশ্চর্য। কিন্তু যারা বিস্ময়কর পিরামিড এবং চীনের প্রাচীর গড়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে সত্য আবিষ্কারে। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয় হলো মানুষের সত্য আবিষ্করের সামর্থ্য; তিনি তার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার একমাত্র তাদেরই দেন, যারা সত্য আবিষ্কারে সফল। সে চুড়ান্ত সত্যটি হলো ইসলাম। সে সত্য আবিষ্কারের অর্থ সিরাতাল মুস্তাকীম আবিষ্কার। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের সত্য আবিষ্কারের সামর্থ্য দেখেন বস্তুত ইসলাম আবিষ্কারের সামর্থ্য দেখে, নবেল প্রাইজ পাওয়া দেখে নয়।  সত্য আবিষ্কারে যারা সফল হয় তারাই মুসলিম হয়।  আর সত্য আবিষ্কারের পুরষ্কারটি হলো জান্নাত। সত্য আবিষ্কারে বিস্ময়কর ও বিরল সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ:)। তাঁর সে আবিষ্কারের সামর্থ্যে মহান রব এতোই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি তাকে নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি খলিলুল্লাহ তথা আল্লাহর বন্ধু।

বড় বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও দান খয়রাত অনেক পৌত্তলিক ও নাস্তিক কাফিরও করে। কিন্তু তাদের মূল ব্যর্থতাটি সত্য আবিষ্কারে। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা অতি বিশাল। তারা সে ব্যর্থতায় ইতিহাস গড়েছে। বাংলাদেশের সকল বিপর্যয়ের মূল কারণ এই সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতা। তাদের সে ব্যর্থতা প্রকট ভাবে দেখা যায় ১৯৭১’য়ে।  সে ব্যর্থতার কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বাঙালি ছাত্র ও শিক্ষক কচুরিপানার ন্যায় ভেসে যায় কম্যুনিজম, সেক্যুলারিজম, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ ও হিন্দুত্ববাদের স্রোতে। সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার কারণে তারা পরিণত হয়েছে পাকিস্তানে ঘরের শত্রুতে এবং পৌত্তলিক ভারতের সেবাদাস কলাবোরেটরে। সে ব্যর্থতার কারণে খুনি মুজিবের ন্যায় বাকশালী ফ্যাসিস্ট অপরাধীকে জাতির পিতা, জাতির বন্ধু ও জাতির নেতা বানিয়েছে। সত্য দ্বীন তথা ইসলাম হলো আল্লাহর রশি। যারা সে রশি আঁকড়ে ধরে তারা ভেসে যায় না; বরং অনড় থাকে। সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার কারণেই বিপুল সংখ্যক বাঙালি ১৯৭১’য়ে ভারতীয় পৌত্তলিকদের কোলে গিয়ে উঠেছিল এবং ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে পাকিস্তান ভাঙার যুদ্ধে ভারতের দাস সৈনিকে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যেদেশের ঘরের শত্রুর সংখ্যা এতো বিশাল -সে দেশ কি কখনো বাঁচে? পাকিস্তানের অখণ্ডতা তাই বাঁচেনি।