১০:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতা ও অপরাধ

Reporter Name
  • Update Time : ১১:৩৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৬৯ Time View

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

জনগণও নিরপরাধ নয়

বাংলাদেশের জনগণও নিরপরাধ নয়। বরং তাদের অপরাধের মাত্রাটি বিশাল ও বহুবিধ। সবচেয়ে বড় অপরাধটি দেশের নাগরিক রূপে দায়িত্ব পালনে তাদের অনাগ্রহ, নিষ্ক্রিয়তা ও

 ব্যর্থতা। উন্নত ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণের দায়টি শুধু সরকারের নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের। সরকারি প্রশাসন ও নেতৃত্বে আর ক’জন থাকে; দেশের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশী মানুষ তো সরকারের বাইরে। কিন্তু তারা যদি দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয়, উদাসীন ও ফাঁকিবাজ হয় -তবে সে জাতির পতন কি কেউ ঠেকাতে পারে? দায়িত্ব পালনে অবহেলাই তো বড় অপরাধ। এমন অপরাধী ব্যক্তিদের পৃথিবীর কোথাও কোন চাকুরিতে রাখা হয়না। কোথাও তাদের সম্মান জুটে না। কিছু পঙ্গু ব্যক্তি ছাড়া প্রতিটি মানুষকেই মহান আল্লাহ তায়ালা নানাবিধ দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি হলো অর্পিত আমানত। আর যারা ঈমানদার তাদের ব্যাপারে বিষয়টি ভিন্ন। তাদের জান ও মাল হলো মহান আল্লাহ তায়ালা ক্রয়কৃত সম্পদ -যার ঘোষণা এসেছে সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে। সে আমানতকে দায়িত্ব পালনে কাজে না লাগানোই তো বড় রকমের খেয়ানত। খেয়ানত তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। অথচ বাঙালি মুসলিমগণ ইতিহাস গড়েছে খেয়ানতে। এমন কি নিজের বিবেক ও মেধাকে কাজে লাগায়নি একজন ভাল মানুষকে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের দ্রুত উত্থান ও বিশ্বশক্তি হওয়ার মূল কারণ, প্রতিটি মুসলিম সেদিন নিজের সমগ্র সামর্থ্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন লাগিয়েছেন। এমন কি প্রত্যেক সাহাবী জিহাদে প্রাণ দানে হাজির হয়েছেন এবং অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছেন। নিষ্ক্রিয় থাকাটি সেদিন অপরাধ গণ্য হয়েছে এবং যারা নিষ্ক্রিয় থেকেছে তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। অথচ আজকের মুসলিমদের অবস্থা, দেশের কল্যাণে কিছু করা দূরে থাক, একজন ভাল মানুষকে ভোট দিতেও তারা রাজী নয়। এমন কি সে হুশ তাদেরও নাই -যারা নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে এবং মোল্লা মৌলভী আলেম নামে পরিচিত। অতীতে এরা ভোট দিয়েছে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় প্রতারক, মিথ্যাবাদী, ফ্যাসিস্ট, ভারতীয় এজেন্ট ও দুর্বৃত্তকে। রাজনীতির লড়াইয়ে কার পক্ষে তারা দাঁড়াচ্ছে -সেটি নিয়ে ভাবতেও তারা রাজী নয়। কোথাও মশা মাছির জটলা দেখলে বুঝতে হবে সেখানে গলিত আবর্জনা আছে। তেমনি দেশের নেতৃত্বে প্রতারক ও ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অপরাধী দেখলে যে কোন বিবেকবান মানুষ সহজে বুঝতে পারে, দেশটির জনগণও ভাল চরিত্রের নয়। ভাবে, নেতারা সে নষ্ট জনগণ থেকেই উঠে এসেছে।  মুজিব, এরশাদ ও হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তগণ কি কোন সভ্য দেশের রাষ্ট্র নায়ক হতে পারে?

মুসলিম রূপে প্রতিটি নাগরিকের উপর ফরজ দায়িত্ব হলো, কুর‌’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। এবং মহান আল্লাহ’র এজেন্ডাকে বিজয়ী করার অর্থ তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়াকে বিজয়ী করা। তবে সে এজেন্ডা পূরণে অপরিহার্য হলো ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ -যেমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন নবীজী (সা:)। ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ ছাড়া মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব হলো পূর্ণ ইসলাম পালন। পূর্ণ ইসলাম তখন শুধু কিতাবেই থেকে যায়। আরো দায়িত্ব হলো, শত্রু শক্তির হামলা থেকে মুসলিম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার প্রতিরক্ষা দেয়া। পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমগণ উপরিউক্ত সবগুলি ক্ষেত্রেই দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ব্যর্থ হয়েছে পৌত্তলিক কাফিরদের হামলা থেকে পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা দিতে। বরং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ বাংলাদেশে তার বিজয়ী করেছে অভিশপ্ত শয়তানের এজেন্ডাকে। শয়তানের সে বিজয়টি প্রকট ভাবে দৃশ্যমান হয় বাংলাদেশের নগর-বন্দরে পতিতাবৃত্তি, মদের দোকান, জুয়া, ঘুষ, সূদী ব্যাংকের ন্যায় হারাম ব্যবসার রমরমা উপস্থিতি থেকে। দেশের মানুষ অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে ও ভোট দিয়ে বিজয়ী করে সেসব হারাম রাজনীতির নেতা-কর্মীদের -যাদের যুদ্ধটি আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ার বিরুদ্ধে।

বাঙালি মুসলিমগণ এতোটাই ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্ট যে তাদের ভাবনায় ও তাড়নায় পরকালে জবাবদেহীতার কোন ভয় নাই। কাউকে ভোট দেয়ার অর্থ তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া। যার ভাবনা ও তাড়না মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়া সে কি কখনো তাঁর রব’য়ের শরিয়ার ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী সেক্যুলারিস্ট নেতাকে ভোট দিতে পারে? ভোট দিলে সে কি মুসলিম থাকে?

বাঙালি মুসলিমদের ভোট দেয়া দেখে মনে হয় তাদের মনে আদৌ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়ার কোন ভাবনা ও তাড়না নাই। তাদের তাড়না হলো, পছন্দের কোন সেক্যুলারিস্ট বা বাঙালি ফ্যাসিস্ট প্রার্থীকে বিজয়ী করা -যারা শরিয়া আইন ও আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। এমন প্রার্থীরা যে শয়তানের খলিফা -সে বোধটুকুও তাদের নাই। তাদের মাঝে যা কাজ করে তা হলো ইহজাগতিক স্বার্থ প্রাপ্তির ভাবনা। সে ভাবনা থেকেই এমন বাঙালি মুসলিমগণ অতীতে ফ্যাসিস্ট মুজিব, সেক্যুলার জিয়া ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার ন্যায় অপরাধীদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে ও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তাদের ইসলাম বিরোধী রাজনীতিকে। ইসলামের সাথে তাদের এ গাদ্দারীর কারণেই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নবীজী (সা:) প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বেঁচে নাই। নবীজী (সা:) ইসলাম বাঁচলে তো প্রতিষ্ঠা পেত ইসলামী রাষ্ট্র -যেমন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল নবীজী (সা:)’র আমলে। তখন প্রতিষ্ঠা পেত শরিয়া এবং নির্মূল হতো মিথ্যা, দুর্বৃত্তি ও অবিচার। অতীতের ন্যায় মুসলিমগণ তখন পরিণত হতো বিশ্বশক্তিতে।

 

ব্যর্থতা অপরাধীদের চেনায়

জানমালের নিরাপত্তা ও শান্তি বাড়াতে হলে শুধু হিংস্র পশু, বিষাক্ত জীবাণু ও বিষধর কীটপতঙ্গকে চিনলে চলে না, সমাজের দুর্বৃত্ত ও মিথ্যাচারী প্রতারকদেরও চিনতে হয়। হিংস্র পশু নির্মূলের ন্যায় দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূলেও নামতে হয়। কারণ এদের নাশকতা হিংস্র পশু ও  বিষাক্ত জীবাণুর চেয়েও ভয়নাক। এজন্যই দুর্বৃত্ত নির্মূলের কাজটি ইসলামে ফরজ। মহান রাব্বুল আলামীন মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। সেটি এ জন্য যে, তারা দুর্বৃত্তদের নির্মূল করে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ সে ফরজ মিশন নিয়ে বাঁচে না; বরং বাঁচে সম্পূর্ণ বিপরীত মিশন নিয়ে। দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূল  না করে বরং নির্বাচনে তাদেরকে বিজয়ী করে। তারা কাজ করে দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের অবৈতনিক সেপাহী রূপে। তারা দুর্বৃত্ত নেতাদের পক্ষে ভোট দেয়, অর্থ দেয় এবং লড়াই করে। মুজিবের মিথ্যাচারীতা, দুর্বৃত্তি, ভারত তোষণ, গণহত্যা এবং ইসলাম বিরোধীতা তাদের কাছ দোষের মনে হয়নি|।

অপরাধ দেশ ভাঙার

মুসলিমের ঘর ভাঙাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধ হলো মুসলিম দেশ ভাঙাও। মুসলিম উম্মাহর পতনের শুরু তো তখন থেকেই যখন মুসলিম দেশ ভাঙাটি উৎসবের বিষয় হয়েছে। দেশের ভৌগলিক আয়োতন বাড়লে উম্মাহর শক্তিও বাড়ে; অপর দিকে দুর্বলতা বাড়ে দেশের আয়োতন ক্ষুদ্রতর হলে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, তাঁর ঈমানদার বান্দাগণ শক্তি, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করুক। তাই  ভূগোলে লাগাতর বৃদ্ধি আনা তো নবীজী (সা‍) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের সূন্নত। সে পথ ধরেই মদিনার ক্ষুদ্র গ্রামীন শহর ভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে ইসলামী রাষ্ট্র বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম দেশের অখণ্ড ভূগোলের সুরক্ষাকে ফরজ করেছেন, এবং হারাম করেছেন সে ভূগোল খণ্ডিত করাকে। মুসলিম দেশের ভূগোল খণ্ডিত করা তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় শয়তানী শক্তির এজেন্ডা। অথচ একাত্তরে মুজিব ও জিয়া -উভয়ে শয়তানের সে এজেন্ডাকেই বিজয়ী করেছে এবং দুর্বল করেছে মুসলিম উম্মাহকে। আর বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম এরূপ অপরাধী নেতাদের বিপুল সমর্থন দিয়েছে। অথচ অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধীদের সমর্থন করাও অপরাধ।

ব্যর্থতা সত্য আবিষ্কারে

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতা। সত্য আবিষ্কারে যারা ব্যর্থ হয় তারাই মূর্তি পূজা, গরু পূজা, সাপ পূজা, লিঙ্গ পূজার ন্যায় আদিম জাহিলিয়াত নিয়ে বাঁচে। এভাবে এ জীবনে বাঁচাটাই ব্যর্থ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয় হলো সত্য আবিষ্কারের সামর্থ্য; সত্য আবিষ্কারে বিস্ময়কর ও বিরল সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ:)। তাঁর সে সামর্থ্যে খুশি হয়ে মহান রব তাকে নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি খলিলুল্লাহ তথা আল্লাহর বন্ধু। কিন্তু সত্য আবিষ্কারে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। এজন্যই তারা বিপুল সংখ্যায় ভেসে গেছে কম্যুনিজম, সেক্যুলারিজম, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও রাবিন্দ্রিক হিন্দুত্ববাদের স্রোতে। ফলে একাত্তরে পরিণত হয়েছে ভারতীয় পৌত্তলিকদের একান্ত বন্ধুতে।

ত্য আবিষ্কারে এবং সত্যকে আঁকড়ে ধরতে যারা ব্যর্থ হয় তাদের পক্ষে অসম্ভব হয় মুসলিম হওয়া। তাদের পক্ষে অসম্ভব হয় সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। অজ্ঞতা নিয়ে কখনো সত্য আবিষ্কার করা যায়না। ঈমানদার হতে হলে তাই জ্ঞানী হতে হয়। অজ্ঞরা যেমন গরুকে পূজা দেয়, তেমনি মুজিবের ন্যায় দুর্বৃত্তদেরও নেতার আসনে বসায়। এজন্যই সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো অজ্ঞতা নির্মূলের জিহাদ। সে জিহাদের অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন। অজ্ঞতা পাপের রাস্তা খুলে দেয়, এবং অপরাধী বানায়। অজ্ঞ বাঙালি মুসলিমগণ তাই সহজেই আটকা পড়েছে মুজিবের ন্যায় স্বার্থান্বেষী প্রতারকের জালে। এরাই একাত্তরে পাকিস্তান ধ্বংসে ভারতীয় কাফিরদের বেতনভোগী ও আহারভোজী সৈনিকে পরিণত হয়েছে। অনেকে প্রাণও দিয়েছে। এভাবেই তো আযাব নেমে আসে অজ্ঞদের জীবনে। তবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ আযাবটি অপেক্ষা করছে আখেরাতে।

পক্ষ নিয়েছিল অপরাধীদের

অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, গুরুতর অপরাধ হলো অপরাধীকে সমর্থন করা বা অপরাধীর পক্ষে খাড়া হওয়া। কারণ, এরূপ জনসমর্থণের কারণেই অপরাধী শাসকগণ তাদের অপরাধ কর্ম নিয়ে প্রবল দাপটে বেঁচে থাকে।  মুজিব ও জিয়া উভয়ই মারা গেছে, কিন্তু তাদের অপরাধের ইতিহাস আজও বেঁচে আছে। তারা পৌত্তলিক কাফিরদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং তাদের এজেন্ডাকে বিজয়ী করেছিল। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এরূপ হারাম কাজের জন্য অবশ্যই তাদের জবাব দিতে হবে।  শুধু আল্লাহ তায়ালার দরবারে নয়, বহু শত বছর পরও মুসলিম উম্মাহর আদালতে তাদের দু’জনকেই অপরাধের দায়ে ইতিহাসের কাঠগড়ায় খাড়া হতে হবে। ‌কারণ, তাদের নাশকতা শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিলনা, ছিল মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধেও।

মুসলিম দেশের ভূগোল খণ্ডিত করা তো তাবত শয়তানী শক্তির প্রধান এজেন্ডা। শয়তানের সে এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে ১৯১৭ সালে ইংরেজ, ফরাসী এবং অন্যান্য কাফির শক্তি উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে যু্দ্ধ করেছিল; আরব ভূখণ্ড আজ ২২ টুকরোয় বিভক্তি তো তাদের কারণেই। এবং সে অভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল পৌত্তলিক ভারত।  মুজিব ও জিয়া -উভয়েই শয়তানের সে এজেন্ডাকেই বিজয়ী করতে ভারতের সাথে মিলে যুদ্ধ করেছিল। তাদের সে যুদ্ধে শক্তিশালী হয়েছে পৌত্তলিক ভারত এবং দুর্বল হয়েছে মুসলিম উম্মাহ।

অপরাধ দুর্বৃত্ত প্রতিপালনের

জনগণের অপরাধ তারা শুধু হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে দেশের নগর-বন্দরে পতিতাবৃত্তি, জুয়া, মদের দোকান, সূদী ব্যাংকের ন্যায় হারাম ব্যবসার পাহারাদারীর ব্যবস্থা করছে না, বরং অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে ও ভোট দিয়ে হারাম রাজনীতির নেতা-কর্মীদের বিজয়ী করেছে। একাত্তরে যেসব রাজাকারগণ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতীয় পৌত্তলিকদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে খাড়া হলো এবং হাজারে হাজার শহীদ হলো এবং ভারতের সেবক দুর্বৃত্তগণ যখন তাদেরকে স্বাধীনতার শত্রু বললো -তখন তারা প্রতিবাদ করেনি। প্রায় দুই লক্ষ বিহারীদের যখন তাদের চোখের সামনে হত্যা করা হলো, তাদের ঘর-বাড়ি দখলে নেয়া হলো এবং বিহারী মহিলাদের ধর্ষণ করা হলো -তখনও তারা নীরব ও নিষ্ক্রিয় থেকেছে। গরু ছাগলের সামনে কেউ ধর্ষিতা বা নিহত হলে গরু ছাগল প্রতিবাদ করে না। সেদিকে নজর না দিয়ে গরু ছাগল তখনও ঘাস খায়। বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা সে চেতনাহীন জীবদের থেকে উচ্চতর ছিলনা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়ে ফ্যাসিস্ট মুজিবের ন্যায় ভারতীয় সেবাদাসকে বিজয়ী করেছে। এবং সে দুর্বৃত্তকে নেতা, পিতা ও বন্ধু বলেছে।

বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ভাবনায়, লড়াইয়ে ও ভোটদানে পরকালের গুরুত্ব নাই। বরং রয়েছে ইহজাগতিক স্বার্থপ্রাপ্তির ভাবনা। সে ইহজাগতিক ভাবনা থেকেই সেক্যুলার মুজিব ও সেক্যুলার জিয়ার ন্যায় অপরাধীদেরকে সম্মানিত করেছে এবং বিজয়ী করেছে তাদের রাজনীতিকে। তাদের মেহনত নাই, এবং বিনিয়োগও নাই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করায়। ফলে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রতিষ্ঠা পায়নি নবীজী (সা:)’র ইসলাম। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, মসজিদ-মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল, তাবলিগী ইজতেমা দেখে অনেকেই হয়তো ভাবে ইসলাম প্রবল বেঁচে আছে। প্রশ্ন হলো, যে ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্র নাই, শরীয়া নাই, দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদ নাই, কুর’আন বুঝার তাড়না নাই, বিশ্বময়ী মুসলিম ভাতৃত্ব নাই -সে ইসলামকে কি আদৌও নবীজী (সা:)’র ইসলাম বলা যায়? বাংলাদেশের ইসলামকে নবীজী (সা:)’র ইসলাম বললে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের আমলের ইসলামকে কি বলা যাবে?

জ্ঞানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হলো ইতিহাস। ইতিহাসের  মধ্য দিয়ে মৃতরা কথা বলে; এবং ভয়ানক ব্যর্থতার পথগুলির ব্যাপারে জীবিতদের সাবধান করে।  এবং দেখায় সফলতার পথগুলিও। বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতার ইতিহাসে ভাবনার বিষয় যেমন অনেক; তেমনি শিক্ষা নেয়ার বিষয়ও অনেক। তবে শিক্ষা তো তারাই নিতে পারে যারা ইতিহাস ঘেঁটে সে ব্যর্থতাগুলিকে আবিষ্কার করতে জানে এবং সেগুলি নিয়ে ভাবতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। তারা যেমন নিজেদের ব্যর্থতাগুলির আবিষ্কারে আগ্রহী নয়, তেমনি আগ্রহী নয সেগুলি নিয়ে ভাবতে ও শিক্ষা নিতে। এমন জাতিরাই বার বার ব্যর্থতার ইতিহাস গড়ে। ০৩/১০/২০২৫

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতা ও অপরাধ

Update Time : ১১:৩৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

জনগণও নিরপরাধ নয়

বাংলাদেশের জনগণও নিরপরাধ নয়। বরং তাদের অপরাধের মাত্রাটি বিশাল ও বহুবিধ। সবচেয়ে বড় অপরাধটি দেশের নাগরিক রূপে দায়িত্ব পালনে তাদের অনাগ্রহ, নিষ্ক্রিয়তা ও

 ব্যর্থতা। উন্নত ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণের দায়টি শুধু সরকারের নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের। সরকারি প্রশাসন ও নেতৃত্বে আর ক’জন থাকে; দেশের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশী মানুষ তো সরকারের বাইরে। কিন্তু তারা যদি দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয়, উদাসীন ও ফাঁকিবাজ হয় -তবে সে জাতির পতন কি কেউ ঠেকাতে পারে? দায়িত্ব পালনে অবহেলাই তো বড় অপরাধ। এমন অপরাধী ব্যক্তিদের পৃথিবীর কোথাও কোন চাকুরিতে রাখা হয়না। কোথাও তাদের সম্মান জুটে না। কিছু পঙ্গু ব্যক্তি ছাড়া প্রতিটি মানুষকেই মহান আল্লাহ তায়ালা নানাবিধ দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি হলো অর্পিত আমানত। আর যারা ঈমানদার তাদের ব্যাপারে বিষয়টি ভিন্ন। তাদের জান ও মাল হলো মহান আল্লাহ তায়ালা ক্রয়কৃত সম্পদ -যার ঘোষণা এসেছে সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে। সে আমানতকে দায়িত্ব পালনে কাজে না লাগানোই তো বড় রকমের খেয়ানত। খেয়ানত তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। অথচ বাঙালি মুসলিমগণ ইতিহাস গড়েছে খেয়ানতে। এমন কি নিজের বিবেক ও মেধাকে কাজে লাগায়নি একজন ভাল মানুষকে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের দ্রুত উত্থান ও বিশ্বশক্তি হওয়ার মূল কারণ, প্রতিটি মুসলিম সেদিন নিজের সমগ্র সামর্থ্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন লাগিয়েছেন। এমন কি প্রত্যেক সাহাবী জিহাদে প্রাণ দানে হাজির হয়েছেন এবং অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছেন। নিষ্ক্রিয় থাকাটি সেদিন অপরাধ গণ্য হয়েছে এবং যারা নিষ্ক্রিয় থেকেছে তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। অথচ আজকের মুসলিমদের অবস্থা, দেশের কল্যাণে কিছু করা দূরে থাক, একজন ভাল মানুষকে ভোট দিতেও তারা রাজী নয়। এমন কি সে হুশ তাদেরও নাই -যারা নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে এবং মোল্লা মৌলভী আলেম নামে পরিচিত। অতীতে এরা ভোট দিয়েছে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় প্রতারক, মিথ্যাবাদী, ফ্যাসিস্ট, ভারতীয় এজেন্ট ও দুর্বৃত্তকে। রাজনীতির লড়াইয়ে কার পক্ষে তারা দাঁড়াচ্ছে -সেটি নিয়ে ভাবতেও তারা রাজী নয়। কোথাও মশা মাছির জটলা দেখলে বুঝতে হবে সেখানে গলিত আবর্জনা আছে। তেমনি দেশের নেতৃত্বে প্রতারক ও ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অপরাধী দেখলে যে কোন বিবেকবান মানুষ সহজে বুঝতে পারে, দেশটির জনগণও ভাল চরিত্রের নয়। ভাবে, নেতারা সে নষ্ট জনগণ থেকেই উঠে এসেছে।  মুজিব, এরশাদ ও হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তগণ কি কোন সভ্য দেশের রাষ্ট্র নায়ক হতে পারে?

মুসলিম রূপে প্রতিটি নাগরিকের উপর ফরজ দায়িত্ব হলো, কুর‌’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। এবং মহান আল্লাহ’র এজেন্ডাকে বিজয়ী করার অর্থ তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়াকে বিজয়ী করা। তবে সে এজেন্ডা পূরণে অপরিহার্য হলো ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ -যেমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন নবীজী (সা:)। ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ ছাড়া মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব হলো পূর্ণ ইসলাম পালন। পূর্ণ ইসলাম তখন শুধু কিতাবেই থেকে যায়। আরো দায়িত্ব হলো, শত্রু শক্তির হামলা থেকে মুসলিম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার প্রতিরক্ষা দেয়া। পরিতাপের বিষয় হলো, বাঙালি মুসলিমগণ উপরিউক্ত সবগুলি ক্ষেত্রেই দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেমন ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ব্যর্থ হয়েছে পৌত্তলিক কাফিরদের হামলা থেকে পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা দিতে। বরং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ বাংলাদেশে তার বিজয়ী করেছে অভিশপ্ত শয়তানের এজেন্ডাকে। শয়তানের সে বিজয়টি প্রকট ভাবে দৃশ্যমান হয় বাংলাদেশের নগর-বন্দরে পতিতাবৃত্তি, মদের দোকান, জুয়া, ঘুষ, সূদী ব্যাংকের ন্যায় হারাম ব্যবসার রমরমা উপস্থিতি থেকে। দেশের মানুষ অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে ও ভোট দিয়ে বিজয়ী করে সেসব হারাম রাজনীতির নেতা-কর্মীদের -যাদের যুদ্ধটি আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ার বিরুদ্ধে।

বাঙালি মুসলিমগণ এতোটাই ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্ট যে তাদের ভাবনায় ও তাড়নায় পরকালে জবাবদেহীতার কোন ভয় নাই। কাউকে ভোট দেয়ার অর্থ তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া। যার ভাবনা ও তাড়না মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়া সে কি কখনো তাঁর রব’য়ের শরিয়ার ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী সেক্যুলারিস্ট নেতাকে ভোট দিতে পারে? ভোট দিলে সে কি মুসলিম থাকে?

বাঙালি মুসলিমদের ভোট দেয়া দেখে মনে হয় তাদের মনে আদৌ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়ার কোন ভাবনা ও তাড়না নাই। তাদের তাড়না হলো, পছন্দের কোন সেক্যুলারিস্ট বা বাঙালি ফ্যাসিস্ট প্রার্থীকে বিজয়ী করা -যারা শরিয়া আইন ও আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। এমন প্রার্থীরা যে শয়তানের খলিফা -সে বোধটুকুও তাদের নাই। তাদের মাঝে যা কাজ করে তা হলো ইহজাগতিক স্বার্থ প্রাপ্তির ভাবনা। সে ভাবনা থেকেই এমন বাঙালি মুসলিমগণ অতীতে ফ্যাসিস্ট মুজিব, সেক্যুলার জিয়া ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার ন্যায় অপরাধীদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে ও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তাদের ইসলাম বিরোধী রাজনীতিকে। ইসলামের সাথে তাদের এ গাদ্দারীর কারণেই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নবীজী (সা:) প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বেঁচে নাই। নবীজী (সা:) ইসলাম বাঁচলে তো প্রতিষ্ঠা পেত ইসলামী রাষ্ট্র -যেমন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল নবীজী (সা:)’র আমলে। তখন প্রতিষ্ঠা পেত শরিয়া এবং নির্মূল হতো মিথ্যা, দুর্বৃত্তি ও অবিচার। অতীতের ন্যায় মুসলিমগণ তখন পরিণত হতো বিশ্বশক্তিতে।

 

ব্যর্থতা অপরাধীদের চেনায়

জানমালের নিরাপত্তা ও শান্তি বাড়াতে হলে শুধু হিংস্র পশু, বিষাক্ত জীবাণু ও বিষধর কীটপতঙ্গকে চিনলে চলে না, সমাজের দুর্বৃত্ত ও মিথ্যাচারী প্রতারকদেরও চিনতে হয়। হিংস্র পশু নির্মূলের ন্যায় দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূলেও নামতে হয়। কারণ এদের নাশকতা হিংস্র পশু ও  বিষাক্ত জীবাণুর চেয়েও ভয়নাক। এজন্যই দুর্বৃত্ত নির্মূলের কাজটি ইসলামে ফরজ। মহান রাব্বুল আলামীন মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। সেটি এ জন্য যে, তারা দুর্বৃত্তদের নির্মূল করে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ সে ফরজ মিশন নিয়ে বাঁচে না; বরং বাঁচে সম্পূর্ণ বিপরীত মিশন নিয়ে। দুর্বৃত্ত নেতাদের নির্মূল  না করে বরং নির্বাচনে তাদেরকে বিজয়ী করে। তারা কাজ করে দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের অবৈতনিক সেপাহী রূপে। তারা দুর্বৃত্ত নেতাদের পক্ষে ভোট দেয়, অর্থ দেয় এবং লড়াই করে। মুজিবের মিথ্যাচারীতা, দুর্বৃত্তি, ভারত তোষণ, গণহত্যা এবং ইসলাম বিরোধীতা তাদের কাছ দোষের মনে হয়নি|।

অপরাধ দেশ ভাঙার

মুসলিমের ঘর ভাঙাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধ হলো মুসলিম দেশ ভাঙাও। মুসলিম উম্মাহর পতনের শুরু তো তখন থেকেই যখন মুসলিম দেশ ভাঙাটি উৎসবের বিষয় হয়েছে। দেশের ভৌগলিক আয়োতন বাড়লে উম্মাহর শক্তিও বাড়ে; অপর দিকে দুর্বলতা বাড়ে দেশের আয়োতন ক্ষুদ্রতর হলে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, তাঁর ঈমানদার বান্দাগণ শক্তি, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করুক। তাই  ভূগোলে লাগাতর বৃদ্ধি আনা তো নবীজী (সা‍) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের সূন্নত। সে পথ ধরেই মদিনার ক্ষুদ্র গ্রামীন শহর ভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে ইসলামী রাষ্ট্র বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম দেশের অখণ্ড ভূগোলের সুরক্ষাকে ফরজ করেছেন, এবং হারাম করেছেন সে ভূগোল খণ্ডিত করাকে। মুসলিম দেশের ভূগোল খণ্ডিত করা তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় শয়তানী শক্তির এজেন্ডা। অথচ একাত্তরে মুজিব ও জিয়া -উভয়ে শয়তানের সে এজেন্ডাকেই বিজয়ী করেছে এবং দুর্বল করেছে মুসলিম উম্মাহকে। আর বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম এরূপ অপরাধী নেতাদের বিপুল সমর্থন দিয়েছে। অথচ অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধীদের সমর্থন করাও অপরাধ।

ব্যর্থতা সত্য আবিষ্কারে

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতা। সত্য আবিষ্কারে যারা ব্যর্থ হয় তারাই মূর্তি পূজা, গরু পূজা, সাপ পূজা, লিঙ্গ পূজার ন্যায় আদিম জাহিলিয়াত নিয়ে বাঁচে। এভাবে এ জীবনে বাঁচাটাই ব্যর্থ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি প্রিয় হলো সত্য আবিষ্কারের সামর্থ্য; সত্য আবিষ্কারে বিস্ময়কর ও বিরল সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ:)। তাঁর সে সামর্থ্যে খুশি হয়ে মহান রব তাকে নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি খলিলুল্লাহ তথা আল্লাহর বন্ধু। কিন্তু সত্য আবিষ্কারে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। এজন্যই তারা বিপুল সংখ্যায় ভেসে গেছে কম্যুনিজম, সেক্যুলারিজম, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও রাবিন্দ্রিক হিন্দুত্ববাদের স্রোতে। ফলে একাত্তরে পরিণত হয়েছে ভারতীয় পৌত্তলিকদের একান্ত বন্ধুতে।

ত্য আবিষ্কারে এবং সত্যকে আঁকড়ে ধরতে যারা ব্যর্থ হয় তাদের পক্ষে অসম্ভব হয় মুসলিম হওয়া। তাদের পক্ষে অসম্ভব হয় সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। অজ্ঞতা নিয়ে কখনো সত্য আবিষ্কার করা যায়না। ঈমানদার হতে হলে তাই জ্ঞানী হতে হয়। অজ্ঞরা যেমন গরুকে পূজা দেয়, তেমনি মুজিবের ন্যায় দুর্বৃত্তদেরও নেতার আসনে বসায়। এজন্যই সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো অজ্ঞতা নির্মূলের জিহাদ। সে জিহাদের অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন। অজ্ঞতা পাপের রাস্তা খুলে দেয়, এবং অপরাধী বানায়। অজ্ঞ বাঙালি মুসলিমগণ তাই সহজেই আটকা পড়েছে মুজিবের ন্যায় স্বার্থান্বেষী প্রতারকের জালে। এরাই একাত্তরে পাকিস্তান ধ্বংসে ভারতীয় কাফিরদের বেতনভোগী ও আহারভোজী সৈনিকে পরিণত হয়েছে। অনেকে প্রাণও দিয়েছে। এভাবেই তো আযাব নেমে আসে অজ্ঞদের জীবনে। তবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ আযাবটি অপেক্ষা করছে আখেরাতে।

পক্ষ নিয়েছিল অপরাধীদের

অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, গুরুতর অপরাধ হলো অপরাধীকে সমর্থন করা বা অপরাধীর পক্ষে খাড়া হওয়া। কারণ, এরূপ জনসমর্থণের কারণেই অপরাধী শাসকগণ তাদের অপরাধ কর্ম নিয়ে প্রবল দাপটে বেঁচে থাকে।  মুজিব ও জিয়া উভয়ই মারা গেছে, কিন্তু তাদের অপরাধের ইতিহাস আজও বেঁচে আছে। তারা পৌত্তলিক কাফিরদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং তাদের এজেন্ডাকে বিজয়ী করেছিল। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এরূপ হারাম কাজের জন্য অবশ্যই তাদের জবাব দিতে হবে।  শুধু আল্লাহ তায়ালার দরবারে নয়, বহু শত বছর পরও মুসলিম উম্মাহর আদালতে তাদের দু’জনকেই অপরাধের দায়ে ইতিহাসের কাঠগড়ায় খাড়া হতে হবে। ‌কারণ, তাদের নাশকতা শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিলনা, ছিল মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধেও।

মুসলিম দেশের ভূগোল খণ্ডিত করা তো তাবত শয়তানী শক্তির প্রধান এজেন্ডা। শয়তানের সে এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে ১৯১৭ সালে ইংরেজ, ফরাসী এবং অন্যান্য কাফির শক্তি উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে যু্দ্ধ করেছিল; আরব ভূখণ্ড আজ ২২ টুকরোয় বিভক্তি তো তাদের কারণেই। এবং সে অভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল পৌত্তলিক ভারত।  মুজিব ও জিয়া -উভয়েই শয়তানের সে এজেন্ডাকেই বিজয়ী করতে ভারতের সাথে মিলে যুদ্ধ করেছিল। তাদের সে যুদ্ধে শক্তিশালী হয়েছে পৌত্তলিক ভারত এবং দুর্বল হয়েছে মুসলিম উম্মাহ।

অপরাধ দুর্বৃত্ত প্রতিপালনের

জনগণের অপরাধ তারা শুধু হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে দেশের নগর-বন্দরে পতিতাবৃত্তি, জুয়া, মদের দোকান, সূদী ব্যাংকের ন্যায় হারাম ব্যবসার পাহারাদারীর ব্যবস্থা করছে না, বরং অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে ও ভোট দিয়ে হারাম রাজনীতির নেতা-কর্মীদের বিজয়ী করেছে। একাত্তরে যেসব রাজাকারগণ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতীয় পৌত্তলিকদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে খাড়া হলো এবং হাজারে হাজার শহীদ হলো এবং ভারতের সেবক দুর্বৃত্তগণ যখন তাদেরকে স্বাধীনতার শত্রু বললো -তখন তারা প্রতিবাদ করেনি। প্রায় দুই লক্ষ বিহারীদের যখন তাদের চোখের সামনে হত্যা করা হলো, তাদের ঘর-বাড়ি দখলে নেয়া হলো এবং বিহারী মহিলাদের ধর্ষণ করা হলো -তখনও তারা নীরব ও নিষ্ক্রিয় থেকেছে। গরু ছাগলের সামনে কেউ ধর্ষিতা বা নিহত হলে গরু ছাগল প্রতিবাদ করে না। সেদিকে নজর না দিয়ে গরু ছাগল তখনও ঘাস খায়। বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা সে চেতনাহীন জীবদের থেকে উচ্চতর ছিলনা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়ে ফ্যাসিস্ট মুজিবের ন্যায় ভারতীয় সেবাদাসকে বিজয়ী করেছে। এবং সে দুর্বৃত্তকে নেতা, পিতা ও বন্ধু বলেছে।

বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ভাবনায়, লড়াইয়ে ও ভোটদানে পরকালের গুরুত্ব নাই। বরং রয়েছে ইহজাগতিক স্বার্থপ্রাপ্তির ভাবনা। সে ইহজাগতিক ভাবনা থেকেই সেক্যুলার মুজিব ও সেক্যুলার জিয়ার ন্যায় অপরাধীদেরকে সম্মানিত করেছে এবং বিজয়ী করেছে তাদের রাজনীতিকে। তাদের মেহনত নাই, এবং বিনিয়োগও নাই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করায়। ফলে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রতিষ্ঠা পায়নি নবীজী (সা:)’র ইসলাম। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, মসজিদ-মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল, তাবলিগী ইজতেমা দেখে অনেকেই হয়তো ভাবে ইসলাম প্রবল বেঁচে আছে। প্রশ্ন হলো, যে ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্র নাই, শরীয়া নাই, দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদ নাই, কুর’আন বুঝার তাড়না নাই, বিশ্বময়ী মুসলিম ভাতৃত্ব নাই -সে ইসলামকে কি আদৌও নবীজী (সা:)’র ইসলাম বলা যায়? বাংলাদেশের ইসলামকে নবীজী (সা:)’র ইসলাম বললে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের আমলের ইসলামকে কি বলা যাবে?

জ্ঞানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হলো ইতিহাস। ইতিহাসের  মধ্য দিয়ে মৃতরা কথা বলে; এবং ভয়ানক ব্যর্থতার পথগুলির ব্যাপারে জীবিতদের সাবধান করে।  এবং দেখায় সফলতার পথগুলিও। বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতার ইতিহাসে ভাবনার বিষয় যেমন অনেক; তেমনি শিক্ষা নেয়ার বিষয়ও অনেক। তবে শিক্ষা তো তারাই নিতে পারে যারা ইতিহাস ঘেঁটে সে ব্যর্থতাগুলিকে আবিষ্কার করতে জানে এবং সেগুলি নিয়ে ভাবতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। তারা যেমন নিজেদের ব্যর্থতাগুলির আবিষ্কারে আগ্রহী নয়, তেমনি আগ্রহী নয সেগুলি নিয়ে ভাবতে ও শিক্ষা নিতে। এমন জাতিরাই বার বার ব্যর্থতার ইতিহাস গড়ে। ০৩/১০/২০২৫