০৬:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

৪৯তম প্রয়ান দিবস : মাও সে তুং ছিলেন গণমানুষের মুক্তির নেতা ছিলেন মাও সেতুং

Reporter Name
  • Update Time : ০২:৩৬:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৭ Time View

।।এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ।।
চীনের মহান নেতা মাও সে তুং যখন চীনের ক্ষমতায় আসেন তখন সমগ্র বিশ্বে চীনের পরিচয় ছিল একটি অনুন্নত ও দারিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে। চীনকে নতুনভাবে মাও সে তুং নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন যার ধারাবাহিকায়ই হচ্ছে আজকের চীন। মাও সে তুংয়ের রাজনৈতিক-সামাজিক বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি আমাদের রাষ্ট্র নির্মান করতে পারবো ? মাও সে তুং এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক। তিনি চীনের কৃষিজীবী মানুষকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি পার্টির শাসন ব্যবস্থার নীতিনির্ধারণ করেছিলেন। মাওয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে বদলে দিয়েছে। দেশটির সর্বজনীন আধুনিকায়ন, দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন এবং গণশিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

গণচীনের মহান বিপ্লবী নেতা মাও সে তুংকে আধুনিক চীনের রুপকার ও প্রতিষ্ঠাতা হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন চীনা সমাজ ও সংস্কৃতিতে তার প্রভাবের কারণেই। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের চেয়ারম্যান এবং আমৃত্যু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তিনি আজকের বিশ্বের বিবেচিত হন একজন কমিউনিস্ট তাত্তি¡ক হিসেবেও। এছাড়াও অনেগুলো বইয়ের লেখক ও কবি হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। তার দর্শনই মাওবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জীবদ্দশায় পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের যেমন আদর্শে পরিণত হয়েছিলেন, তেমনই নানা মহলের তীব্র সমালোচনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি।

মৃত্যুর এত বছর পরও মাও সে তুং’র সাম্যবাদী সমাজতন্ত্র এখনো দিব্যমান। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজরীতিতে জড়িয়ে পরেছিলেন। ২৪ বছর বয়সে রাজধানী পিকিংয়ে মার্কস তত্তে¡র মাধ্যমে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া মাও নিজ প্রচেষ্টায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যানের শীর্ষ পদে দায়িত্বে পৌঁছান। পরবর্তীতে সফলভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রনায়কও হন তিনি।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে চীন কিং রাজতন্ত্রের দুঃশাসনে বুঁদ ছিল। জনসাধারণ রাজতন্ত্রে অতিষ্ঠ হয়ে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা সান ইয়াত সেনের সঙ্গে যোগ দেন মাও সে তুং। গণআন্দোলন সফল হয়। চীন মুক্তি পায় কিং রাজতন্ত্রের দুঃশাসন থেকে।

তিনি চীনের হুনান প্রদেশের শাং তান জেলার শাউ শাং চুং গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাও সে-তুং এর বাবার নাম ছিল মাও জেন শেং (শুন সেন)। শুন শেং দরিদ্র কৃষক হলেও কয়েক বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করে জমিজমা ক্রয় করে অবস্থার উন্নতি করেন এবং কাঁচামালের ব্যবসা করে রীতিমত মধ্যবিত্ত গৃহস্থ হয়ে উঠেন। মাওয়ের অন্য দুই ভাইয়ের নাম ছিল সে সেন ও সে তান। মাওয়ের মা ছিলেন শিয়াং শিয়াং জেলার তং শিয়াতো গ্রামের বেন পরিবারের কণ্যা। তিনি ছিলেন দয়ালুও  বৌদ্ধ ধর্মেও অনুরাগী। মাওয়ের বয়স যখন মাত্র সাত তখন থেকে ক্ষেতখামারের কাজে লেগে যান। ১৯০১ সালে আট বছর বয়সে মাও গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। এবং তেরো বছর বয়স পর্যন্ত ঐ পাঠশালাতে লেখাপড়া করেন। ১৯০৬ সালে মাওয়ের গ্রামের পড়াশোনা শেষ হয়। এরপর তার বাবা তাকে সৈন্যদলে ভর্তি করানোটাকে লাভজনক মনে করেন।

তরুণ বয়স থেকেই মাও সে তুং বামপন্থি রাজনৈতিক ধ্যানধারণার অনুসারী হয়ে পড়েন। ১৯১৯ সালে চীনকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে চীনের বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে একটি আন্দোলন চলছিল। সে আন্দোলনে তিনিও ভূমিকা রাখেন লেখনীর মাধ্যমে। ১৯২০ সালের দিকে তিনি একজন মার্কসবাদী হিসেবে চীনা রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেই চীনের চাংশায় ফিরে যান এবং হুনান প্রদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হন, যদিও তার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ১৯২১ সালে সাংহাই যান তিনি। সে সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হচ্ছিল ওখানে। সেই গোপন মিটিংয়ে উপস্থিত হন মাও। তারপর তিনি হুনান প্রদেশে ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির একটি আঞ্চলিক শাখার কাজ শুরু করেন। ১৯২৫ সালে জন্মগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন মাও। ১৯২৭ সালের দিকে কৃষক আন্দোলন নিয়ে তার লেখনীতে তিনি কৃষকদের বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।

কউমিঙটাঙ দলের নেতা কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল চিয়াং কাই সেক  কমিউনিস্টবিরোধী দমননীতি শুরু করলে মাও সে তুং হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিলেও পরাজিত হন তিনি। পরে চীনের দক্ষিণের পার্বত্য এলাকা জিয়াংজি প্রদেশে চলে যান মাও। এ সময়ে অসংখ্য তরুণ দলে দলে মাও নিয়ন্ত্রিত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিতে শুরু করে। মাও সে তুং তাদের সশস্ত্র সংগঠিত করেন। ইতিহাসে এই সশস্ত্র দলটি রেড আর্মি নামে পরিচিতি হয়ে উঠে। তাদের লক্ষ ছিল কৃষকের মুক্তি। আর সে লক্ষ অর্জনে অভিনব গেরিলা যুদ্ধের পথ অনুসরণ করে তারা। ১৯৩৪ সালে চিয়াং কাই শেক চীনের জিয়াংজি প্রদেশ ঘিরে ফেলে। তবে বিস্ময়কর ও অপ্রতিরোধ্য গতিবেগে সে বেড়াজাল ছিন্ন করে রেড আর্মিকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন মাও সে তুং। এর পর তিনি শুরু করেন এক দীর্ঘ পদযাত্রা। যা ইতিহাসে লং মার্চ হিসেবে পরিচিত। চীনের উত্তরের ইয়ানান প্রদেশের উদ্দেশ্যে রেড আর্মির সঙ্গে ছয় হাজার মাইল দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে শুরু হয় এই পদযাত্রা।

১৯৩৭ সালে চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হলে পরস্পরবিরোধী জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাই শেকের ন্যাশনাল পার্টি এবং মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে আগ্রাসী জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ১৯৪৫ সালে জাপান পরাজিত হয়। তারপর চীনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধে জয়ী মাও সে তুং চীনের বিশাল ভূখন্ডে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিজয়ী কমিউনিস্ট মুক্তিফৌজের অগ্রগামী অংশ ক্যান্টনে প্রবেশ করলে চিয়াং কাই শেক সদলবলে চীনের মূল ভূখন্ড থেকে পালিয়ে ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নেন। স্বৈরশাসক কাই শেককে পরাস্ত করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন মাও। ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মাও স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তিনি এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ পদে বহাল ছিলেন।

১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীন শাসন করেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তার কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত। শাসনকালে তিনি চীনকে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত করেন। তিনি চীনের শিল্পকারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনেন। ‘মার্কসবাদী ও লেনিনবাদী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তিনি নিজের তত্ত¡ও কাজে লাগান।

দুর্দান্দ প্রতাপের সাথে মাও সে তুং সংগ্রাম পরিচালনা করে বিজয়ের মাধ্যমে চীনকে তিনি নিয়ে যেতে সক্ষম হন আধুনিক দেশের কাতারে। ১৯৪৯ সালে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। একই সময় কমিউনিস্ট পার্টিকে একমাত্র দল হিসেবে বাস্তবায়ন করেন। ভূমি সংস্কারের কাজে তাঁকে শক্তিশালী বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় ভূস্বামীদের। কিন্তু নিজ দক্ষতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে এ ক্ষেত্রেও তিনি সফলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে বিতর্কিত করা হলেও তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা প্রসারের মতো আরো কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে চীনকে এক সময় পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শক্তিতে পরিণত করেন। মাও যখন চীনের ক্ষমতায় আসেন তখন সমগ্র বিশ্বে চীনের পরিচয় ছিল একটি অনুন্নত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে। বিগত সময়ের যুদ্ধ-বিগ্রহে চীন তখন ক্ষত-বিক্ষতপ্রায়। পুঁজিবাদী ভগ্নপ্রায় চীনকে নতুনভাবে মাও সে তুং নির্মাণ করতে শুরু করলেন সমাজতন্ত্রের আদর্শে।

জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার দীর্ঘ লড়াইয়ের সময় পার্টির ক্ষমতার প্রধান ভিত্তিই ছিল দেশটির গ্রামাঞ্চলে, ক্ষমতায় গিয়ে সে কথা ভুলে যাননি মাও। চীনের কৃষিজীবী মানুষকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি পার্টির শাসন ব্যবস্থার নীতিনির্ধারণ করেছিলেন। মাওয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে বদলে দিয়েছিল। দেশটির সর্বজনীন আধুনিকায়ন, দ্রুত গতিতে শিল্পায়ন এবং গণশিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতিতে মাও সে তুং বিশাল অবদান রেখেছেন নিঃসন্দেহে। জনগণ এবং কেবল জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব ইতিাহাস সৃষ্টির চালিকা শক্তি এবং গণলাইনের ধারণাকে মাও আরও বিকশিত করেন। তিনি বলেছেন, “জনগণের ধারণাকে সংগ্রহ করুন, সে সবকে সুসংবদ্ধ করুন এবং তারপর সেই সব ধারণা নিয়ে জনগণের কাছে যান।”

মাও সেতুং-এর সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার অন্যমত দিক ছিল উদারনৈতিকতা। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় অনুপ্রারিত মাও সে তুং উদারনৈতিক মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। মার্কসবাদে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু মাও সে তুং বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ দিয়ে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় নতুন প্রাণস্পন্দন নিয়ে আসেন। মাও সে তুং তাই বলেন, “Let hundred flowers bloom,let diverse a school of thought contend”. মাও সেতুং-এর এই উদারনৈতিক মানসিকতা চীনের সমাজতান্ত্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।

মাও সে তুং ও মওলানা ভাসানী দু’জনেই মহান নেতা ছিলেন। দুজনের মধ্যে অনেক মিল ছিল। আধুনিক চীনের জন্মদাতা মাওকে তারা আজো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে মওলানা ভাসানীর মত মহান নেতাকে সেভাবে স্মরণ করা হয় না। মাও সে তুং শুধু বিপ্লবী নেতা নন, তিনি নেতাদের নেতা ছিলেন। তার কারণেই আজকে চীন নিজেদের পায়ের উপর দাঁড়াতে পেরেছে। তবে এজন্য তাদের অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। মাও সে তুং ছাড়া চীনের ইতিহাস কল্পনাও করা যায় না।

মাও সে তুং (মাও জে দং) চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা ও প্রাণপুরুষ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন আমৃত্যু। সেদেশে সমাজতন্ত্রের সাম্য প্রতিষ্ঠায় তার অবদান চিরস্মরণীয়। মাও সে তুং- কবি, সংস্কারক, শাসক, সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার মতো গুণাবলি তাকে যেমন ইতিহাস বিশিষ্ট স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে, তেমনি তিনি বিশ্বের অনেকের কাছেই আবার একনায়ক হিসেবেও পরিচিত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী তিনি চেয়ারম্যান মাও নামে খ্যাত হন। পৃথিবী কাঁপানো বিপ্লবী মহান নেতা মাও সে তুং ১৯৭৬ সালের
৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ৪৯তম প্রয়াণ দিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

(লেখক : রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক )

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

৪৯তম প্রয়ান দিবস : মাও সে তুং ছিলেন গণমানুষের মুক্তির নেতা ছিলেন মাও সেতুং

Update Time : ০২:৩৬:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

।।এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ।।
চীনের মহান নেতা মাও সে তুং যখন চীনের ক্ষমতায় আসেন তখন সমগ্র বিশ্বে চীনের পরিচয় ছিল একটি অনুন্নত ও দারিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে। চীনকে নতুনভাবে মাও সে তুং নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন যার ধারাবাহিকায়ই হচ্ছে আজকের চীন। মাও সে তুংয়ের রাজনৈতিক-সামাজিক বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি আমাদের রাষ্ট্র নির্মান করতে পারবো ? মাও সে তুং এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক। তিনি চীনের কৃষিজীবী মানুষকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি পার্টির শাসন ব্যবস্থার নীতিনির্ধারণ করেছিলেন। মাওয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে বদলে দিয়েছে। দেশটির সর্বজনীন আধুনিকায়ন, দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন এবং গণশিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

গণচীনের মহান বিপ্লবী নেতা মাও সে তুংকে আধুনিক চীনের রুপকার ও প্রতিষ্ঠাতা হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন চীনা সমাজ ও সংস্কৃতিতে তার প্রভাবের কারণেই। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের চেয়ারম্যান এবং আমৃত্যু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তিনি আজকের বিশ্বের বিবেচিত হন একজন কমিউনিস্ট তাত্তি¡ক হিসেবেও। এছাড়াও অনেগুলো বইয়ের লেখক ও কবি হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। তার দর্শনই মাওবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জীবদ্দশায় পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের যেমন আদর্শে পরিণত হয়েছিলেন, তেমনই নানা মহলের তীব্র সমালোচনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি।

মৃত্যুর এত বছর পরও মাও সে তুং’র সাম্যবাদী সমাজতন্ত্র এখনো দিব্যমান। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজরীতিতে জড়িয়ে পরেছিলেন। ২৪ বছর বয়সে রাজধানী পিকিংয়ে মার্কস তত্তে¡র মাধ্যমে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া মাও নিজ প্রচেষ্টায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যানের শীর্ষ পদে দায়িত্বে পৌঁছান। পরবর্তীতে সফলভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রনায়কও হন তিনি।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে চীন কিং রাজতন্ত্রের দুঃশাসনে বুঁদ ছিল। জনসাধারণ রাজতন্ত্রে অতিষ্ঠ হয়ে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা সান ইয়াত সেনের সঙ্গে যোগ দেন মাও সে তুং। গণআন্দোলন সফল হয়। চীন মুক্তি পায় কিং রাজতন্ত্রের দুঃশাসন থেকে।

তিনি চীনের হুনান প্রদেশের শাং তান জেলার শাউ শাং চুং গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাও সে-তুং এর বাবার নাম ছিল মাও জেন শেং (শুন সেন)। শুন শেং দরিদ্র কৃষক হলেও কয়েক বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করে জমিজমা ক্রয় করে অবস্থার উন্নতি করেন এবং কাঁচামালের ব্যবসা করে রীতিমত মধ্যবিত্ত গৃহস্থ হয়ে উঠেন। মাওয়ের অন্য দুই ভাইয়ের নাম ছিল সে সেন ও সে তান। মাওয়ের মা ছিলেন শিয়াং শিয়াং জেলার তং শিয়াতো গ্রামের বেন পরিবারের কণ্যা। তিনি ছিলেন দয়ালুও  বৌদ্ধ ধর্মেও অনুরাগী। মাওয়ের বয়স যখন মাত্র সাত তখন থেকে ক্ষেতখামারের কাজে লেগে যান। ১৯০১ সালে আট বছর বয়সে মাও গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। এবং তেরো বছর বয়স পর্যন্ত ঐ পাঠশালাতে লেখাপড়া করেন। ১৯০৬ সালে মাওয়ের গ্রামের পড়াশোনা শেষ হয়। এরপর তার বাবা তাকে সৈন্যদলে ভর্তি করানোটাকে লাভজনক মনে করেন।

তরুণ বয়স থেকেই মাও সে তুং বামপন্থি রাজনৈতিক ধ্যানধারণার অনুসারী হয়ে পড়েন। ১৯১৯ সালে চীনকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে চীনের বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে একটি আন্দোলন চলছিল। সে আন্দোলনে তিনিও ভূমিকা রাখেন লেখনীর মাধ্যমে। ১৯২০ সালের দিকে তিনি একজন মার্কসবাদী হিসেবে চীনা রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেই চীনের চাংশায় ফিরে যান এবং হুনান প্রদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হন, যদিও তার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ১৯২১ সালে সাংহাই যান তিনি। সে সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হচ্ছিল ওখানে। সেই গোপন মিটিংয়ে উপস্থিত হন মাও। তারপর তিনি হুনান প্রদেশে ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির একটি আঞ্চলিক শাখার কাজ শুরু করেন। ১৯২৫ সালে জন্মগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন মাও। ১৯২৭ সালের দিকে কৃষক আন্দোলন নিয়ে তার লেখনীতে তিনি কৃষকদের বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।

কউমিঙটাঙ দলের নেতা কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল চিয়াং কাই সেক  কমিউনিস্টবিরোধী দমননীতি শুরু করলে মাও সে তুং হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিলেও পরাজিত হন তিনি। পরে চীনের দক্ষিণের পার্বত্য এলাকা জিয়াংজি প্রদেশে চলে যান মাও। এ সময়ে অসংখ্য তরুণ দলে দলে মাও নিয়ন্ত্রিত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিতে শুরু করে। মাও সে তুং তাদের সশস্ত্র সংগঠিত করেন। ইতিহাসে এই সশস্ত্র দলটি রেড আর্মি নামে পরিচিতি হয়ে উঠে। তাদের লক্ষ ছিল কৃষকের মুক্তি। আর সে লক্ষ অর্জনে অভিনব গেরিলা যুদ্ধের পথ অনুসরণ করে তারা। ১৯৩৪ সালে চিয়াং কাই শেক চীনের জিয়াংজি প্রদেশ ঘিরে ফেলে। তবে বিস্ময়কর ও অপ্রতিরোধ্য গতিবেগে সে বেড়াজাল ছিন্ন করে রেড আর্মিকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন মাও সে তুং। এর পর তিনি শুরু করেন এক দীর্ঘ পদযাত্রা। যা ইতিহাসে লং মার্চ হিসেবে পরিচিত। চীনের উত্তরের ইয়ানান প্রদেশের উদ্দেশ্যে রেড আর্মির সঙ্গে ছয় হাজার মাইল দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে শুরু হয় এই পদযাত্রা।

১৯৩৭ সালে চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হলে পরস্পরবিরোধী জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাই শেকের ন্যাশনাল পার্টি এবং মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে আগ্রাসী জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ১৯৪৫ সালে জাপান পরাজিত হয়। তারপর চীনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধে জয়ী মাও সে তুং চীনের বিশাল ভূখন্ডে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিজয়ী কমিউনিস্ট মুক্তিফৌজের অগ্রগামী অংশ ক্যান্টনে প্রবেশ করলে চিয়াং কাই শেক সদলবলে চীনের মূল ভূখন্ড থেকে পালিয়ে ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নেন। স্বৈরশাসক কাই শেককে পরাস্ত করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন মাও। ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মাও স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তিনি এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ পদে বহাল ছিলেন।

১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীন শাসন করেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তার কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত। শাসনকালে তিনি চীনকে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত করেন। তিনি চীনের শিল্পকারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনেন। ‘মার্কসবাদী ও লেনিনবাদী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তিনি নিজের তত্ত¡ও কাজে লাগান।

দুর্দান্দ প্রতাপের সাথে মাও সে তুং সংগ্রাম পরিচালনা করে বিজয়ের মাধ্যমে চীনকে তিনি নিয়ে যেতে সক্ষম হন আধুনিক দেশের কাতারে। ১৯৪৯ সালে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। একই সময় কমিউনিস্ট পার্টিকে একমাত্র দল হিসেবে বাস্তবায়ন করেন। ভূমি সংস্কারের কাজে তাঁকে শক্তিশালী বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় ভূস্বামীদের। কিন্তু নিজ দক্ষতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে এ ক্ষেত্রেও তিনি সফলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে বিতর্কিত করা হলেও তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা প্রসারের মতো আরো কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে চীনকে এক সময় পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শক্তিতে পরিণত করেন। মাও যখন চীনের ক্ষমতায় আসেন তখন সমগ্র বিশ্বে চীনের পরিচয় ছিল একটি অনুন্নত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে। বিগত সময়ের যুদ্ধ-বিগ্রহে চীন তখন ক্ষত-বিক্ষতপ্রায়। পুঁজিবাদী ভগ্নপ্রায় চীনকে নতুনভাবে মাও সে তুং নির্মাণ করতে শুরু করলেন সমাজতন্ত্রের আদর্শে।

জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার দীর্ঘ লড়াইয়ের সময় পার্টির ক্ষমতার প্রধান ভিত্তিই ছিল দেশটির গ্রামাঞ্চলে, ক্ষমতায় গিয়ে সে কথা ভুলে যাননি মাও। চীনের কৃষিজীবী মানুষকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি পার্টির শাসন ব্যবস্থার নীতিনির্ধারণ করেছিলেন। মাওয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে বদলে দিয়েছিল। দেশটির সর্বজনীন আধুনিকায়ন, দ্রুত গতিতে শিল্পায়ন এবং গণশিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতিতে মাও সে তুং বিশাল অবদান রেখেছেন নিঃসন্দেহে। জনগণ এবং কেবল জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব ইতিাহাস সৃষ্টির চালিকা শক্তি এবং গণলাইনের ধারণাকে মাও আরও বিকশিত করেন। তিনি বলেছেন, “জনগণের ধারণাকে সংগ্রহ করুন, সে সবকে সুসংবদ্ধ করুন এবং তারপর সেই সব ধারণা নিয়ে জনগণের কাছে যান।”

মাও সেতুং-এর সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার অন্যমত দিক ছিল উদারনৈতিকতা। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় অনুপ্রারিত মাও সে তুং উদারনৈতিক মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। মার্কসবাদে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু মাও সে তুং বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ দিয়ে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় নতুন প্রাণস্পন্দন নিয়ে আসেন। মাও সে তুং তাই বলেন, “Let hundred flowers bloom,let diverse a school of thought contend”. মাও সেতুং-এর এই উদারনৈতিক মানসিকতা চীনের সমাজতান্ত্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।

মাও সে তুং ও মওলানা ভাসানী দু’জনেই মহান নেতা ছিলেন। দুজনের মধ্যে অনেক মিল ছিল। আধুনিক চীনের জন্মদাতা মাওকে তারা আজো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে মওলানা ভাসানীর মত মহান নেতাকে সেভাবে স্মরণ করা হয় না। মাও সে তুং শুধু বিপ্লবী নেতা নন, তিনি নেতাদের নেতা ছিলেন। তার কারণেই আজকে চীন নিজেদের পায়ের উপর দাঁড়াতে পেরেছে। তবে এজন্য তাদের অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। মাও সে তুং ছাড়া চীনের ইতিহাস কল্পনাও করা যায় না।

মাও সে তুং (মাও জে দং) চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা ও প্রাণপুরুষ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন আমৃত্যু। সেদেশে সমাজতন্ত্রের সাম্য প্রতিষ্ঠায় তার অবদান চিরস্মরণীয়। মাও সে তুং- কবি, সংস্কারক, শাসক, সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার মতো গুণাবলি তাকে যেমন ইতিহাস বিশিষ্ট স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে, তেমনি তিনি বিশ্বের অনেকের কাছেই আবার একনায়ক হিসেবেও পরিচিত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী তিনি চেয়ারম্যান মাও নামে খ্যাত হন। পৃথিবী কাঁপানো বিপ্লবী মহান নেতা মাও সে তুং ১৯৭৬ সালের
৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ৪৯তম প্রয়াণ দিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

(লেখক : রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক )