১১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

১৯৪৭ সালের রাজনীতি ও ১৯৭১’য়ের রাজনীতি

মতামত
  • Update Time : ০৫:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩৬ Time View

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

গড়ার রাজনীতি বনাম ভাঙার রাজনীতি

১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমের রাজনীতি ছিল গড়ার রাজনীতি। সে গড়ার রাজনীতিতে মুসলিম লীগে  হাতে  প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান।  ১৯৭১’য়ের রাজনীতি হলো ভাঙার রাজনীতি। ১৯৭১’য়ের শেখ মুজিবের ভাঙার রাজনীতিতে খণ্ডিত হয় পাকিস্তান এবং বিজয়ী হয় ভারতের ন্যায় একটি কাফির শক্তি। মহান আল্লাহ তায়ালা গড়ার রাজনীতিকে পছন্দ করেন; তাই সে রাজনীতিকে তিনি ফরজ করেছেন। মহান রব’য়ের কাছে প্রচণ্ড অপছন্দের হলো ভাঙার রাজনীতি। তাই সে রাজনীতিকে তিনি হারাম করেছেন। সে হারাম রাজনীতিতে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিপন্ন হয়েছে বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা। বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বেড়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের।

পাকিস্তান ভাঙার ফলে বাঙালি মুসলিমের  স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা যে বিপন্ন হবে -সেটি নিশ্চিত বুঝতে পেরেই একাত্তরে কোন ইসলামী রাজনৈতিক দল, কোন আলেম, কোন ইমাম, কোন মুফতি, কোন মাদ্রাসার শিক্ষক, কোন পীর সাহেব তথাকথিত সে মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। পাকিস্তান ভাঙাকে তারা হারাম বলেছে। বিশ্বের কোন মুসলিম দেশও পাকিস্তান ভাঙাকে সমর্থণ করেনি। মুক্তি বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিল কেবল পৌত্তলিক ভারত, সোভিয়েত রাশিয়া এবং ইসরাইল। বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও সেক্যুলারিস্টদের মুখোশটি ধর্মনিরপেক্ষতার হলেও শুরু থেকেই তাদের যুদ্ধটি ছিল ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর উত্থান প্রতিরোধে। সে অভিন্ন এজেন্ডা ছিল ভারতে। ফলে ১৯৭১’য়ে বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডা  এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা একাকার হয়ে যায়। তাই ক্ষমতায় এসেই শেখ মুজিব যুদ্ধ শুরু করে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে।  মুজিব ত্বরিৎ ইসলামপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে, সকল ইসলামী দলের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং বহু নেতাকর্মীকে হত্যা বা কারাবন্দী করে।  

১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমের রাজনীতি ছিল হিন্দুত্ববাদী কাফিরদের আসন্ন দখলদারি থেকে বাঁচার পবিত্র জিহাদ। ১৯৭১’য়ে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধে ইসলামের কোন স্থান ছিল না; শক্তিশালী কোন মুসলিম রাষ্ট্রের নির্মাণও কোন এজেন্ডা ছিল না। মুক্তি বাহিনীর স্লোগান ছিল “জয় বাংলা”। মুসলিমের ঈমানী দায় হলো, সে যুদ্ধে করবে মহান আল্লাহর গৌরব ও বিজয় বাড়াতে এবং মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে, কোন বর্ণ বা ভাষার গৌরব বাড়াতে নয়। ঈমানদার মাত্রই প্যান ইসলামী। তাই সে কখনো “জয় বাংলা” বা “জয় হিন্দু” বলে না; বরং বলে “আল্লাহু আকবর”। কিন্তু মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের মুখে আল্লাহু আকবর ধ্বনিত হয়নি। তাই সেটি ছিল মহান আল্লাহর সাথে বেঈমানী। 

১৯৪৭’য়ে মুসলিম লীগের স্লোগান ছিল, “পাকিস্তান কা মতলব কিয়া? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অর্থ: “পাকিস্তানের লক্ষ্য কি? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অর্থাৎ মহান আল্লাহর এজেন্ডাই ছিল মুসলিম লীগের এজেন্ডা। ফলে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র পতাকা তলে একাত্ম হয়েছিল বাঙালি, বিহারী, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ, গুজরাতী ইত্যাদি পরিচয়ের মুসলিমগণ। এমন একতা মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে। আর বিভক্তি খুশি করে শয়তানকে। মুজিব শয়তানকে খুশি করার পথটিই বেছে নেয়।  ১৯৪৭’য়ে গুরুত্ব পেয়েছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান নির্মাণ করে দুর্বল মুসলিমদের পাশে অভিভাবক রূপে দাঁড়ানো। অথচ ১৯৭১’য়ে আওয়ামী লীগের “জয় বাংলা”র স্লোগানে গুরুত্ব পেয়েছিল বাঙালিদের একতাবদ্ধ করা এবং তাদেরকে অবাঙালিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা। অথচ এরূপ বিচ্ছিন্নতা ইসলামে হারাম তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

 

লাভ ভারতের এবং অপূরণীয় ক্ষতি বাঙালি মুসলিমের

পাকিস্তান আজ পারমাণবিক শক্তি। দেশটির জনসংখ্যা ২৫ কোটি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ২৫ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানের সাথে একাত্ম হলে দেশটি পরিণত হতো ৪৩ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রে। এতে পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ বিশাল দেশটি বিশ্ব রাজনীতিতে জায়গা করে নিতে পারতো। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক বাঙালি মুসলিম হওয়া তারা বিশ্বব্যাপী ভূমিকাও রাখতে রাখতে পারতো।  তাই পাকিস্তান ভাঙতে লাভ হয়েছে ভারতের এবং অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে মুসলিম উম্মাহর -বিশেষ করে বাঙালি মুসলিমের। বাংলাদেশীরা পরিণত হয়েছে ভারতের অধিনত প্রজায়। ১৯৭১’য়ের পর থেকে প্রতিটি বাঙালি মুসলিমকে বাঁচতে হচ্ছে ভারত ভীতি নিয়ে। ভারতীয় লুণ্ঠনের শিকার বাংলাদেশের ৫০টি অধিক নদীর পানি সম্পদ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু হলো ভারত; দেশটি ১৬ বছর যাবত সমর্থন দিয়েছে নৃশংস ফ্যাসিস্ট হাসিনাক। এর পূর্বে সমর্থন দিয়েছে মুজিবকে।  ভাঙতে

ভারতের  রয়েছে গণতন্ত্র ভীতি। ভারত ভয় করে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন রায়কে। কারণ, জনগণ ভারতীয় আধিপত্যকে ঘৃণা করে। এরূপ একটি অবস্থা সৃষ্টির জন্যই পৌত্তলিক ভারত ১৯৭১’য়ে আড়াই লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান ভাঙতে যুদ্ধ করে এবং সে যুদ্ধে বহু হাজার ভারতীয় সৈন্য নিহতও হয়েছে। তাই একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ভারতীয় অর্থে, ভারতীয় অস্ত্রে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়ে ভারতীয় এজেন্ডা কে বিজয়ী করার শত ভাগ ভারতীয় যুদ্ধ। অথচ ইসলামী চেতনাশূন্য কিছু বাঙালি কাপালিক বলে, ভারত বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দিতে যুদ্ধ করেছিল। একমাত্র ঈমানশূন্য ও সুস্থ চেতনাশূন্য বেকুবেরাই এমন অলীক কথা বলতে পারে।     

                                                                                                                  

হারাম রাজনীতি ও হালাল রাজনীতি

ইসলামে হারাম-হালালের বিধানটি শুধু পানাহারে নয়, বরং সে বিধান রয়েছে প্রতিটি কর্মে এবং রাজনীতিতে। ইসলামে কারো ঘর ভাঙা যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো মুসলিম রাষ্ট্র ভাঙা। তাই যে রাজনীতির লক্ষ্য মুসলিম রাষ্ট্রকে খণ্ডিত করা -সেটিই হারাম রাজনীতি। এটিই ছিল শেখ মুজিব ও তার অনুসারী বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট ও হিন্দুত্ববাদীদের রাজনীতি। অপর দিকে যে রাজনীতির লক্ষ্য, একটি মুসলিম দেশের ভূগোলে সুরক্ষা দেয়া -সেটি শুধু হালাল রাজনীতি নয়, বরং ফরজ রাজনীতি। সেটিই ছিল ১৯৭১’য়ে ইসলামপন্থীদের রাজনীতি। 

হারাম কাজের পরিণতি কখনোই মুসলিমদের জন্য ভাল হয়না, বরং বিপর্যয় ডেকে আনে। সে হারাম রাজনীতি বিজয় আনে শয়তানী শক্তির। এজন্যই সে রাজনীতি হারাম। শয়তান ও তার অনুসারীরা চায়, মুসলিমগণ বাঁচুক হারাম রাজনীতি নিয়ে। মুসলিম জীবনে এ হারাম রাজনীতি বিজয়ী হওয়াতে মুসলিম বিশ্ব আজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত, শক্তিহীন ও পরাধীন। সে হারাম রাজনীতির পথ ধরেই আরবগণ ২২ টুকরোয় বিভক্ত। তারা নিজেরাই খেলাফত ভেঙে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ, ফরাসী ও অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তির জন্য ফিলিস্তিনে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার রাস্তা খুলে দিয়েছে। আরবগণ ২২ টুকরোয় বিভক্তির হওয়াতে গাজার বন্দী মজলুমদের পাশে দাঁড়ানোর মত কোন শক্তিশালী আরব রাষ্ট্র নাই। এই হলো বিভক্তির নাশকতা। সে ভয়াবহ নাশকতা থেকে বাঁচাতেই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালা বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন। কিন্তু মহান রব’য়ের সে হুকুমের বিরুদ্ধে মুসলিমগণ বিদ্রোহ করেছে এবং বেছে নিয়েছে  বিভক্তির হারাম পথ। সে হারাম পথে অখণ্ড আরব ভূমি ভেঙে২২টি আরব রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে।  এবং পাকিস্তান ভেঙেজন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের।

মুসলিম উম্মাহর শক্তি, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা যাদের কাছে গুরুত্ব পায় -তারা কি কখনো মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এরূপ নাশকতার কথা ভাবতে পারে? নিজের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে তাদের কাছে অধিক গুরুত্ব পায় মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ। উম্মাহর স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিয়ে এমন ভাবনার মাঝেই তো মুমিনের ঈমানদারী। একাত্তরের বাঙালি ঈসলাপন্থীগণ জানতেন, পাকিস্তান ভাঙারযুদ্ধে নামলে সেটি হবে শয়তানের এজেন্ডা কে বিজয়ী করার যুদ্ধ। এবং যারা শয়তানের এজেন্ডা কে বিজয়ী করতে যুদ্ধ করে, তারা কি কখনো জান্নাত আশা করতে পারে? সেটি তো জাহান্নামের পথ। সেটি বুঝতেন বলেই তারা বিহারী ও পাক সেনাদের হাতে আপন জন হারানোর বেদনা নীরবে সহ্য করেছেন, ছবর করেছেন এবং অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছেন। কিন্তু যারা ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থী, সেরূপ কল্যাণকর ভাবনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। তাদের কাছে গুরুত্বপায় নিজ স্বার্থ, নিজ দল ও নিজ গোত্রের স্বার্থ। স্বার্থ উদ্ধারের সে লক্ষ্য নিয়ে তারা এমনকি পৌত্তলিক কাফিরদের কোলে গিয়ে উঠতেও রাজী। ক্ষমতালোভী মুজিব তাই ভারতের সাথে আঁতাত করেছে এবং একাত্তরে ভারতের হাতে বিজয় তুলে দিয়েছে। 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

১৯৪৭ সালের রাজনীতি ও ১৯৭১’য়ের রাজনীতি

Update Time : ০৫:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

গড়ার রাজনীতি বনাম ভাঙার রাজনীতি

১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমের রাজনীতি ছিল গড়ার রাজনীতি। সে গড়ার রাজনীতিতে মুসলিম লীগে  হাতে  প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান।  ১৯৭১’য়ের রাজনীতি হলো ভাঙার রাজনীতি। ১৯৭১’য়ের শেখ মুজিবের ভাঙার রাজনীতিতে খণ্ডিত হয় পাকিস্তান এবং বিজয়ী হয় ভারতের ন্যায় একটি কাফির শক্তি। মহান আল্লাহ তায়ালা গড়ার রাজনীতিকে পছন্দ করেন; তাই সে রাজনীতিকে তিনি ফরজ করেছেন। মহান রব’য়ের কাছে প্রচণ্ড অপছন্দের হলো ভাঙার রাজনীতি। তাই সে রাজনীতিকে তিনি হারাম করেছেন। সে হারাম রাজনীতিতে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিপন্ন হয়েছে বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা। বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বেড়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের।

পাকিস্তান ভাঙার ফলে বাঙালি মুসলিমের  স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা যে বিপন্ন হবে -সেটি নিশ্চিত বুঝতে পেরেই একাত্তরে কোন ইসলামী রাজনৈতিক দল, কোন আলেম, কোন ইমাম, কোন মুফতি, কোন মাদ্রাসার শিক্ষক, কোন পীর সাহেব তথাকথিত সে মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। পাকিস্তান ভাঙাকে তারা হারাম বলেছে। বিশ্বের কোন মুসলিম দেশও পাকিস্তান ভাঙাকে সমর্থণ করেনি। মুক্তি বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিল কেবল পৌত্তলিক ভারত, সোভিয়েত রাশিয়া এবং ইসরাইল। বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও সেক্যুলারিস্টদের মুখোশটি ধর্মনিরপেক্ষতার হলেও শুরু থেকেই তাদের যুদ্ধটি ছিল ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর উত্থান প্রতিরোধে। সে অভিন্ন এজেন্ডা ছিল ভারতে। ফলে ১৯৭১’য়ে বাঙালি ফ্যাসিস্ট ও সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডা  এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা একাকার হয়ে যায়। তাই ক্ষমতায় এসেই শেখ মুজিব যুদ্ধ শুরু করে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে।  মুজিব ত্বরিৎ ইসলামপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে, সকল ইসলামী দলের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং বহু নেতাকর্মীকে হত্যা বা কারাবন্দী করে।  

১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমের রাজনীতি ছিল হিন্দুত্ববাদী কাফিরদের আসন্ন দখলদারি থেকে বাঁচার পবিত্র জিহাদ। ১৯৭১’য়ে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধে ইসলামের কোন স্থান ছিল না; শক্তিশালী কোন মুসলিম রাষ্ট্রের নির্মাণও কোন এজেন্ডা ছিল না। মুক্তি বাহিনীর স্লোগান ছিল “জয় বাংলা”। মুসলিমের ঈমানী দায় হলো, সে যুদ্ধে করবে মহান আল্লাহর গৌরব ও বিজয় বাড়াতে এবং মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে, কোন বর্ণ বা ভাষার গৌরব বাড়াতে নয়। ঈমানদার মাত্রই প্যান ইসলামী। তাই সে কখনো “জয় বাংলা” বা “জয় হিন্দু” বলে না; বরং বলে “আল্লাহু আকবর”। কিন্তু মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের মুখে আল্লাহু আকবর ধ্বনিত হয়নি। তাই সেটি ছিল মহান আল্লাহর সাথে বেঈমানী। 

১৯৪৭’য়ে মুসলিম লীগের স্লোগান ছিল, “পাকিস্তান কা মতলব কিয়া? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অর্থ: “পাকিস্তানের লক্ষ্য কি? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অর্থাৎ মহান আল্লাহর এজেন্ডাই ছিল মুসলিম লীগের এজেন্ডা। ফলে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র পতাকা তলে একাত্ম হয়েছিল বাঙালি, বিহারী, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ, গুজরাতী ইত্যাদি পরিচয়ের মুসলিমগণ। এমন একতা মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে। আর বিভক্তি খুশি করে শয়তানকে। মুজিব শয়তানকে খুশি করার পথটিই বেছে নেয়।  ১৯৪৭’য়ে গুরুত্ব পেয়েছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান নির্মাণ করে দুর্বল মুসলিমদের পাশে অভিভাবক রূপে দাঁড়ানো। অথচ ১৯৭১’য়ে আওয়ামী লীগের “জয় বাংলা”র স্লোগানে গুরুত্ব পেয়েছিল বাঙালিদের একতাবদ্ধ করা এবং তাদেরকে অবাঙালিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা। অথচ এরূপ বিচ্ছিন্নতা ইসলামে হারাম তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

 

লাভ ভারতের এবং অপূরণীয় ক্ষতি বাঙালি মুসলিমের

পাকিস্তান আজ পারমাণবিক শক্তি। দেশটির জনসংখ্যা ২৫ কোটি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ২৫ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানের সাথে একাত্ম হলে দেশটি পরিণত হতো ৪৩ কোটি জনসংখ্যার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রে। এতে পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ বিশাল দেশটি বিশ্ব রাজনীতিতে জায়গা করে নিতে পারতো। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক বাঙালি মুসলিম হওয়া তারা বিশ্বব্যাপী ভূমিকাও রাখতে রাখতে পারতো।  তাই পাকিস্তান ভাঙতে লাভ হয়েছে ভারতের এবং অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে মুসলিম উম্মাহর -বিশেষ করে বাঙালি মুসলিমের। বাংলাদেশীরা পরিণত হয়েছে ভারতের অধিনত প্রজায়। ১৯৭১’য়ের পর থেকে প্রতিটি বাঙালি মুসলিমকে বাঁচতে হচ্ছে ভারত ভীতি নিয়ে। ভারতীয় লুণ্ঠনের শিকার বাংলাদেশের ৫০টি অধিক নদীর পানি সম্পদ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু হলো ভারত; দেশটি ১৬ বছর যাবত সমর্থন দিয়েছে নৃশংস ফ্যাসিস্ট হাসিনাক। এর পূর্বে সমর্থন দিয়েছে মুজিবকে।  ভাঙতে

ভারতের  রয়েছে গণতন্ত্র ভীতি। ভারত ভয় করে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন রায়কে। কারণ, জনগণ ভারতীয় আধিপত্যকে ঘৃণা করে। এরূপ একটি অবস্থা সৃষ্টির জন্যই পৌত্তলিক ভারত ১৯৭১’য়ে আড়াই লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান ভাঙতে যুদ্ধ করে এবং সে যুদ্ধে বহু হাজার ভারতীয় সৈন্য নিহতও হয়েছে। তাই একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ভারতীয় অর্থে, ভারতীয় অস্ত্রে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়ে ভারতীয় এজেন্ডা কে বিজয়ী করার শত ভাগ ভারতীয় যুদ্ধ। অথচ ইসলামী চেতনাশূন্য কিছু বাঙালি কাপালিক বলে, ভারত বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দিতে যুদ্ধ করেছিল। একমাত্র ঈমানশূন্য ও সুস্থ চেতনাশূন্য বেকুবেরাই এমন অলীক কথা বলতে পারে।     

                                                                                                                  

হারাম রাজনীতি ও হালাল রাজনীতি

ইসলামে হারাম-হালালের বিধানটি শুধু পানাহারে নয়, বরং সে বিধান রয়েছে প্রতিটি কর্মে এবং রাজনীতিতে। ইসলামে কারো ঘর ভাঙা যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো মুসলিম রাষ্ট্র ভাঙা। তাই যে রাজনীতির লক্ষ্য মুসলিম রাষ্ট্রকে খণ্ডিত করা -সেটিই হারাম রাজনীতি। এটিই ছিল শেখ মুজিব ও তার অনুসারী বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট ও হিন্দুত্ববাদীদের রাজনীতি। অপর দিকে যে রাজনীতির লক্ষ্য, একটি মুসলিম দেশের ভূগোলে সুরক্ষা দেয়া -সেটি শুধু হালাল রাজনীতি নয়, বরং ফরজ রাজনীতি। সেটিই ছিল ১৯৭১’য়ে ইসলামপন্থীদের রাজনীতি। 

হারাম কাজের পরিণতি কখনোই মুসলিমদের জন্য ভাল হয়না, বরং বিপর্যয় ডেকে আনে। সে হারাম রাজনীতি বিজয় আনে শয়তানী শক্তির। এজন্যই সে রাজনীতি হারাম। শয়তান ও তার অনুসারীরা চায়, মুসলিমগণ বাঁচুক হারাম রাজনীতি নিয়ে। মুসলিম জীবনে এ হারাম রাজনীতি বিজয়ী হওয়াতে মুসলিম বিশ্ব আজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত, শক্তিহীন ও পরাধীন। সে হারাম রাজনীতির পথ ধরেই আরবগণ ২২ টুকরোয় বিভক্ত। তারা নিজেরাই খেলাফত ভেঙে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ, ফরাসী ও অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তির জন্য ফিলিস্তিনে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার রাস্তা খুলে দিয়েছে। আরবগণ ২২ টুকরোয় বিভক্তির হওয়াতে গাজার বন্দী মজলুমদের পাশে দাঁড়ানোর মত কোন শক্তিশালী আরব রাষ্ট্র নাই। এই হলো বিভক্তির নাশকতা। সে ভয়াবহ নাশকতা থেকে বাঁচাতেই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালা বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন। কিন্তু মহান রব’য়ের সে হুকুমের বিরুদ্ধে মুসলিমগণ বিদ্রোহ করেছে এবং বেছে নিয়েছে  বিভক্তির হারাম পথ। সে হারাম পথে অখণ্ড আরব ভূমি ভেঙে২২টি আরব রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে।  এবং পাকিস্তান ভেঙেজন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের।

মুসলিম উম্মাহর শক্তি, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা যাদের কাছে গুরুত্ব পায় -তারা কি কখনো মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এরূপ নাশকতার কথা ভাবতে পারে? নিজের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে তাদের কাছে অধিক গুরুত্ব পায় মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ। উম্মাহর স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিয়ে এমন ভাবনার মাঝেই তো মুমিনের ঈমানদারী। একাত্তরের বাঙালি ঈসলাপন্থীগণ জানতেন, পাকিস্তান ভাঙারযুদ্ধে নামলে সেটি হবে শয়তানের এজেন্ডা কে বিজয়ী করার যুদ্ধ। এবং যারা শয়তানের এজেন্ডা কে বিজয়ী করতে যুদ্ধ করে, তারা কি কখনো জান্নাত আশা করতে পারে? সেটি তো জাহান্নামের পথ। সেটি বুঝতেন বলেই তারা বিহারী ও পাক সেনাদের হাতে আপন জন হারানোর বেদনা নীরবে সহ্য করেছেন, ছবর করেছেন এবং অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছেন। কিন্তু যারা ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থী, সেরূপ কল্যাণকর ভাবনার সামর্থ্য তাদের থাকে না। তাদের কাছে গুরুত্বপায় নিজ স্বার্থ, নিজ দল ও নিজ গোত্রের স্বার্থ। স্বার্থ উদ্ধারের সে লক্ষ্য নিয়ে তারা এমনকি পৌত্তলিক কাফিরদের কোলে গিয়ে উঠতেও রাজী। ক্ষমতালোভী মুজিব তাই ভারতের সাথে আঁতাত করেছে এবং একাত্তরে ভারতের হাতে বিজয় তুলে দিয়েছে।