০৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

সোনাইমুড়ীর ফসলি জমি গিলে খাওয়া অবৈধ ড্রেজার জব্দ, 

Reporter Name
  • Update Time : ০৩:১৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৭৬ Time View
মোহাম্মদ হানিফ ,নোয়াখালী প্রতিনিধি : 
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ‘বালু-রাক্ষসী’র মতো ফসলি জমি গিলে খাওয়া এক অবৈধ কর্মকাণ্ডের ওপর কঠোর আঘাত হেনেছে প্রশাসন। চাষিরহাট ইউনিয়নের রথী গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে একটি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্থানীয়দের ত্রাস সৃষ্টিকারী এই বালু-খেকো’ চক্রের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত এক প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি অভিযানের আগেই গা ঢাকা দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন আক্তারের নেতৃত্বে এই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান পরিচালিত হয়। রথী গ্রামের যে স্থানটিতে একসময় সবুজের সমারোহ ছিল, সেটিই এখন মাটির গভীর ক্ষতের শিকার। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর লোভের শিকার হয়ে এলাকার পরিবেশ ও কৃষিব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছিল।
কৃষকের আর্তনাদ: বসতভিটাও ঝুঁকির মুখে
দীর্ঘদিন ধরে রথী গ্রামের স্থানীয় কৃষকরা এই অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও কোনো ফল পাচ্ছিলেন না। বালু উত্তোলনের ফলে তাদের ফলনশীল জমিগুলো দ্রুত গভীর পুকুর বা গর্তে পরিণত হচ্ছিল। স্থানীয়রা জানান, মাটির নিচের স্তর থেকে যথেচ্ছভাবে বালু তুলে নেওয়ায় শুধু কৃষিজমিই নষ্ট হচ্ছে না, আশপাশের বসতভিটা এবং রাস্তাঘাটও দেবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এটি একটি নীরব পরিবেশ বিপর্যয় যা স্থানীয়দের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছিল।
ইউএনও নাসরিন আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে আমরা একাধিকবার গুরুতর অভিযোগ পাই। তাদের অভিযোগ ছিল, এই অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে তাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে। দ্রুত পদক্ষেপ নিতেই আমরা আজ গোপনে এই অভিযান চালাই।তিনি আরও যোগ করেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রভাবশালীর দাপট ও জনমত উপেক্ষা
অভিযান চলাকালীন রথী গ্রামের ঘটনাস্থল থেকে একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হলেও মেশিন অপারেটর এবং অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতরা দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাষিরহাট ইউনিয়নের শহীদ নামে এক ব্যক্তি এই অবৈধ বালু তোলার প্রধান মদতদাতা ছিলেন। তার স্থানীয় প্রভাব এত বেশি ছিল যে, কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পেত না।
জানা গেছে, স্থানীয় সাধারণ মানুষ বারবার এই বালু উত্তোলনে বাধা দিলেও শহীদ তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে আসছিলেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হতো ড্রেজার। স্থানীয়দের ধারণা, শহীদ কোনো রাজনৈতিক বা স্থানীয় ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এই কাজটি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
আইনের কড়া বার্তা: জিরো টলারেন্স নীতি
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন আক্তার জোর দিয়ে বলেন যে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন একটি মারাত্মক অপরাধ যা দেশের প্রচলিত আইন, বিশেষ করে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী কঠোর শাস্তিযোগ্য। তিনি স্পষ্ট জানান, “ফসলি জমি বা সরকারি সম্পদ ধ্বংস করে বালু বা মাটি উত্তোলনকারী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখা হবে এবং তাকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, জব্দ করা ড্রেজার মেশিনের মালিকানা চিহ্নিত করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, সোনাইমুড়ী উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই সাহসী পদক্ষেপে রথী গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে এবং অভিযুক্ত ‘শহীদ’-কে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে ।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

সোনাইমুড়ীর ফসলি জমি গিলে খাওয়া অবৈধ ড্রেজার জব্দ, 

Update Time : ০৩:১৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
মোহাম্মদ হানিফ ,নোয়াখালী প্রতিনিধি : 
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ‘বালু-রাক্ষসী’র মতো ফসলি জমি গিলে খাওয়া এক অবৈধ কর্মকাণ্ডের ওপর কঠোর আঘাত হেনেছে প্রশাসন। চাষিরহাট ইউনিয়নের রথী গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে একটি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্থানীয়দের ত্রাস সৃষ্টিকারী এই বালু-খেকো’ চক্রের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত এক প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি অভিযানের আগেই গা ঢাকা দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন আক্তারের নেতৃত্বে এই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান পরিচালিত হয়। রথী গ্রামের যে স্থানটিতে একসময় সবুজের সমারোহ ছিল, সেটিই এখন মাটির গভীর ক্ষতের শিকার। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর লোভের শিকার হয়ে এলাকার পরিবেশ ও কৃষিব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছিল।
কৃষকের আর্তনাদ: বসতভিটাও ঝুঁকির মুখে
দীর্ঘদিন ধরে রথী গ্রামের স্থানীয় কৃষকরা এই অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও কোনো ফল পাচ্ছিলেন না। বালু উত্তোলনের ফলে তাদের ফলনশীল জমিগুলো দ্রুত গভীর পুকুর বা গর্তে পরিণত হচ্ছিল। স্থানীয়রা জানান, মাটির নিচের স্তর থেকে যথেচ্ছভাবে বালু তুলে নেওয়ায় শুধু কৃষিজমিই নষ্ট হচ্ছে না, আশপাশের বসতভিটা এবং রাস্তাঘাটও দেবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এটি একটি নীরব পরিবেশ বিপর্যয় যা স্থানীয়দের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছিল।
ইউএনও নাসরিন আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে আমরা একাধিকবার গুরুতর অভিযোগ পাই। তাদের অভিযোগ ছিল, এই অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে তাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে। দ্রুত পদক্ষেপ নিতেই আমরা আজ গোপনে এই অভিযান চালাই।তিনি আরও যোগ করেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রভাবশালীর দাপট ও জনমত উপেক্ষা
অভিযান চলাকালীন রথী গ্রামের ঘটনাস্থল থেকে একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হলেও মেশিন অপারেটর এবং অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতরা দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাষিরহাট ইউনিয়নের শহীদ নামে এক ব্যক্তি এই অবৈধ বালু তোলার প্রধান মদতদাতা ছিলেন। তার স্থানীয় প্রভাব এত বেশি ছিল যে, কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পেত না।
জানা গেছে, স্থানীয় সাধারণ মানুষ বারবার এই বালু উত্তোলনে বাধা দিলেও শহীদ তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে আসছিলেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হতো ড্রেজার। স্থানীয়দের ধারণা, শহীদ কোনো রাজনৈতিক বা স্থানীয় ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এই কাজটি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
আইনের কড়া বার্তা: জিরো টলারেন্স নীতি
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন আক্তার জোর দিয়ে বলেন যে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন একটি মারাত্মক অপরাধ যা দেশের প্রচলিত আইন, বিশেষ করে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী কঠোর শাস্তিযোগ্য। তিনি স্পষ্ট জানান, “ফসলি জমি বা সরকারি সম্পদ ধ্বংস করে বালু বা মাটি উত্তোলনকারী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখা হবে এবং তাকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, জব্দ করা ড্রেজার মেশিনের মালিকানা চিহ্নিত করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, সোনাইমুড়ী উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই সাহসী পদক্ষেপে রথী গ্রামসহ পুরো ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে এবং অভিযুক্ত ‘শহীদ’-কে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে ।