১০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্রের নির্মাণ যে কারণে ব্যর্থ হতে বাধ্য —- ফিরোজ মাহবুব কামাল

Reporter Name
  • Update Time : ০১:১৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৩ Time View

সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যর্থতাটি বিশাল। কেন এ ব্যর্থতা -সেটি জানা যেমন জরুরি, তেমনি কিরূপে রাষ্ট্রকে সভ্য ও নিরাপদ করা যায় -জরুরি হলো সেটি জানাও। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। গণিত, বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞানের ন্যায় বিষয়গুলির চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ। সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য জরুরি হলো বিশাল বিচার বিভাগ। শত শত যোগ্য, উচ্চ শিক্ষিত, ঈমানদার ও মেধাবী মানুষদের এখানে নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ, বাংলাদেশে সবচেয়ে বিশাল সংখ্যাটি হলো অপরাধী দুর্বৃত্তদের। কিছু কাল আগে তারাই দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, হত্যা, গণহত্যা, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির জোয়ার এনেছিল। বিরোধীদের নির্মূলে ও দমনে তারা দেশের  সেনানীবাসগুলোতে নির্মাণ করেছিল অসংখ্য আয়নাঘর।

এ অপরাধীরা বাংলাদেশকে বার বার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বৃত্তিগ্রস্ত দেশের অপমান দিয়েছে। হাসিনার আমলে এরা প্রতি বছর দেশ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে -যা দিয়ে অনায়াসে আরো ১০টি পদ্মা ব্রিজ দেয়া যেত। এ অপরাধীদের অধিকাংশের বসবাস এখনো দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলি এখনো তাদের দখলে। তাদের ধরার কাজ এবং বিচারে কাজ এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হওয়া উচিত এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে। তবে এ বিশাল দুর্বৃত্ত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হলে বিপুল সংখ্যক লড়াকু সৈনিক চাই। এ যুদ্ধে লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি দুর্বৃত্তের নির্মূল। বিষাক্ত জীবাণুদের একটিকে বাঁচিয়ে রাখলে রোগ আবাব ফিরে আসে। তাই তাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা খাড়া করতে হবে। গর্তে ঢুকলে গর্ত থেকে এদের খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য চাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক। চাই শত শত দক্ষ প্রসিকিউটর। চাই শত শত তদন্ত অফিসার। তদন্ত কাজে চাই উচ্চতর প্রযুক্তির ব্যবহার। সভ্য ও নিরাপদ ভাবে বাঁচার এই হলো অনিবার্য খরচ।  

দেহের মৃত্যু ঘটায় যেমন জীবাণু, তেমনি রাষ্ট্রের মৃত্যু ঘটায় এই দুর্বৃত্তরা। এরা যেমন ইসলামের শত্রু, তেমনি শত্রু মানবতার ও গণতন্ত্রের। শয়তানের এজেন্ডাই এদের এজেন্ডা। এরাই আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে ব্যর্থ করে দেয়।  তাই ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ, রোজা ও হজ্জ-যাকাত নয়; মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাও নয়। বরং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদ। এ জিহাদই হাতিয়ার হলো ইসলামকে তথা আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার। এ জিহাদে শহীদ হলে তার জন্য রয়েছে বিনা হিসাবে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। সে প্রতিশ্রুতি অন্য কোন ইবাদতে নাই। দেশবাসীর কাছে এ জিহাদ গুরুত্ব না পেলে জোয়ার আসে দুর্বৃত্তির। দেশ তখন দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। বাংলাদেশ সে রেকর্ড ২৫ বছর আগে ৫ বার অর্জন করেছে।  

দুর্বৃত্তির নির্মূলে বিশাল বিচার বিভাগের পাশে অতি অপরিহার্য হলো সৎ ও যোগ্য ঈমানদারদের নিয়ে গড়া দক্ষ এক বিশাল পুলিশ বাহিনী। বাংলাদেশে দুর্বৃত্তদের সংখ্যাটি যেহেতু বিশাল, ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে এমন শক্তিশালী পুলিশ বিভাগ ও বিচার বিভাগের বিকল্প নাই। শক্তিশালী বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সাথে গড়ে তুলতে হবে বিশাল দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে থাকত হবে এ কমিশনের শক্তিশালি অবস্থান। পুলিশ, আদালত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজেদের দুর্নীতি তদন্তের জন্য থাকতে হবে আরেকটি বিশাল প্রতিষ্ঠান। তাদের উপরও রাখতে হবে কড়া নজরদারী। এবং পুলিশ, বিচার ও দুর্নীতি দমন বিভাগের যারা দুর্নীতিতে ধরা পড়বে তাদের জন্য থাকতে হবে দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির বিধান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক যুদ্ধই হবে সরকারের নীতি।

দেশে কৃষি, শিল্প-কারখানা, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যতই গড়া হোক, দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। মুসলিমগণ অতীতে যেরূপ সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিলে, তার মূল কারণ ছিল, তাঁরা নির্মূল করতে পেরেছিলেন দুর্বৃত্তির এবং প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছিলেন সুবিচারের। আল্লাহ তায়ালা সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। সেটি এজন্য নয় যে, তাদের মুখে লম্বা দাড়ি ও মাথায় টুপি এবং তারা বেশী বেশী নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে, তারা মহান রব’য়ের প্রতি ঈমান আনে এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল করে ও প্রতিষ্ঠা দেয় সুবিচারের।  কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে আজ দাড়ি-টুপি, নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠ গুরুত্ব পেলেও, গুরুত্ব পায়নি দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। ফলে তারা শ্রেষ্ঠ জাতি রূপে বেড়ে উঠার বদলে রেকর্ড গড়ছে দুর্বৃত্তিতে। দেশে  দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদটি শুধু বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও দুর্নীতি দমন বিভাগ লড়বে -তা নয়; সে জিহাদটি লাগাতর লড়বে প্র্রতিটি ঈমানদার। এ জিহাদে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হবে সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ।

জনগণের স্তরে এ জিহাদ তীব্রতর করার প্রয়োজনে গড়ে তুলতে হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিশন ও গবেষণা বিভাগ। প্রতিটি নাগরিককে পুলিশে পরিণত হতে হবে। দুর্বৃত্ত দমন ও দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদ শুধু সরকারের নয়, এ জিহাদ প্রতিটি নাগরিকের। দুর্বৃত্ত অপরাধীরা সাধারণ ‌নাগরিকদের পাশেই বসবাস করে। সরকারের চেয়ে জনগণ তাদের সম্বন্ধে বেশি জানে। তাই মহল্লায় মহল্লায়, থানায় থানায়, জেলায় জেলায় অপরাধীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে হবে জনগণের। অপরাধীদের অপরাধ-কর্ম নিয়ে প্রমাণসহ পত্রপত্রিকায় নিয়মিত নিবন্ধ প্রকাশ হওয়া উচিত। সোসাল মিডিয়ার তাদের অপরাধের সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করতে হবে। এ কাজটি ‌দেশের যোগ্য, সৎ ও মেধাবী সাংবাদিকদের। প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীল সাংবাদিকের দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব নয় যে তারা দেশের প্রতিটি গ্রাম ও প্রতিটি মহল্লার উপর নজর রাখবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিটি নাগরিককে।  

নিরাপদ, সভ্য ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার দায় কোন বিশেষ দল বা নেতার নয়, সে দায় প্রতিটি নাগরিকের। দেশের নাগরিকগণ এ কাজে নিষ্ক্রিয় থাকলে এবং এ কাজে অবহেলা দেখালে সরকার ব্যর্থ হতে বাধ্য। তখন সরকারকে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে কোন লাভ হবে না। তখন শুধু সরকারই ব্যর্থ হবে না, সমগ্র রাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ইসলামে নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার কোন স্থান নাই। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো সৎ কাজে সক্রিয় হওয়া এবং অন্যায়কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা। ঈমানদারের দায় হলো, সে তার মেধা, সময়, অর্থ, শক্তি এমনকি রক্তের বিনিয়োগ করবে সমাজ থেকে দুর্বৃত্তির নির্মূলে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠায়। এরূপ নিরলস জিহাদের মধ্য দিয়ে সে নিজেকে প্রিয়তর করে মহান আল্লাহর কাছে। 

ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু নামাজ-রোজা, হজ-যাকাত নিয়ে বাঁচা নয়, বরং জিহাদ নিয়ে বাঁচাও। সেটিই তো নবীজী ও তার সাহাবাদের সূন্নত। দুর্বৃত্তের নির্মূল ও সভ্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় জিহাদই হলো একমাত্র হাতিয়ার। যেখানে জিহাদ নেই, সেখানে জোয়ারটি দুর্বৃত্তির।  সমাজকে দুর্বৃত্ত মুক্ত করার কাজটি নামাজ-রোজা ও হজ-যাকাত দিয়ে হয়না। নবীজীর প্রতিটি সাহাবী জিহাদ করেছেন এবং অর্ধেকের বেশি সাহাবা শহীদ হয়েছিলেন বলেই সে কালে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণের কাজ সম্ভব হয়েছিল। 

যারা মনে করে বেশি বেশি মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে এবং ‌নামাজ-রোজা আদায় করে ভাবে তারা ইসলামের বিজয় এবং সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণ করে ছাড়বে -তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করে‌। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে এমন আহাম্মকদের সংখ্যাটি বিশাল। এদের কারণেই বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম দেশে বিষয়টি শয়তানের পক্ষের শক্তির এবং পরাজিত হয়ে আছে ইসলাম। ফলে বেঁচে নাই আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শারিয়া। এভাবেই মুসলিমরা সংখ্যায় বাড়ছে বটে, কিন্তু পরাজয় বাড়াচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের। এ পথে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থতা অনিবার্য। পরকালের যখন মহান আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে তখন অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে, “যখন তোমার রব’য়ের সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়া বিধান‌ তোমার দেশে বিলুপ্ত ছিল,তখন তোমার ভূমিকা কি ছিল? প্রশ্ন হলো, তখন কি জবাব হবে? মহান আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজেই সে হিসাব নেয়া জরুরি নয় কি?

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

১০

সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্রের নির্মাণ যে কারণে ব্যর্থ হতে বাধ্য —- ফিরোজ মাহবুব কামাল

Update Time : ০১:১৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যর্থতাটি বিশাল। কেন এ ব্যর্থতা -সেটি জানা যেমন জরুরি, তেমনি কিরূপে রাষ্ট্রকে সভ্য ও নিরাপদ করা যায় -জরুরি হলো সেটি জানাও। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। গণিত, বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞানের ন্যায় বিষয়গুলির চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ। সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য জরুরি হলো বিশাল বিচার বিভাগ। শত শত যোগ্য, উচ্চ শিক্ষিত, ঈমানদার ও মেধাবী মানুষদের এখানে নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ, বাংলাদেশে সবচেয়ে বিশাল সংখ্যাটি হলো অপরাধী দুর্বৃত্তদের। কিছু কাল আগে তারাই দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, হত্যা, গণহত্যা, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির জোয়ার এনেছিল। বিরোধীদের নির্মূলে ও দমনে তারা দেশের  সেনানীবাসগুলোতে নির্মাণ করেছিল অসংখ্য আয়নাঘর।

এ অপরাধীরা বাংলাদেশকে বার বার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বৃত্তিগ্রস্ত দেশের অপমান দিয়েছে। হাসিনার আমলে এরা প্রতি বছর দেশ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে -যা দিয়ে অনায়াসে আরো ১০টি পদ্মা ব্রিজ দেয়া যেত। এ অপরাধীদের অধিকাংশের বসবাস এখনো দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলি এখনো তাদের দখলে। তাদের ধরার কাজ এবং বিচারে কাজ এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হওয়া উচিত এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে। তবে এ বিশাল দুর্বৃত্ত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হলে বিপুল সংখ্যক লড়াকু সৈনিক চাই। এ যুদ্ধে লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি দুর্বৃত্তের নির্মূল। বিষাক্ত জীবাণুদের একটিকে বাঁচিয়ে রাখলে রোগ আবাব ফিরে আসে। তাই তাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা খাড়া করতে হবে। গর্তে ঢুকলে গর্ত থেকে এদের খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য চাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক। চাই শত শত দক্ষ প্রসিকিউটর। চাই শত শত তদন্ত অফিসার। তদন্ত কাজে চাই উচ্চতর প্রযুক্তির ব্যবহার। সভ্য ও নিরাপদ ভাবে বাঁচার এই হলো অনিবার্য খরচ।  

দেহের মৃত্যু ঘটায় যেমন জীবাণু, তেমনি রাষ্ট্রের মৃত্যু ঘটায় এই দুর্বৃত্তরা। এরা যেমন ইসলামের শত্রু, তেমনি শত্রু মানবতার ও গণতন্ত্রের। শয়তানের এজেন্ডাই এদের এজেন্ডা। এরাই আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে ব্যর্থ করে দেয়।  তাই ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ, রোজা ও হজ্জ-যাকাত নয়; মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাও নয়। বরং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদ। এ জিহাদই হাতিয়ার হলো ইসলামকে তথা আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার। এ জিহাদে শহীদ হলে তার জন্য রয়েছে বিনা হিসাবে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। সে প্রতিশ্রুতি অন্য কোন ইবাদতে নাই। দেশবাসীর কাছে এ জিহাদ গুরুত্ব না পেলে জোয়ার আসে দুর্বৃত্তির। দেশ তখন দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। বাংলাদেশ সে রেকর্ড ২৫ বছর আগে ৫ বার অর্জন করেছে।  

দুর্বৃত্তির নির্মূলে বিশাল বিচার বিভাগের পাশে অতি অপরিহার্য হলো সৎ ও যোগ্য ঈমানদারদের নিয়ে গড়া দক্ষ এক বিশাল পুলিশ বাহিনী। বাংলাদেশে দুর্বৃত্তদের সংখ্যাটি যেহেতু বিশাল, ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে এমন শক্তিশালী পুলিশ বিভাগ ও বিচার বিভাগের বিকল্প নাই। শক্তিশালী বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সাথে গড়ে তুলতে হবে বিশাল দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে থাকত হবে এ কমিশনের শক্তিশালি অবস্থান। পুলিশ, আদালত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজেদের দুর্নীতি তদন্তের জন্য থাকতে হবে আরেকটি বিশাল প্রতিষ্ঠান। তাদের উপরও রাখতে হবে কড়া নজরদারী। এবং পুলিশ, বিচার ও দুর্নীতি দমন বিভাগের যারা দুর্নীতিতে ধরা পড়বে তাদের জন্য থাকতে হবে দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির বিধান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক যুদ্ধই হবে সরকারের নীতি।

দেশে কৃষি, শিল্প-কারখানা, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যতই গড়া হোক, দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। মুসলিমগণ অতীতে যেরূপ সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিলে, তার মূল কারণ ছিল, তাঁরা নির্মূল করতে পেরেছিলেন দুর্বৃত্তির এবং প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছিলেন সুবিচারের। আল্লাহ তায়ালা সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। সেটি এজন্য নয় যে, তাদের মুখে লম্বা দাড়ি ও মাথায় টুপি এবং তারা বেশী বেশী নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে, তারা মহান রব’য়ের প্রতি ঈমান আনে এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল করে ও প্রতিষ্ঠা দেয় সুবিচারের।  কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে আজ দাড়ি-টুপি, নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠ গুরুত্ব পেলেও, গুরুত্ব পায়নি দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। ফলে তারা শ্রেষ্ঠ জাতি রূপে বেড়ে উঠার বদলে রেকর্ড গড়ছে দুর্বৃত্তিতে। দেশে  দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদটি শুধু বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও দুর্নীতি দমন বিভাগ লড়বে -তা নয়; সে জিহাদটি লাগাতর লড়বে প্র্রতিটি ঈমানদার। এ জিহাদে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হবে সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ।

জনগণের স্তরে এ জিহাদ তীব্রতর করার প্রয়োজনে গড়ে তুলতে হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিশন ও গবেষণা বিভাগ। প্রতিটি নাগরিককে পুলিশে পরিণত হতে হবে। দুর্বৃত্ত দমন ও দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদ শুধু সরকারের নয়, এ জিহাদ প্রতিটি নাগরিকের। দুর্বৃত্ত অপরাধীরা সাধারণ ‌নাগরিকদের পাশেই বসবাস করে। সরকারের চেয়ে জনগণ তাদের সম্বন্ধে বেশি জানে। তাই মহল্লায় মহল্লায়, থানায় থানায়, জেলায় জেলায় অপরাধীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে হবে জনগণের। অপরাধীদের অপরাধ-কর্ম নিয়ে প্রমাণসহ পত্রপত্রিকায় নিয়মিত নিবন্ধ প্রকাশ হওয়া উচিত। সোসাল মিডিয়ার তাদের অপরাধের সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করতে হবে। এ কাজটি ‌দেশের যোগ্য, সৎ ও মেধাবী সাংবাদিকদের। প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীল সাংবাদিকের দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব নয় যে তারা দেশের প্রতিটি গ্রাম ও প্রতিটি মহল্লার উপর নজর রাখবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিটি নাগরিককে।  

নিরাপদ, সভ্য ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার দায় কোন বিশেষ দল বা নেতার নয়, সে দায় প্রতিটি নাগরিকের। দেশের নাগরিকগণ এ কাজে নিষ্ক্রিয় থাকলে এবং এ কাজে অবহেলা দেখালে সরকার ব্যর্থ হতে বাধ্য। তখন সরকারকে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে কোন লাভ হবে না। তখন শুধু সরকারই ব্যর্থ হবে না, সমগ্র রাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ইসলামে নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার কোন স্থান নাই। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো সৎ কাজে সক্রিয় হওয়া এবং অন্যায়কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা। ঈমানদারের দায় হলো, সে তার মেধা, সময়, অর্থ, শক্তি এমনকি রক্তের বিনিয়োগ করবে সমাজ থেকে দুর্বৃত্তির নির্মূলে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠায়। এরূপ নিরলস জিহাদের মধ্য দিয়ে সে নিজেকে প্রিয়তর করে মহান আল্লাহর কাছে। 

ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু নামাজ-রোজা, হজ-যাকাত নিয়ে বাঁচা নয়, বরং জিহাদ নিয়ে বাঁচাও। সেটিই তো নবীজী ও তার সাহাবাদের সূন্নত। দুর্বৃত্তের নির্মূল ও সভ্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় জিহাদই হলো একমাত্র হাতিয়ার। যেখানে জিহাদ নেই, সেখানে জোয়ারটি দুর্বৃত্তির।  সমাজকে দুর্বৃত্ত মুক্ত করার কাজটি নামাজ-রোজা ও হজ-যাকাত দিয়ে হয়না। নবীজীর প্রতিটি সাহাবী জিহাদ করেছেন এবং অর্ধেকের বেশি সাহাবা শহীদ হয়েছিলেন বলেই সে কালে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণের কাজ সম্ভব হয়েছিল। 

যারা মনে করে বেশি বেশি মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে এবং ‌নামাজ-রোজা আদায় করে ভাবে তারা ইসলামের বিজয় এবং সভ্য ও নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণ করে ছাড়বে -তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করে‌। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে এমন আহাম্মকদের সংখ্যাটি বিশাল। এদের কারণেই বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম দেশে বিষয়টি শয়তানের পক্ষের শক্তির এবং পরাজিত হয়ে আছে ইসলাম। ফলে বেঁচে নাই আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শারিয়া। এভাবেই মুসলিমরা সংখ্যায় বাড়ছে বটে, কিন্তু পরাজয় বাড়াচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের। এ পথে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থতা অনিবার্য। পরকালের যখন মহান আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে তখন অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে, “যখন তোমার রব’য়ের সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়া বিধান‌ তোমার দেশে বিলুপ্ত ছিল,তখন তোমার ভূমিকা কি ছিল? প্রশ্ন হলো, তখন কি জবাব হবে? মহান আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজেই সে হিসাব নেয়া জরুরি নয় কি?