রোহিঙ্গা-কেএনএফ সমস্যা : কড়িডোর : সঙ্কটের আবর্তে বাংলাদেশ

- Update Time : ০২:৪৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / ২৩১ Time View
।। এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।। ০১. বাংলাদেশের কক্সবাজারসহ পার্বত্য তিন জেলা মোট চারটি জেলা নিয়ে চলছে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র। আগের শান্তি বাহিনী সহ পার্বত্য অঞ্চলের নানা উপজাতিয় সন্ত্রাসী গ্রপের সাথে যুক্ত হয়েছে কেএনএফ আর রোহিঙ্গা সদস্যা। যে কোন মুহুর্ত এ অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদলেহনকারীদের অভয় অরন্য। বিষ্ফোরন ঘটতে পারে নানা শক্তির সংঘর্ষের। ফলে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষরা বিপদে পড়তে পারে। এমনিতেই এ অঞ্চলের সাধারণ জনগন নানা যন্ত্রনায় রয়েছে। তারা নিরাপদে জীবন পার করতে পারছে না। আতঙ্কের মাঝেই তাদের সময় অতিবাহিত হয়। রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং স্থানীয় মানুষের ওপরও হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক। অন্যদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন অর্থাৎ কেএনএফরে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে পার্বত্য অঞ্চলের জনজীবনে নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি এদের অরাজকতার ফলে এরা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও চরম হুমকি হয়ে উঠছে।
মিয়ানমারের রাখাইন বা ওই অঞ্চলে এমনকি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলেরও কিছু জায়গা নিয়ে একটি আলাদা খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথাও শোনা যায়। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র, এমনকি তাদের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কোনো আলোচনা নাই একবারেই। আর থাকলেও তাতে পশ্চিমাদের সমর্থনের কথা শোনা যায় না।
০২. বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এবং পুরো রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে, মানাং দ্বীপ এবং গুরুত্বপূর্ণ চকপিউ বন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখনো জান্তার হাতে। মিয়ানমারের নৌবাহিনীও সেসব এলাকায় তাদের অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান তীব্র সংঘর্ষের কারণে রাখাইনের জনগণের জীবন বিপর্যস্ত। এ ভোগান্তি আরও বাড়াতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের সরবরাহ পথ বন্ধ করে রেখেছে। রাখাইনের জনগণ তীব্র খাদ্য ও ওষুধ সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে দেশের অভ্যন্তরে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ, জমিওয়াতুল মুজাহিদানসহ আরো কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের অবস্থান রয়েছে বলে দেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট প্রমান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় নাগরিকগন নিরাপত্তার হুমকিতে রয়েছে। মাদক, অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধে রোহিঙ্গারা জড়িত। এ ছাড়া পান থেকে চুন খসলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজনের ওপর হামলা চালায়।
তাদের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয় না। অপরাধ করার পরেও পার পেয়ে যাওয়ার কারণে দিন দিন তারা নিয়ন্ত্রনহীন আগ্রাসী হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে স্থানীয় লোকজনের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করেন। পালিয়ে আশা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আজ মহাবিপদে পড়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘোদের উপর বিষ ফোর।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সাল থেকেই জড়িয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালের ঘটনার আগে থেকে মিয়ানমারের প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা সম্পূর্ণ অবৈধ, নিয়ন্ত্রণহীন ও হিসাবহীনভাবে কক্সবাজারে অবস্থান করছিল। তখন এই রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে কী হতো তার খবর কেউ হয়তো খবরই রাখত না। তবে তখনো পত্রিকায় অনেক সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে এবং তার মাধ্যমে যা জানা গেছে, সেটি কিছুতেই বাংলাদেশের জন্য শুভ কিছূ ছিল না। ২০১৭ সালের পর সবার টনক নড়লেও এর আগ পর্যন্ত এটিকে কেউ গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতো না। কিন্তু আজকের বাস্তবতা প্রমাণ হয়েছে ২০১৭ সালের পূর্বে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ যতটা সহজ ছিল, এখন সেটা ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে গেছে।