১১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মনুষ্যত্বের সন্ধানে, এক অসম পৃথিবীতে মানুষের পথচলা

Reporter Name
- Update Time : ০৫:২১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
- / ১০০ Time View

আনিছুর রহমান (চট্টগ্রাম): আমাদের চারপাশে আমরা যত মানুষকে দেখি, তাদের কি সবাই সত্যিই “মানুষ”? এই প্রশ্নটা আমাদের মনের গভীরে প্রায়শই উঁকি দেয়। কারণ, চারপাশে এখন মানুষ নামের প্রাণীদেরই ভিড়। মনুষ্যত্ববোধ যেন আজ এক দুর্লভ গুণ, যা কেবল বইয়ের পাতায় বা অতীতের গল্পেই পাওয়া যায়। মানুষ এখন কেবল নিজের স্বার্থটুকুই বোঝে, নিজেদের সুখ ও সুবিধার বাইরে অন্য কোনো কিছুর অস্তিত্ব তারা স্বীকার করতে চায় না। যখনই অন্যের উপকারের প্রসঙ্গ আসে, তখনই তারা পিছু হটে যায়। কোনো বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার পরিবর্তে, তারা বরং কীভাবে সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে নিজের পথ সহজ করা যায়, সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে। এই আচরণগুলো প্রমাণ করে যে, তাদের ভেতরের মানবিকতা আজ প্রায় বিলুপ্ত। যদি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই বোধটা থাকত, তাহলে হয়তো আমাদের সমাজটা এতটা স্বার্থপর এবং বৈষম্যপূর্ণ হতো না।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবনের কঠিন বাস্তবতাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চারপাশের পরিস্থিতি দেখে এটা বুঝি যে, এই পৃথিবীতে সরল-সহজ মানুষদের টিকে থাকা খুব কঠিন। যারা কথার মারপ্যাঁচ বোঝে না, যারা অন্যের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তারাই পদে পদে ঠকে যায়। তাদের সরলতাকে মানুষ দুর্বলতা মনে করে এবং সুযোগ পেলেই সেটার অপব্যবহার করে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যারা এই মানবিক কাজগুলো করে ঠকে যায়, দিনশেষে তারাই আসল বিজয়ী। কারণ, এই ঠকে যাওয়ার মধ্যেও এক ধরনের আত্মিক তৃপ্তি লুকিয়ে আছে। আপনার করা সাহায্য যদি মানুষের চোখে ধরা নাও পড়ে, অন্তত সৃষ্টিকর্তার চোখে তা ধরা পড়বেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, আপনি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে পারেন। এই আত্মিক শান্তি কোনো বস্তুগত প্রাপ্তির চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

আমাদের সঙ্গে যখন কেউ অন্যায় করে, তখন বিবেক আমাদের দংশন করে। কিন্তু অবাক হতে হয় যখন দেখি, যাদের প্রতি আমরা সহমর্মিতা ও ভালোবাসা দেখাই, তাদের কাছ থেকেই মাঝে মাঝে এমন আঘাত পাই, যা ভাবতেই কষ্ট হয়। এই আঘাতগুলো গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, যা আমাদের বিশ্বাসকে ভেঙে দেয়। তবুও, যার ভেতরে সত্যিকারের মনুষ্যত্ব আছে, সে এই আঘাতগুলোকে সহজে মেনে নিতে পারে না, কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। সে আবার সেই মানবিকতাকেই জাগ্রত করার চেষ্টা করে, কারণ তার কাছে এটাই জীবনের একমাত্র পথ। আমি সেইসব মানুষের দলে, যারা কেবল প্রাণী নয়, বরং প্রাণ ও মনুষ্যত্ব দুটো নিয়েই বেঁচে আছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই মনুষ্যত্ববোধহীন মানুষদের সঙ্গেই আমাদের চলতে হয়। এটাই হয়তো জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের সাথে তাল মিলিয়ে চললেই কেবল সম্পর্ক ভালো থাকে। সামান্য একটু ব্যতিক্রম হলেই তাদের আসল রূপ বেরিয়ে আসে। তখন তারা আপন মানুষের দিকেও ফিরে তাকায় না। তারা হয়তো এটা ভাবে না যে তারা কতটা ভুল করছে। যার ভেতরে মনুষ্যত্ব আছে, সে নিজের ভুলগুলো দেখতে পায় এবং তা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ সে জানে যে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করাই হলো শক্তিশালী হওয়ার প্রথম ধাপ। কিন্তু যারা নিজেদের ভুল দেখতে পায় না, কিংবা অন্য কেউ দেখিয়ে দিলেও তা মানতে চায় না, তাদের ভেতরে আর যাই থাকুক, মনুষ্যত্ব নেই। তারা শুধুমাত্র নিজের অহংবোধকে প্রাধান্য দেয়। তাই আমি বিশ্বাস করি, প্রাণ থাকলেই প্রাণী হওয়া যায়, কিন্তু মানুষ হতে হলে প্রয়োজন হয় মনুষ্যত্ববোধের, যা বিবেক ও সহানুভূতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
Tag :