১০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর, গ্রামীণ জীবন, ঐতিহ্য ও প্রকৃতিতে গড়া এক স্বপ্নীল জনপদ

Reporter Name
- Update Time : ০৫:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৫৩ Time View

আনিছুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রাম: আধুনিকতার ভিড়ে যখন গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ ম্লান হতে চলেছে, তখনো চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামটি ধরে রেখেছে তার নিজস্বতা, ঐতিহ্য আর স্নিগ্ধতা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সবুজের আঁচলে মোড়া এই জনপদ যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত ক্যানভাস, যেখানে কৃষকের হাসি, রাখালের বাঁশির সুর আর মেঠোপথের ধুলোমাখা জীবনকাহিনী একাকার হয়ে আছে।
সাধনপুরের প্রাণকেন্দ্র হলো তার কৃষি। এখানকার মাটি এতটাই উর্বর যে, তা বছরের পর বছর ধরে কৃষকদের অন্ন যোগান দিয়ে আসছে। ছবির মতো বিস্তৃত ধানক্ষেত দেখলে বোঝা যায়, এটি শুধু একটি শস্যের ক্ষেত নয়, বরং এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রধান উৎস। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকরা জমিতে কাজ করেন—কেউ কাঁধের লাঙল দিয়ে জমি চষছেন, কেউবা নিচু হয়ে পাকা ধানের আঁটি কাটছেন। তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল যখন ঘরে ওঠে, তখন তা কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই বয়ে আনে না, বরং পুরো গ্রামে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়। শীতকালে এখানকার মাঠগুলোতে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে ওঠে, যা দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন প্রকৃতি তার গায়ে সোনালী চাদর বিছিয়ে দিয়েছে।
সাধনপুরের সামাজিক জীবন অত্যন্ত দৃঢ়। এখানকার মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর এবং আন্তরিক। গ্রামের চায়ের দোকানগুলো শুধুমাত্র চা পানের জায়গা নয়, বরং এটি হলো স্থানীয়দের মিলনস্থল। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে বয়স্করা এখানে একত্রিত হন, খবরের কাগজের পাতা উল্টান, রাজনৈতিক আলোচনা করেন এবং গ্রামের সুখ-দুঃখের গল্প শোনেন। এই আড্ডাগুলোই গ্রামের সামাজিক বন্ধনকে আরও মজবুত করে তোলে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ছাগল নিয়ে খেলাধুলা করা, কিংবা দলবেঁধে স্কুল থেকে ফেরা—এসব দৃশ্য সাধনপুরের সরল ও নিষ্পাপ জীবনের প্রতিচ্ছবি।
সাধনপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ। একদিকে যেমন রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়ের সারি, অন্যদিকে সবুজ গাছের ছায়া ঘেরা আঁকাবাঁকা পথ। পাখির কলরবে মুখরিত হয় এখানকার সকাল, আর সন্ধ্যায় শান্ত বাতাস মনকে ভরিয়ে দেয় এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে। বৃষ্টিস্নাত দিনে চারপাশের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এমন পরিবেশে হেঁটে চলা বা নিঃশ্বাস নেওয়াও যেন এক ধরনের আনন্দ। এখানকার জলবায়ু মনোরম, যা কৃষি ও জীবনধারণের জন্য খুবই সহায়ক।
সাধনপুরের মানুষ তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পরম যত্নে লালন করে। লোকগীতি, পালাগান, এবং বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলা এখানকার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে এখানে বসবাস করে। এটি কেবল একটি গ্রাম নয়, এটি যেন বাংলাদেশের এক টুকরো আদর্শ চিত্র, যেখানে মানুষ প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে, ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে আর পারস্পরিক ভালোবাসায় জীবনযাপন করে।
এই গ্রামটি যেন আমাদের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, যা আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি—যেখানে শান্তি, সম্প্রীতি, কঠোর পরিশ্রম আর প্রকৃতির সৌন্দর্য একই সুতোয় গাঁথা।
Tag :