০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাঁশখালীর গর্ব ডা. সওগাত উল ফেরদৌস: সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি
- Update Time : ০১:৫০:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৯৬ Time View
আনিছুর রহমান ভ্রাম্যমান প্রতিনিধ (চট্টগ্রাম):
চট্টগ্রাম বাঁশখালীঃ- আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না বাঁশখালী সাধনপুর ৯নং ওয়ার্ডের মোকামী পাড়ার বাসিন্দা মোঃ জিয়াউর রহমান। তার হৃদপিণ্ডের দুটি ভালভ প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ঠিক এই সংকটময় মুহূর্তে তার পাশে এসে দাঁড়ালেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মানবিক চিকিৎসক ডা. সওগাতউল ফেরদৌস।
তিনি জিয়াউর রহমানের চিকিৎসায় অপূরনীয় অবদান রাখেন।চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা মোঃ জিয়াউর রহমানের বড় ভাই জানান, তার ছোট ভাইয়ের হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। স্হানীয় ভূমিদস্যুদের একের পর এক হামলায় চিকিৎসা ও মিথ্যা মামলা সহ ৭টি মামলায় জড়িয়ে তাদের উঠতি পরিবারেরকে আর্থিক মানসিক ও শারেরীক ভাবে একেবারেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার বিষয়ে মেসেঞ্জার ডা. সওগাত উল ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
মানবিক এই চিকিৎসক তার ডাকে সাড়া দেন এবং চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।মোঃ জিয়াউর রহমানের বড় ভাই আরো বলেন, “ডাক্তার সওগাতউল ফেরদৌস একজন মানবিক মানুষ। যখন আমার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য টাকার অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম, তখন তিনিই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ৩০শে জুন ২০২৪ ইং তারিখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৬ নং ওয়ার্ডের চিকিৎসকগণ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষার পর রির্পোট দেখে আমাদের জানিয়েছেন আমার ভাইয়ের হ্নদপিন্ডের দুইটি ভাল্বভ নস্ট হয়েছে।

চিকিৎসকদের কথা শুনে কি করব তখন ভেবে পাচ্ছিলাম না। একদিকে দেওয়ানী, ফৌজদারি ৭টি মামলা ও ১৫ টি মত বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগ চলমান। ভূমিদস্যুদের হামলায় বিগত ৮ বছর যাবৎ দুই ভাই বেকার তারাও চিকিৎসাধীন আমি তাদের দেখ ভালো এবং মামলা গুলোতে সময় ব্যায় করতে করতে বেকার হয়ে পড়েছি। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর দয়া ও রহমতে সবার ছোট ভাই, জঠিল রোগে আক্রান্ত, চিকিৎসকদের কথা শুনে নিজেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম এসময় নিঃশ্বাস নিতেও কস্টবোধ করছিলাম। কি করব কার কাছে গেলে সরকারি ভাবে প্রিয় ছোট ভাইটির সঠিক পাব। ভাবতে ভাবতে মনে পড় বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের ডা. সওগাত উল ফেরদৌসের কথা। নির্ভয়ে উনাকে আমার ভাইয়ের রোগের বিষটি খুলে বল্লাম। এর আগে ও তিনি প্রসূতি গাইনি ওয়ার্ডে আমার স্ত্রীর ডেলিভারির সময় সহযোগিতা করেছিলেন।
তিনি আমার ভাইয়ের রোগের শুনে নিজের কাজকর্ম ফেলে রেখে আমার ভাইকে দেখতে সশরীরে ১৬ নং ওয়ার্ডে চলে আসেন। অতঃপর রিপোট দেখে অত্র ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের আমাদের পরিচয় তুলে ধরেন।অত্র ওয়ার্ডে একটানা ১৫ দিন চিকিৎসা গ্রহন শেষে কতৃপক্ষ ওষুধ পত্র লিখে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। ১০ দিন পর রোগীর অবস্থা পুনরায় খারাপ দেখা দিলে অত্র হাসপাতালের ১২ ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। এই ওয়ার্ডে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে, জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে জাতীয় হ্নদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শেরেবাংলা নগর ঢাকায় রেফার করেন। ওই সময় ছাত্র জনতার আন্দোলনে দেশে কারফিউ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্দ থাকায় নিয়মিত হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি।

দীর্ঘ প্রায় ২ মাস ১০ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ডাক্তার সঞ্জয় কুমার (রাহা)র আন্তরিক সফল অপারেশনে আমার ভাইকে, মাইট্রাইল ভাল্বভ প্রতিস্থাপন করা হয়। অপারেশন পরবর্তী কিছুটা সুস্থবোধ করলে ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে কতৃপক্ষ ওষুধ পত্র লিখে ছাড় পত্র দিয়ে দেন।ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি আসার ৫দিন পর থেকে অসহ্য ব্যাথা বেদনা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়াক বর্হিবিভাগে দেখা। বর্হিবিভাগে ডা. মারুফ আল হাসান সপ্তাহে ১বার করে দেখাতে পরামর্শ প্রদান করেন। ওইখানে ১মাস চিকিৎসা গ্রহন করি ব্লাড যাওয়া আর পুঁজ পড়া বন্দ হলেও শ্বাসটান বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালটির হ্নদরোগ বিভাগের কার্ডিওলজিস্ট ১২ নং ওয়ার্ডের ই- বল্কে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা গ্রহন করি।
ইনফেকশন জনিত স্হান দিয়ে পুনরায় ব্লাড আর পুঁজ বের হলেই অনকল শীট নিয়ে কার্ডিয়াক সার্জারিতে যায়। কার্ডিয়াক সার্জারি ২৪ নং ওয়ার্ড সার্জারিতে পাঠান। সেখানে মানবিক ডাক্তার সওগাত উল ফেরদৌস ও-ই আমার ভাইকে নিজ হাতে ড্রেসিং করেন। অত্র হাসপাতালে আমার ভাই দুইমাস ভর্তি থাকাবস্হায় অন্তত ১০বার ড্রেসিং করা হয়েছিল। প্রতিবার উনি উপস্থিত থাকতে না পারলেও দায়িত্বে থাকা অন্য সার্জারিয়ান ডাক্তার কিংবা উনার সহকর্মী চিকিৎসকদের মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিত।
২৯ শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ হতে জুন ২০২৫ খ্রিঃ পর্যন্তে সময় মধ্যে আমার ছোট ভাই (চমেক) হাসপাতালে ১২নং ওয়ার্ডে ৪ বার ভর্তি ছিল। কখনো ৫৫ দিন কখনো ৪০দিন কখনো ২০ দিন
প্রতিবারই মানবিক ডাক্তার সওগাত উল ফেরদৌস আমার ভাইয়ের খোঁজ খবর নিয়েছেন।
এবং ১২ নং ওয়ার্ডের সিনিয়র জুনিয়র সকল চিকিৎসক এবং নার্স আয়া অনেক ট্রলি ম্যান ও অফুরন্ত আন্তরিক ভালবাসা দেখিয়েছেন। ২০২৫ ইং মে মাসের শেষের দিকে ১২নং ওয়ার্ডের চিকিৎসকগণ আমার ভাইকে থোরাসিক সার্জারি দেখানোর পরামর্শ প্রদান করলে আমরা থোরাসিক আমরা প্রথমে ঢাকা শেরেবাংলা নগর জাতীয় হ্নদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ডা. সঞ্জয় কুমার রাহার সাথে দেখা করি। তিনি ও আমার ভাইকে থোরাসিক সার্জারিতে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
একই সাথে প্লাস্টিক বার্ন সার্জারির ডাক্তার ও দেখাতে বলেন। তার পরের দিন আমি ডা. সওগাত উল ফেরদৌস এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে জাতীয় প্লাস্টিক বার্ণ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে উনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন।
ঐদিন সকালে আমি জাতীয় বার্ণ প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভর্তির টিকেট নিয়ে ডাক্তার দেখায়। ডাক্তার আমার ভাইকে দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তড়িঘড়ি করে ঐ দি ন দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থোরাসিক মেডিসিন ডাক্তার দেখায় ও-ই ডাক্তার আমার সার্জারি বিভাগে ভর্তি নেওয়ার জন্য মোবাইল কলএ যোগাযোগ করেন। সেখানে বেড কালি না থাকায় আমার ভাইকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। মেডিসিন ওয়ার্ডে ৫দিন চিকিৎসা দেওয়া পর থোরাসিক সার্জারিতে রেফার করেন। সে ওয়ার্ডে দীর্ ১মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওষুধ পত্র লিখে দিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। ১৫ দিন পর গত ১০ই জুলাই ২০২৫ ইং তারিখে পুনরায় (ঢামেক) হাসপাতালের দেখায় ডাক্তার দেখে দুই মাসের ওষুধ পত্র লিখে দেন। এখন আমার ভাই আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থবোধ করছেন।
ডা. সওগাউল ফেরদৌসের সঠিক পরামর্শ আন্তরিক সহযোগিতায় ছাড়া হয়তো আমার ভাইয়ের সঠিক চিকিৎসা ফেতনা। তিনি নিজের পরিবার পরিজন আত্মীয়স্বজনের দেখভাল খোঁজ খবর নেওয়ার মাঝেও শতব্যাস্হার মধ্যে আমি সহ অসংখ্য অসহায় হতদরিদ্র রোগীদের বিভিন্ন ভাবে সহয়তা করতেন।ডা. সওগাতউল ফেরদৌস, যিনি নিজেও বাঁশখালী বৈলছড়ি ইউনিয়নের সন্তান, দীর্ঘদিন ধরে মানবিক কার্যক্রমের জন্য পরিচিত। চমেক হাসপাতালের একজন নাক, কান গলা ও সার্জারিয়ান হিসেবে তিনি নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
এছাড়াও, বিভিন্ন সময় আর্থিক সংকটে থাকা রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, চিকিৎসার পাশাপাশি মানবিকতা দিয়েও একজন চিকিৎসক মানুষের মনে কতটা জায়গা করে নিতে পারেন। তার জ্যান্ত প্রমান আমি এবং আমার ভাইয়েরা।
ডা. সওগাতউল ফেরদৌসের এই মানবিক উদ্যোগ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তার এই প্রচেষ্টা সমাজের অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা
Tag :