বৈশাখ উদযাপনে একটি সম্প্রদায়ের
আচরিত কৃতকর্ম পূজারই বহিঃপ্রকাশ
—————-মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী রহ:
বৈশাখ উদযাপনে একটি সম্প্রদায়ের ধর্মভিত্তিক উপাদান সম্বলিত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে পূজা উদযাপনেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । কারণ তারা তাদের চরক পূজার দিনে এই দিবসটি উদযাপন করে থাকে পূজা হিসেবেই। তাছাড়া পহেলা বৈশাখে মঙ্গলঘট, মঙ্গল প্রদীপ, মাঙ্গলিক প্রতীক অঙ্কন এবং নানা ধরণের মুখোস ধারণ প্রভৃতি একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার-রীতি বাংগালী সংস্কৃতির নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে অনুশীলন করতে বাধ্য করে। জাতীয় সংস্কৃতির নামে ঋতু ও বর্ষবরণ বা অন্য যেকোন উৎসব উদ্্যাপনে বিজাতীয় ধর্মীয় কর্মকান্ড কৌশলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে ধারণ, চর্চা ও অনুশীলন করাতে দেখা যায় এবং তা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে নববর্ষ উৎসবে বিজাতীয় ধর্মীয় কর্মকান্ড এমনভাবে প্রবেশ করানো হচ্ছে যে, এতে আমাদের বিশ্বাস ও ঈমান-আক্বিদা চরম হুমকীর সম্মূখীন হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
বৈশাখী উদযাপন পূজাও নয়, ইবাদত ও নয়” শীর্ষক উপসম্পাদকীয়-এর ওপর মন্তব্য করে বলেন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে, উলুধ্বনী দিয়ে, শাখা বাজিয়ে, মঙ্গল কলস সাজিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু করা এবং পহেলা বৈশাখের মিছিল দিতে ঢোলের ব্যবহার, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পেঁচা, ইঁদুর, হনুমান, হাঁস, সিংহ, সূর্য্য, ময়ূর, গাভী, হাতি, ঘোড়া ও কচ্ছপসহ যেসব পশু-পাখীর প্রতীক ও মুখোস নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়ে, তা সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কর্মকান্ডের অন্তর্ভূক্ত, যা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ¯া^তন্ত্র্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা সংখ্যালঘু একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস স্বরসতীর বাহন, সিংহ দূর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন।
বাংলা সনের বিকৃতির ব্যাপারে, মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে ১৫৫৬ অব্দ মোতাবেক হিজরী ৯৬৩ চান্দ্র সনকে সৌর সনে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলা নতুন বছরের গুনার রীতি প্রবর্তিত বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ অর্থ্যাৎ ”অগ্র” (প্রথম) + হায়ন বৎসর (=অগ্রহায়ণ)। পহেলা বৈশাখ নয়। কিন্তু বাংলা সনের ষষ্ট মাস বৈশাখকে বছরের প্রথম স্থানে প্রতিস্থাপন করেছে একটি সম্প্রদায় তাদের চরক পূজার দিনে । কথিত আছে এই দিনটিতে হযরত ইব্রাহিমকে (আ.) অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয় । তিনি বলেন, এ রূপান্তরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সম্রাট আকবরের শাহী দরবারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী। কিন্তু মঙ্গলঘট, মঙ্গল প্রদীপ, মাঙ্গলিক প্রতীক অঙ্কন প্রভৃতি আমদানী করা বিশেষ ধর্মীয় কুসংষ্কারাচ্ছন্ন আচার-রীতির আগ্রাসনে পহেলা বৈশাখের চেতনাকে ভিন্নমুখি করা হচ্ছে। এই আগ্রাসন পরিচালিত হচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতির স্বাভাবিক বিবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করে একটি স্বাধীন জাতির স্বাতন্ত্রবোধকে ধ্বংস করার জন্যে বিভিন্ন প্রথা পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে।
বৈশাখ উদযাপনে বিশেষ আচার-রীতির মোড়কে একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের সাথে সম্পৃক্ত মুসলমানদেরও পৌত্তলিকতা সম্পন্ন কর্মকান্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে কি না তা গভীরভাবে তলিয়ে দেখা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মুসলমানদের প্রতিটি কাজই ইবাদত হিসেবে গণ্য, যদি তা ধর্মীয় বিধি-বিধান হিসেবে প্রতিপালিত হয়। মুসলমানদের প্রতিটি কাজের জবাবদিহিতা করতে হবে । তাই পূন্য অর্জনের লক্ষ্যে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুসৃত ধর্মীয় রীতিতে উদযাপিত পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সঠিক কি না তাসংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে বিশেষভাবে অনুধান করা উচিৎ। সংখ্যালঘু একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ^াস মোতাবেক মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষীর বাহন পেঁচা-এর প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ তৌহিদবাদী চেুনার পরিপন্থী কি না তা ও বিবেচনা করে দেখা সময়ের দাবি।
ভিনজাতি সংস্কৃতি পোশাকে আচরণে চিন্তায় বিচরণে ক্রীয়াশীল থাকা নববর্ষের আবাহন কদর্য্য হয়ে উঠেছে। ওয়ারেন হেস্টিংস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করায় বাংলা ফসলী সনের প্রভাব ও গুরুত্ব বিলুপ্ত হতে থাকে। সুর্যাস্ত নিয়মে ইংরেজী সালের শেষ দিনের আগে প্রজা, জোতদার ও জমিদারদের দখলিকৃত জমি বা জমিদারীর খাজনা আদায় করা হত। ফলে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে ১লা বৈশাখের তাৎপর্য অবশিষ্ট থাকে না।
হিন্দু রাজস্ব আদায়কারীরা তাদের আচরণগত ধারা বজায় রাখে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে। আর মুসলমানরা রাজত্ব হারিয়ে অভিমানবসত: সমাজ সংস্কৃতি ও সভ্যতা থেকে ক্রমশ দূরে যেতে যেতে হতদরিদ্র হয়ে পড়ে। তাই পহেলা বৈশাখ যে, মুসলমানদের সংস্কৃতি সেটা ভুলে গিয়ে ইংরেজদের আচরণে নববর্ষ উদযাপন বা বছরের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন একটা নতুর রূপ পায়। সেটা দেখে রক্ষণশীল মুসলমানরা এই বৈশাখী উৎসব পালনকারী বিধর্মীদের নিন্দা করতে লাগেন। এইভাবে হালখাতা উৎসব হিন্দুদের কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
(লেখক : মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী রহ: । সাবেক সভাপতি ইসলামী ঐক্য জোট,বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি)
Hello my friend! I want to say that this post is awesome, nice written and include approximately all important infos. I’d like to see more posts like this.