০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

পর্দা, পথচারী নসিহত ও বাস্তবতা!

Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৪০:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • / ৮০ Time View

পৃথিবীর কোন আহম্মক রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোন মেয়েকে ওড়না ঠিক করতে বলতে
পারে না। বোধ থাকলে বউকেও রাস্তায় তথা জনসম্মুখে বসে এসব কথা বলা যায়
না। ওয়াজ-নসিহত যা করার তা বাসায় করতে হয়। রাস্তায় জনকে জনকে ধরে
ওড়না ঠিক করতে বলা, টিপ খুলতে বলা- এসবকে দাওয়াত মনে করেন? এসবকে
ধর্ম নয় বরং ফাজলামি বলতে পারেন। ওড়নার ব্যাপারে সাধারণীকরণ করে
অপরিচিতাকে বলা যায় না। তবে পর্দার ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে সমাজে নসিহত
করা যায়। করা উচিত। তবে সেটা শুধু নারীকে নয় বরং পুরুষকে আরও বেশি। মোরাল
পুলিশিং করার অধিকার কে কাকে দিয়েছে- সেটাও ফয়সালা করা দরকার। আইন
কিংবা ধর্মের তো ইজারা হয় না।

আচ্ছা, পুরুষের পর্দার ব্যাপারে নির্দেশনা কী? পথচারী নারীরা বুকের উপরে
ওড়না পরিধান করেনি কিংবা ওড়না কোনো পাশে সরে গেছে- ধর্মমতে পুরুষের চোখ
তো বুক পর্যন্ত উঠার কথা না। চোখ থাকবে মাটিমুখী। এই দেশে তো এমন কোনো
লম্বা পুরুষ জন্মায় না যাদের চোখ মাটিতে ফেলতে তাদের চোখ নারীর বুক স্পর্শ
করে যাবে! তবে? চালুনি সুঁইকে পাছার ছিদ্রের কথা বলবে আর জনতা সেটা ধর্ম
বলে চালিয়ে দেবে- ন্যাক্কারজনক। পর্দা কেবল নারীর জন্য নয় বরং পুরুষদের
জন্যও সমান ভাবে প্রযোজ্য। পবিত্র কুরআনে সুরা নুরের যে আয়াতে নারীদেরকে
পর্দার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার পূর্বের আয়াতেই পুরুষদেরকেও পর্দার
ব্যাপারে তাদের করণীয় বলা হয়েছে। কাজেই বেপর্দার জন্য কেবল নারী দায়ী,
নারীর শরীর ও পোশাক দায়ী- অন্তত ধর্মের মোড়কে এই কথা বলা ঠিক হবে না।
ধর্মান্ধদের যুক্তি হিসেবে রাস্তায় নারী ধরে ধরে ওড়না বিষয়ক ওয়াজ করা যায়!
আপা, আপনার ওড়না ঠিক নাই বলে কতক্ষণ নসিহত করা যায়!

My life, My rule- এটাও সুস্থ মস্তিষ্কের কথা নয়। ধর্মীয় রীতিনীতি, সামাজিক
শৃঙ্খলা মেনে চলাই শ্রেয়। প্রত্যেকেই পরিবার এবং কোন না কোন সমাজের
প্রতিনিধিত্ব করি। যা খুশি তাই করে বেড়ালে, যেমন খুশি তেমনভাবে চলতে থাকলে
সমাজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। পোশাক-পরিচ্ছদে এই দেশটাকে ইউরোপের মত
ভাবলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হবে। কাজেই বাহিরে চলার সময়, কথা বলার
সময় দেশীয় সংস্কৃতি মেনে চলাই শ্রেয়। তবে কেউ সীমাতিক্রম করলে তাকে
হেনস্তা করাও রীতিসিদ্ধ নয়। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সমাজের চারপাশে নিজের হাতেই আইন তুলে নেওয়ার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু হয়েছে।
নিজে না শুধরে, ঘর না সামলিয়ে আমরা পরের দোষ ধরতে যাই। সৎ পথে আহ্বান
পাশের প্রতিবেশী থেকে শুরু করি। নিজের ঘর ঠিক করার প্রয়োজন বোধ করি না।
দাওয়াহের সর্বজনীন নীতি পদ্ধতি আছে। ইচ্ছা হলো আর যাকে তাকে যেখানে
সেখানে দরস দিলে বিপত্তির সৃষ্টি হবে। বিচারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি
আছে, আইনের নির্দেশনা আছে, কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ব্যক্তি আছে। অথচ
কোনো অপরাধ-অন্যায়ের বিচার যে নিজের হাতে তুলে নিয়ে করতে চাই এটাও মূল
অপরাধের মত নিন্দিত অন্যায়। আটটি জান্নাতের সাথে সাতটি জাহান্নামও তো
তৈরি করা হয়েছে- মানুষ কেন ভুলে যায়?

পথেঘাটে অপরিচিত নারীকে আটকিয়ে ওড়নার ওয়াজ করা যায় কেননা ঘরে মা,
বোন-স্ত্রী'র সাথে ভালো আচরণ না করেও কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হইনি! নারীর
দিকে পুরুষের অযাচিত অনেক হস্তক্ষেপ যুগে যুগে ছিল। রাস্তায় ওড়না ঠিক
করতে বলা সেই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এই বলাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না
করলে, নিজের আচরণের সীমারেখা না জানলে মবের সংস্কৃতিতে বেঁচে যাওয়া যাবে
কিন্তু বিবেকের জিজ্ঞাসা এবং স্রষ্টার কৈফিয়ত তলব থেকে বাঁচা যাবে না।
আমরা আরও পরিশুদ্ধভাবে ধর্ম শিখলে, জীবনে বাস্তবায়ন করলে সেটা
সামগ্রিক কল্যাণ সূচিত করবে।

বক ধার্মিকদের কারণেই সাধারণ মানুষ ধর্মের ওপর বিতৃষ্ণ হবে। দাওয়াহের
নামে এইসব ফাজলামো বন্ধ করতে হবে। সুন্দর আচরণ শেখার জন্য যেখানে
যেখানে কমনসেন্স শেখা যায় সেখানে সেখানে সময় দিতে হবে। কিছু কমনসেন্স
নিজের ভেতরেও থাকতে হয়। অন্যায়কারীদের, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীর গোষ্ঠী
পরিচয় দেখা উচিত নয়।

জনমত থাকলেও সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সঠিক বলা যায় না। বিকৃতি
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মবিমুখ নারী-পুরুষ যাতে ধর্মের সৌন্দর্য দেখে
মুগ্ধ হয়ে ধর্মের দিকে আকর্ষিত হয়। বক ধার্মিকদের বাড়াবাড়ি যেকোনো মূল্যে
প্রতিহত করতে হবে। নবী-রাসুল (সা.) এর চাইতে বেশি ধার্মিক হওয়া ভণ্ডামির
নামান্তর। অপরিচিত নারীর দিকে তাকানোর আগে, গায়রে মুহরিমদের মুখোমুখি
হওয়ার আগে ধার্মিক দাবিদারদের ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল
থাকা উচিত।

রাজু আহমেদ
raju69alive@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “পর্দা, পথচারী নসিহত ও বাস্তবতা!

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

পর্দা, পথচারী নসিহত ও বাস্তবতা!

Update Time : ০৪:৪০:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

পৃথিবীর কোন আহম্মক রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোন মেয়েকে ওড়না ঠিক করতে বলতে
পারে না। বোধ থাকলে বউকেও রাস্তায় তথা জনসম্মুখে বসে এসব কথা বলা যায়
না। ওয়াজ-নসিহত যা করার তা বাসায় করতে হয়। রাস্তায় জনকে জনকে ধরে
ওড়না ঠিক করতে বলা, টিপ খুলতে বলা- এসবকে দাওয়াত মনে করেন? এসবকে
ধর্ম নয় বরং ফাজলামি বলতে পারেন। ওড়নার ব্যাপারে সাধারণীকরণ করে
অপরিচিতাকে বলা যায় না। তবে পর্দার ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে সমাজে নসিহত
করা যায়। করা উচিত। তবে সেটা শুধু নারীকে নয় বরং পুরুষকে আরও বেশি। মোরাল
পুলিশিং করার অধিকার কে কাকে দিয়েছে- সেটাও ফয়সালা করা দরকার। আইন
কিংবা ধর্মের তো ইজারা হয় না।

আচ্ছা, পুরুষের পর্দার ব্যাপারে নির্দেশনা কী? পথচারী নারীরা বুকের উপরে
ওড়না পরিধান করেনি কিংবা ওড়না কোনো পাশে সরে গেছে- ধর্মমতে পুরুষের চোখ
তো বুক পর্যন্ত উঠার কথা না। চোখ থাকবে মাটিমুখী। এই দেশে তো এমন কোনো
লম্বা পুরুষ জন্মায় না যাদের চোখ মাটিতে ফেলতে তাদের চোখ নারীর বুক স্পর্শ
করে যাবে! তবে? চালুনি সুঁইকে পাছার ছিদ্রের কথা বলবে আর জনতা সেটা ধর্ম
বলে চালিয়ে দেবে- ন্যাক্কারজনক। পর্দা কেবল নারীর জন্য নয় বরং পুরুষদের
জন্যও সমান ভাবে প্রযোজ্য। পবিত্র কুরআনে সুরা নুরের যে আয়াতে নারীদেরকে
পর্দার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার পূর্বের আয়াতেই পুরুষদেরকেও পর্দার
ব্যাপারে তাদের করণীয় বলা হয়েছে। কাজেই বেপর্দার জন্য কেবল নারী দায়ী,
নারীর শরীর ও পোশাক দায়ী- অন্তত ধর্মের মোড়কে এই কথা বলা ঠিক হবে না।
ধর্মান্ধদের যুক্তি হিসেবে রাস্তায় নারী ধরে ধরে ওড়না বিষয়ক ওয়াজ করা যায়!
আপা, আপনার ওড়না ঠিক নাই বলে কতক্ষণ নসিহত করা যায়!

My life, My rule- এটাও সুস্থ মস্তিষ্কের কথা নয়। ধর্মীয় রীতিনীতি, সামাজিক
শৃঙ্খলা মেনে চলাই শ্রেয়। প্রত্যেকেই পরিবার এবং কোন না কোন সমাজের
প্রতিনিধিত্ব করি। যা খুশি তাই করে বেড়ালে, যেমন খুশি তেমনভাবে চলতে থাকলে
সমাজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। পোশাক-পরিচ্ছদে এই দেশটাকে ইউরোপের মত
ভাবলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হবে। কাজেই বাহিরে চলার সময়, কথা বলার
সময় দেশীয় সংস্কৃতি মেনে চলাই শ্রেয়। তবে কেউ সীমাতিক্রম করলে তাকে
হেনস্তা করাও রীতিসিদ্ধ নয়। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সমাজের চারপাশে নিজের হাতেই আইন তুলে নেওয়ার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু হয়েছে।
নিজে না শুধরে, ঘর না সামলিয়ে আমরা পরের দোষ ধরতে যাই। সৎ পথে আহ্বান
পাশের প্রতিবেশী থেকে শুরু করি। নিজের ঘর ঠিক করার প্রয়োজন বোধ করি না।
দাওয়াহের সর্বজনীন নীতি পদ্ধতি আছে। ইচ্ছা হলো আর যাকে তাকে যেখানে
সেখানে দরস দিলে বিপত্তির সৃষ্টি হবে। বিচারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি
আছে, আইনের নির্দেশনা আছে, কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ব্যক্তি আছে। অথচ
কোনো অপরাধ-অন্যায়ের বিচার যে নিজের হাতে তুলে নিয়ে করতে চাই এটাও মূল
অপরাধের মত নিন্দিত অন্যায়। আটটি জান্নাতের সাথে সাতটি জাহান্নামও তো
তৈরি করা হয়েছে- মানুষ কেন ভুলে যায়?

পথেঘাটে অপরিচিত নারীকে আটকিয়ে ওড়নার ওয়াজ করা যায় কেননা ঘরে মা,
বোন-স্ত্রী'র সাথে ভালো আচরণ না করেও কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হইনি! নারীর
দিকে পুরুষের অযাচিত অনেক হস্তক্ষেপ যুগে যুগে ছিল। রাস্তায় ওড়না ঠিক
করতে বলা সেই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এই বলাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না
করলে, নিজের আচরণের সীমারেখা না জানলে মবের সংস্কৃতিতে বেঁচে যাওয়া যাবে
কিন্তু বিবেকের জিজ্ঞাসা এবং স্রষ্টার কৈফিয়ত তলব থেকে বাঁচা যাবে না।
আমরা আরও পরিশুদ্ধভাবে ধর্ম শিখলে, জীবনে বাস্তবায়ন করলে সেটা
সামগ্রিক কল্যাণ সূচিত করবে।

বক ধার্মিকদের কারণেই সাধারণ মানুষ ধর্মের ওপর বিতৃষ্ণ হবে। দাওয়াহের
নামে এইসব ফাজলামো বন্ধ করতে হবে। সুন্দর আচরণ শেখার জন্য যেখানে
যেখানে কমনসেন্স শেখা যায় সেখানে সেখানে সময় দিতে হবে। কিছু কমনসেন্স
নিজের ভেতরেও থাকতে হয়। অন্যায়কারীদের, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীর গোষ্ঠী
পরিচয় দেখা উচিত নয়।

জনমত থাকলেও সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সঠিক বলা যায় না। বিকৃতি
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মবিমুখ নারী-পুরুষ যাতে ধর্মের সৌন্দর্য দেখে
মুগ্ধ হয়ে ধর্মের দিকে আকর্ষিত হয়। বক ধার্মিকদের বাড়াবাড়ি যেকোনো মূল্যে
প্রতিহত করতে হবে। নবী-রাসুল (সা.) এর চাইতে বেশি ধার্মিক হওয়া ভণ্ডামির
নামান্তর। অপরিচিত নারীর দিকে তাকানোর আগে, গায়রে মুহরিমদের মুখোমুখি
হওয়ার আগে ধার্মিক দাবিদারদের ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল
থাকা উচিত।

রাজু আহমেদ
raju69alive@gmail.com