১০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের পরিবার বসবাস করছে হাসপাতাল ভবনে, রোগীদের পাঠানো হচ্ছে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে
Reporter Name
- Update Time : ০৪:১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬৯ Time View
মোহাম্মদ হানিফ নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন ওই ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক সুমন। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি আজ কার্যত ব্যক্তিমালিকানায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হয়ে হতদরিদ্র রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন, আর এ সুযোগে হাসপাতাল ভবনে বসবাস করে অর্থের বিনিময়ে ‘ডেলিভারি সেবা’ দিচ্ছেন এক সরকারি চাকরিজীবীর স্ত্রী, যাঁর কোনো সরকারি নিয়োগই নেই।
সরেজমিনে যা দেখা গেল. রবিবার (স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল দরজাটি সবসময় বন্ধ থাকে। কর্মরত আয়াসহ ছকিনা বেগম এসে দরজা বন্ধ পেয়ে বাইরে বসে ছিলেন। জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মমতাজ বেগমের সপ্তাহে একদিন (বৃহস্পতিবার) আসার কথা থাকলেও তিনি বিগত দুই বছর ধরে নিয়মিত আসেন না। তাঁর পোস্টিং পাশ্ববর্তী আমিশাপাড়া ইউনিয়নে হলেও, সেখানেও তাঁকে খুব কম দেখা যায়।
সেই সুযোগে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক সুমন সরকারি ভবনটি দখলে নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ সেখানে বসবাস করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালটি এখন কার্যত তাঁর ব্যক্তিগত দখলে চলে গেছে। মূল ফটক সবসময় বন্ধ থাকায় সাধারণ রোগীদের প্রবেশ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
হাসপাতাল সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা মো. শরিফ বলেন, সরকারি ভবনটি সুমন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার কোনো সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও এখানে ডেলিভারির কাজ করেন। একজন রোগীর কাছ থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সুমনের মালিকানাধীন সোনাইমুড়ী বাজারের নিউ নূরানী হাসপাতালে রোগী পাঠানো হয় এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে, এবং সেই বিনিময়ে কমিশন আদায় করা হয়। এসব অনিয়ম নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ হিরন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার থাকলেও নিয়মিত আসেন না। অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্যরা বসবাস করছেন। একজন মহিলা যিনি কোনো সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত নন, তিনিই এখন এখানে ডেলিভারি করেন এবং এর বিনিময়ে টাকা নেন।
তিনি আরও জানান, এই নারীকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এর সবই হচ্ছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এবং কিছু কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে।
ওই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন সরকারি নীতিমালার চরম ব্যত্যয় ঘটছে এই কেন্দ্রটিতে। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে এসব অনিয়ম চালু থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।এখন প্রশ্ন উঠেছে পাঁচ বছর ধরে একটি সরকারি হাসপাতাল ভবন দখলে রেখে, নিয়মবহির্ভূত বসবাস ও বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ কে বা কারা দিচ্ছে? কোনো তদন্ত হচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?সরকার যেখানে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে জোর দিচ্ছে, সেখানে এ ধরনের উদাহরণ গোটা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার জানান, হাসপাতালটিতে এক বছর ধরে কোনো ওষুধের বরাদ্দ নেই। সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একজন মহিলাকে ডেলিভারি করানোর জন্য ‘নিয়োগ’ দেওয়া হয়েছে। তিনিই পরিবার-পরিজন নিয়ে হাসপাতালে থাকেন এবং সেবা প্রদান করেন
Tag :




























