১০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে লাখো জনতার জশনে জুলুস

Reporter Name
- Update Time : ১১:৩৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৭১ Time View

আনিছুর রহমান ,নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) : ১২ই রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিন ও ওফাত দিবস স্মরণে চট্টগ্রাম পরিণত হয়েছে এক বিশাল ধর্মীয় উৎসবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস, যা দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় র্যালি হিসেবে পরিচিত। এই বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নিতে ভোর থেকেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে, যা এক পর্যায়ে লাখো জনতার মানবসমুদ্রে রূপ নেয়।
জশনে জুলুস অর্থ হচ্ছে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এটি ১৯৭৪ সাল থেকে চট্টগ্রামের গাউছুল আজম হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.)-এর নির্দেশে এবং তার স্থলাভিষিক্ত আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)-এর অনুপ্রেরণায় শুরু হয়। এই জুলুসের মূল উদ্দেশ্য হলো মহানবী (সা.)-এর প্রতি মুসলিম উম্মাহর গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করা এবং তাঁর আদর্শকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। এখানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক স্লোগান বা হানাহানি নেই, আছে কেবল শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা।
সকাল থেকে সন্ধ্যা: এক আবেগঘন পরিবেশ
আজ সকাল থেকেই মুরাদপুর আলমগীর খানকাহ শরীফ প্রাঙ্গণ ছিল লোকে লোকারণ্য। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন সারিবদ্ধভাবে জুলুসে অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সবার হাতে ছিল কালেমা তাইয়্যেবার পতাকা, আর কণ্ঠে ছিল সুমধুর দরুদ ও হামদ-নাত। র্যালির পুরো পথটি সাজানো হয়েছিল নানা রঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকায়। “ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়, আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়”—এই গানটি যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল নবীপ্রেমের গভীরতা।
সকাল ৯টায় জুলুস শুরু হয়। আলমগীর খানকাহ শরীফ থেকে শুরু হয়ে র্যালিটি মুরাদপুর, ষোলোশহর, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, জিইসি মোড়সহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা সুশৃঙ্খলভাবে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। জুলুসের সামনে ছিল সুসজ্জিত গাড়ি এবং পেছনে সারিবদ্ধভাবে হেঁটে যাচ্ছিল জনতা।
এই জুলুসে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে ছিল এক ভিন্নরকম চিত্র। কেউ নিজের হাতে পানির বোতল নিয়ে তৃষ্ণার্তদের মাঝে বিলি করছিলেন, কেউবা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে মানুষের ক্ষুধা নিবারণে ব্যস্ত ছিলেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে রাস্তার পাশে শরবত, চা এবং অন্যান্য খাবার বিতরণ করা হয়। এই মানবসেবার চিত্রটি শুধু ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং মহানবী (সা.)-এর মানবিক আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন।
দুপুরের আগেই র্যালিটি আলমগীর খানকাহ শরীফে ফিরে আসে। সেখানে এক বিশেষ মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দেশ ও জাতির কল্যাণ, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এই মোনাজাতে দেশ ও বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, আলেম-ওলামা এবং সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
জশনে জুলুস কেবল একটি র্যালি নয়, এটি মহানবী (সা.)-এর জীবন ও আদর্শকে স্মরণ করার এক অনন্য মাধ্যম। এর মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে এবং নবী (সা.)-এর দেখানো পথে চলার অঙ্গীকার করে।
Tag :