নিজের দিকে নজর দিন ------ মোশারফ হোসেন
নিজের দিকে নজর দিন —— মোশারফ হোসেন

- Update Time : ০১:২০:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
- / ২৫৭ Time View
sonalishopbd.com
আপন বলতে কে আছে এই দুনিয়ায়, কেউ নেই। যতদিন মা বাবা বেঁচে থাকে ততদিন একটু ভরসা করে
চলা যায়। তাদের অবর্তমানে ভাই ভাই যতদিন একত্রে থাকে ততদিনও মোটামুটি ভালই কাটে। পৃথিবীর
নিয়মানুযায়ী সংসারে যখন একটি বৌ আসে তখনও ভালই থাকে। যখন একাধিক বৌ সংসারে আসে
তখনই শুরু হয় তিন পাগলের খেলা। কামিনী মোহিনীদের কথায় ভাই ভাইয়ের মধ্যে শুরু হয় সংসার
ভাঙ্গার তেলেছমাতি ঝগড়া। বৌদের আচরনে স্বামীরা একবারে মোমের পুতুল। সকল দিক চিন্তা করে
বাংলা কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় বিয়ের পিড়িঁতে বসেননি। তবে এ ব্যপারে ভিন্ন জনের
ভিন্ন মত। একজনের সন্তানদিগকে বিদেশে পড়ালেখা করাবে, অন্যজনের সন্তানকে দেশে এ বৈষম্য
থেকে শুরু হয় আমাদের বাংগালীর কালচার। বিদেশে পড়ালেখা করাতে হলে বিদেশে টাকা পাঠাইতে হবে।
কম শিক্ষিত পাঁচ ভাইয়ের ছেলে দেশে পড়বে, আর বেশী শিক্ষিত ভাইয়ের ছেলে বিদেশে পড়ালেখা
করবে। এই আরম্ভ হল বৈষম্য। বৈষম্য সৃষ্টিকারী কিভাবে বৈষম্য দূর করবে। একটা প্রবাদ আছে ,
"সিংহ ক্ষুধার্ত হলেও ঘাস খায় না ”। ক্ষমতা ও নদীর জল এক জায়গায় থাকে না। গ্রামাঞ্চলে আগে
ভোর রাতে মোরগের ডাকে সবার ঘুম ভাঙ্গতো। এখন দেখি আমার ডেরাঘরের পাশ্বে তিনতলায় সন্ধ্যা
রাতে মোরগ উচ্চস্বরে ডাক দেয়। অনেকেই ভাবে দুনিয়াটা কি হয়ে গেল। একটা গল্প না বলে পারছি না।
এক লোকে একটা মোরগ পালত। মোরগের মালিকটা ছিল আমার মত অলস। একদিন তার মালিক
ডাকাকিতে বিরক্ত হয়ে তাকে হুমকি দিল যে, "আরেকদিন যদি সকালে ডেকে ঘুম ভাঙ্গাস তাহলে তোর
সমস্ত পালক আমি তুলে ফেলবো। মোরগ মনে মনে ভাবছে ডাকাডাকি তো আমাদের জাতিগত অভ্যাস।
মালিকের ভয়ে মোরগ মনে মনে যুক্তি দাঁড় করালো প্রয়োজনে অনেক কিছুই করতে হয়। যাকগে সকাল
বেলা ডাকাডাকি বন্ধ করে নীতির সঙ্গে আপোষ করে নিজেকে অন্তত বাঁচাতে হবে। এক সপ্তাহ পর
আবার মোরগের মালিক ফিরে এসে তাকে হুমকি দিল, "তুই যদি মুরগির মতো করকর শব্দ না করিস
তাহলে তোর একটা পালকও থাকবে না। মোরগ নীতির সাথে আপোষ করল আবারও মোরগ হয়ে মুরগির
মতো করকর শব্দ করতে লাগলো। এক মাস চলে গেল, মালিক আবার আসলো।
এবার দিল ভয়াবহ হুমকি। এখনই যদি তুই ডিম না পারিস তাহলে আমি আগামীকালই তোকে জবাই করব! বেচারা মোরগ
কোন উপায় না পেয়ে কাঁদতে শুরু করল। চোখের জলে ভিজিয়ে দিল পুরো দেহ। কাঁদতে কাঁদতে বলতে
লাগল, ইশ! প্রথমবারই যদি আপোষ না করতাম। নীতির সাথে একটু আপোষ করলে এরকম একটার পর
একটা আপোষ করে যেতে হয়। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন কখনোই মন্দ নীতির সঙ্গে আপোষ করা
যাবে না। প্রথমবার আপনি স্বেচ্ছায় আপোষ করবেন কিন্তু নিশ্চিত থাকুন এর পরেরবার থেকে
আপনি আপোষ করবেন কারণ আপনাকে আপোষ করতে বাধ্য করা হবে। যদি আপনি আপোষের পথের
পথিক হন তাহলে নীতিতে অবিচল মানুষদের কখনো অপবাদ দিবেন না, বলবেন না যে এরা উগ্র"।
তারচেয়ে বরং নিজের দিকে নজর দিন। দেখুন কি এক গভীর চোরাবালিতে ডুবে গেছেন আপনি। আসিফ
নজরুল নামে আসলে কেউ নেই। আমরা যাকে আজ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল হিসেবে চিনি, তার
নাম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। এই ভদ্রলোক এক সময়ে নিজের নামের মোহাম্মদ আর ইসলাম শব্দ
দু’টো ছেঁটে ফেলেছিলেন। এ নাম পরিবর্তনের পেছনেও আছে এক গল্প। তাহলে শুনুন। একদিন তার সাধ
হলো কবিতা লিখবেন। তখন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্লাটফর্ম
হিসেবে জাতীয় কবিতা পরিষদ নামে কবিদের এক সংগঠন হয়েছে কবি শামসুর রাহমানের নেতৃত্বে।
এরই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে জাতীয় কবিতা উৎসব প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। কবিরা
কবিতা পড়েন এ কবিতা উৎসবে। উৎসবের আগে কবিতা জমা দিতে হয়। তখন জাতীয় কবিতা
পরিষদের এই কবিতা বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন কবি সমুদ্র গুপ্ত। দারুণ মজার মানুষ শুভ্র লম্বা চুল
আর ইয়া গোঁফওয়ালা সমুদ্র দা। মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জাতীয় কবিতা উৎসবে কবিতা পাঠের জন্য
কবিতা জমা দিয়েছেন। সমুদ্র দা মজা করেই বলেছিলেন, ”কবিতাটা ভালো কিন্ত এই সব নরজুল ফরজুল
পাল্টাও। কাব্যিক নাম দাও। উল্লেখ্য কবি সমুদ্র গুপ্তেরও এ নামটি ছদ্মনাম; প্রকৃত পারিবারিক
নাম আব্দুল মান্নান বাদশা। মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম কিছুতেই নাম বদলাবে না । এই নিয়ে সমুদ্র দার
সাথে তুমুল কান্ড। সমুদ্র গুপ্তও বড় ফাজিল; তিনি কিছুতেই নরজুল ফরজুল নামে কবিতা পড়তে দেবেন
না! শেষমেষ রফা হলো নাম হবে আসিফ নজরুল। সে বছর থেকেই মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হলেন
আসিফ নজরুল। যদি থাকে নসিবে আপনে আপনে আসিবে। আজ আইন উপদেষ্টা হিসেবে তিনি যে
আসিফ নজরুল লিখছেন, ফাইল সই করছেন, তার এই নাম পরিবর্তনের আইনি কোনো দালিলিক প্রমান
বা এফিডেফিট আছে কি? নাকি এ সবও মেটিকুলাস ডিজাইন? ভবিষ্যতে একদিন হয়ত দেখা যাবে
আসিফ নজরুল নামেই কেউ ছিল না; কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসিফ নজরুল বলছেন , ”মহামান্য বিচারক,
আমার নাম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। আমি আসিফ নজরুল নামে কাউকে চিনি-ই না। পরপারে থেকে
তখন কবি সমুদ্র গুপ্ত ওরফে আব্দুল মান্নান বাদশা হাসবেন আর বলবেন,” ওই ব্যাটা নরজুল,
দেখলি তো ওদিন তোকে কীভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছি। আপনার পেটে খাবার নেই, এ কারণে নীতির সাথে
আপোষ করবেন না কখনোই।