০৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

নবীজী (সা:)‌’র রাজনীতি এবং আজকের মুসলিম রাজনীতি

মতামত
  • Update Time : ০৭:২৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
  • / ২২৭ Time View

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

 

রাজনীতিই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত

এ পৃথিবী পৃষ্ঠে  মানবনির্মিত সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের নির্মাণ, পরিচালনা, উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষার সাথে যে নীতি জড়িত সেটিই হলো রাজনীতি। মানবের ধর্ম, পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি, বাণিজ্যসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রিত হয় নানা রূপ নীতি মালা দিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা হলো রাজনীতির -যার প্রভাব প্রতিটি জীবিত মানুষের উপর। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে ব্যক্তি জঙ্গলে বসবাস করে -একমাত্র সেই রাজনীতি থেকে মুক্ত। সে সমাজ বিচ্ছন্ন মানুষটি আর মানুষ থাকে না, সেও পশুতে পরিণত হয়। নিকোবর দ্বীপে পশুদের মাঝে এমন অনেক মানব পশু এখনও দেখা যায়। পশুর জীবনে রাজনীতি থাকে না।

চেতনায় রাজনীতি থাকার অর্থ, মানবের কল্যাণের ভাবনা ও তাড়না নিয়ে বাঁচা। সবচেয় বড় কল্যাণ তো জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নেয়া। কিন্তু সে ভাবনা ও তাড়না পশুর থাকে না। তাই সে পশু। তাই মানুষ যত শিক্ষিত, সভ্য, ভদ্র ও উন্নত হয় ততই রাজনীতি সচেতন হয়। ইসলামই হলো একমাত্র ধর্ম যা রাজনীতিকে সর্বোচ্চ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো রাজনীতির সৈনিক হওয়া। তাই নবীজী (সা:) এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। ইসলামে রাজনীতির লড়াইকে জিহাদ বলা হয়। রাজনীতির এ জিহাদে যেমন অবিরাম বুদ্ধিবৃত্তি আছে, তেমনি নিরস্ত্র ও সসস্ত্র লড়াই আছে। অর্ধেকের বেশী সাহাবা রাজনীতির সশস্ত্র লড়াইয়ে শহীদ হয়ে গেছে। সে রাজনীতিতে খোদ নবীজী (সা:) আহত হয়েছেন; তার দাঁত মোবারক ভেঙ্গে গেছে। তাই সত্যিকার মুসলিম সমাজ বলতেই বুঝায় উচ্চমার্গীয় রাজনৈতিক সচেতন মানুষদের সমাজ। শুধু মুসলিম ইতিহাসে নয়, সমগ্র মানব ইতিহাসে সবগুলি যুদ্ধই হলো নিজ নিজ রাজনীতি বাঁচানোর যুদ্ধ। পশুদের মাঝে এমন যুদ্ধ থাকে না।

অনেক আলেম রাজনীতিকে দুনিয়াদারী মনে করেন এবং সযত্নে রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। এসব আলেমগণ আলেম রূপে জাহির করলেও তারা নিরেট জাহেল। তাদের অজ্ঞতা নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের জীবন-চরিত নিয়ে। তারা ভূলে যান, নবীজী (সা:) নিজে ১০টি বছর যাবত নব্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।  সাহাবাদের সাথে নিয়ে সে রাষ্ট্রটিকে তিনি নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন‌। নবীজী (সা:)’র শাসনাধীন সে রাষ্ট্রটি ছিল আজকের বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বড়। সে রাষ্ট্র ভেঙ্গে সৌদি আরব, কাতার, আমিরাত, ওমান,বাহরাইন ও ইয়েমেন -এই ৬টি রাষ্ট্র নির্মিত হয়েছে। খলিফা রাশেদার সময় নবীজী (সা:)’র সে রাষ্ট্র আরো বহু গুণ বেড়ে যায়। আর রাষ্ট্রপ্রধানের কাজটি তো নিরেট রাজনীতির বিষয়। তবে কি নবীজী (সা:) রাজনীতি ছাড়াই ১০টি বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন?

 

রাজনীতি: রাষ্ট্র নির্মাণ ও সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের হাতিয়ার

কোন রাষ্ট্র এমনিতেই গড়ে উঠে না, তার পিছনে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা লাগে, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জনবল, ভূমি ও যোগ্য নেতৃত্ব লাগে। বিশ্বে বহু জনগোষ্ঠি আছে যারা হাজার হাজার ধরে বাঁচলেও কোন কালেই কোন রাষ্ট্র গড়তে পারিনিন। তারা বেঁচেছে স্রেফ গোত্রীয় পরিচয় নিয়ে। নবীজী (সা:)’র আগে আরবদেরও কোন রাষ্ট্র ছিল না। তারা আরব উপদ্বীপের নানা স্থানে গোত্রীয় পরিচয় নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত ছিল। নবীজী (সা:) তাদের সামনে ইসলামই শুধু পেশ করেননি; তাদেরকে একটি রাষ্ট্রও উপহার দিয়েছিলেন -যা তাদেরকে বিশ্বশক্তিতে পরিণত করেছিল। সেরূপ একটি রাষ্ট্রই হলো নবীজী(সা:)’র অন্যতম শ্রেষ্ঠ লিগাসি। বস্তুত নানা ধর্ম, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মানুষের মাঝে একতা গড়া এবং তাদেরকে একটি সংঘবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করার হাতিযারও হলো রাজনীতি। অবশ্য রাজনীতি বিভক্তি বা নাশকতার হাতিয়ারও হতে পারে -যেমনটি হয়েছিল শেখ মুজিবের হাতে। শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, হুজরাহ গড়ে রাষ্ট্র গড়ার সে কাজটি কখনোই হয়না।

মদিনার বুকে পা রেখেই নবীজী (সা:) দ্রুততার সাথে দুটি কাজ সমাধা করেছিলেন। এক). নিজের ঘর নির্মাণের কথা চিন্তা না করে সর্ব প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সে মসজিদের খুঁটি ছিল খেজুরের গাছ। আর ছাদ ছিল খেজুর পাতার। আর দেয়াল ছিল কাদামাটির। এটিই হলো সেই বিখ্যাত মসজিদে নববী। পবিত্র ক্বাবা শরীফের পর মসজিদে নববীই হলো ইসলামের প্রথম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান -যা পরবর্তীতে মুসলিম  উম্মাহর সেক্রেটারিয়েট, শিক্ষাকেন্দ্র, বিচারালয়, পরামর্শ তথা পার্লামেন্ট ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়।  দুই). মদিনায় বসবাসকারি সকল মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের নিয়ে একটি সমাঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন -এটিই ইতিহাসে মদিনা সনদ না পরিচিত। সে চুক্তি নামা’র উপর ভিত্তি করে তিনি একটি ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন করেন। এবং সে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস আদায় করেন। সবাই এ সিদ্ধান্তে সম্মত হয় যে, চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলির কোন একটি গোত্রের উপর অন্যদের হামলা হলে সেটি সবার উপর হামলা রূপে গণ্য হবে। সে হামলার প্রতিরোধে সবগুলি গোত্র একত্রে যুদ্ধ করবে। এটিই হলো সেদিন রাষ্ট্র নির্মাণের মূল কথা। মদিনায় বসবাসকারী মানুষদের মাঝে এমন চুক্তিবদ্ধ সমাঝোতা আগে ছিলনা। বস্তুত এখান থেকেই ইসলামী রাষ্ট্রের সূত্রপাত। নবীজী (সা:) ছিলেন সে রাষ্ট্রের প্রধান।

মদিনার সে রাষ্ট্রই পরবর্তীতে বিশ্বশক্তি পরিণত হয়। এবং সে রাষ্ট্রের বুকে নির্মিত হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্য‌তা। এখানেই প্রমাণ মেলে, রাষ্ট্র নির্মাণে নবীজী (সা:)’র সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং’য়ের বিস্ময়কর পারদর্শিতা। সমগ্র মানব ইতিহাসে তিনি শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনির্মাতাও। এ পৃথিবী পৃষ্ঠে অনেকই রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন, কিন্তু নবীজী (সা:)’র ন্যায় রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারেননি। অশোক বা আলেকজান্ডারের মত অনেকেই সুবিশাল রাষ্ট্র নির্মাণ করলেও আইনের শাসন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবার সম অধিকার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নারীর অধিকার, দাস প্রথা নির্মূলে কোন ভূমিকা রাখতে পারিনি। অশোকের হাতে গণহত্যা ঘটেছে। আলেকজন্ডা নৃশংস বর্বরতার স্বাক্ষর রেখেছে পারস্য সাম্রাজ্যের বিশাল রাজধানী পারসে পোলিস সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়ে। অথচ যে মক্কাবাসী তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল নবীজী (সা:) ইতিহাস গড়েছেন তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করে।  নবীজী (সা:) তাঁর সৈনিকদের ঘোষণা দিতেন যেন বেসামরিক ব্যক্তি, নারী, শিশুকে হত্যা করা না হয়; অহেতুক কোন বৃক্ষের যেন ক্ষতি না করা হয়।

 

আলেমদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা

বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিমের বসবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। ব্রিটিশ আমলে বহু লক্ষ মসজিদ ও বহু হাজার মাদ্রাসা ছিল আলমদের নিয়ন্ত্রণে । কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন দক্ষিন এশিয়ার মুসলিমদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে। তারা বুঝতে ব্যর্থ হন, নিজেদের কর্মকে শুধু মসজিদ ও মাদ্রাসায় সীমিত রাখলে বড় জোর মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়া যায়, কিন্তু তাতে জনগণের নেতা হওয়া যায়না। নেতা রাজনৈতিক অঙ্গণে তথা জিহাদের ময়দানে জন্ম নেয়, মসজিদ-মাদ্রাসার মেঝেতে নয়। পরিতাপের বিষয়, তাঁরা নবীজী (সা:)’র রাজনৈতিক সূন্নত পালন করেননি। নবীজী (সা:) নানা গোত্রের মুসলিমদের রাজনৈতিক অঙ্গণে একতাবদ্ধ করেছিলেন; অথচ ভারতীয় আলেমগণ মজহাব, ফিরকা, ত্বরিকার নামে মুসলিমদের বিভক্ত করেছেন। তারা ব্যর্থ হয়েছেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে।

উপমহাদেশের মুসলিমদের সে বিপদ কালে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ, আল্লামা ইকবাল, মহম্মদ আলী জওহর, কায়েদে আজম মহম্মদ আলী জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমু্দ্দীনের মত নেতৃবৃন্দ। আলেম না হয়েও তারা মুসলিম উম্মাহর সংকট বুঝতেন। তারা বুঝতেন একতার গুরুত্ব, সে সাথে বুঝতেন মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের গুরুত্ব। তারা সে সংকট কালে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা দেন। এবং মুসলিম লীগের রাজনীতির মাধ্যমেই তারাই বাঙালি, বিহারি, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, গুজরাতী, বেলুচ ইত্যাদি নানা প্রদেশের নানা ভাষার মুসলিমদের একতাবদ্ধ করেন এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা দেন। মুহম্মদ ঘোরির হাতে দিল্লি বিজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিমদের ইতিহাসে পাকিস্তানের সৃষ্টিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে অগ্রভাগে থাকা উচিত ছিল আলেমদের; অথচ সে কাজে তাদের খুব একটা দেখা যায়নি। সেটির কারণ, তাদের রাজনৈতিক জ্ঞানশূণ্যতা। বরং বিস্ময়ের বিষয় হলো পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে তারা হিন্দুত্ববাদী পৌত্তলিক শক্তির সাথে একতা গড়েন। তারা ভেবেছিলেন রাষ্ট্র নির্মাণে পৌত্তলিক কাফিরদের এজেন্ডা ও মুসলিমদের এজেন্ডার মাঝে কোন পার্থক্য নাই। এর চেয়ে বড় জাহিলিয়াত আর কি হতে পারে? আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, কংগ্রেস নেতা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধির ন্যায় এক পৌত্তলিক কাফিরকে তারা নেতা রূপে মেনে নেয়।

 

জান্নাতে নেয়ার রাজনীতি বনাম জাহান্নামে নেয়ার রাজনীতি

অমুসলিম, কাফির বা সেক্যুলারিস্ট থেকে ঈমানদারের রাজনীতির ধারণাটিই ভিন্ন।  ঈমানদারের রাজনীতির দুটি মূল লক্ষ্য থাকে। এক). ইহকালীন জীবনের কল্যাণ। দুই). আখেরাতের জীবনের কল্যাণ। রাজনীতির অর্থ যেমন রাষ্ট্রের নির্মাণ, পরিচালনা, প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নের নীতি, তেমনি সেটি হলো রাষ্ট্রের বুকে সুবিচারের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বৃত্তি নির্মূলের নীতি।  সে সাথে রাজনীতির আরো লক্ষ্য হতে হয়, নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সুশিক্ষাকে সুনিশ্চিত করা। রাজনীতির এ বিষয়গুলি হলো ইহজাগতিক কল্যাণের বিষয়।। তবে ঈমানদারের রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতটি হলো রাষ্ট্রকে জান্নাতের বাহনে পরিণত করা। সে রাজনীতির সাথে জড়িত মানব জীবনের অনন্ত-অসীম কালে কল্যাণের বিষয়টি। জনগণের জীবনে সবচেয়ে বড় কল্যাণটি হয় জান্নাত লাভের মধ্য দিয়ে। পার্থিব জীবন যত সফল বা আনন্দেরই হোক না কেন, তা কখনোই জান্নাতের সমকক্ষ হতে পারে না।  সে জন্যই মুসলিমের রাজনীতির লক্ষ্য হতে হয় ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। একমাত্র তখনই রাষ্ট্র জান্নাতের বাহনে পরিণত হয়।

রাষ্ট্র পৃথিবী পৃষ্ঠের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের হাতে থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার ন্যায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার লক্ষ লক্ষ কর্মচারি। রাষ্ট্রের হাতে থাকে পুলিশ, প্রশাসন, আদালত, মিডিয়া, প্রকাশনা ইত্যাদি নানা প্রতিষ্ঠান। ইচ্ছা করলে রাষ্ট্র পতিতাবৃত্তি, অশ্লিলতা, জুয়া, মদ্যপানের ন্যায় সকল পাপের বাণিজ্য কয়েক ঘন্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারে। যারা পাপের পথে তথা জাহান্নামের পথে মানুষকে ডাকে তাদেরকে আদালতে তুলে শাস্তি দিতে পারে। রাষ্ট্র পারে শিক্ষা ব্যবস্থা, পুস্তক প্রকাশনা ও মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে জান্নাতের পথ দেখাতে। রাষ্ট্র ও তার প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো এভাবেই জনগণকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো ও তাদেরকে জান্নাতে নেয়ার হাতিয়ার রূপে কাজ করতে পারে। রাষ্ট্রের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে বা ওয়াজ করে এ কাজটি হয় না। নবীজী (সা:) তাই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হয়েছে এবং সে রাষ্ট্রের চালকের আসনে নিজেকে বসতে হয়েছে। তাঁর ওফাতের পর তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ সে রাষ্ট্র পরিচালনার সে সূন্নত পালন করেছেন। রাজনীতির এ পথে লাগাতর যুদ্ধ আছে। অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের প্রচুর কুরবানী আছে -যা অন্য কোন ইবাদতে নাই।

ইসলামী রাষ্ট্রের এজেন্ডাটি শয়তানের এজেন্ডার সাথে সাংঘর্ষিক। শয়তানের এজেন্ডা মানুষকে জাহান্নামে নেয়া। তাই শয়তানী শক্তির মূল টার্গেট কোন মাদ্রাসা বা মসজিদ ধ্বংস করা নয়, বরং ইসলামী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা; নতুন কোন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিরোধ করা। এজন্যই ঈমানদারের রাজনীতি হলো ইসলামের সর্বোচ্চ জিহাদ। এখানে শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে ঈমানদারদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয়। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা, পীরগিরি, দরবেশী, খানকাহ ও দরগাহ নিয়ে বাঁচলে এরূপ যুদ্ধ আসে না। একটি দেশে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা কতটা বিজয়ী হবে -সেটি নির্ভর করে ইসলামী রাজনীতি কতটা বিজয়ী হলো তার উপর।

নবীজী (সা)’র হাতে নির্মিত মাদ্রাসা-মসজিদের সংখ্যা অতি নগন্য, কিন্তু তিনি ইসলামের এবং সে সাথে মানব জাতির ইতিহাস পাল্টে দিয়েছেন ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করে। এতে মুসলিমদের উত্থান হয়েছে বিশ্বশক্তি রূপে। এবং সে রাষ্ট্রের বুকে নির্মিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতি। একটি বিশাল রাষ্ট্র এবং তার জনবল নবীজী (সা)’র সাথে না থাকলে তাঁর একার পক্ষে ইসলামের মিশনকে বেশী দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হতো না। হযরত মূসা (আ:) ও হযরত ঈসা (আ:)’য়ের মত বিখ্যাত নবীদের হাতেও আসমানি কিতাব ছিল; কিন্তু রাষ্ট্র না থাকায় ইসলামের মিশনকে নবীজী (সা:)’র মত এগিয়ে নিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠা দিতে পারেননি শরিয়াকে।

 

রাষ্ট্র যখন শয়তানের হাতিয়ার হয়

রাজনীতির জিহাদটি ঈমানদারদের হাতে বিজয়ী না হলে রাষ্ট্র ফিরাউন-নমরুদের ন্যায় শয়তানী শক্তির দখলে চলে যায়। আজকের মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে তো সেটিই ঘটেছে। ফলে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অধিকৃত হয়েছিল মুজিব-হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ফিরাউনদের হাতে। ফিরাউন-অধিকৃত এরূপ রাষ্ট্রগুলিই জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়। শয়তানের নীতিই তখন রাষ্ট্রের নীতি হয়। তখন শয়তানী শক্তির অধিকৃত রাষ্ট্রে পূর্ণ ইসলাম পালন ও সিরাতাল মুস্তাকীমে চলাই অসম্ভব হয়। কারণ, সিরাতাল মুস্তাকীমে চলতে হলে তো অবশ্যই শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। অথচ দুর্বৃত্ত-অধিকৃত দেশের রাজনীতি, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি জনগণকে গুনাহগার বানানোর হাতিয়ারে পরিণত হয়। তখন সরকারি খরচে পতিতাপল্লী, জুয়ার আখড়া, মদের দোকান, অশ্লিল সিনেমা ও নাচগানের প্রদর্শনীর ন্যায় চরিত্র ধ্বংসের শয়তানী প্রকল্পগুলিকে পাহারা দেয়া হয়।

রাজনৈতিক অঙ্গণে পরাজিত হলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, শিক্ষাঙ্গণ, আদালত ও সরকারি নীতিমালার উপর ইসলামের কোন প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। রাজনীতি এজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত -যা ইসলামকে বিজয়ী করে। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-উমরাহ, ঘুষখোর, সূদখোর ও প্রতারকগণও পালন করতে পারে। কিন্তু ইসলামকে বিজয়ী করার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ থাকে না। তাদের দেখা যায় সেক্যুলার ঘরানার ফ্যাসিবাদী, জাতীয়তাবাদী ও নানারূপ মতবাদী রাজনীতিতে। বাংলাদেশ তার জন্ম থেকে ইসলাম থেকে দূরে-সরা এমন লোকদের দ্বারাই শাসিত হচ্ছে। রাজনীতির জিহাদে ব্যয় হয় মু’মিন ব্যক্তির অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তসহ তাঁর শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যের। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাতের কাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ এ ইবাদতের জন্য ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা।  সাহাবাদের জান ও মালের সিংহভাগ খরচ হয়েছে রাজনীতির এই জিহাদে।

নবুয়ত লাভের পর নবীজী (সা:) তাঁর ১৩ বছর মক্কায় কাটান। কিন্তু সেখানে তিনি একখানি মসজিদও নির্মাণ করেননি, কোন মাদ্রাসাও গড়েননি। বরং পূর্ণ মনযোগ দিয়েছেন এমন মানুষ গড়ায় যারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিরক্ষায় যোগ্য মোজাহিদ হবে এবং প্রয়োজনে শহীদ হবে। সমগ্র মানব ইতিহাসের এরাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। পরবর্তীতে তাঁরাই ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হয়েছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেল হয়েছেন এবং বিশাল বিশাল প্রদেশের সুযোগ্য গভর্নর, প্রশাসক ও বিচারপতি হয়েছেন। তাদের কারণেই মুসলিমগণ বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজ মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা গুরুত্ব পেলেও সেরূপ মানব গড়া ও রাষ্ট্র গড়া গুরুত্ব পায়নি। ফলে কোন বিজয় জুটছে না।

 

ব্যর্থতা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতে

বস্তুত ইসলামী রাষ্ট্র গড়াই হলো নবীজী (সা:)’র জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। বেশী বেশী মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ার কাজটি অবশ্যই নেক কর্ম; পরবর্তী কালে বহু মসজিদ মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে।  কিন্তু গুরুত্বে সেগুলি ইসলামী রাষ্ট্রের সমকক্ষ হতে পারে না। কারণ, মসজিদ নামাজ আদায়ের স্থান; কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়ার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজটি করে রাষ্ট্র। হযরত মূসা (সা:)’য়ের প্রচণ্ড আফসোস ছিল, প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটি করে যেতে পারেননি ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “নবীজী (সা:)‌’র রাজনীতি এবং আজকের মুসলিম রাজনীতি

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

নবীজী (সা:)‌’র রাজনীতি এবং আজকের মুসলিম রাজনীতি

Update Time : ০৭:২৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

 

রাজনীতিই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত

এ পৃথিবী পৃষ্ঠে  মানবনির্মিত সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের নির্মাণ, পরিচালনা, উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষার সাথে যে নীতি জড়িত সেটিই হলো রাজনীতি। মানবের ধর্ম, পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি, বাণিজ্যসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রিত হয় নানা রূপ নীতি মালা দিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা হলো রাজনীতির -যার প্রভাব প্রতিটি জীবিত মানুষের উপর। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে ব্যক্তি জঙ্গলে বসবাস করে -একমাত্র সেই রাজনীতি থেকে মুক্ত। সে সমাজ বিচ্ছন্ন মানুষটি আর মানুষ থাকে না, সেও পশুতে পরিণত হয়। নিকোবর দ্বীপে পশুদের মাঝে এমন অনেক মানব পশু এখনও দেখা যায়। পশুর জীবনে রাজনীতি থাকে না।

চেতনায় রাজনীতি থাকার অর্থ, মানবের কল্যাণের ভাবনা ও তাড়না নিয়ে বাঁচা। সবচেয় বড় কল্যাণ তো জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নেয়া। কিন্তু সে ভাবনা ও তাড়না পশুর থাকে না। তাই সে পশু। তাই মানুষ যত শিক্ষিত, সভ্য, ভদ্র ও উন্নত হয় ততই রাজনীতি সচেতন হয়। ইসলামই হলো একমাত্র ধর্ম যা রাজনীতিকে সর্বোচ্চ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো রাজনীতির সৈনিক হওয়া। তাই নবীজী (সা:) এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। ইসলামে রাজনীতির লড়াইকে জিহাদ বলা হয়। রাজনীতির এ জিহাদে যেমন অবিরাম বুদ্ধিবৃত্তি আছে, তেমনি নিরস্ত্র ও সসস্ত্র লড়াই আছে। অর্ধেকের বেশী সাহাবা রাজনীতির সশস্ত্র লড়াইয়ে শহীদ হয়ে গেছে। সে রাজনীতিতে খোদ নবীজী (সা:) আহত হয়েছেন; তার দাঁত মোবারক ভেঙ্গে গেছে। তাই সত্যিকার মুসলিম সমাজ বলতেই বুঝায় উচ্চমার্গীয় রাজনৈতিক সচেতন মানুষদের সমাজ। শুধু মুসলিম ইতিহাসে নয়, সমগ্র মানব ইতিহাসে সবগুলি যুদ্ধই হলো নিজ নিজ রাজনীতি বাঁচানোর যুদ্ধ। পশুদের মাঝে এমন যুদ্ধ থাকে না।

অনেক আলেম রাজনীতিকে দুনিয়াদারী মনে করেন এবং সযত্নে রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। এসব আলেমগণ আলেম রূপে জাহির করলেও তারা নিরেট জাহেল। তাদের অজ্ঞতা নবীজী (সা:) ও সাহাবাদের জীবন-চরিত নিয়ে। তারা ভূলে যান, নবীজী (সা:) নিজে ১০টি বছর যাবত নব্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।  সাহাবাদের সাথে নিয়ে সে রাষ্ট্রটিকে তিনি নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন‌। নবীজী (সা:)’র শাসনাধীন সে রাষ্ট্রটি ছিল আজকের বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বড়। সে রাষ্ট্র ভেঙ্গে সৌদি আরব, কাতার, আমিরাত, ওমান,বাহরাইন ও ইয়েমেন -এই ৬টি রাষ্ট্র নির্মিত হয়েছে। খলিফা রাশেদার সময় নবীজী (সা:)’র সে রাষ্ট্র আরো বহু গুণ বেড়ে যায়। আর রাষ্ট্রপ্রধানের কাজটি তো নিরেট রাজনীতির বিষয়। তবে কি নবীজী (সা:) রাজনীতি ছাড়াই ১০টি বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন?

 

রাজনীতি: রাষ্ট্র নির্মাণ ও সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের হাতিয়ার

কোন রাষ্ট্র এমনিতেই গড়ে উঠে না, তার পিছনে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা লাগে, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জনবল, ভূমি ও যোগ্য নেতৃত্ব লাগে। বিশ্বে বহু জনগোষ্ঠি আছে যারা হাজার হাজার ধরে বাঁচলেও কোন কালেই কোন রাষ্ট্র গড়তে পারিনিন। তারা বেঁচেছে স্রেফ গোত্রীয় পরিচয় নিয়ে। নবীজী (সা:)’র আগে আরবদেরও কোন রাষ্ট্র ছিল না। তারা আরব উপদ্বীপের নানা স্থানে গোত্রীয় পরিচয় নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত ছিল। নবীজী (সা:) তাদের সামনে ইসলামই শুধু পেশ করেননি; তাদেরকে একটি রাষ্ট্রও উপহার দিয়েছিলেন -যা তাদেরকে বিশ্বশক্তিতে পরিণত করেছিল। সেরূপ একটি রাষ্ট্রই হলো নবীজী(সা:)’র অন্যতম শ্রেষ্ঠ লিগাসি। বস্তুত নানা ধর্ম, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মানুষের মাঝে একতা গড়া এবং তাদেরকে একটি সংঘবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করার হাতিযারও হলো রাজনীতি। অবশ্য রাজনীতি বিভক্তি বা নাশকতার হাতিয়ারও হতে পারে -যেমনটি হয়েছিল শেখ মুজিবের হাতে। শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, হুজরাহ গড়ে রাষ্ট্র গড়ার সে কাজটি কখনোই হয়না।

মদিনার বুকে পা রেখেই নবীজী (সা:) দ্রুততার সাথে দুটি কাজ সমাধা করেছিলেন। এক). নিজের ঘর নির্মাণের কথা চিন্তা না করে সর্ব প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সে মসজিদের খুঁটি ছিল খেজুরের গাছ। আর ছাদ ছিল খেজুর পাতার। আর দেয়াল ছিল কাদামাটির। এটিই হলো সেই বিখ্যাত মসজিদে নববী। পবিত্র ক্বাবা শরীফের পর মসজিদে নববীই হলো ইসলামের প্রথম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান -যা পরবর্তীতে মুসলিম  উম্মাহর সেক্রেটারিয়েট, শিক্ষাকেন্দ্র, বিচারালয়, পরামর্শ তথা পার্লামেন্ট ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়।  দুই). মদিনায় বসবাসকারি সকল মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের নিয়ে একটি সমাঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন -এটিই ইতিহাসে মদিনা সনদ না পরিচিত। সে চুক্তি নামা’র উপর ভিত্তি করে তিনি একটি ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন করেন। এবং সে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস আদায় করেন। সবাই এ সিদ্ধান্তে সম্মত হয় যে, চুক্তিবদ্ধ গোত্রগুলির কোন একটি গোত্রের উপর অন্যদের হামলা হলে সেটি সবার উপর হামলা রূপে গণ্য হবে। সে হামলার প্রতিরোধে সবগুলি গোত্র একত্রে যুদ্ধ করবে। এটিই হলো সেদিন রাষ্ট্র নির্মাণের মূল কথা। মদিনায় বসবাসকারী মানুষদের মাঝে এমন চুক্তিবদ্ধ সমাঝোতা আগে ছিলনা। বস্তুত এখান থেকেই ইসলামী রাষ্ট্রের সূত্রপাত। নবীজী (সা:) ছিলেন সে রাষ্ট্রের প্রধান।

মদিনার সে রাষ্ট্রই পরবর্তীতে বিশ্বশক্তি পরিণত হয়। এবং সে রাষ্ট্রের বুকে নির্মিত হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্য‌তা। এখানেই প্রমাণ মেলে, রাষ্ট্র নির্মাণে নবীজী (সা:)’র সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং’য়ের বিস্ময়কর পারদর্শিতা। সমগ্র মানব ইতিহাসে তিনি শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনির্মাতাও। এ পৃথিবী পৃষ্ঠে অনেকই রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন, কিন্তু নবীজী (সা:)’র ন্যায় রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারেননি। অশোক বা আলেকজান্ডারের মত অনেকেই সুবিশাল রাষ্ট্র নির্মাণ করলেও আইনের শাসন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবার সম অধিকার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নারীর অধিকার, দাস প্রথা নির্মূলে কোন ভূমিকা রাখতে পারিনি। অশোকের হাতে গণহত্যা ঘটেছে। আলেকজন্ডা নৃশংস বর্বরতার স্বাক্ষর রেখেছে পারস্য সাম্রাজ্যের বিশাল রাজধানী পারসে পোলিস সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়ে। অথচ যে মক্কাবাসী তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল নবীজী (সা:) ইতিহাস গড়েছেন তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করে।  নবীজী (সা:) তাঁর সৈনিকদের ঘোষণা দিতেন যেন বেসামরিক ব্যক্তি, নারী, শিশুকে হত্যা করা না হয়; অহেতুক কোন বৃক্ষের যেন ক্ষতি না করা হয়।

 

আলেমদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা

বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিমের বসবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। ব্রিটিশ আমলে বহু লক্ষ মসজিদ ও বহু হাজার মাদ্রাসা ছিল আলমদের নিয়ন্ত্রণে । কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন দক্ষিন এশিয়ার মুসলিমদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে। তারা বুঝতে ব্যর্থ হন, নিজেদের কর্মকে শুধু মসজিদ ও মাদ্রাসায় সীমিত রাখলে বড় জোর মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়া যায়, কিন্তু তাতে জনগণের নেতা হওয়া যায়না। নেতা রাজনৈতিক অঙ্গণে তথা জিহাদের ময়দানে জন্ম নেয়, মসজিদ-মাদ্রাসার মেঝেতে নয়। পরিতাপের বিষয়, তাঁরা নবীজী (সা:)’র রাজনৈতিক সূন্নত পালন করেননি। নবীজী (সা:) নানা গোত্রের মুসলিমদের রাজনৈতিক অঙ্গণে একতাবদ্ধ করেছিলেন; অথচ ভারতীয় আলেমগণ মজহাব, ফিরকা, ত্বরিকার নামে মুসলিমদের বিভক্ত করেছেন। তারা ব্যর্থ হয়েছেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে।

উপমহাদেশের মুসলিমদের সে বিপদ কালে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ, আল্লামা ইকবাল, মহম্মদ আলী জওহর, কায়েদে আজম মহম্মদ আলী জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমু্দ্দীনের মত নেতৃবৃন্দ। আলেম না হয়েও তারা মুসলিম উম্মাহর সংকট বুঝতেন। তারা বুঝতেন একতার গুরুত্ব, সে সাথে বুঝতেন মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের গুরুত্ব। তারা সে সংকট কালে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা দেন। এবং মুসলিম লীগের রাজনীতির মাধ্যমেই তারাই বাঙালি, বিহারি, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান, গুজরাতী, বেলুচ ইত্যাদি নানা প্রদেশের নানা ভাষার মুসলিমদের একতাবদ্ধ করেন এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা দেন। মুহম্মদ ঘোরির হাতে দিল্লি বিজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিমদের ইতিহাসে পাকিস্তানের সৃষ্টিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে অগ্রভাগে থাকা উচিত ছিল আলেমদের; অথচ সে কাজে তাদের খুব একটা দেখা যায়নি। সেটির কারণ, তাদের রাজনৈতিক জ্ঞানশূণ্যতা। বরং বিস্ময়ের বিষয় হলো পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে তারা হিন্দুত্ববাদী পৌত্তলিক শক্তির সাথে একতা গড়েন। তারা ভেবেছিলেন রাষ্ট্র নির্মাণে পৌত্তলিক কাফিরদের এজেন্ডা ও মুসলিমদের এজেন্ডার মাঝে কোন পার্থক্য নাই। এর চেয়ে বড় জাহিলিয়াত আর কি হতে পারে? আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, কংগ্রেস নেতা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধির ন্যায় এক পৌত্তলিক কাফিরকে তারা নেতা রূপে মেনে নেয়।

 

জান্নাতে নেয়ার রাজনীতি বনাম জাহান্নামে নেয়ার রাজনীতি

অমুসলিম, কাফির বা সেক্যুলারিস্ট থেকে ঈমানদারের রাজনীতির ধারণাটিই ভিন্ন।  ঈমানদারের রাজনীতির দুটি মূল লক্ষ্য থাকে। এক). ইহকালীন জীবনের কল্যাণ। দুই). আখেরাতের জীবনের কল্যাণ। রাজনীতির অর্থ যেমন রাষ্ট্রের নির্মাণ, পরিচালনা, প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নের নীতি, তেমনি সেটি হলো রাষ্ট্রের বুকে সুবিচারের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বৃত্তি নির্মূলের নীতি।  সে সাথে রাজনীতির আরো লক্ষ্য হতে হয়, নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সুশিক্ষাকে সুনিশ্চিত করা। রাজনীতির এ বিষয়গুলি হলো ইহজাগতিক কল্যাণের বিষয়।। তবে ঈমানদারের রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতটি হলো রাষ্ট্রকে জান্নাতের বাহনে পরিণত করা। সে রাজনীতির সাথে জড়িত মানব জীবনের অনন্ত-অসীম কালে কল্যাণের বিষয়টি। জনগণের জীবনে সবচেয়ে বড় কল্যাণটি হয় জান্নাত লাভের মধ্য দিয়ে। পার্থিব জীবন যত সফল বা আনন্দেরই হোক না কেন, তা কখনোই জান্নাতের সমকক্ষ হতে পারে না।  সে জন্যই মুসলিমের রাজনীতির লক্ষ্য হতে হয় ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। একমাত্র তখনই রাষ্ট্র জান্নাতের বাহনে পরিণত হয়।

রাষ্ট্র পৃথিবী পৃষ্ঠের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের হাতে থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার ন্যায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার লক্ষ লক্ষ কর্মচারি। রাষ্ট্রের হাতে থাকে পুলিশ, প্রশাসন, আদালত, মিডিয়া, প্রকাশনা ইত্যাদি নানা প্রতিষ্ঠান। ইচ্ছা করলে রাষ্ট্র পতিতাবৃত্তি, অশ্লিলতা, জুয়া, মদ্যপানের ন্যায় সকল পাপের বাণিজ্য কয়েক ঘন্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারে। যারা পাপের পথে তথা জাহান্নামের পথে মানুষকে ডাকে তাদেরকে আদালতে তুলে শাস্তি দিতে পারে। রাষ্ট্র পারে শিক্ষা ব্যবস্থা, পুস্তক প্রকাশনা ও মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে জান্নাতের পথ দেখাতে। রাষ্ট্র ও তার প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো এভাবেই জনগণকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো ও তাদেরকে জান্নাতে নেয়ার হাতিয়ার রূপে কাজ করতে পারে। রাষ্ট্রের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে বা ওয়াজ করে এ কাজটি হয় না। নবীজী (সা:) তাই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হয়েছে এবং সে রাষ্ট্রের চালকের আসনে নিজেকে বসতে হয়েছে। তাঁর ওফাতের পর তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ সে রাষ্ট্র পরিচালনার সে সূন্নত পালন করেছেন। রাজনীতির এ পথে লাগাতর যুদ্ধ আছে। অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের প্রচুর কুরবানী আছে -যা অন্য কোন ইবাদতে নাই।

ইসলামী রাষ্ট্রের এজেন্ডাটি শয়তানের এজেন্ডার সাথে সাংঘর্ষিক। শয়তানের এজেন্ডা মানুষকে জাহান্নামে নেয়া। তাই শয়তানী শক্তির মূল টার্গেট কোন মাদ্রাসা বা মসজিদ ধ্বংস করা নয়, বরং ইসলামী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা; নতুন কোন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিরোধ করা। এজন্যই ঈমানদারের রাজনীতি হলো ইসলামের সর্বোচ্চ জিহাদ। এখানে শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে ঈমানদারদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয়। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা, পীরগিরি, দরবেশী, খানকাহ ও দরগাহ নিয়ে বাঁচলে এরূপ যুদ্ধ আসে না। একটি দেশে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা কতটা বিজয়ী হবে -সেটি নির্ভর করে ইসলামী রাজনীতি কতটা বিজয়ী হলো তার উপর।

নবীজী (সা)’র হাতে নির্মিত মাদ্রাসা-মসজিদের সংখ্যা অতি নগন্য, কিন্তু তিনি ইসলামের এবং সে সাথে মানব জাতির ইতিহাস পাল্টে দিয়েছেন ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করে। এতে মুসলিমদের উত্থান হয়েছে বিশ্বশক্তি রূপে। এবং সে রাষ্ট্রের বুকে নির্মিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতি। একটি বিশাল রাষ্ট্র এবং তার জনবল নবীজী (সা)’র সাথে না থাকলে তাঁর একার পক্ষে ইসলামের মিশনকে বেশী দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হতো না। হযরত মূসা (আ:) ও হযরত ঈসা (আ:)’য়ের মত বিখ্যাত নবীদের হাতেও আসমানি কিতাব ছিল; কিন্তু রাষ্ট্র না থাকায় ইসলামের মিশনকে নবীজী (সা:)’র মত এগিয়ে নিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠা দিতে পারেননি শরিয়াকে।

 

রাষ্ট্র যখন শয়তানের হাতিয়ার হয়

রাজনীতির জিহাদটি ঈমানদারদের হাতে বিজয়ী না হলে রাষ্ট্র ফিরাউন-নমরুদের ন্যায় শয়তানী শক্তির দখলে চলে যায়। আজকের মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে তো সেটিই ঘটেছে। ফলে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অধিকৃত হয়েছিল মুজিব-হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ফিরাউনদের হাতে। ফিরাউন-অধিকৃত এরূপ রাষ্ট্রগুলিই জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়। শয়তানের নীতিই তখন রাষ্ট্রের নীতি হয়। তখন শয়তানী শক্তির অধিকৃত রাষ্ট্রে পূর্ণ ইসলাম পালন ও সিরাতাল মুস্তাকীমে চলাই অসম্ভব হয়। কারণ, সিরাতাল মুস্তাকীমে চলতে হলে তো অবশ্যই শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। অথচ দুর্বৃত্ত-অধিকৃত দেশের রাজনীতি, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি জনগণকে গুনাহগার বানানোর হাতিয়ারে পরিণত হয়। তখন সরকারি খরচে পতিতাপল্লী, জুয়ার আখড়া, মদের দোকান, অশ্লিল সিনেমা ও নাচগানের প্রদর্শনীর ন্যায় চরিত্র ধ্বংসের শয়তানী প্রকল্পগুলিকে পাহারা দেয়া হয়।

রাজনৈতিক অঙ্গণে পরাজিত হলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, শিক্ষাঙ্গণ, আদালত ও সরকারি নীতিমালার উপর ইসলামের কোন প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। রাজনীতি এজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত -যা ইসলামকে বিজয়ী করে। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-উমরাহ, ঘুষখোর, সূদখোর ও প্রতারকগণও পালন করতে পারে। কিন্তু ইসলামকে বিজয়ী করার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ থাকে না। তাদের দেখা যায় সেক্যুলার ঘরানার ফ্যাসিবাদী, জাতীয়তাবাদী ও নানারূপ মতবাদী রাজনীতিতে। বাংলাদেশ তার জন্ম থেকে ইসলাম থেকে দূরে-সরা এমন লোকদের দ্বারাই শাসিত হচ্ছে। রাজনীতির জিহাদে ব্যয় হয় মু’মিন ব্যক্তির অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তসহ তাঁর শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যের। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাতের কাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ এ ইবাদতের জন্য ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা।  সাহাবাদের জান ও মালের সিংহভাগ খরচ হয়েছে রাজনীতির এই জিহাদে।

নবুয়ত লাভের পর নবীজী (সা:) তাঁর ১৩ বছর মক্কায় কাটান। কিন্তু সেখানে তিনি একখানি মসজিদও নির্মাণ করেননি, কোন মাদ্রাসাও গড়েননি। বরং পূর্ণ মনযোগ দিয়েছেন এমন মানুষ গড়ায় যারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ও প্রতিরক্ষায় যোগ্য মোজাহিদ হবে এবং প্রয়োজনে শহীদ হবে। সমগ্র মানব ইতিহাসের এরাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। পরবর্তীতে তাঁরাই ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হয়েছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেল হয়েছেন এবং বিশাল বিশাল প্রদেশের সুযোগ্য গভর্নর, প্রশাসক ও বিচারপতি হয়েছেন। তাদের কারণেই মুসলিমগণ বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজ মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা গুরুত্ব পেলেও সেরূপ মানব গড়া ও রাষ্ট্র গড়া গুরুত্ব পায়নি। ফলে কোন বিজয় জুটছে না।

 

ব্যর্থতা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতে

বস্তুত ইসলামী রাষ্ট্র গড়াই হলো নবীজী (সা:)’র জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। বেশী বেশী মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ার কাজটি অবশ্যই নেক কর্ম; পরবর্তী কালে বহু মসজিদ মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে।  কিন্তু গুরুত্বে সেগুলি ইসলামী রাষ্ট্রের সমকক্ষ হতে পারে না। কারণ, মসজিদ নামাজ আদায়ের স্থান; কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়ার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজটি করে রাষ্ট্র। হযরত মূসা (সা:)’য়ের প্রচণ্ড আফসোস ছিল, প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজটি করে যেতে পারেননি ।