০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

দুর্বৃত্ত-অধিকৃত রাষ্ট্র এবং বিকৃত ইসলাম পালন

Reporter Name
  • Update Time : ০৩:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • / ৪৩ Time View

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

 

নবীজী (সা:)’র শ্রেষ্ঠ সূন্নত: দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানো

চালক দক্ষ ও দায়িত্ববান হলে বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও গাড়ি যথাযথ গন্তব্যে পৌঁছে। অপর দিকে চালক মাতাল হলে সকল যাত্রী দোয়া-দরুদে লিপ্ত হলেও গাড়ী দুর্ঘটনা থেকে বাঁচে না। সেটি অবিকল সত্য হলো রাষ্ট্র্রের ক্ষেত্রেও। রাষ্ট্রের চালক মাতাল, চোর-ডাকাত বা ভোটডাকাত হলে দেশের সকল মসজিদগুলি নামাজী-রোজাদার দিয়ে ভরে উঠলেও তাতে দেশে শান্তি আসে না। বরং দেশ তখন দুর্বৃত্তিতে ভরে উঠে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির দায়িত্ব নেয়ার গুরুত্বটি নবীজী (সা:) বুঝতেন। তিনি জানতেন, তাঁর উপস্থিতিতে তাঁর চেয়ে ভাল ব্যক্তি পৃথিবী পৃষ্ঠে নাই। এজন্যই খোদ নবীজী (সা:) রাষ্ট্রনায়কের আসনে বসেছিলেন। এভাবেই নবীজী (সা:) সূন্নত রেখে যান, ভাল মানুষের বৈশিষ্ট্য এ নয় যে, সে দরবেশ সেজে রাষ্ট্র পরিচালনা কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে এবং স্রেফ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠে মশগুল থাকবে। বরং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তো রাষ্ট্র ও তার সকল প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোকে আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা। রাষ্ট্রের ন্যায় পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে শয়তানী শক্তির হাতে তুলে দেয়ার চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? তখন অসম্ভব হয় দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা। সে গুরুতর অপরাধটি যেমন নবীজী (সা:) সংঘটিত হতে দেননি, তেমনি হতে দেননি তাঁর হাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সাহাবাগণ।

 

পতনের শুরু কিরূপে?

মুসলিমদের পতনের শুরু তখন থেকেই যখন রাষ্ট্রের ন্যায় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি অধিকৃত হয়েছে ইয়াজিদের ন্যায় ক্ষমতালোভী দুর্বৃত্তদের হাতে। এবং শহীদ হয়েছেন ইমাম হোসেন এবং তাঁর ন্যায় মুজাহিদগণ। সুফি, দরবেশ, মাওলানা, মৌলভী ও আলেমের বেশধারী একশ্রেণীর ব্যক্তিরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকাকে দ্বীনদারী ও পরহেজগারী বলে প্রচার করেছেন। ইসলাম এবং নবীজী (সা:)’র সূন্নতের বিরুদ্ধে এটি এক বিশাল মিথ্যাচার ও সত্য বিকৃতি। পরিতাপের বিষয় হলো, সাধারণ মুসলিমদের মাঝেও রাজনীতি বিমুখ সে বিকৃত ইসলাম বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এতে দীর্ঘায়ু পেয়েছে ইয়াজিদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের শাসন। মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়ের শুরু এখান থেকেই। রাষ্ট্রের চালকের আসনটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ, হাজার হাজার মাদ্রাসা ও শত শত সুফি খানকাহ গড়ে কোন কল্যাণ দেয়না। রাষ্ট্র তখন জাহান্নামের বাহনে পরিণত হয়। সে রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয় জান্নাতের পথ দেখানোর কাজ। জিহাদ বিষয়ে বই লেখা এবং কুর’আনের তাফসির করাও তখন অপরাধ গণ্য হয়।

বিকৃত ইসলামের বিপদ

বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির সকল দুর্গতি ও বিপর্যয়ের মূল কারণ, তাদের আবিস্কৃত বিকৃত ইসলাম। নবীজী (সা:) রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যম পূর্ণাঙ্গ ইবাদত এবং ইসলামকে বিজয়ী করার যে সূন্নত রেখে যান -তা মুসলিম দেশগুলির কোনটিতেই বেঁচে নেই। তারা বাঁচছে নবীজী (সা:)’র অনুসৃত সে ইসলামের অনুসরণ ছাড়াই। নবীজী (সা:)’র ইসলামে শত্রু শক্তির বিরুদ্ধের লাগাতর জিহাদ ছিল। ছিল কুর’আন শিক্ষা; ছিল সুবিচার। অথচ আজ ঘটছে উল্টোটি। যে চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত ও দুর্বৃত্তদের স্থান হওয়া উচিত কারাগারে, তারাই দখলে নিয়েছে দেশের প্রশাসন, রাজনীতি, আদালত, পুলিশ ও প্রশাসনকে।

অপর দিকে দেশের জনগণ ও আলেমগণ দুর্বৃত্তদের জন্য তাদের দখলদারীকে অব্যাহত রাখার কাজকে সহজ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের চালকের আসন থেকে দুর্বৃত্তদের না হটিয়ে সে আসনটিকে তারা ইসলামের শত্রুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। রাজনীতি ছেড়ে তারা স্রেফ নামাজ-রোজায় ও মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায় মনযোগ দিয়েছে। এভাবে শয়তানী শক্তির হাতে তুলে দিয়েছে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং আদালতের অঙ্গণকে। যেন রাষ্ট্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গণে তাদের জন্য করণীয় কিছুই নাই। রাজনীতি থেকে এরূপ দূরে থাকাকে প্রচার করেছে নবী-রাসূলদের পথ রূপে। তারা এ কথাও বলে, নবীজী (সা:) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতে আসেনি। সম্প্রতি ভারতের দেওবন্দী উলামাদের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতা বলেছেন, বদর ও ওহুদের যুদ্ধে কেউ ইসলাম কবুল করেনি। কি বিশাল বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা! তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়, দেশের উপর কারা রাজত্ব করবে এবং ইসলাম পালন কতটা স্বাধীনতা পাবে -সেটি প্রতি যুগে স্থির হয়েছে রণাঙ্গণে তথা রাজনীতির অঙ্গণে, মসজিদ-মাদ্রাসায় নয়।  যারা ভূল পথকে এভাবে সঠিক পথ মনে করে, তাদের পথ দেখাবে কে?

 

একই রূপ রোগের কারণে ইহুদী-খৃষ্টানরা নবীজী (সা:)’র অনুসারী হতে পারিনি এবং পায়নি সিরাতাল মুস্তাকীম। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে দোয়াল্লিন (পথভ্রষ্ট) ও মাগদুব (আযাবপ্রাপ্ত) বলেছে। আজকের  মুসলিমরা একই ভাবে নিজেদের পথভ্রষ্টতাকে ইসলামের পথ রূপে প্রচার দিচ্ছে। তাদের অনুসৃত এই বিকৃত ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন স্থান নাই, স্থান নাই আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়া আইনের। এবং স্থান নাই, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের এবং দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের।

 

গুরুতর অপরাধটি আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে পরাজিত রাখার

মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে পরাজিত রাখার অর্থ শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। এমন অপরাধের চেয়ে গুরুতর অপরাধ এ পৃথিবী পৃষ্ঠে আর কি হতে পারে? অথচ সে অপরাধ কর্ম সংঘটিত করাই হলো আজকের মুসলিমদের রাজনীতি, প্রশাসন, যুদ্ধ-বিগ্রহ, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতি। মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের পরাজয় কোন পৌত্তলিক বা নাস্তিক শক্তি আনেনি। সেকাজটি তাদের -যারা নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে। অথচ ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের নাশকতাটি গুরুতর। আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্বের বদলে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে নিজেদের সার্বভৌমত্ব। তাঁর শরিয়া আইনকে বাদ দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তাদের পছন্দের আইনকে। সে আইনে জ্বিনাও আইন সিদ্ধ; মদ-গাঁজা উৎপাদনও হালাল। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর একতা দেখতে চান। অথচ তারা যুদ্ধ করে উম্মাহর দেহে ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে বিভক্তি বাড়াতে; এবং উৎসব করে বিভক্তি গড়ার দিনটিতে। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ কুর’আনের বাণী প্রচারকে ইবাদতে পরিণত করেছিলেন; অথচ আজকের আলেমগণ বনি ইসরাইলের আলেমদের ন্যায় ধর্মীয় ওয়াজকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে।

এরূপ পথভ্রষ্টতা ও অপরাধ যে প্রতিশ্রুত শাস্তিকে অনিবার্য করবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এবং সে আযাব কি শুধু এ পার্থিব জীবনে? সেটি তো মৃত্যুহীন আখেরাতের জীবনেও। পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিমগণ আযাবের সে পথকেই সজ্ঞানে বেছে নিয়েছে। এবং আযাবের সে পথকেই বলছে ইসলামের পথ -যেমন পথভ্রষ্ট খৃষ্টানগণ এবং আযাবপ্রাপ্ত ইহুদীগণ তাদের বিকৃত ধর্মকে যথাক্রমে হযরত ঈসা (আ:) ও হযরত মূসা (আ:)’য়ের প্রচারিত ধর্ম মনে করে। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতগণ যে কারণে ব্যর্থ হয়েছে, আজকের মুসলিমগণও অনুসরণ করছে সে অভিন্ন পথ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “দুর্বৃত্ত-অধিকৃত রাষ্ট্র এবং বিকৃত ইসলাম পালন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

দুর্বৃত্ত-অধিকৃত রাষ্ট্র এবং বিকৃত ইসলাম পালন

Update Time : ০৩:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

 

নবীজী (সা:)’র শ্রেষ্ঠ সূন্নত: দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানো

চালক দক্ষ ও দায়িত্ববান হলে বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও গাড়ি যথাযথ গন্তব্যে পৌঁছে। অপর দিকে চালক মাতাল হলে সকল যাত্রী দোয়া-দরুদে লিপ্ত হলেও গাড়ী দুর্ঘটনা থেকে বাঁচে না। সেটি অবিকল সত্য হলো রাষ্ট্র্রের ক্ষেত্রেও। রাষ্ট্রের চালক মাতাল, চোর-ডাকাত বা ভোটডাকাত হলে দেশের সকল মসজিদগুলি নামাজী-রোজাদার দিয়ে ভরে উঠলেও তাতে দেশে শান্তি আসে না। বরং দেশ তখন দুর্বৃত্তিতে ভরে উঠে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির দায়িত্ব নেয়ার গুরুত্বটি নবীজী (সা:) বুঝতেন। তিনি জানতেন, তাঁর উপস্থিতিতে তাঁর চেয়ে ভাল ব্যক্তি পৃথিবী পৃষ্ঠে নাই। এজন্যই খোদ নবীজী (সা:) রাষ্ট্রনায়কের আসনে বসেছিলেন। এভাবেই নবীজী (সা:) সূন্নত রেখে যান, ভাল মানুষের বৈশিষ্ট্য এ নয় যে, সে দরবেশ সেজে রাষ্ট্র পরিচালনা কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে এবং স্রেফ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠে মশগুল থাকবে। বরং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তো রাষ্ট্র ও তার সকল প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোকে আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা। রাষ্ট্রের ন্যায় পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে শয়তানী শক্তির হাতে তুলে দেয়ার চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? তখন অসম্ভব হয় দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা। সে গুরুতর অপরাধটি যেমন নবীজী (সা:) সংঘটিত হতে দেননি, তেমনি হতে দেননি তাঁর হাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সাহাবাগণ।

 

পতনের শুরু কিরূপে?

মুসলিমদের পতনের শুরু তখন থেকেই যখন রাষ্ট্রের ন্যায় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি অধিকৃত হয়েছে ইয়াজিদের ন্যায় ক্ষমতালোভী দুর্বৃত্তদের হাতে। এবং শহীদ হয়েছেন ইমাম হোসেন এবং তাঁর ন্যায় মুজাহিদগণ। সুফি, দরবেশ, মাওলানা, মৌলভী ও আলেমের বেশধারী একশ্রেণীর ব্যক্তিরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকাকে দ্বীনদারী ও পরহেজগারী বলে প্রচার করেছেন। ইসলাম এবং নবীজী (সা:)’র সূন্নতের বিরুদ্ধে এটি এক বিশাল মিথ্যাচার ও সত্য বিকৃতি। পরিতাপের বিষয় হলো, সাধারণ মুসলিমদের মাঝেও রাজনীতি বিমুখ সে বিকৃত ইসলাম বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এতে দীর্ঘায়ু পেয়েছে ইয়াজিদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের শাসন। মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়ের শুরু এখান থেকেই। রাষ্ট্রের চালকের আসনটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ, হাজার হাজার মাদ্রাসা ও শত শত সুফি খানকাহ গড়ে কোন কল্যাণ দেয়না। রাষ্ট্র তখন জাহান্নামের বাহনে পরিণত হয়। সে রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয় জান্নাতের পথ দেখানোর কাজ। জিহাদ বিষয়ে বই লেখা এবং কুর’আনের তাফসির করাও তখন অপরাধ গণ্য হয়।

বিকৃত ইসলামের বিপদ

বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির সকল দুর্গতি ও বিপর্যয়ের মূল কারণ, তাদের আবিস্কৃত বিকৃত ইসলাম। নবীজী (সা:) রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যম পূর্ণাঙ্গ ইবাদত এবং ইসলামকে বিজয়ী করার যে সূন্নত রেখে যান -তা মুসলিম দেশগুলির কোনটিতেই বেঁচে নেই। তারা বাঁচছে নবীজী (সা:)’র অনুসৃত সে ইসলামের অনুসরণ ছাড়াই। নবীজী (সা:)’র ইসলামে শত্রু শক্তির বিরুদ্ধের লাগাতর জিহাদ ছিল। ছিল কুর’আন শিক্ষা; ছিল সুবিচার। অথচ আজ ঘটছে উল্টোটি। যে চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত ও দুর্বৃত্তদের স্থান হওয়া উচিত কারাগারে, তারাই দখলে নিয়েছে দেশের প্রশাসন, রাজনীতি, আদালত, পুলিশ ও প্রশাসনকে।

অপর দিকে দেশের জনগণ ও আলেমগণ দুর্বৃত্তদের জন্য তাদের দখলদারীকে অব্যাহত রাখার কাজকে সহজ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের চালকের আসন থেকে দুর্বৃত্তদের না হটিয়ে সে আসনটিকে তারা ইসলামের শত্রুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। রাজনীতি ছেড়ে তারা স্রেফ নামাজ-রোজায় ও মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায় মনযোগ দিয়েছে। এভাবে শয়তানী শক্তির হাতে তুলে দিয়েছে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং আদালতের অঙ্গণকে। যেন রাষ্ট্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গণে তাদের জন্য করণীয় কিছুই নাই। রাজনীতি থেকে এরূপ দূরে থাকাকে প্রচার করেছে নবী-রাসূলদের পথ রূপে। তারা এ কথাও বলে, নবীজী (সা:) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতে আসেনি। সম্প্রতি ভারতের দেওবন্দী উলামাদের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতা বলেছেন, বদর ও ওহুদের যুদ্ধে কেউ ইসলাম কবুল করেনি। কি বিশাল বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা! তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়, দেশের উপর কারা রাজত্ব করবে এবং ইসলাম পালন কতটা স্বাধীনতা পাবে -সেটি প্রতি যুগে স্থির হয়েছে রণাঙ্গণে তথা রাজনীতির অঙ্গণে, মসজিদ-মাদ্রাসায় নয়।  যারা ভূল পথকে এভাবে সঠিক পথ মনে করে, তাদের পথ দেখাবে কে?

 

একই রূপ রোগের কারণে ইহুদী-খৃষ্টানরা নবীজী (সা:)’র অনুসারী হতে পারিনি এবং পায়নি সিরাতাল মুস্তাকীম। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে দোয়াল্লিন (পথভ্রষ্ট) ও মাগদুব (আযাবপ্রাপ্ত) বলেছে। আজকের  মুসলিমরা একই ভাবে নিজেদের পথভ্রষ্টতাকে ইসলামের পথ রূপে প্রচার দিচ্ছে। তাদের অনুসৃত এই বিকৃত ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন স্থান নাই, স্থান নাই আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়া আইনের। এবং স্থান নাই, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের এবং দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের।

 

গুরুতর অপরাধটি আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে পরাজিত রাখার

মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে পরাজিত রাখার অর্থ শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। এমন অপরাধের চেয়ে গুরুতর অপরাধ এ পৃথিবী পৃষ্ঠে আর কি হতে পারে? অথচ সে অপরাধ কর্ম সংঘটিত করাই হলো আজকের মুসলিমদের রাজনীতি, প্রশাসন, যুদ্ধ-বিগ্রহ, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতি। মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের পরাজয় কোন পৌত্তলিক বা নাস্তিক শক্তি আনেনি। সেকাজটি তাদের -যারা নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে। অথচ ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের নাশকতাটি গুরুতর। আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্বের বদলে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে নিজেদের সার্বভৌমত্ব। তাঁর শরিয়া আইনকে বাদ দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তাদের পছন্দের আইনকে। সে আইনে জ্বিনাও আইন সিদ্ধ; মদ-গাঁজা উৎপাদনও হালাল। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর একতা দেখতে চান। অথচ তারা যুদ্ধ করে উম্মাহর দেহে ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে বিভক্তি বাড়াতে; এবং উৎসব করে বিভক্তি গড়ার দিনটিতে। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ কুর’আনের বাণী প্রচারকে ইবাদতে পরিণত করেছিলেন; অথচ আজকের আলেমগণ বনি ইসরাইলের আলেমদের ন্যায় ধর্মীয় ওয়াজকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে।

এরূপ পথভ্রষ্টতা ও অপরাধ যে প্রতিশ্রুত শাস্তিকে অনিবার্য করবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এবং সে আযাব কি শুধু এ পার্থিব জীবনে? সেটি তো মৃত্যুহীন আখেরাতের জীবনেও। পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিমগণ আযাবের সে পথকেই সজ্ঞানে বেছে নিয়েছে। এবং আযাবের সে পথকেই বলছে ইসলামের পথ -যেমন পথভ্রষ্ট খৃষ্টানগণ এবং আযাবপ্রাপ্ত ইহুদীগণ তাদের বিকৃত ধর্মকে যথাক্রমে হযরত ঈসা (আ:) ও হযরত মূসা (আ:)’য়ের প্রচারিত ধর্ম মনে করে। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতগণ যে কারণে ব্যর্থ হয়েছে, আজকের মুসলিমগণও অনুসরণ করছে সে অভিন্ন পথ।