০৭:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

দুপুরে খেয়েদেয়ে ঘুম ;কতটা স্বাস্থ্যসম্মত

ম্যাডাম আফরিন সুলতানা
  • Update Time : ০৪:৫৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / ২৯৭ Time View

সরকার ডেস্ক:    দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু চোখ না বুজলে অনেকের শরীর ঠিকঠাক কাজ করতে চায় না। আর ভাত খেলে তো কথাই নেই! খাওয়ার পর চোখ দুটো বুজে আসে। তারপরই কিছুক্ষণের জন্য অন্য জগতে হারিয়ে যান অনেকে। বাড়িতে থাকলেও অনেকে ভাতঘুমে অভ্যস্ত।দুপুরে খাওয়া শেষ হল কি হল না, চোখ ঘুমে ঢুলে আসে? দুপুর ওই ১টা থেকে ৪টে অবধি ঘুমটা বেশ গভীরই হয়। ছুটির দিনে এই ভাতঘুমটা না দিলে ঠিক জমে না। আর বাঙালি বাড়িতে দুপুরে খেয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার অভ্যাস আছেই। মা-ঠাকুরমারা খাওয়ার পরে ছোটদের খানিক ঘুমিয়ে নিতেই বলতেন। এই যে ভাতঘুম দেওয়ার অভ্যাস, তা কি ভাল?

তাই বাড়িতে থাকলে তো বটেই, অফিসেও দুপুরের খাওয়া সেরে সুযোগ পেলে নিয়ে নিতে পারেন ‘মিনি ন্যাপ’। শরীর চাঙ্গা করতে এই অভ্যাসের কোনও জুড়ি নেই। জেনে নিন ভাতঘুম কেন এত জরুরি।

১. বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোর অভ্যাস আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিয়ে পারে।

২. ঠিক মতো ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। খাওয়ার পর ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়াই ভাল। এতে মন ও মেজাজ দুই-ই চাঙ্গা থাকে। মানসিক চাপও কমে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, পিসিওডির সমস্যা থাকলে এই অল্প সময়ের ঘুম বেশ উপকারী।

৩. কাজের মাঝে ক্লান্তি এলে অনেকেই ভরসা রাখেন এক কাপ কফিতে। অনেকেই ঠিক মতো মনসংযোগ করতে পারেন পারেন না। দুপুরে খাওয়ার পর মিনিট দশেকের ঘুম কফির থেকেও বেশি কার্যকর হতে পারে। এই অভ্যাস আপনার ক্লান্তি দূর করবে। কাজের মাঝে মনোসংযোগও বাড়বে।

৪. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে খাওয়ার পর আধাঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ঘুমালে মানসিক চাপ কমে, সে কারণে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। হৃৎস্পন্দনের হারও স্বাভাবিক থাকে।

৫. কাজ করতে করতে অনেক সময়ে একঘেয়েমি আসে। মাথায় নতুন চিন্তা-ভাবনা আসে না। ফলে কাজের ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেন, তা হলে আপনার সৃজনশীলতা বাড়বে। কিছুক্ষণের ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ভাতঘুমে কী কী নিয়ম মানতে হবে

১. চেষ্টা করুন দুপুর ৩টার আগেই ঘুমিয়ে পড়ার। বিকেলের দিকে ঘুমালে চলবে না।

২. দুপুরে খাবারের পর চা, কফি, চকোলেট, সিগারেট না খাওয়াই ভাল। তা হলে ঘুম আসবে না মোটেই।

৩. ঘুমানোর সময় ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না।

৪. ৩০ মিনিটের বেশি ভাতঘুম নয়।

ভাতঘুমের ভালমন্দ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন এই অভ্যাস বেশ স্বাস্থ্যকর, কারও মতে খেয়েদেয়ে ঘুমোনো মোটেই ঠিক নয়। অফিসে কাজ করার সময় দেখবেন, টিফিনের সময়টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেই ঘুম বেশ জাঁকিয়েই আসে। নাসার বিজ্ঞানীরা কিন্তু একে খারাপ বলে মানতে রাজি নন। তাঁরা বলছেন, দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে নিলে কাজ করার শক্তি আরও বাড়ে, ক্লান্তি কেটে যায়। তবে ঘুমোনোর নিয়ম আছে। ভারী খাবার খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমোলে চলবে না। ঘুমোতে হবে মাত্র ৩০ মিনিট। তাতেই শরীরের ক্লান্তি দূর হবে, মস্তিষ্কও ঠিকমতো কাজ করবে। দেখা গিয়েছে, বিমান চালান যাঁরা, তাঁরা যদি ২৬ মিনিটের ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নেন, তা হলে তাঁদের দক্ষতা আরও ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মনঃসংযোগও বাড়ে।

ভাতঘুম নিয়ে গবেষণা আরও হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমোনোর অভ্যাস স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। বরং ঘুমোলে মনমেজাজ শান্ত থাকে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, পিসিওডির সমস্যা থাকলে দুপুরে মিনিট তিরিশেকের জন্য বিশ্রাম নেওয়া ভাল। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে দুপুরে কিছুটা সময়ের জন্য গড়িয়ে নেওয়া ভাল।

অফিস হোক বা বাড়ি দুপুরের খাবার খাওয়ার পরপরই ঘুমে চোখ বুজে আসে অনেকের। তবে অনেকেই মনে করেন, দুপুরে ঘুমোলেই ওজন বেড়ে যায়।ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন জার্নালে এই নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অল্পকিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নেয়া শরীর ও মস্তিষ্ক দুইয়ের জন্যই উপকারী। তবে ঘুমোনোর সময় মানতে হবে কিছু নিয়ম।

দিবানিদ্রা কিন্তু মোটেও বদভ্যাস নয়। বরং এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বটে। কম সময়ের জন্য হলে সেটা শরীরের পক্ষে ভাল। তবে ভাতঘুম লম্বা হয়ে গেলেই মুশকিল।

তবে ঘুমোতে হবে ওই ৩০ মিনিটই। এর চেয়ে বেশি হয়ে গেলে তখন ক্লান্তি কমার চেয়ে বাড়বে। অম্বলের সমস্যা হবে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, খেয়ে উঠে আগে ১৫ মিনিটের মতো হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে নিলে ভাল হয়। তার পর বিশ্রাম নিন। এতে খাবারও হজম হবে এবং বাড়তি ক্যালোরিও জমবে না শরীরে।ভাতঘুমের জন্য ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ করছেন গবেষকরা। ইংরেজিতে যাকে ন্যাপ বলা হয়। এই ন্যাপ সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলতে পারে। তবে ৩০ মিনিটের বেশি নয়। কারন, এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “দুপুরে খেয়েদেয়ে ঘুম ;কতটা স্বাস্থ্যসম্মত

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

দুপুরে খেয়েদেয়ে ঘুম ;কতটা স্বাস্থ্যসম্মত

Update Time : ০৪:৫৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

সরকার ডেস্ক:    দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু চোখ না বুজলে অনেকের শরীর ঠিকঠাক কাজ করতে চায় না। আর ভাত খেলে তো কথাই নেই! খাওয়ার পর চোখ দুটো বুজে আসে। তারপরই কিছুক্ষণের জন্য অন্য জগতে হারিয়ে যান অনেকে। বাড়িতে থাকলেও অনেকে ভাতঘুমে অভ্যস্ত।দুপুরে খাওয়া শেষ হল কি হল না, চোখ ঘুমে ঢুলে আসে? দুপুর ওই ১টা থেকে ৪টে অবধি ঘুমটা বেশ গভীরই হয়। ছুটির দিনে এই ভাতঘুমটা না দিলে ঠিক জমে না। আর বাঙালি বাড়িতে দুপুরে খেয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার অভ্যাস আছেই। মা-ঠাকুরমারা খাওয়ার পরে ছোটদের খানিক ঘুমিয়ে নিতেই বলতেন। এই যে ভাতঘুম দেওয়ার অভ্যাস, তা কি ভাল?

তাই বাড়িতে থাকলে তো বটেই, অফিসেও দুপুরের খাওয়া সেরে সুযোগ পেলে নিয়ে নিতে পারেন ‘মিনি ন্যাপ’। শরীর চাঙ্গা করতে এই অভ্যাসের কোনও জুড়ি নেই। জেনে নিন ভাতঘুম কেন এত জরুরি।

১. বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোর অভ্যাস আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিয়ে পারে।

২. ঠিক মতো ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। খাওয়ার পর ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়াই ভাল। এতে মন ও মেজাজ দুই-ই চাঙ্গা থাকে। মানসিক চাপও কমে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, পিসিওডির সমস্যা থাকলে এই অল্প সময়ের ঘুম বেশ উপকারী।

৩. কাজের মাঝে ক্লান্তি এলে অনেকেই ভরসা রাখেন এক কাপ কফিতে। অনেকেই ঠিক মতো মনসংযোগ করতে পারেন পারেন না। দুপুরে খাওয়ার পর মিনিট দশেকের ঘুম কফির থেকেও বেশি কার্যকর হতে পারে। এই অভ্যাস আপনার ক্লান্তি দূর করবে। কাজের মাঝে মনোসংযোগও বাড়বে।

৪. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে খাওয়ার পর আধাঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ঘুমালে মানসিক চাপ কমে, সে কারণে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। হৃৎস্পন্দনের হারও স্বাভাবিক থাকে।

৫. কাজ করতে করতে অনেক সময়ে একঘেয়েমি আসে। মাথায় নতুন চিন্তা-ভাবনা আসে না। ফলে কাজের ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেন, তা হলে আপনার সৃজনশীলতা বাড়বে। কিছুক্ষণের ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ভাতঘুমে কী কী নিয়ম মানতে হবে

১. চেষ্টা করুন দুপুর ৩টার আগেই ঘুমিয়ে পড়ার। বিকেলের দিকে ঘুমালে চলবে না।

২. দুপুরে খাবারের পর চা, কফি, চকোলেট, সিগারেট না খাওয়াই ভাল। তা হলে ঘুম আসবে না মোটেই।

৩. ঘুমানোর সময় ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না।

৪. ৩০ মিনিটের বেশি ভাতঘুম নয়।

ভাতঘুমের ভালমন্দ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন এই অভ্যাস বেশ স্বাস্থ্যকর, কারও মতে খেয়েদেয়ে ঘুমোনো মোটেই ঠিক নয়। অফিসে কাজ করার সময় দেখবেন, টিফিনের সময়টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেই ঘুম বেশ জাঁকিয়েই আসে। নাসার বিজ্ঞানীরা কিন্তু একে খারাপ বলে মানতে রাজি নন। তাঁরা বলছেন, দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে নিলে কাজ করার শক্তি আরও বাড়ে, ক্লান্তি কেটে যায়। তবে ঘুমোনোর নিয়ম আছে। ভারী খাবার খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমোলে চলবে না। ঘুমোতে হবে মাত্র ৩০ মিনিট। তাতেই শরীরের ক্লান্তি দূর হবে, মস্তিষ্কও ঠিকমতো কাজ করবে। দেখা গিয়েছে, বিমান চালান যাঁরা, তাঁরা যদি ২৬ মিনিটের ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নেন, তা হলে তাঁদের দক্ষতা আরও ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মনঃসংযোগও বাড়ে।

ভাতঘুম নিয়ে গবেষণা আরও হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমোনোর অভ্যাস স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। বরং ঘুমোলে মনমেজাজ শান্ত থাকে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, পিসিওডির সমস্যা থাকলে দুপুরে মিনিট তিরিশেকের জন্য বিশ্রাম নেওয়া ভাল। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে দুপুরে কিছুটা সময়ের জন্য গড়িয়ে নেওয়া ভাল।

অফিস হোক বা বাড়ি দুপুরের খাবার খাওয়ার পরপরই ঘুমে চোখ বুজে আসে অনেকের। তবে অনেকেই মনে করেন, দুপুরে ঘুমোলেই ওজন বেড়ে যায়।ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন জার্নালে এই নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অল্পকিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নেয়া শরীর ও মস্তিষ্ক দুইয়ের জন্যই উপকারী। তবে ঘুমোনোর সময় মানতে হবে কিছু নিয়ম।

দিবানিদ্রা কিন্তু মোটেও বদভ্যাস নয়। বরং এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বটে। কম সময়ের জন্য হলে সেটা শরীরের পক্ষে ভাল। তবে ভাতঘুম লম্বা হয়ে গেলেই মুশকিল।

তবে ঘুমোতে হবে ওই ৩০ মিনিটই। এর চেয়ে বেশি হয়ে গেলে তখন ক্লান্তি কমার চেয়ে বাড়বে। অম্বলের সমস্যা হবে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, খেয়ে উঠে আগে ১৫ মিনিটের মতো হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে নিলে ভাল হয়। তার পর বিশ্রাম নিন। এতে খাবারও হজম হবে এবং বাড়তি ক্যালোরিও জমবে না শরীরে।ভাতঘুমের জন্য ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ করছেন গবেষকরা। ইংরেজিতে যাকে ন্যাপ বলা হয়। এই ন্যাপ সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলতে পারে। তবে ৩০ মিনিটের বেশি নয়। কারন, এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।