০৯:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

তারুণ্যের দিশা হারানো জাতির অমার্জিত বিলাসিতা

Reporter Name
  • Update Time : ০৪:২৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৬২ Time View

 

ফাঁকা সময়ের দখলে যেন পুরো এক প্রজন্ম! কিংবা বলা যায়, অকাজের কাজের
উৎস যেন এ দেশেই! দুঃখ করেই বললাম আরকি! বাংলাদেশের বেকারের হার এত
বেশি, কিংবা বাংলাদেশিরা অকাজে সময় অপব্যয় করে—এটা বোঝার জন্য
ফেসবুকে ঢুকলেই যথেষ্ট। লিওনেল মেসির ফেসবুক আইডি, রিপাবলিক বাংলা
টিভির পেজ কিংবা কোনো বিখ্যাত–কুখ্যাত ব্যক্তির পোস্টে একবার ঢুঁ মারলেই
দেখা যাবে কাণ্ডকারখানা! পোস্টে, ছবিতে কিংবা ইস্যুতে যত মন্তব্য, তার
অধিকাংশই বাংলাদেশের দামাল তরুণদের। নেইমার কার সঙ্গে কোথায় সময়
কাটাচ্ছেন—তা নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক মাতামাতি! সেখানে বাংলাদেশি তরুণদের
মন্তব্য করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? অথচ সেখানে শত সহস্র
মন্তব্য—তাও বাংলায়! মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া জাতির তরুণেরা আজ
মাতৃভাষায়ই পরনির্ভর উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে!

তরুণদের ভাষাপ্রীতি দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ভিনদেশিদের কাউকে
ভালোবাসা জানানো হোক কিংবা গালি—সবই বাংলায়! যখন কোনো কাজ থাকে না,
তখন ফেসবুক আমাদের অলসতার কাজ জোগায়। চিনি না, জানি না—তবু
হরহামেশাই গিয়ে মন্তব্য করি, পাল্টা মন্তব্য করি, ঝগড়া-বিবাদে জড়াই। নেই
কাজ, তাই খই ভাজার মতো ফেসবুকে মন্তব্য করতে করতে হজম করি, আর
ক্ষুধা বাড়াই! কেউ যদি বলে, “তুমি তো বেকার,” সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, “কে বলল?
আমি তো অকাজে রীতিমতো পরিশ্রম করি!”

প্রশ্ন জাগে না—যে দেশের সেলিব্রিটিদের নিয়ে সে দেশের তরুণদের মধ্যে
উচ্ছ্বাস নেই, তারা অন্য দেশের তারকাদের নিয়ে এত মাতামাতি করে কেন?

প্রজন্মের অনেকেরই আসলে দিক–দিশা নেই। কী করা উচিত, কী করা যায়—এই
বার্তাটাই তারা শৈশবে পায়নি। লেখাপড়া না করেও পাশ করা সহজ হয়ে যাওয়া,
‘সহমত ভাই’-দের রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া, আর ইন্টারনেট আসক্তির কারণে
তারুণ্য আজ দিক হারিয়েছে, দায়িত্ব ভুলে বসেছে। বিশ্বের কোনো সভ্য কিংবা
অসভ্য দেশেই এত বেশি কিশোর-তরুণকে রাজনীতির নামে বিভ্রান্ত অবস্থায়
পাওয়া যাবে না, যতটা বাংলাদেশে দেখা যায়। পরিতাপের বিষয়, হাইস্কুল-কলেজ
তো পরের কথা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ নেতৃত্ব বিকাশের
নামে নির্বাচনে অংশ নেয়—যেখানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট!

এত নেতা ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ কী করবে? বিটিএসের
ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের মন্তব্যে ভরে যায়। ফেক আইডি
খুলে রাতভর চ্যাটিং আর গসিপিং চলে। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় অকাজেই
চলে যাচ্ছে।

তরুণদের দায়িত্ব তাদের নিজেকেই বুঝতে হবে। তাদের করণীয় শেখাতে হবে।
কারও মন্তব্যে পাল্টা মন্তব্য করলেই জয় আসে না। এগোতে হবে জ্ঞান-
বিজ্ঞান আর চিন্তার জগতে। ধুঁকতে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থাকে মেরামত করে
কিশোর-তরুণদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। সামনে রয়েছে
অগণিত চ্যালেঞ্জ এবং অপার সম্ভাবনা।

শুধু শিক্ষিত করলেই হবে না—তাদের নৈতিক শিক্ষায়ও গড়তে হবে। এই দেশে
শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই, কিন্তু কিছু মানুষের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে গোটা
সমাজ ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত। এসব সামাল দিতে হলে তরুণদেরই অগ্রণী ভূমিকা
নিতে হবে। গড়ার সময়েই যদি তারা উচ্ছন্নে যায়, তবে জাতির সম্ভাবনা শঙ্কায়
পরিণত হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবার সম্মিলিত উদ্যোগে
তারুণ্যকে ইতিবাচক প্রেক্ষাপটে কাজে লাগাতে হবে। যে জাতির সম্ভাবনা বেশি,
তার শঙ্কাও বেশি। কোটি কিশোর-তরুণকে যদি সঠিক পথে না রাখা যায়, তবে
বাংলাদেশ পথ হারাবে। তরুণ-তরুণীদের রক্তে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকার
অসম্মান জাতির আত্মহননেরই নামান্তর।

উঠে দাঁড়াও, বাংলাদেশ! ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। তারুণ্যের যে অপার সম্ভাবনা
হাতছানি দিয়ে ডাকছে, তা যেন ঠাট্টা-ইয়ার্কির ভিড়ে হারিয়ে না যায়। বড়রা হোন
শিক্ষকের মতো, গোটা সমাজ হোক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঘুষ–দুর্নীতিমুক্ত,
সুদ–অবিচারমুক্ত, বৈষম্য–অনাচারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ
পায় তরুণদের হাত ধরে।

রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমাদের হাতে আছে একজন স্বপ্ন–বাস্তবায়নের
কারিগর—ড. ইউনূস। তাঁর কাছ থেকে কিশোর-তরুণদের জন্য নির্দেশনা চাই। সেই
নির্দেশনার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র দিক সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি। এটাই আমাদের
প্রত্যাশা।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

One thought on “তারুণ্যের দিশা হারানো জাতির অমার্জিত বিলাসিতা

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

তারুণ্যের দিশা হারানো জাতির অমার্জিত বিলাসিতা

Update Time : ০৪:২৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫

 

ফাঁকা সময়ের দখলে যেন পুরো এক প্রজন্ম! কিংবা বলা যায়, অকাজের কাজের
উৎস যেন এ দেশেই! দুঃখ করেই বললাম আরকি! বাংলাদেশের বেকারের হার এত
বেশি, কিংবা বাংলাদেশিরা অকাজে সময় অপব্যয় করে—এটা বোঝার জন্য
ফেসবুকে ঢুকলেই যথেষ্ট। লিওনেল মেসির ফেসবুক আইডি, রিপাবলিক বাংলা
টিভির পেজ কিংবা কোনো বিখ্যাত–কুখ্যাত ব্যক্তির পোস্টে একবার ঢুঁ মারলেই
দেখা যাবে কাণ্ডকারখানা! পোস্টে, ছবিতে কিংবা ইস্যুতে যত মন্তব্য, তার
অধিকাংশই বাংলাদেশের দামাল তরুণদের। নেইমার কার সঙ্গে কোথায় সময়
কাটাচ্ছেন—তা নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক মাতামাতি! সেখানে বাংলাদেশি তরুণদের
মন্তব্য করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? অথচ সেখানে শত সহস্র
মন্তব্য—তাও বাংলায়! মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া জাতির তরুণেরা আজ
মাতৃভাষায়ই পরনির্ভর উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে!

তরুণদের ভাষাপ্রীতি দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ভিনদেশিদের কাউকে
ভালোবাসা জানানো হোক কিংবা গালি—সবই বাংলায়! যখন কোনো কাজ থাকে না,
তখন ফেসবুক আমাদের অলসতার কাজ জোগায়। চিনি না, জানি না—তবু
হরহামেশাই গিয়ে মন্তব্য করি, পাল্টা মন্তব্য করি, ঝগড়া-বিবাদে জড়াই। নেই
কাজ, তাই খই ভাজার মতো ফেসবুকে মন্তব্য করতে করতে হজম করি, আর
ক্ষুধা বাড়াই! কেউ যদি বলে, “তুমি তো বেকার,” সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, “কে বলল?
আমি তো অকাজে রীতিমতো পরিশ্রম করি!”

প্রশ্ন জাগে না—যে দেশের সেলিব্রিটিদের নিয়ে সে দেশের তরুণদের মধ্যে
উচ্ছ্বাস নেই, তারা অন্য দেশের তারকাদের নিয়ে এত মাতামাতি করে কেন?

প্রজন্মের অনেকেরই আসলে দিক–দিশা নেই। কী করা উচিত, কী করা যায়—এই
বার্তাটাই তারা শৈশবে পায়নি। লেখাপড়া না করেও পাশ করা সহজ হয়ে যাওয়া,
‘সহমত ভাই’-দের রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া, আর ইন্টারনেট আসক্তির কারণে
তারুণ্য আজ দিক হারিয়েছে, দায়িত্ব ভুলে বসেছে। বিশ্বের কোনো সভ্য কিংবা
অসভ্য দেশেই এত বেশি কিশোর-তরুণকে রাজনীতির নামে বিভ্রান্ত অবস্থায়
পাওয়া যাবে না, যতটা বাংলাদেশে দেখা যায়। পরিতাপের বিষয়, হাইস্কুল-কলেজ
তো পরের কথা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ নেতৃত্ব বিকাশের
নামে নির্বাচনে অংশ নেয়—যেখানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট!

এত নেতা ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ কী করবে? বিটিএসের
ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের মন্তব্যে ভরে যায়। ফেক আইডি
খুলে রাতভর চ্যাটিং আর গসিপিং চলে। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় অকাজেই
চলে যাচ্ছে।

তরুণদের দায়িত্ব তাদের নিজেকেই বুঝতে হবে। তাদের করণীয় শেখাতে হবে।
কারও মন্তব্যে পাল্টা মন্তব্য করলেই জয় আসে না। এগোতে হবে জ্ঞান-
বিজ্ঞান আর চিন্তার জগতে। ধুঁকতে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থাকে মেরামত করে
কিশোর-তরুণদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। সামনে রয়েছে
অগণিত চ্যালেঞ্জ এবং অপার সম্ভাবনা।

শুধু শিক্ষিত করলেই হবে না—তাদের নৈতিক শিক্ষায়ও গড়তে হবে। এই দেশে
শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই, কিন্তু কিছু মানুষের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে গোটা
সমাজ ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত। এসব সামাল দিতে হলে তরুণদেরই অগ্রণী ভূমিকা
নিতে হবে। গড়ার সময়েই যদি তারা উচ্ছন্নে যায়, তবে জাতির সম্ভাবনা শঙ্কায়
পরিণত হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবার সম্মিলিত উদ্যোগে
তারুণ্যকে ইতিবাচক প্রেক্ষাপটে কাজে লাগাতে হবে। যে জাতির সম্ভাবনা বেশি,
তার শঙ্কাও বেশি। কোটি কিশোর-তরুণকে যদি সঠিক পথে না রাখা যায়, তবে
বাংলাদেশ পথ হারাবে। তরুণ-তরুণীদের রক্তে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকার
অসম্মান জাতির আত্মহননেরই নামান্তর।

উঠে দাঁড়াও, বাংলাদেশ! ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। তারুণ্যের যে অপার সম্ভাবনা
হাতছানি দিয়ে ডাকছে, তা যেন ঠাট্টা-ইয়ার্কির ভিড়ে হারিয়ে না যায়। বড়রা হোন
শিক্ষকের মতো, গোটা সমাজ হোক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঘুষ–দুর্নীতিমুক্ত,
সুদ–অবিচারমুক্ত, বৈষম্য–অনাচারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ
পায় তরুণদের হাত ধরে।

রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমাদের হাতে আছে একজন স্বপ্ন–বাস্তবায়নের
কারিগর—ড. ইউনূস। তাঁর কাছ থেকে কিশোর-তরুণদের জন্য নির্দেশনা চাই। সেই
নির্দেশনার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র দিক সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি। এটাই আমাদের
প্রত্যাশা।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com