জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে অশালীন মন্তব্য: ছাত্রলীগ নেতার চুল কেটে থানায় হস্তান্তর
- Update Time : ০৫:৫১:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
- / ৮৬ Time View

বিশেষ প্রতিনিধি : গাজীপুর, ২ জুলাই ২০২৪: গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার তিতুমীর হলে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় এক আলিম পরীক্ষার্থীকে ঘিরে তীব্র ছাত্রবিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মেজবাহ উদ্দিন নামের ওই ছাত্রকে প্রকাশ্যেই ধরে এনে তার চুল কেটে দেন এবং পরবর্তীতে তাকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনা মাদ্রাসার অভ্যন্তরে এবং বাইরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেজবাহ উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করেন। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নজরে না এলেও, পোস্টের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর, সন্ধ্যার দিকে তা শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই পুরো তিতুমীর হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা মেজবাহকে তিতুমীর হল থেকে ধরে মাদ্রাসার মাঠে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে তার চুল কেটে দেওয়া হয়। ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দিদারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জুলাই মাস আমাদের জন্য গভীর বেদনার স্মৃতি বহন করে। শহীদ নাসির ইসলামসহ তিনজন সহপাঠীকে আমরা এই মাসেই হারিয়েছি। অথচ মেজবাহ সেই শহীদদের অপমান করে মন্তব্য করেছে। এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” অভিযুক্তের সহপাঠী আলিম পরীক্ষার্থী আবির বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করে সে আমাদের শহীদ সহপাঠীদের অবমাননা করেছে। আমি ঘৃণা করি এমন একজনকে, যে শহীদ নাসির ইসলামের বিপক্ষে কথা বলে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।”
মাদ্রাসা প্রশাসন ও ছাত্রনেতাদের ভূমিকা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে মাদ্রাসা প্রশাসন এবং ছাত্রসংসদ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তিতুমীর হল সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) আরিফুল ইসলাম জানান, “বিষয়টি জানার পর আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিই, যাতে কোনো ধরনের গণপিটুনি বা সহিংসতা না ঘটে। আমরা তাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে এনে মাঠে চুল কেটে প্রতিবাদ জানান।” পরবর্তীতে মাদ্রাসা প্রশাসন ও ছাত্রসংসদের যৌথ উদ্যোগে মেজবাহকে হোস্টেল সুপারের কার্যালয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়।
মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের জিএস সাইদুল ইসলাম বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি এবং তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। এরপরই তাকে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হস্তান্তর করা হয়।”
অভিযুক্তের অতীত ও আইনি পদক্ষেপ
অভিযুক্ত মেজবাহ উদ্দিন মাদ্রাসার তিতুমীর হলের ৬০০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। অভিযোগ উঠেছে যে, অতীতে তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডে আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিফজুর রহমান আমাদেরকে জানান বলেন, “শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। তাদের অভিযোগ ছিল, সে ‘রক্তাক্ত জুলাইয়ের শহীদদের’ নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা তাকে দ্রুত পুলিশের কাছে তুলে দিই। এখন আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, “আইনগত প্রক্রিয়া শেষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আদালতে পাঠানো হবে।”
এই ঘটনা আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং দেশের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

























