০৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

জাতীয় সঙ্গীতের নামে পৌত্তলিক চেতনার আগ্রাসন

মতামত
  • Update Time : ১২:২০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬১ Time View

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

যে পাপ বাঙালির কথায় ও গানে

সমাজের সবচেয়ে বড় অপরাধগুলো শুধু খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস বা চুরি-ডাকাতি নয়। মানুষ কাফির  হয় এবং জাহান্নামের যোগ্য গণ্য হয় মুখের কথায়, গানের ভাষায় এবং চেতনায় ধারণকৃত ধ্যান-ধারণার কারণে। মহান আল্লাহতায়ালাকে যে ব্যক্তি অবিশ্বাস করে বা তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়, জাহান্নামের আগুনে পৌঁছতে তাকে খুন, ধর্ষণ বা চুরি-ডাকাতিতে নামার প্রয়োজন পড়ে না। বিদ্রোহের ঘোষণাটি মুখে একবার দেয়াই সে জন্য যথেষ্ঠ। অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হতে ইবলিসকে তাই খুন বা ব্যভিচারে নামতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তাকে নাস্তিক হতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া একটি মাত্র হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই তাকে লানতপ্রাপ্ত শয়তানে পরিণত করেছে। সে হুকুমটি ছিল হযরত আদম (আ:)কে সিজদার। তাই বক্তৃতায় কি বলা হয়, সঙ্গীতে কি গাওয়া হয় বা সাহিত্যের নামে কি লেখা হয় –সেগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাথে সাথে সেগুলি রেকর্ড হয় এবং তা নিয়ে বিচার বসবে রোজ হাশরের বিচার দিনে। মু’মিন ব্যক্তিকে তাই শুধু উপার্জন, কর্ম ও খাদ্য-পানীয়’র ক্ষেত্রে হারাম-হালাম দেখলে চলে না। নিজের কথাবার্তা, সাহিত্য, লেখালেখি বা ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রেও অতি সতর্ক হতে হয়। বুঝতে হবে, প্রতিটি নারী-পুরুষই প্রতি মুহুর্তে মহান আল্লাহতায়ালার নজরে রয়েছে।

নবীজী(সা:)’র হাদীস: “অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের দ্বারা কৃত অপরাধের কারণে।” তেমনি বহু মানুষ জান্নাতেও যাবে সত্য দ্বীনের পক্ষে জিহ্বাকে কাজে লাগানোতে তথা সাক্ষি দেয়ার কারণে। ফিরাউনের দরবারে যে কয়েকজন জাদুকর হযরত মূসা (আ:)’র সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে মুসলিম হয়েছিলেন -তারা জীবনে এক দিনও নামাজ বা রোজা পালন করেননি। তাদের সারা জীবন কেটেছে যাদু’র ন্যায় হারাম কাজে। “মুসা (আ:) ও হারুনে (আ:)’র রবের উপর ঈমান আনলাম” –তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত এই একটি মাত্র বাক্যই তাদেরকে জান্নাতের যোগ্য করেছে। ঈমানের প্রবল বিস্ফোরণ ঘটেছিল তাদের সেই উচ্চারণে। একটি মাত্র বাক্যের মাঝে ঈমানের যে প্রকাশ ঘটেছিল ফিরাউনের কাছে তা সহ্য হয়নি। তাদেরকে যখন হাত-পা কেটে নির্মম ভাবে হত্যার হুকুম শুনানো হয়, তখন তারা জবাবে বলেছিলেন, “যা খুশি তোমরা করো, আমরা আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাচ্ছি। আশাকরি আমাদের রব আমাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।” মানব ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অতি শিক্ষনীয় এই ঘটনাটির রিপোর্টিং অন্য কেউ করেননি, করেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা এবং সেটিকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর পবিত্র কুর’আনে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে সাক্ষদানে তারা এতোটাই অটল ও সাহসী ছিলেন যে, সে নির্মম হত্যাকান্ডের মুখেও তারা একবিন্দু বিচলিত হননি। তাদের সে সাহসী উচ্চারনের সাক্ষী খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। তাদের সে সাক্ষ্য দানে তিনি এতোটাই খুশি হয়েছিলেন যে, পবিত্র কুর’আনের একাধিক স্থানে তিনি নিজ কালামের পাশে তাদের সেই বলিষ্ঠ ঘোষণাকেও লিপিবদ্ধ করেছেন। এবং তাদের সে ঈমানী প্রত্যয়কে ক্বিয়ামত অবধি সকল নারী-পুরুষের জন্য শিক্ষ্যনীয় করে রেখেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, মু’মিনের কীরূপ ঈমান তাঁকে খুশি করে। কোটি কোটি টাকার দান নয়, মুখ থেকে উচ্চারিত একটি মাত্র বাক্যও যে ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালার কতটা কাছে পৌঁছে দেয় -এ হলো তার নজির।

এবিসি

ব্যক্তির ঈমান কখনোই বন্দুকের গুলি বা মিজাইলে মারা পড়ে না। ঈমান মারা যায় তখন, যখন গান, সঙ্গীত, বিদ্যাশিক্ষা ও সাহিত্যের নামে চেতনার ভূবনে লাগাতর বিষ ঢালা হয়। শয়তানের হাতে এগুলিই হলো অতি শক্তিশালী ঈমানধ্বংসী হাতিয়ার। শয়তানের স্ট্রাটেজী সবাইকে বেশ্যালয়ে, মদ্যশালায়, জুয়ার আসরে বা চুরিডাকাতিতে নামানো নয়। বরং ঈমান ধ্বংসের কাজটি মহা ধুমধামে এবং অতি সফলতার সাথে করে নানারূপ গীত, গান, স্লোক, মিথ্যা ধর্মগ্রন্থ ও বিচিত্র সাহিত্য পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে। সে লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে শয়তানী শক্তির হাতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ পুরোহিত, হাজার হাজার ভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবী, মন্দির ও পূজামন্ডপ, ধর্মগ্রন্থ এবং হাজারো গান ও উপন্যাস। বাংলার বুকে ইসলামের যখন প্রচণ্ড জোয়ার, সে জোয়ার ঠেকাতে শয়তান যে অস্ত্রটি বেছে নিয়েছিল সেটিও কোন মুসলিমবিনাশী মারণাস্ত্র ছিল না। ইসলামবিরোধী বইপুস্তকও ছিল না। মুসলিমদের বিরুদদ্ধে হিন্দুদের সম্মিলিত কোন যুদ্ধও ছিল না। সেটি ছিল ভাববাদী গান। ইসলামের প্রসার রুখতে ভাববাদী গান ও হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তখন মাঠে নেমেছিল চৈতন্য দেব ও তার শিষ্যরা। তার গানের আবেগ এতোটাই প্রবল ছিল যে তাতে বাংলার বুকে হিন্দুদের ইসলাম কবুলের জোয়ার দ্রুত থেমে যায়। ফলে বাঙালি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মুর্তপূজারী কাফের থেকে যায়। এরাই আজকের বাঙালি হিন্দু।

আজও বাংলাদেশের বুকে শয়তানের স্ট্রাটেজীটি অবিকল অভিন্ন। তবে শয়তানের আজকের এজেন্ডাটি শুধু হিন্দুদের মুসলিম হওয়া থেকে রুখা নয়। বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাটি হলো মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো তথা ডি-ইসলামাইজেশন। বিশ্বজুড়ে আজ ইসলামের জাগরণ শুরু হয়েছে। সে জাগরণ রুখতে বাংলার বুকে আজ চৈতন্য দেব ও তার ভাববাদী গান নাই। তবে শয়তান ও তার অনুসারীগণ হাতের কাছে পেয়েছে আরেক গুরুদেব। তিনি হলেন মুর্তিপূজারী আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সকল ইসলামবিদ্বেষী শক্তি ও শয়তানের অনুসারীগণ তাকে গুরু বা অবতার রূপে বেছে নিয়েছে। চৈতন্য দেবও এতো পূজা ও এতো অনুসারী পায়নি, যা পাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করার প্রেক্ষাপট তো সেটাই। এটি ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিজয়ের অন্যতম লিগ্যাসি।

 

আল্লাহতায়ালার সিলেবাস ও শয়তানে সিলেবাস

মহান আল্লাহতায়ালা চান, প্রতিটি মুসলিম বেড়ে উঠুক তাঁর প্রতি অটুট ঈমান নিয়ে। ঈমানের অঙ্গণে বৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়োজনেই মহান আল্লাহ-রাব্বুল আলামীনের রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। সেটি পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানার্জন। তাই ইসলামের বিধান হলো নিয়মিত কুর’আন পাঠ। পবিত্র মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার জন্য পবিত্র কুর’আনই হলো নির্ধারিত টেক্সট বুক। এ জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অর্থ বুঝে কুর’আন তেলাওয়াত। সে ফরজটি যেমন ৫ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে আদায় করতে হয়, তেমনি নামাজের বাইরেও। ঈমানের বৃদ্ধিতে কুর’আনী জ্ঞানের গুরুত্ব যে কত অধিক -সেটিও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। বলা হয়েছে: “মুসলিম তো একমাত্র তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম স্মরণ হওয়া মাত্রই ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যখন তাদের কাছে কুর’আনের আয়াত পড়ে শোনানো হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং আল্লাহর উপর তারা নির্ভরশীল।” -(সুরা আনফাল, আয়াত ২)। এ আয়াতের অর্থ, ঈমান বাড়াতে হলে কুর’আনের জ্ঞানের বিকল্প নাই। কুর’আনের জ্ঞানই হলো ঈমানের খাদ্য। তাই যে হৃদয়ে কুর’আনের জ্ঞান নাই, ঈমান সেখানে মৃত।

মহান আল্লাহতায়ালার কুর’আনী প্রকল্পকে বানচাল করার লক্ষ্যে শয়তানেরও রয়েছে নিজস্ব স্ট্রাটেজী। এবং রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। শয়তান চায়, ঈমানের বিনাশ। সে লক্ষ্য পূরণে শয়তানের মূল স্ট্রাটেজী হলো, কুর’আনের সাথে সংযোগ বিচ্ছেদ। এজন্যই নিষিদ্ধ করে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানদান। মুসলিম সন্তানেরা স্কুলে যাবে এবং সে স্কুলে পবিত্র কুর’আনের শিক্ষা থাকবে না -সেটি অভাবনীয়। অথচ ব্রিটিশ কাফিরদের শাসনামলে স্কুল-কলেজে কুর’আন না পড়ানোই ছিল সরকারি নীতি। সে নীতি আজও বহাল রয়েছে বাংলাদেশ। ইসলাম কুর’আনের আয়াত পাঠে গুরুত্ব দেয়। শয়তানের অনুসারীগণ বাধ্যতামূলক করে রবীন্দ্রনাথের মত পৌত্তলিকের গান গাইতে। সেটিই হয়েছে জাতীয় সঙ্গীতের নামে। শিক্ষা প্রকল্পের অংশ করা হয়েছে নাচ, গান, খেলাধুলা ও বহুবিধ উৎসব।

বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে শয়তানের সিলেবাস নিয়ে। ফলে শয়তান যেগুলি চায় না, সেগুলিই বাদ পড়েছে। তাই বাদ পড়েছে কুর’আন শিক্ষা। শয়তান চায় পাঠ্যতালিকায় পৌত্তলিক সামগ্রী। তাই সিলেবাসে স্থান পেয়েছে বঙ্কীমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ন্যায় পৌত্তলিকদের রচিত কবিতা, গান ও সাহিত্য। এবং গুরুত্ব পাচ্ছে অন্যান্য সেক্যুলারিস্টদের রচিত সাহিত্য। শয়তান এগুলির চর্চা দিয়ে মানুষের চেতনার ভূমিকে নিজ দখলে রাখে এবং সংযোগ ছিন্ন করে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর পবিত্র কুর’আনের সাথে। এরূপ পৌত্তলিক ও সেক্যুলার জ্ঞান দানে ঈমানের ভূমিতে নাশকতা ঘটবে -সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? শয়তান এভাবেই বৃদ্ধি ঘটায় শরিয়তের অবাধ্যতায়। বাংলাদেশের স্কুলগুলিতে ক্লাস শুরুর আগে কুর’আন পাঠের বদলে রবীন্দ্র-সঙ্গীত (আমার সোনার বাংলা গান) পাঠ তাই বাধ্যতামূলক। সেটি শুধু দেশের সেক্যুলার স্কুলগুলিতেই নয়, এমনকি ধর্মীয় মাদ্রাসাগুলোতেও। সে পৌত্তলিক গানটি গাওয়া হয় জাতীয় সংসদসহ সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও। এভাবেই বিজয়ী করা হয়েছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শয়তানের এজেন্ডা।

 

রবীন্দ্রচেতনার নাশকতা

মানুষ শুধু তার দেহ নিয়ে বাঁচে না। বাঁচতে হয় চেতনা নিয়েও। মানুষ তাঁর দৈহিক সুস্থতার জন্য জান্নাতে যাবে না, জান্নাতে যাবে তাঁর চেতনার সুস্থতার জন্য। সুস্থ চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠার কারণেই মানব শিশু তার মানবিক পরিচয়টি পায় এবং ভিন্নতর হয় ইতর পশু থেকে। সে চেতনাটি সাথে নিয়েই মানবের সর্বত্র বিচরণ। সে চেতনাটি যেমন ধর্ম-কর্ম, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে; তেমনি ধরা পড়ে তার গদ্য, পদ্য, কথা ও গানে। মানুষ বেড়ে উঠে, নেক কর্মে নামে, আমলের ওজন বাড়ায় -তার হৃদয়ে ধারণকৃত চেতনার গুণে। ঈমানদারের জীবনে চেতনার সে বিশেষ সুস্থ রূপটি হলো তার ঈমানদারী ও ঈমান-নির্ভর আক্বীদা। আর বেঈমানী হলো চরম অসুস্থতার আলামত। রোজ হাশরের বিচার দিন নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের আগে সর্বপ্রথম হিসাব দিতে হবে ঈমান ও আক্বীদার। ঈমান ও আক্বীদার বিচারে ফেল করলে অন্য কোন আমলই কাজ দিবে না। মানুষের ধর্ম, কর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-আচরনে বিপ্লব আসে ঈমান ও আক্বীদার গুণে। চেতনার এ ভূমিতে রোগ থাকলে কি ব্যক্তির ইবাদতে বা চরিত্রে পরিশুদ্ধি আসে? তখন মাসের পর মাস রোজা এবং বার বার হজ্জ করেও কি কোন লাভ হয়? তখন ব্যর্থ হয় তাকওয়া-সমৃদ্ধ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠতে। এমন ব্যর্থ ব্যক্তিরাই নামাজ-রোজা পালন করেও ঘুষ খায়, সূদ খায়, মিথ্যা বলে এবং নানারূপ দুর্বৃত্তিতে জড়িত হয়।

মানুষ কি খায় –সেটির প্রকাশ ঘটে তার দৈহিক স্বাস্থ্যের মাঝে। তেমনি কি শেখে এবং কীরূপ বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে বসবাস করে -তা দেখা যায় তার কথা, কর্ম, চেতনা ও চরিত্রের মাঝে। প্রকাশ পায় তার সঙ্গীত ও সাহিত্যে। তাই ব্যক্তির বিশ্বাস ও চেতনায় শিরক বা পৌত্তলিকতা দেখে বলা যায় -তার বিদ্যাশিক্ষার কাজটি সঠিক হয়নি। বুঝা যায়, চেতনা দূষিত হয়েছে শিক্ষালয়ে ও সাহিত্যের অঙ্গণে। নবীজী (সা:)’র হাদীস: মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে অন্য সব পাপ মাফ হতে পারে, কিন্তু শিরকের পাপ মাফ হবে না। অথচ রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যে আজীবন ছড়িয়েছেন শিরকের বীজ এবং দূষিত করেছেন বাঙালির চেতনার ভূমিকে। রবীন্দ্রানাথ নিজে ছিলেন মুশরিক; ফলে তাঁর সাহিত্য শিরকের বীজ ছড়াবে -সেটিই স্বাভাবিক। বঙ্কিমের ন্যায় রবীন্দ্রনাথও উপাস্য রূপে হাজির করেছেন দেশের মাটি ও আলো-বাতাসকে। শিরকের সে রূপটি প্রবল ভাবে ছড়িয়ে আছে তার রচিত কবিতা, নাটক, ছোটগল্প ও গানে। এরূপ পৌত্তলিক সাহিত্যের প্রসার বাড়লে, বৃদ্ধি ঘটে জাহান্নামের যাত্রীদের সংখ্যায়। বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে এখানেই রবীন্দ্রনাথের গুরুতর নাশকতা। এ অপরাধ তাদেরও যারা রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে বাঙালি মুসলিমদের ঘাড়ে জাতীয় সঙ্গীত রূপে চাপিয়েছে।

রবীন্দ্র-সাহিত্যের মূল নাশকতাটি মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে। শেখ মুজিব সে ঈমানবিনাশী নাশকতাটিই দেশব্যাপী ঘটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের শিরকপূর্ণ গানকে জাতীয় সঙ্গীত করে। এটিই বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমিতে সর্ববৃহৎ নাশকতার কাণ্ড। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী না হওয়ার কারণে কেউ জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু জাহান্নামে যাবে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় ব্যর্থ হওয়াতে। এবং মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাটি অসম্ভব হয় কুর’আনী জ্ঞানের অভাবে এবং চেতনার ভূমি শিরকপূর্ণ সাহিত্যে দূষিত হওয়াতে। তাই বাঙালি মুসলিমের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি ক্ষেত-খামার, কল-কারখানা ও রণাঙ্গণে হয়নি। মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও হয়নি। সেটি হয়েছে দেশের শিক্ষাঙ্গণে। সেটি রবীন্দ্র সাহিত্যের মাধ্যমে। শ্রী চৈতন্য দেবের ইসলামবিরোধী নাশকতা সীমিত ছিল শুধু হিন্দুদের মাঝে। অথচ রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিকতা প্রবেশ করেছে প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের গৃহে এবং নাশকতা ঘটিয়েছে প্রতিটি বাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশুর চেতনার ভূবনে। এবং এই ভয়ানক নাশকতার জন্য দায়ী শেখ মুজিব ও বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ। কারণ, মুজিব ও তার সেক্যুলারিস্ট অনুসারীগণ নেমেছে শয়তান ও মুর্তিপূজারী রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ট কলাবোরেটর রূপে।

বাংলাদেশে আজ গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির জোয়ার। এসব খুনি ও ধর্ষকগণ আসমান থেকে পড়েনি। পতিতাপল্লী, বন-জঙ্গল, গরুর গোয়াল ও ক্ষেত-খামারেও বেড়ে উঠেনি। হিংস্র পশু উৎপাদনের জন্য জঙ্গল চাই। তেমনি দুর্বৃত্ত উৎপাদনের জন্যও ইন্ডাস্ট্রি চাই। বাংলাদেশে বিদ্যাশিক্ষার নামে মানবরূপী পশু উৎপাদনের কাজগুলো করছে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই বেড়ে উঠেছে অপরাধের নায়কগণ। বিশ্বের দরবারে দুর্বৃত্তিতে যারা বাংলাদেশকে ৫ বার প্রথম স্থানে পৌঁছে দিল তারা দেশের নিরক্ষর কৃষক, শ্রমিক বা তাঁতি নয়। তারা বেড়ে উঠেছে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্বের অর্থে নির্মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। যারা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মম ভাবে লাশ বানালো তারাও কোন ডাকাতের বস্তিতে বেড়ে উঠেনি। বরং বেড়ে উঠেছে বুয়েটের ন্যায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র লীগ কর্মীটি শত নারী ধর্ষণের উৎসব করলো, সেও কোন পতিতা পল্লীতে বেড়ে উঠেনি। এদের দেখা যায় রাজপথে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে লাশের উপর নাচতে। এ থেকেই বুঝা যায় শিক্ষাঙ্গণে কতটা ঘটছে শিক্ষার নামে নৈতিক নাশকতা। স্বাস্থ্যের পতন রোধে পরিবর্তন আনতে হয় খাদ্য-পানীয়তে, চারিত্রিক পতন রোধে তেমনি পাল্টাতে হয় বই তথা শিক্ষার উপকরণ। নবীজী (সা:)’র যুগে তো সেটিই করা হয়েছিল। তাই ইসলামের শুরুটিই হয়েছে নামাজ-রোজা ফরজ করার পূর্বে কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে ফরজ করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে জ্ঞানার্জনের সে কাজটিই হচ্ছে না। বরং অবিরাম ভাবে চলছে দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কাজ। ঈমান ও চরিত্র ধ্বংসের কাজে বিষ ঢালার কাজটি হচ্ছে পৌত্তলিক চেতনাসমৃদ্ধ জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।

 

বেঈমানের গান ও ঈমানদারের গান

ঈমানদার ও বেঈমান শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইবাদতেই ভিন্ন নয়, প্রবল ভিন্নতা দেখা যায় কবিতা, গান ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণেও। সেগুলি তাই গোপন থাকার বিষয় নয়। মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও নেক কর্মটি হয় বলিষ্ঠ বিশ্বাস নিয়ে সত্য কথা বলার মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে গুরুতর অপরাধটিও হয় শিরকপূর্ণ বা বিদ্রোহাত্মক কথা দিয়ে। ব্যক্তির মুখের কথা যেমন জান্নাতে নিতে পারে, তেমনি জাহান্নামেও নিতে পারে। গান বা কবিতা অতি উচ্চমার্গীয় যিকির হতে পারে –যেমনটি ঈমানদার ক্ষেত্রে ঘটে। তেমনি গান ও কবিতার মধ্যে হতে পারে ভয়ানক কুফরি ও শিরকের প্রকাশ –এমনটিই ঘটে বেঈমানদের ক্ষেত্রে। ঈমানদার ব্যক্তি ইচ্ছামত কিছু বলতে পারে না, তেমনি ইচ্ছামত কিছু গাইতেও পারে না। সে তাই বলে এবং তাই লেখে যা তাঁর ঈমান ও ইসলামীআক্বীদার সাথে সঙ্গতি রাখে। তাঁর কথার মধ্যে থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি অটল বিশ্বাস। থাকে মহান আল্লাহকে খুশি করার প্রেরণা। থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ তথা যিকির। প্রতিটি মুসলিমকে প্রতি মুহুর্ত সে যিকির নিয়ে বাঁচতে হয়। পবিত্র কুর’আন পাঠ, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতসহ ইসলামের প্রতিটি ফরজ বিধানের মূলটি লক্ষ্য হলো, সে যিকিরকে মুসলিম জীবনে লাগাতর এবং তীব্রতর করা।

যিকিরের অর্থ ভাবনাশূণ্য মন নিয়ে স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার নাম জপা নয়। বরং সেটি হলো তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়বদ্ধতা নিয়ে বাঁচার ধ্যানমগ্নতা। সেরূপ ধ্যানমগ্নতা থেকেই আসে চরিত্র ও কর্মে বিপ্লব। মু’মিনের জীবনে এরূপ যিকির নিয়ে বাঁচাটি তাই গুরুত্বপূর্ণ। যিকিরশূণ্যতার বিপদটি ভয়াবহ। যারাই যিকিরশূণ্য হয়, তাদের ঘাড়ের উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে শয়তানকে চাপিয়ে দেয়া হয়। এমন ব্যক্তির জীবনে আসে শয়তানের অনুসরণ, আসে সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি এবং এভাবেই শুরু হয় জাহান্নামের দিকে পথচলা। ঈমানদারের কবিতা ও গান হলো তার যিকিরের প্রকাশ। ফলে তাতে থাকে গভীর আল্লাহপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতা। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় সে সবের বালাই নাই্। এজন্যই মাওলানা রুমি, শেখ সাদী, হাফিজ সিরাজী ও আল্লামা ইকবালের কবিতা থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রবীন্দ্রনাথের গানে ও কবিতায় শিরক ও পৌত্তলিকতার ভাবটিই প্রবল –তা একজন পাঠককে কেবল গোনাহগারই বানাতে পারে। বাঙালি মুসলিমদের এখানেই বিপদ। তারা তাদের মাতৃভাষায় ইকবাল, সিরাজী, সাদী বা রুমী পায়নি, পেয়েছে পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমকে। বাঘ-ভালুকপূর্ণ জঙ্গলে বাস করার বিপদ ভয়ানক। এতে দেহনাশের সম্ভাবনা। তার চেয়েও ভয়ানক হলো রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কীমের ন্যায় সাহিত্যিকদের রচিত পৌত্তলিক সাহিত্যের মাঝে বসবাস। এতে থাকে ঈমাননাশের সম্ভাবনা। বাঘ-ভালুক কাউকে জাহান্নামে নেয় না। কিন্তু পৌত্তলিক সাহিত্য জাহান্নামের যাত্রী বানায়। সেটি আরবের বুকে দেখা গেছে জাহিলিয়াতের যুগে। ইমরুল কায়েসের মত কবিরা সে কাজই করেছে। বাংলাদেশে বুকে সে জাহিলিয়াতের প্লাবনটি বুঝা যায় নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তির জয়-জয়াকার দেখে। বুঝা যায় গুম-খুন-ধর্ষণ-অপহরণ ও সন্ত্রাসের জোয়ার দেখে। শেখ মুজিবের গুরুতর অপরাধ হলো, রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে জাতীয় সঙ্গীত রূপে প্রতিষ্ঠা দিয়ে তিনি জনগণকে গোনাহগার বানানোর শয়তানী প্রকল্পকে বিজয়ী করেছেন।

 

ছবক শিরকের ও পৌত্তিলকতার

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন “আমার সোনার বাংলা” গানটি লিখেছিলেন তখন বাংলাদেশ বলে কোন স্বাধীন দেশ ছিল না। সে সময় বাংলা ছিল ভারতের একটি প্রদেশ। সে প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হলেও তাদের সংখ্যা আজকের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ ছিল না। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ নিজেও সে গানটিতে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ, দর্শন, চেতনা বা স্বপ্নের প্রকাশ ঘটাতে লেখেনি। সেটি যেমন তার লক্ষ্য ছিল না, ফলে সে লক্ষ্যে তাঁর প্রস্তুতিও ছিল না। পৌত্তলিকগণ সব সময়ই নতুন উপাস্য চায়। যাদের কাছে নদ-নদী, গরু-বাছুর ও সাপ-শকুন ইত্যাদি উপাস্য, তাদের কাছে দেশ ও দেশের মাটির কদর তো বিশাল। তাই রবীন্দ্রপূজারী পৌত্তলিকগণ দেশ ও দেশের মাটিকে পূজনীয় করেছে নিজেদের সে পৌত্তলিক চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মনের পৌত্তলিক ক্ষুধা নিবারণেই জন্য লেখা হয়েছিল যে “আমার সোনার বাংলা” গান, সেটিকেই বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ভারতে সে মর্যাদাটি পেয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা আরেকটি পৌত্তলিক চেতনার গান, সেটি হলো “বন্দেমাতরম”। সে গান গাইতে ভারতের মুসলিমদের আজ বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মুসলিমগণ কেন এরূপ শিরকপূর্ণ গান গাইবে? “আমার সোনার বাংলা” ও “বন্দেমাতরম” এ উভয় গানের দর্শন ও বয়ান অভিন্ন পৌত্তলিকতার। যে কোন ঈমানদারেরই সেটি টের পাওয়ার কথা।

পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম হলেও কার্যত ছিলেন পৌত্তলিক। এ জগতটাকে একজন মুসলিম যেভাবে দেখে, কোন পৌত্তলিকই সেভাবে দেখে না। উভয়ের ধর্মীয় বিশ্বাস যেমন ভিন্ন, তেমনি চেতনার ও ভাবের জগতটাও ভিন্ন। কবির কবিতা ও গানে তো সে বিশ্বাস ও চেতনারই প্রকাশ ঘটে। একজন মুসলিমের কাছে এ পৃথিবীর ভূমি, আলো-বাতাস, মাঠ-ঘাট, গাছ-পালা, ফুল-ফল, নদী-সমুদ্র এবং সেগুলির অপরূপ রূপ –সবকিছুই মহান আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন। এসব কিছুই মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বের সাক্ষী দেয়। এ বিশ্বজগত মু’মিনের কাছে একটি বিশাল পাঠশালা। এ পাঠশালায় ছড়ানো অগণিত নিদর্শন দেখে সে ছবক পায়, মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির সামর্থ্য কত বিশাল এবং বৈচিত্রময়। তিনি কত মহান ও মহীয়ান। স্রষ্টার এ অপরূপ সৃষ্টিকূল দেখে মু’মিন ব্যক্তি সেগুলিকে ভগবান বা মা বলে বন্দনা করে না, বরং মনের গভীর আবেগ ও আকুতি দিয়ে “আল্লাহু আকবর” বা “সুবহানাল্লাহ” বলে। মহান আল্লাহতায়ালাকে উদ্দেশ্য করে হামদ ও নাত গায়। অথচ রবীন্দ্রনাথের চোখে বাংলার অপরূপ রূপ ধরা পড়লেও মহান আল্লাহতায়ালার সর্বময় অস্তিত্ব ও তাঁর সীমাহীন সৃষ্টির সামর্থ্য ধরা পড়েনি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের অজ্ঞতা ও দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা। এ অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের কারণে তার কাছে স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে রবীন্দ্রনাথের মনে জন্ম নিয়েছে মহান স্রষ্টাকে ছেড়ে সৃষ্টির বন্দনায় শিরক। তাই এরূপ শিরকপূর্ণ গান “আমার সোনার বাংলা” কি কোন ঈমানদারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

 

বিজয় হিন্দুত্ববাদের

 

রবীন্দ্রনাথ তাঁর “আমার সোনার বাংলা” গানটিতে লিখেছেন:

“আমার সোনার বাংলা,

আমি তোমায় ভালবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ,

তোমার বাতাস

আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে

ঘ্রানে পাগল করে–

মরি হায়, হায় রে

ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,

আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।।

কি শোভা কি ছায়া গো,

কি স্নেহ কি মায়া গো–

কি আঁচল বিছায়েছ

বটের মূলে,

নদীর কূলে কূলে।

মা, তোর মুখের বাণী

আমার কানে লাগে

সুধার মতো–

মরি হায়, হায় রে

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে

আমি নয়ন জলে ভাসি।”

রবীন্দ্রনাথের এ গানে প্রচুর ভাব আছে, ভাষা আছে, ছন্দও আছে। কিন্তু এর বাইরেও এমন কিছু আছে যা একজন মুসলিমের ঈমানের সাথে প্রচণ্ড সাংঘর্ষিক। এ গানে তিনি বন্দনা গেয়েছেন বাংলার ভূমির, এবং সে ভূমির আলো-বাতাস, নদীর কূল, ধানের ক্ষেত, আমের বাগান ও বটমূলের। দেশকে তিনি মা বলেছেন। দেশের বিস্তৃত মাঠঘাট, নদীর পাড় ও বটমূলকে সে মা দেবীর আঁচল রূপে দেখেছেন। দেশকে হাজির করেছেন একজন দেবীর মুর্তিতে। গানটিতে ধ্বনিত হয়েছে সে মা দেবীর প্রতি অশ্রুসিক্ত বন্দনা। কিন্তু যে মহান আল্লাহতায়ালা সে গুলির স্রষ্টা, সমগ্র গানে একটি বারের জন্যও তাঁর বন্দনা দূরে থাক -তাঁর নামের উল্লেখ পর্যন্ত নাই। অজ্ঞতায় আচ্ছন্ন একজন পৌত্তলিকের জন্য এটিই স্বভাবজাত। এখানেই বঙ্কিমের “বন্দেমাতরম” গানের সাথে রবীন্দ্রানাথের “আমার সোনা বাংলা” গানের গভীর মিল।

সব পৌত্তলিকের একই অজ্ঞতা এবং একই অপরাধ। সেটি হলো নানা দেবদেবী ও নানা সৃষ্টির নানা রূপ বন্দনার মাঝে সকল কিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলে থাকার। এতে আছে সত্য গোপন। এরূপ সত্য গোপনই হলো ইসলামে কুফর -যা একজন ব্যক্তিকে কাফের বানায়। মানব জীবনের এটিই সবচেয়ে ঘৃণ্য কর্ম। এটিই পৌত্তলিকতার মূল কথা। মহাসত্যময় মহান আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকারের এটিই হলো সবচেয়ে জঘন্যতম শয়তানি কৌশল। এটিই শিরক। এবং এজন্যই রবীন্দ্রনাথ যেমন একজন কাফের, তেমনি একজন মুশরিক। তিনি তার কবিতা ও গানের মাধ্যমে আবির্ভুত শিরকের প্রচারক রূপে। তাই তিনি শয়তানের দূত। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার বহু বড় বড় গোনাহ মাফ করে দিবেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনোই মাফ করবেন না। নবীজী (সা:) সে হুশিয়ারিটি বহুবার শুনিয়েছেন। তাই একজন মুসলিম এরূপ শিরকপূর্ণ গান গায় কী করে? অথচ বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের অনুসারীগণ এই শিরকের ছবক দিচ্ছেন বাঙালি মুসলিম নর-নারী ও শিশুদের। অথচ এতো বড় পাপ ইংরেজগণও করেনি। তাদের ১৯০ বছরের শাসনে ব্রিটিশ শাসকগণ কখনোই মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের এরূপ শিরকের ছবক দেয়নি। মুসলিমদের জন্য এটি ছিল “রেড লাইন” –যা তারা অতিক্রম করেনি। অথচ ভারতে “বন্দে মাতরম” গানটি গাওয়া শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে। এখন সেটি মাদ্রাসাতেও গাইতে হয়। এবং বাংলাদেশে “আমার সোনার বাংলা” গান গাওয়া শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে। এখন এ পৌত্তলিক গানটি মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদেরও গাইতে হয়। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসের কোথাও কি কোন পৌত্তলিককে এভাবে এরূপ সম্মানের আসনে বসানো হয়েছে –যা হয়েছে বাংলাদেশে? অন্য কোন মুসলিম দেশেও কি এরূপ পৌত্তলিক গান গাওয়া হয়? অথচ এটিই হলো একাত্তরের অর্জন –যা নিয়ে বাঙালি জাতীযতাবাদীগণ উৎসব করে। প্রকৃত বিজয় এখানে হিন্দুত্ববাদের।

গদ্য,পদ্য ও গানের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মুখ বা জিহ্বা কথা বলে না, কথা বলে তার চেতনা বা বিশ্বাস। গদ্য, কবিতা ও গানের কথায় ব্যক্তির আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস ধরা পড়ে। তাই “আমার সোনার বাংলা” গানে যে চেতনাটির প্রকাশ ঘটেছে সেটি পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের। কোন মুসলিমের নয়। পৌত্তলিক চেতনা নিয়েই একজন পৌত্তলিক কবি কবিতা ও গান লিখবেন বা সাহিত্য চর্চা করবেন -সেটিই তো স্বাভাবিক। এমন একটি চেতনার কারণেই পৌত্তলিক ব্যক্তি সাপ-শকুন, গরু, বানর-হনুমান, নদ-নদী, বৃক্ষ, পাহাড়-পর্বতকে উপাস্য রূপে মেনে নেয় এবং তার বন্দনাও গায়। “আমার সোনার বাংলা” গানের ছত্রে ছত্রে তেমন একটি পৌত্তলিক চেতনারই প্রবল প্রকাশ ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে তাঁর নিজ চেতনার সাথে আদৌ গাদ্দারী করেননি। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সাথে একজন মুসলিমের গাদ্দারী তো তখন শুরু হয় -যখন সে পৌত্তলিক চেতনার এ গানকে মনের মাধুরি মিশিয়ে গাইতে শুরু করে। বাংলাদেশে রবীন্দ্রভক্তদের মূল প্রকল্প হলো, বিপুল সংখ্যায় বাঙালি মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো এবং তাদের মাঝে ভারতসেবী গাদ্দার উৎপাদন। সে লক্ষ্যে তারা বিপুল ভাবে সফলও হয়েছে। মুসলিম নামধারি এরূপ গাদ্দারদের কারণে আল্লাহর শরিয়তী বিধান আজ বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমের দেশে পরাজিত। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বল্লে ভারতসেবীদের হাতে  লাশ হতে হয়।

জাতীয় সঙ্গীতের সুর, ছন্দ বা কবিত্বই

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

জাতীয় সঙ্গীতের নামে পৌত্তলিক চেতনার আগ্রাসন

Update Time : ১২:২০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

 

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

যে পাপ বাঙালির কথায় ও গানে

সমাজের সবচেয়ে বড় অপরাধগুলো শুধু খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস বা চুরি-ডাকাতি নয়। মানুষ কাফির  হয় এবং জাহান্নামের যোগ্য গণ্য হয় মুখের কথায়, গানের ভাষায় এবং চেতনায় ধারণকৃত ধ্যান-ধারণার কারণে। মহান আল্লাহতায়ালাকে যে ব্যক্তি অবিশ্বাস করে বা তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়, জাহান্নামের আগুনে পৌঁছতে তাকে খুন, ধর্ষণ বা চুরি-ডাকাতিতে নামার প্রয়োজন পড়ে না। বিদ্রোহের ঘোষণাটি মুখে একবার দেয়াই সে জন্য যথেষ্ঠ। অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হতে ইবলিসকে তাই খুন বা ব্যভিচারে নামতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তাকে নাস্তিক হতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া একটি মাত্র হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই তাকে লানতপ্রাপ্ত শয়তানে পরিণত করেছে। সে হুকুমটি ছিল হযরত আদম (আ:)কে সিজদার। তাই বক্তৃতায় কি বলা হয়, সঙ্গীতে কি গাওয়া হয় বা সাহিত্যের নামে কি লেখা হয় –সেগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাথে সাথে সেগুলি রেকর্ড হয় এবং তা নিয়ে বিচার বসবে রোজ হাশরের বিচার দিনে। মু’মিন ব্যক্তিকে তাই শুধু উপার্জন, কর্ম ও খাদ্য-পানীয়’র ক্ষেত্রে হারাম-হালাম দেখলে চলে না। নিজের কথাবার্তা, সাহিত্য, লেখালেখি বা ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রেও অতি সতর্ক হতে হয়। বুঝতে হবে, প্রতিটি নারী-পুরুষই প্রতি মুহুর্তে মহান আল্লাহতায়ালার নজরে রয়েছে।

নবীজী(সা:)’র হাদীস: “অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের দ্বারা কৃত অপরাধের কারণে।” তেমনি বহু মানুষ জান্নাতেও যাবে সত্য দ্বীনের পক্ষে জিহ্বাকে কাজে লাগানোতে তথা সাক্ষি দেয়ার কারণে। ফিরাউনের দরবারে যে কয়েকজন জাদুকর হযরত মূসা (আ:)’র সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে মুসলিম হয়েছিলেন -তারা জীবনে এক দিনও নামাজ বা রোজা পালন করেননি। তাদের সারা জীবন কেটেছে যাদু’র ন্যায় হারাম কাজে। “মুসা (আ:) ও হারুনে (আ:)’র রবের উপর ঈমান আনলাম” –তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত এই একটি মাত্র বাক্যই তাদেরকে জান্নাতের যোগ্য করেছে। ঈমানের প্রবল বিস্ফোরণ ঘটেছিল তাদের সেই উচ্চারণে। একটি মাত্র বাক্যের মাঝে ঈমানের যে প্রকাশ ঘটেছিল ফিরাউনের কাছে তা সহ্য হয়নি। তাদেরকে যখন হাত-পা কেটে নির্মম ভাবে হত্যার হুকুম শুনানো হয়, তখন তারা জবাবে বলেছিলেন, “যা খুশি তোমরা করো, আমরা আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাচ্ছি। আশাকরি আমাদের রব আমাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।” মানব ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অতি শিক্ষনীয় এই ঘটনাটির রিপোর্টিং অন্য কেউ করেননি, করেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা এবং সেটিকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর পবিত্র কুর’আনে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে সাক্ষদানে তারা এতোটাই অটল ও সাহসী ছিলেন যে, সে নির্মম হত্যাকান্ডের মুখেও তারা একবিন্দু বিচলিত হননি। তাদের সে সাহসী উচ্চারনের সাক্ষী খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। তাদের সে সাক্ষ্য দানে তিনি এতোটাই খুশি হয়েছিলেন যে, পবিত্র কুর’আনের একাধিক স্থানে তিনি নিজ কালামের পাশে তাদের সেই বলিষ্ঠ ঘোষণাকেও লিপিবদ্ধ করেছেন। এবং তাদের সে ঈমানী প্রত্যয়কে ক্বিয়ামত অবধি সকল নারী-পুরুষের জন্য শিক্ষ্যনীয় করে রেখেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, মু’মিনের কীরূপ ঈমান তাঁকে খুশি করে। কোটি কোটি টাকার দান নয়, মুখ থেকে উচ্চারিত একটি মাত্র বাক্যও যে ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালার কতটা কাছে পৌঁছে দেয় -এ হলো তার নজির।

এবিসি

ব্যক্তির ঈমান কখনোই বন্দুকের গুলি বা মিজাইলে মারা পড়ে না। ঈমান মারা যায় তখন, যখন গান, সঙ্গীত, বিদ্যাশিক্ষা ও সাহিত্যের নামে চেতনার ভূবনে লাগাতর বিষ ঢালা হয়। শয়তানের হাতে এগুলিই হলো অতি শক্তিশালী ঈমানধ্বংসী হাতিয়ার। শয়তানের স্ট্রাটেজী সবাইকে বেশ্যালয়ে, মদ্যশালায়, জুয়ার আসরে বা চুরিডাকাতিতে নামানো নয়। বরং ঈমান ধ্বংসের কাজটি মহা ধুমধামে এবং অতি সফলতার সাথে করে নানারূপ গীত, গান, স্লোক, মিথ্যা ধর্মগ্রন্থ ও বিচিত্র সাহিত্য পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে। সে লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে শয়তানী শক্তির হাতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ পুরোহিত, হাজার হাজার ভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবী, মন্দির ও পূজামন্ডপ, ধর্মগ্রন্থ এবং হাজারো গান ও উপন্যাস। বাংলার বুকে ইসলামের যখন প্রচণ্ড জোয়ার, সে জোয়ার ঠেকাতে শয়তান যে অস্ত্রটি বেছে নিয়েছিল সেটিও কোন মুসলিমবিনাশী মারণাস্ত্র ছিল না। ইসলামবিরোধী বইপুস্তকও ছিল না। মুসলিমদের বিরুদদ্ধে হিন্দুদের সম্মিলিত কোন যুদ্ধও ছিল না। সেটি ছিল ভাববাদী গান। ইসলামের প্রসার রুখতে ভাববাদী গান ও হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তখন মাঠে নেমেছিল চৈতন্য দেব ও তার শিষ্যরা। তার গানের আবেগ এতোটাই প্রবল ছিল যে তাতে বাংলার বুকে হিন্দুদের ইসলাম কবুলের জোয়ার দ্রুত থেমে যায়। ফলে বাঙালি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মুর্তপূজারী কাফের থেকে যায়। এরাই আজকের বাঙালি হিন্দু।

আজও বাংলাদেশের বুকে শয়তানের স্ট্রাটেজীটি অবিকল অভিন্ন। তবে শয়তানের আজকের এজেন্ডাটি শুধু হিন্দুদের মুসলিম হওয়া থেকে রুখা নয়। বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাটি হলো মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো তথা ডি-ইসলামাইজেশন। বিশ্বজুড়ে আজ ইসলামের জাগরণ শুরু হয়েছে। সে জাগরণ রুখতে বাংলার বুকে আজ চৈতন্য দেব ও তার ভাববাদী গান নাই। তবে শয়তান ও তার অনুসারীগণ হাতের কাছে পেয়েছে আরেক গুরুদেব। তিনি হলেন মুর্তিপূজারী আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সকল ইসলামবিদ্বেষী শক্তি ও শয়তানের অনুসারীগণ তাকে গুরু বা অবতার রূপে বেছে নিয়েছে। চৈতন্য দেবও এতো পূজা ও এতো অনুসারী পায়নি, যা পাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করার প্রেক্ষাপট তো সেটাই। এটি ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিজয়ের অন্যতম লিগ্যাসি।

 

আল্লাহতায়ালার সিলেবাস ও শয়তানে সিলেবাস

মহান আল্লাহতায়ালা চান, প্রতিটি মুসলিম বেড়ে উঠুক তাঁর প্রতি অটুট ঈমান নিয়ে। ঈমানের অঙ্গণে বৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়োজনেই মহান আল্লাহ-রাব্বুল আলামীনের রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। সেটি পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানার্জন। তাই ইসলামের বিধান হলো নিয়মিত কুর’আন পাঠ। পবিত্র মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার জন্য পবিত্র কুর’আনই হলো নির্ধারিত টেক্সট বুক। এ জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অর্থ বুঝে কুর’আন তেলাওয়াত। সে ফরজটি যেমন ৫ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি রাকাতে আদায় করতে হয়, তেমনি নামাজের বাইরেও। ঈমানের বৃদ্ধিতে কুর’আনী জ্ঞানের গুরুত্ব যে কত অধিক -সেটিও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। বলা হয়েছে: “মুসলিম তো একমাত্র তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম স্মরণ হওয়া মাত্রই ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যখন তাদের কাছে কুর’আনের আয়াত পড়ে শোনানো হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং আল্লাহর উপর তারা নির্ভরশীল।” -(সুরা আনফাল, আয়াত ২)। এ আয়াতের অর্থ, ঈমান বাড়াতে হলে কুর’আনের জ্ঞানের বিকল্প নাই। কুর’আনের জ্ঞানই হলো ঈমানের খাদ্য। তাই যে হৃদয়ে কুর’আনের জ্ঞান নাই, ঈমান সেখানে মৃত।

মহান আল্লাহতায়ালার কুর’আনী প্রকল্পকে বানচাল করার লক্ষ্যে শয়তানেরও রয়েছে নিজস্ব স্ট্রাটেজী। এবং রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। শয়তান চায়, ঈমানের বিনাশ। সে লক্ষ্য পূরণে শয়তানের মূল স্ট্রাটেজী হলো, কুর’আনের সাথে সংযোগ বিচ্ছেদ। এজন্যই নিষিদ্ধ করে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানদান। মুসলিম সন্তানেরা স্কুলে যাবে এবং সে স্কুলে পবিত্র কুর’আনের শিক্ষা থাকবে না -সেটি অভাবনীয়। অথচ ব্রিটিশ কাফিরদের শাসনামলে স্কুল-কলেজে কুর’আন না পড়ানোই ছিল সরকারি নীতি। সে নীতি আজও বহাল রয়েছে বাংলাদেশ। ইসলাম কুর’আনের আয়াত পাঠে গুরুত্ব দেয়। শয়তানের অনুসারীগণ বাধ্যতামূলক করে রবীন্দ্রনাথের মত পৌত্তলিকের গান গাইতে। সেটিই হয়েছে জাতীয় সঙ্গীতের নামে। শিক্ষা প্রকল্পের অংশ করা হয়েছে নাচ, গান, খেলাধুলা ও বহুবিধ উৎসব।

বস্তুত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে শয়তানের সিলেবাস নিয়ে। ফলে শয়তান যেগুলি চায় না, সেগুলিই বাদ পড়েছে। তাই বাদ পড়েছে কুর’আন শিক্ষা। শয়তান চায় পাঠ্যতালিকায় পৌত্তলিক সামগ্রী। তাই সিলেবাসে স্থান পেয়েছে বঙ্কীমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ন্যায় পৌত্তলিকদের রচিত কবিতা, গান ও সাহিত্য। এবং গুরুত্ব পাচ্ছে অন্যান্য সেক্যুলারিস্টদের রচিত সাহিত্য। শয়তান এগুলির চর্চা দিয়ে মানুষের চেতনার ভূমিকে নিজ দখলে রাখে এবং সংযোগ ছিন্ন করে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর পবিত্র কুর’আনের সাথে। এরূপ পৌত্তলিক ও সেক্যুলার জ্ঞান দানে ঈমানের ভূমিতে নাশকতা ঘটবে -সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? শয়তান এভাবেই বৃদ্ধি ঘটায় শরিয়তের অবাধ্যতায়। বাংলাদেশের স্কুলগুলিতে ক্লাস শুরুর আগে কুর’আন পাঠের বদলে রবীন্দ্র-সঙ্গীত (আমার সোনার বাংলা গান) পাঠ তাই বাধ্যতামূলক। সেটি শুধু দেশের সেক্যুলার স্কুলগুলিতেই নয়, এমনকি ধর্মীয় মাদ্রাসাগুলোতেও। সে পৌত্তলিক গানটি গাওয়া হয় জাতীয় সংসদসহ সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও। এভাবেই বিজয়ী করা হয়েছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শয়তানের এজেন্ডা।

 

রবীন্দ্রচেতনার নাশকতা

মানুষ শুধু তার দেহ নিয়ে বাঁচে না। বাঁচতে হয় চেতনা নিয়েও। মানুষ তাঁর দৈহিক সুস্থতার জন্য জান্নাতে যাবে না, জান্নাতে যাবে তাঁর চেতনার সুস্থতার জন্য। সুস্থ চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠার কারণেই মানব শিশু তার মানবিক পরিচয়টি পায় এবং ভিন্নতর হয় ইতর পশু থেকে। সে চেতনাটি সাথে নিয়েই মানবের সর্বত্র বিচরণ। সে চেতনাটি যেমন ধর্ম-কর্ম, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে; তেমনি ধরা পড়ে তার গদ্য, পদ্য, কথা ও গানে। মানুষ বেড়ে উঠে, নেক কর্মে নামে, আমলের ওজন বাড়ায় -তার হৃদয়ে ধারণকৃত চেতনার গুণে। ঈমানদারের জীবনে চেতনার সে বিশেষ সুস্থ রূপটি হলো তার ঈমানদারী ও ঈমান-নির্ভর আক্বীদা। আর বেঈমানী হলো চরম অসুস্থতার আলামত। রোজ হাশরের বিচার দিন নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের আগে সর্বপ্রথম হিসাব দিতে হবে ঈমান ও আক্বীদার। ঈমান ও আক্বীদার বিচারে ফেল করলে অন্য কোন আমলই কাজ দিবে না। মানুষের ধর্ম, কর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-আচরনে বিপ্লব আসে ঈমান ও আক্বীদার গুণে। চেতনার এ ভূমিতে রোগ থাকলে কি ব্যক্তির ইবাদতে বা চরিত্রে পরিশুদ্ধি আসে? তখন মাসের পর মাস রোজা এবং বার বার হজ্জ করেও কি কোন লাভ হয়? তখন ব্যর্থ হয় তাকওয়া-সমৃদ্ধ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠতে। এমন ব্যর্থ ব্যক্তিরাই নামাজ-রোজা পালন করেও ঘুষ খায়, সূদ খায়, মিথ্যা বলে এবং নানারূপ দুর্বৃত্তিতে জড়িত হয়।

মানুষ কি খায় –সেটির প্রকাশ ঘটে তার দৈহিক স্বাস্থ্যের মাঝে। তেমনি কি শেখে এবং কীরূপ বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে বসবাস করে -তা দেখা যায় তার কথা, কর্ম, চেতনা ও চরিত্রের মাঝে। প্রকাশ পায় তার সঙ্গীত ও সাহিত্যে। তাই ব্যক্তির বিশ্বাস ও চেতনায় শিরক বা পৌত্তলিকতা দেখে বলা যায় -তার বিদ্যাশিক্ষার কাজটি সঠিক হয়নি। বুঝা যায়, চেতনা দূষিত হয়েছে শিক্ষালয়ে ও সাহিত্যের অঙ্গণে। নবীজী (সা:)’র হাদীস: মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে অন্য সব পাপ মাফ হতে পারে, কিন্তু শিরকের পাপ মাফ হবে না। অথচ রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যে আজীবন ছড়িয়েছেন শিরকের বীজ এবং দূষিত করেছেন বাঙালির চেতনার ভূমিকে। রবীন্দ্রানাথ নিজে ছিলেন মুশরিক; ফলে তাঁর সাহিত্য শিরকের বীজ ছড়াবে -সেটিই স্বাভাবিক। বঙ্কিমের ন্যায় রবীন্দ্রনাথও উপাস্য রূপে হাজির করেছেন দেশের মাটি ও আলো-বাতাসকে। শিরকের সে রূপটি প্রবল ভাবে ছড়িয়ে আছে তার রচিত কবিতা, নাটক, ছোটগল্প ও গানে। এরূপ পৌত্তলিক সাহিত্যের প্রসার বাড়লে, বৃদ্ধি ঘটে জাহান্নামের যাত্রীদের সংখ্যায়। বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে এখানেই রবীন্দ্রনাথের গুরুতর নাশকতা। এ অপরাধ তাদেরও যারা রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে বাঙালি মুসলিমদের ঘাড়ে জাতীয় সঙ্গীত রূপে চাপিয়েছে।

রবীন্দ্র-সাহিত্যের মূল নাশকতাটি মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে। শেখ মুজিব সে ঈমানবিনাশী নাশকতাটিই দেশব্যাপী ঘটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের শিরকপূর্ণ গানকে জাতীয় সঙ্গীত করে। এটিই বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূমিতে সর্ববৃহৎ নাশকতার কাণ্ড। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী না হওয়ার কারণে কেউ জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু জাহান্নামে যাবে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠায় ব্যর্থ হওয়াতে। এবং মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাটি অসম্ভব হয় কুর’আনী জ্ঞানের অভাবে এবং চেতনার ভূমি শিরকপূর্ণ সাহিত্যে দূষিত হওয়াতে। তাই বাঙালি মুসলিমের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি ক্ষেত-খামার, কল-কারখানা ও রণাঙ্গণে হয়নি। মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও হয়নি। সেটি হয়েছে দেশের শিক্ষাঙ্গণে। সেটি রবীন্দ্র সাহিত্যের মাধ্যমে। শ্রী চৈতন্য দেবের ইসলামবিরোধী নাশকতা সীমিত ছিল শুধু হিন্দুদের মাঝে। অথচ রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিকতা প্রবেশ করেছে প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের গৃহে এবং নাশকতা ঘটিয়েছে প্রতিটি বাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশুর চেতনার ভূবনে। এবং এই ভয়ানক নাশকতার জন্য দায়ী শেখ মুজিব ও বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ। কারণ, মুজিব ও তার সেক্যুলারিস্ট অনুসারীগণ নেমেছে শয়তান ও মুর্তিপূজারী রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ট কলাবোরেটর রূপে।

বাংলাদেশে আজ গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির জোয়ার। এসব খুনি ও ধর্ষকগণ আসমান থেকে পড়েনি। পতিতাপল্লী, বন-জঙ্গল, গরুর গোয়াল ও ক্ষেত-খামারেও বেড়ে উঠেনি। হিংস্র পশু উৎপাদনের জন্য জঙ্গল চাই। তেমনি দুর্বৃত্ত উৎপাদনের জন্যও ইন্ডাস্ট্রি চাই। বাংলাদেশে বিদ্যাশিক্ষার নামে মানবরূপী পশু উৎপাদনের কাজগুলো করছে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই বেড়ে উঠেছে অপরাধের নায়কগণ। বিশ্বের দরবারে দুর্বৃত্তিতে যারা বাংলাদেশকে ৫ বার প্রথম স্থানে পৌঁছে দিল তারা দেশের নিরক্ষর কৃষক, শ্রমিক বা তাঁতি নয়। তারা বেড়ে উঠেছে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্বের অর্থে নির্মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। যারা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মম ভাবে লাশ বানালো তারাও কোন ডাকাতের বস্তিতে বেড়ে উঠেনি। বরং বেড়ে উঠেছে বুয়েটের ন্যায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র লীগ কর্মীটি শত নারী ধর্ষণের উৎসব করলো, সেও কোন পতিতা পল্লীতে বেড়ে উঠেনি। এদের দেখা যায় রাজপথে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে লাশের উপর নাচতে। এ থেকেই বুঝা যায় শিক্ষাঙ্গণে কতটা ঘটছে শিক্ষার নামে নৈতিক নাশকতা। স্বাস্থ্যের পতন রোধে পরিবর্তন আনতে হয় খাদ্য-পানীয়তে, চারিত্রিক পতন রোধে তেমনি পাল্টাতে হয় বই তথা শিক্ষার উপকরণ। নবীজী (সা:)’র যুগে তো সেটিই করা হয়েছিল। তাই ইসলামের শুরুটিই হয়েছে নামাজ-রোজা ফরজ করার পূর্বে কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে ফরজ করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে জ্ঞানার্জনের সে কাজটিই হচ্ছে না। বরং অবিরাম ভাবে চলছে দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কাজ। ঈমান ও চরিত্র ধ্বংসের কাজে বিষ ঢালার কাজটি হচ্ছে পৌত্তলিক চেতনাসমৃদ্ধ জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।

 

বেঈমানের গান ও ঈমানদারের গান

ঈমানদার ও বেঈমান শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইবাদতেই ভিন্ন নয়, প্রবল ভিন্নতা দেখা যায় কবিতা, গান ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণেও। সেগুলি তাই গোপন থাকার বিষয় নয়। মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও নেক কর্মটি হয় বলিষ্ঠ বিশ্বাস নিয়ে সত্য কথা বলার মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে গুরুতর অপরাধটিও হয় শিরকপূর্ণ বা বিদ্রোহাত্মক কথা দিয়ে। ব্যক্তির মুখের কথা যেমন জান্নাতে নিতে পারে, তেমনি জাহান্নামেও নিতে পারে। গান বা কবিতা অতি উচ্চমার্গীয় যিকির হতে পারে –যেমনটি ঈমানদার ক্ষেত্রে ঘটে। তেমনি গান ও কবিতার মধ্যে হতে পারে ভয়ানক কুফরি ও শিরকের প্রকাশ –এমনটিই ঘটে বেঈমানদের ক্ষেত্রে। ঈমানদার ব্যক্তি ইচ্ছামত কিছু বলতে পারে না, তেমনি ইচ্ছামত কিছু গাইতেও পারে না। সে তাই বলে এবং তাই লেখে যা তাঁর ঈমান ও ইসলামীআক্বীদার সাথে সঙ্গতি রাখে। তাঁর কথার মধ্যে থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি অটল বিশ্বাস। থাকে মহান আল্লাহকে খুশি করার প্রেরণা। থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ তথা যিকির। প্রতিটি মুসলিমকে প্রতি মুহুর্ত সে যিকির নিয়ে বাঁচতে হয়। পবিত্র কুর’আন পাঠ, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতসহ ইসলামের প্রতিটি ফরজ বিধানের মূলটি লক্ষ্য হলো, সে যিকিরকে মুসলিম জীবনে লাগাতর এবং তীব্রতর করা।

যিকিরের অর্থ ভাবনাশূণ্য মন নিয়ে স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার নাম জপা নয়। বরং সেটি হলো তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়বদ্ধতা নিয়ে বাঁচার ধ্যানমগ্নতা। সেরূপ ধ্যানমগ্নতা থেকেই আসে চরিত্র ও কর্মে বিপ্লব। মু’মিনের জীবনে এরূপ যিকির নিয়ে বাঁচাটি তাই গুরুত্বপূর্ণ। যিকিরশূণ্যতার বিপদটি ভয়াবহ। যারাই যিকিরশূণ্য হয়, তাদের ঘাড়ের উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে শয়তানকে চাপিয়ে দেয়া হয়। এমন ব্যক্তির জীবনে আসে শয়তানের অনুসরণ, আসে সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি এবং এভাবেই শুরু হয় জাহান্নামের দিকে পথচলা। ঈমানদারের কবিতা ও গান হলো তার যিকিরের প্রকাশ। ফলে তাতে থাকে গভীর আল্লাহপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতা। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় সে সবের বালাই নাই্। এজন্যই মাওলানা রুমি, শেখ সাদী, হাফিজ সিরাজী ও আল্লামা ইকবালের কবিতা থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রবীন্দ্রনাথের গানে ও কবিতায় শিরক ও পৌত্তলিকতার ভাবটিই প্রবল –তা একজন পাঠককে কেবল গোনাহগারই বানাতে পারে। বাঙালি মুসলিমদের এখানেই বিপদ। তারা তাদের মাতৃভাষায় ইকবাল, সিরাজী, সাদী বা রুমী পায়নি, পেয়েছে পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমকে। বাঘ-ভালুকপূর্ণ জঙ্গলে বাস করার বিপদ ভয়ানক। এতে দেহনাশের সম্ভাবনা। তার চেয়েও ভয়ানক হলো রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কীমের ন্যায় সাহিত্যিকদের রচিত পৌত্তলিক সাহিত্যের মাঝে বসবাস। এতে থাকে ঈমাননাশের সম্ভাবনা। বাঘ-ভালুক কাউকে জাহান্নামে নেয় না। কিন্তু পৌত্তলিক সাহিত্য জাহান্নামের যাত্রী বানায়। সেটি আরবের বুকে দেখা গেছে জাহিলিয়াতের যুগে। ইমরুল কায়েসের মত কবিরা সে কাজই করেছে। বাংলাদেশে বুকে সে জাহিলিয়াতের প্লাবনটি বুঝা যায় নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তির জয়-জয়াকার দেখে। বুঝা যায় গুম-খুন-ধর্ষণ-অপহরণ ও সন্ত্রাসের জোয়ার দেখে। শেখ মুজিবের গুরুতর অপরাধ হলো, রবীন্দ্রনাথের পৌত্তলিক গানকে জাতীয় সঙ্গীত রূপে প্রতিষ্ঠা দিয়ে তিনি জনগণকে গোনাহগার বানানোর শয়তানী প্রকল্পকে বিজয়ী করেছেন।

 

ছবক শিরকের ও পৌত্তিলকতার

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন “আমার সোনার বাংলা” গানটি লিখেছিলেন তখন বাংলাদেশ বলে কোন স্বাধীন দেশ ছিল না। সে সময় বাংলা ছিল ভারতের একটি প্রদেশ। সে প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হলেও তাদের সংখ্যা আজকের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ ছিল না। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ নিজেও সে গানটিতে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ, দর্শন, চেতনা বা স্বপ্নের প্রকাশ ঘটাতে লেখেনি। সেটি যেমন তার লক্ষ্য ছিল না, ফলে সে লক্ষ্যে তাঁর প্রস্তুতিও ছিল না। পৌত্তলিকগণ সব সময়ই নতুন উপাস্য চায়। যাদের কাছে নদ-নদী, গরু-বাছুর ও সাপ-শকুন ইত্যাদি উপাস্য, তাদের কাছে দেশ ও দেশের মাটির কদর তো বিশাল। তাই রবীন্দ্রপূজারী পৌত্তলিকগণ দেশ ও দেশের মাটিকে পূজনীয় করেছে নিজেদের সে পৌত্তলিক চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মনের পৌত্তলিক ক্ষুধা নিবারণেই জন্য লেখা হয়েছিল যে “আমার সোনার বাংলা” গান, সেটিকেই বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ভারতে সে মর্যাদাটি পেয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা আরেকটি পৌত্তলিক চেতনার গান, সেটি হলো “বন্দেমাতরম”। সে গান গাইতে ভারতের মুসলিমদের আজ বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মুসলিমগণ কেন এরূপ শিরকপূর্ণ গান গাইবে? “আমার সোনার বাংলা” ও “বন্দেমাতরম” এ উভয় গানের দর্শন ও বয়ান অভিন্ন পৌত্তলিকতার। যে কোন ঈমানদারেরই সেটি টের পাওয়ার কথা।

পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম হলেও কার্যত ছিলেন পৌত্তলিক। এ জগতটাকে একজন মুসলিম যেভাবে দেখে, কোন পৌত্তলিকই সেভাবে দেখে না। উভয়ের ধর্মীয় বিশ্বাস যেমন ভিন্ন, তেমনি চেতনার ও ভাবের জগতটাও ভিন্ন। কবির কবিতা ও গানে তো সে বিশ্বাস ও চেতনারই প্রকাশ ঘটে। একজন মুসলিমের কাছে এ পৃথিবীর ভূমি, আলো-বাতাস, মাঠ-ঘাট, গাছ-পালা, ফুল-ফল, নদী-সমুদ্র এবং সেগুলির অপরূপ রূপ –সবকিছুই মহান আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন। এসব কিছুই মহান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বের সাক্ষী দেয়। এ বিশ্বজগত মু’মিনের কাছে একটি বিশাল পাঠশালা। এ পাঠশালায় ছড়ানো অগণিত নিদর্শন দেখে সে ছবক পায়, মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির সামর্থ্য কত বিশাল এবং বৈচিত্রময়। তিনি কত মহান ও মহীয়ান। স্রষ্টার এ অপরূপ সৃষ্টিকূল দেখে মু’মিন ব্যক্তি সেগুলিকে ভগবান বা মা বলে বন্দনা করে না, বরং মনের গভীর আবেগ ও আকুতি দিয়ে “আল্লাহু আকবর” বা “সুবহানাল্লাহ” বলে। মহান আল্লাহতায়ালাকে উদ্দেশ্য করে হামদ ও নাত গায়। অথচ রবীন্দ্রনাথের চোখে বাংলার অপরূপ রূপ ধরা পড়লেও মহান আল্লাহতায়ালার সর্বময় অস্তিত্ব ও তাঁর সীমাহীন সৃষ্টির সামর্থ্য ধরা পড়েনি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের অজ্ঞতা ও দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা। এ অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াতের কারণে তার কাছে স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে রবীন্দ্রনাথের মনে জন্ম নিয়েছে মহান স্রষ্টাকে ছেড়ে সৃষ্টির বন্দনায় শিরক। তাই এরূপ শিরকপূর্ণ গান “আমার সোনার বাংলা” কি কোন ঈমানদারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

 

বিজয় হিন্দুত্ববাদের

 

রবীন্দ্রনাথ তাঁর “আমার সোনার বাংলা” গানটিতে লিখেছেন:

“আমার সোনার বাংলা,

আমি তোমায় ভালবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ,

তোমার বাতাস

আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে

ঘ্রানে পাগল করে–

মরি হায়, হায় রে

ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,

আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।।

কি শোভা কি ছায়া গো,

কি স্নেহ কি মায়া গো–

কি আঁচল বিছায়েছ

বটের মূলে,

নদীর কূলে কূলে।

মা, তোর মুখের বাণী

আমার কানে লাগে

সুধার মতো–

মরি হায়, হায় রে

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে

আমি নয়ন জলে ভাসি।”

রবীন্দ্রনাথের এ গানে প্রচুর ভাব আছে, ভাষা আছে, ছন্দও আছে। কিন্তু এর বাইরেও এমন কিছু আছে যা একজন মুসলিমের ঈমানের সাথে প্রচণ্ড সাংঘর্ষিক। এ গানে তিনি বন্দনা গেয়েছেন বাংলার ভূমির, এবং সে ভূমির আলো-বাতাস, নদীর কূল, ধানের ক্ষেত, আমের বাগান ও বটমূলের। দেশকে তিনি মা বলেছেন। দেশের বিস্তৃত মাঠঘাট, নদীর পাড় ও বটমূলকে সে মা দেবীর আঁচল রূপে দেখেছেন। দেশকে হাজির করেছেন একজন দেবীর মুর্তিতে। গানটিতে ধ্বনিত হয়েছে সে মা দেবীর প্রতি অশ্রুসিক্ত বন্দনা। কিন্তু যে মহান আল্লাহতায়ালা সে গুলির স্রষ্টা, সমগ্র গানে একটি বারের জন্যও তাঁর বন্দনা দূরে থাক -তাঁর নামের উল্লেখ পর্যন্ত নাই। অজ্ঞতায় আচ্ছন্ন একজন পৌত্তলিকের জন্য এটিই স্বভাবজাত। এখানেই বঙ্কিমের “বন্দেমাতরম” গানের সাথে রবীন্দ্রানাথের “আমার সোনা বাংলা” গানের গভীর মিল।

সব পৌত্তলিকের একই অজ্ঞতা এবং একই অপরাধ। সেটি হলো নানা দেবদেবী ও নানা সৃষ্টির নানা রূপ বন্দনার মাঝে সকল কিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলে থাকার। এতে আছে সত্য গোপন। এরূপ সত্য গোপনই হলো ইসলামে কুফর -যা একজন ব্যক্তিকে কাফের বানায়। মানব জীবনের এটিই সবচেয়ে ঘৃণ্য কর্ম। এটিই পৌত্তলিকতার মূল কথা। মহাসত্যময় মহান আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকারের এটিই হলো সবচেয়ে জঘন্যতম শয়তানি কৌশল। এটিই শিরক। এবং এজন্যই রবীন্দ্রনাথ যেমন একজন কাফের, তেমনি একজন মুশরিক। তিনি তার কবিতা ও গানের মাধ্যমে আবির্ভুত শিরকের প্রচারক রূপে। তাই তিনি শয়তানের দূত। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার বহু বড় বড় গোনাহ মাফ করে দিবেন, কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনোই মাফ করবেন না। নবীজী (সা:) সে হুশিয়ারিটি বহুবার শুনিয়েছেন। তাই একজন মুসলিম এরূপ শিরকপূর্ণ গান গায় কী করে? অথচ বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের অনুসারীগণ এই শিরকের ছবক দিচ্ছেন বাঙালি মুসলিম নর-নারী ও শিশুদের। অথচ এতো বড় পাপ ইংরেজগণও করেনি। তাদের ১৯০ বছরের শাসনে ব্রিটিশ শাসকগণ কখনোই মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের এরূপ শিরকের ছবক দেয়নি। মুসলিমদের জন্য এটি ছিল “রেড লাইন” –যা তারা অতিক্রম করেনি। অথচ ভারতে “বন্দে মাতরম” গানটি গাওয়া শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে। এখন সেটি মাদ্রাসাতেও গাইতে হয়। এবং বাংলাদেশে “আমার সোনার বাংলা” গান গাওয়া শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে। এখন এ পৌত্তলিক গানটি মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদেরও গাইতে হয়। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসের কোথাও কি কোন পৌত্তলিককে এভাবে এরূপ সম্মানের আসনে বসানো হয়েছে –যা হয়েছে বাংলাদেশে? অন্য কোন মুসলিম দেশেও কি এরূপ পৌত্তলিক গান গাওয়া হয়? অথচ এটিই হলো একাত্তরের অর্জন –যা নিয়ে বাঙালি জাতীযতাবাদীগণ উৎসব করে। প্রকৃত বিজয় এখানে হিন্দুত্ববাদের।

গদ্য,পদ্য ও গানের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মুখ বা জিহ্বা কথা বলে না, কথা বলে তার চেতনা বা বিশ্বাস। গদ্য, কবিতা ও গানের কথায় ব্যক্তির আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস ধরা পড়ে। তাই “আমার সোনার বাংলা” গানে যে চেতনাটির প্রকাশ ঘটেছে সেটি পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের। কোন মুসলিমের নয়। পৌত্তলিক চেতনা নিয়েই একজন পৌত্তলিক কবি কবিতা ও গান লিখবেন বা সাহিত্য চর্চা করবেন -সেটিই তো স্বাভাবিক। এমন একটি চেতনার কারণেই পৌত্তলিক ব্যক্তি সাপ-শকুন, গরু, বানর-হনুমান, নদ-নদী, বৃক্ষ, পাহাড়-পর্বতকে উপাস্য রূপে মেনে নেয় এবং তার বন্দনাও গায়। “আমার সোনার বাংলা” গানের ছত্রে ছত্রে তেমন একটি পৌত্তলিক চেতনারই প্রবল প্রকাশ ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে তাঁর নিজ চেতনার সাথে আদৌ গাদ্দারী করেননি। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার সাথে একজন মুসলিমের গাদ্দারী তো তখন শুরু হয় -যখন সে পৌত্তলিক চেতনার এ গানকে মনের মাধুরি মিশিয়ে গাইতে শুরু করে। বাংলাদেশে রবীন্দ্রভক্তদের মূল প্রকল্প হলো, বিপুল সংখ্যায় বাঙালি মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো এবং তাদের মাঝে ভারতসেবী গাদ্দার উৎপাদন। সে লক্ষ্যে তারা বিপুল ভাবে সফলও হয়েছে। মুসলিম নামধারি এরূপ গাদ্দারদের কারণে আল্লাহর শরিয়তী বিধান আজ বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমের দেশে পরাজিত। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বল্লে ভারতসেবীদের হাতে  লাশ হতে হয়।

জাতীয় সঙ্গীতের সুর, ছন্দ বা কবিত্বই