০১:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

চিন্তাভাবনা বদলান, সমাজ বদলাবে”

Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • / ৩৫৪ Time View

প্রত্যেক মানুষই নিশ্চিতভাবে জানে যে মানবজীবনে সুখ-দুঃখ, সফলতা ও ব্যর্থতা যা কিছু
ঘটছে, সবই তকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। তকদিরের বাইরে কিছুই ঘটছে না। ‘পৃথিবীতে বা
ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে তা সংঘটিত করার আগেই লিপিবদ্ধ থাকে।
নির্ধারিত হায়াত শেষেই সকলের মরণ হয়। যতক্ষন পৃথিবীতে বেঁচে থাকব ততক্ষন খেয়ে
থাকতে হবে। খেয়ে পরে থাকার মাঝে ক্ষুদ্র সময়ে নিজকে এবং সমাজকে কিছু দেওয়া। এটাই
জিবন। তবে তিনটি বিত্তের মধ্যে সমাজ শব্দটি স্থান লাভ করেছে। প্রথম বিত্তটি হচ্ছে
“উচ্চ বিত্ত ” দ্ধিতীয়টি হচ্ছে “মধ্যবিত্ত” তৃতীয়টি হচ্ছে “নিন্মবিত্ত”। আমাদের দেশে
যদিও বিত্তের মাপকঠি নেই এরপরও বলব প্রতিহিংসায় সকলেই স্ব স্ব অবস্থানে আছেন।
যারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে সাধারন পাবলিকের ট্যাক্সের পয়সা মেরে সন্তানের
ভবিষ্যত সুখের আশায় বিদেশে অর্থ পাঁচার করে বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মান করেছেন।
তাদেরকে যদি উচ্চবিত্ত বলি তাহলে উচ্চবিত্ত শব্দের মানহানি হয়। মানুষের বেঁচে থাকা,
জীবনের বিকাশ এবং সভ্য-সামাজিক জীবনযাপনের জন্য যে সকল কার্যক্রম একান্তই
অপরিহার্য, সে সব চাহিদার কোনো বিকল্প নেই । মার্কিন সমাজকর্ম গবেষক Charllotte
Towle (1965) তাঁর “Common Human Needs” গ্রন্থে চাহিদাকে মৌলিক মানবিক চাহিদা
হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এসবের মধ্যে ১) খাদ্য ২) বস্ত্র ৩) বাসস্থান ৪) শিক্ষা ৫)
স্বাস্থ্য ৬) চিত্তবিনোদন। সবগুলো চাহিদার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সকল বিত্তভোগীর।
তারই লক্ষে আজকের এই ক্ষুদ্র পরিসরে এই লেখা। তাহলে শুনুন- কালো করে একটা মেয়ে
ছোট একটা জবের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব রেস্টুরেন্টের মালিক সোজা
বলে দিচ্ছে, দেখো, আমাদের এখানে কোনো লোক লাগবে না। অন্য কোথাও যাও। কালো মেয়েটা
হতাশ হয়ে অন্য রেস্টুেরেন্টে যায়। এভাবে একদিন জব পেয়ে গেলো এক রেস্টুরেন্টে। মালিক
প্রথম দিনই তাকে বলে দিলো, কখনও দেরি করে আসা চলবে না। তাহলে চাকরি বাতিল।
সবকিছু মাথায় রেখেই মেয়েটা কাজ করে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে। খাবারের অর্ডার নিচ্ছে, তারপর
খাবার পৌঁছে দিচ্ছে টেবিলে টেবিলে। খাওয়া শেষ হওয়ার পর টেবিল পরিস্কার করছে। কাজের
কিছু অদক্ষতায় বকাও খাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। কখনও হয়তো কোনো কাস্টমারের সামনে
থেকে কফির মগ নিতে গিয়ে গায়ে একটু কফি ফেলে দিয়েছে। কাস্টমার প্রচণ্ড রেগে নালিশ
করেছে মালিকের কাছে। মেয়েটি হয়তো কাঁদো কাঁদো গলায় মালিককে সরি বলে কোনোভাবে পার
পেয়ে গেছে। গায়ের রঙ কালো বলে সম্ভবত রেস্টুরেন্টের অন্য ছেলেরা তাকে খুব একটা
পাত্তাও দেয়নি কিংবা কোনোদিন তার সহকর্মীর জন্মদিনে তার বাসায় গেলো। কেক কাটার
পর যে খাবার দেয়া হলো, সহকর্মী লক্ষ্য করে দেখলো কালো মেয়েটি সেটি একদমই খেতে
পারছে না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, খাবারে সমস্যা কিনা। কালো মেয়েটি বললো, -না, পেট
ভরা, তাই খেতে পারছে না। কোনোদিন হয়তো রেস্টুরেন্টের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কম
দামি গাড়িতে করে কোথাও ঘুরতেও গিয়েছিলো কালো মেয়েটি। কম দামি গাড়িতে বেশ কষ্টও
হয়েছে তার। মুখ খুলে কিছু বলেনি কাউকে। সবকিছু চেপে গেছে আর ভেবে নিয়েছে, আমি অন্য

দশটি মানুষের মতোই মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেনো। দিন হয়তো এভাবেই
যাচ্ছিলো। একদিন তার সহকর্মীর কেউ একজন দেখলো যে, কালো মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে
বের হওয়ার পর আড়াল থেকে ছয়জন বিশালদেহি মানুষ তাকে ঘিরে রাখে। রেস্টুরেন্টে শুরু হলো
গুঞ্জন, কানাকানি। এভাবে ঘটনা চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। বেরিয়ে আসে কালো মেয়েটির
পরিচয়। সবাই জানতে পারে, কালো মেয়েটি প্রেসিডেন্টের মেয়ে। তারপর দেশে দেশে আলোচনা
উঠে, নিউজ হয়। বিশ্ব জেনে যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ছোট মেয়ে সাশা ওবামা
নিজের পরিচয় লুকিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন । গ্রীষ্মকালীন ছুটির ফাঁকে
ম্যাসাচুসেটসের মার্থাস ভিনিয়ার্ড নামের একটি দ্বীপের ওই রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছেন
তিনি। অনেকদিন পর্যন্ত সাশার সহকর্মীরাও তাকে চিনতে পারেনি। পরে রেস্টুরেন্ট ঘিরে
সার্বক্ষণিক ছয়জন গোয়েন্দার অবস্থান বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলে। এদিকে বারাক
ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা বলেন,-"সন্তানদেরকে একটা বয়সের পরে রাজকীয় বিলাসিতা
ছাড়তে বাধ্য করেছি। কারণ তাদের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে হবে। অন্য দশটা মানুষের
মতোই বাঁচতে শিখতে হবে তাদের। বিশ্ব বিধাতা কাকে কিভাবে রাখবেন সেটা কেউ
জানেন না। উচ্চকন্ঠে বলব “ মা ” হল সন্তানদের বড় শিক্ষক। এবার আপনি আমাদের দেশের
রাজনীতিক এবং তাদের সন্তানদের কথা একবার ভাবুন। চিন্তাভাবনা বদলান সমাজ বদলাবে,
কোন সন্দেহ নাই।

————মোশারফ হোসেন

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

চিন্তাভাবনা বদলান, সমাজ বদলাবে”

Update Time : ০৩:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

প্রত্যেক মানুষই নিশ্চিতভাবে জানে যে মানবজীবনে সুখ-দুঃখ, সফলতা ও ব্যর্থতা যা কিছু
ঘটছে, সবই তকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। তকদিরের বাইরে কিছুই ঘটছে না। ‘পৃথিবীতে বা
ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে তা সংঘটিত করার আগেই লিপিবদ্ধ থাকে।
নির্ধারিত হায়াত শেষেই সকলের মরণ হয়। যতক্ষন পৃথিবীতে বেঁচে থাকব ততক্ষন খেয়ে
থাকতে হবে। খেয়ে পরে থাকার মাঝে ক্ষুদ্র সময়ে নিজকে এবং সমাজকে কিছু দেওয়া। এটাই
জিবন। তবে তিনটি বিত্তের মধ্যে সমাজ শব্দটি স্থান লাভ করেছে। প্রথম বিত্তটি হচ্ছে
“উচ্চ বিত্ত ” দ্ধিতীয়টি হচ্ছে “মধ্যবিত্ত” তৃতীয়টি হচ্ছে “নিন্মবিত্ত”। আমাদের দেশে
যদিও বিত্তের মাপকঠি নেই এরপরও বলব প্রতিহিংসায় সকলেই স্ব স্ব অবস্থানে আছেন।
যারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে সাধারন পাবলিকের ট্যাক্সের পয়সা মেরে সন্তানের
ভবিষ্যত সুখের আশায় বিদেশে অর্থ পাঁচার করে বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মান করেছেন।
তাদেরকে যদি উচ্চবিত্ত বলি তাহলে উচ্চবিত্ত শব্দের মানহানি হয়। মানুষের বেঁচে থাকা,
জীবনের বিকাশ এবং সভ্য-সামাজিক জীবনযাপনের জন্য যে সকল কার্যক্রম একান্তই
অপরিহার্য, সে সব চাহিদার কোনো বিকল্প নেই । মার্কিন সমাজকর্ম গবেষক Charllotte
Towle (1965) তাঁর “Common Human Needs” গ্রন্থে চাহিদাকে মৌলিক মানবিক চাহিদা
হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এসবের মধ্যে ১) খাদ্য ২) বস্ত্র ৩) বাসস্থান ৪) শিক্ষা ৫)
স্বাস্থ্য ৬) চিত্তবিনোদন। সবগুলো চাহিদার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সকল বিত্তভোগীর।
তারই লক্ষে আজকের এই ক্ষুদ্র পরিসরে এই লেখা। তাহলে শুনুন- কালো করে একটা মেয়ে
ছোট একটা জবের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব রেস্টুরেন্টের মালিক সোজা
বলে দিচ্ছে, দেখো, আমাদের এখানে কোনো লোক লাগবে না। অন্য কোথাও যাও। কালো মেয়েটা
হতাশ হয়ে অন্য রেস্টুেরেন্টে যায়। এভাবে একদিন জব পেয়ে গেলো এক রেস্টুরেন্টে। মালিক
প্রথম দিনই তাকে বলে দিলো, কখনও দেরি করে আসা চলবে না। তাহলে চাকরি বাতিল।
সবকিছু মাথায় রেখেই মেয়েটা কাজ করে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে। খাবারের অর্ডার নিচ্ছে, তারপর
খাবার পৌঁছে দিচ্ছে টেবিলে টেবিলে। খাওয়া শেষ হওয়ার পর টেবিল পরিস্কার করছে। কাজের
কিছু অদক্ষতায় বকাও খাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। কখনও হয়তো কোনো কাস্টমারের সামনে
থেকে কফির মগ নিতে গিয়ে গায়ে একটু কফি ফেলে দিয়েছে। কাস্টমার প্রচণ্ড রেগে নালিশ
করেছে মালিকের কাছে। মেয়েটি হয়তো কাঁদো কাঁদো গলায় মালিককে সরি বলে কোনোভাবে পার
পেয়ে গেছে। গায়ের রঙ কালো বলে সম্ভবত রেস্টুরেন্টের অন্য ছেলেরা তাকে খুব একটা
পাত্তাও দেয়নি কিংবা কোনোদিন তার সহকর্মীর জন্মদিনে তার বাসায় গেলো। কেক কাটার
পর যে খাবার দেয়া হলো, সহকর্মী লক্ষ্য করে দেখলো কালো মেয়েটি সেটি একদমই খেতে
পারছে না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, খাবারে সমস্যা কিনা। কালো মেয়েটি বললো, -না, পেট
ভরা, তাই খেতে পারছে না। কোনোদিন হয়তো রেস্টুরেন্টের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কম
দামি গাড়িতে করে কোথাও ঘুরতেও গিয়েছিলো কালো মেয়েটি। কম দামি গাড়িতে বেশ কষ্টও
হয়েছে তার। মুখ খুলে কিছু বলেনি কাউকে। সবকিছু চেপে গেছে আর ভেবে নিয়েছে, আমি অন্য

দশটি মানুষের মতোই মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেনো। দিন হয়তো এভাবেই
যাচ্ছিলো। একদিন তার সহকর্মীর কেউ একজন দেখলো যে, কালো মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে
বের হওয়ার পর আড়াল থেকে ছয়জন বিশালদেহি মানুষ তাকে ঘিরে রাখে। রেস্টুরেন্টে শুরু হলো
গুঞ্জন, কানাকানি। এভাবে ঘটনা চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। বেরিয়ে আসে কালো মেয়েটির
পরিচয়। সবাই জানতে পারে, কালো মেয়েটি প্রেসিডেন্টের মেয়ে। তারপর দেশে দেশে আলোচনা
উঠে, নিউজ হয়। বিশ্ব জেনে যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ছোট মেয়ে সাশা ওবামা
নিজের পরিচয় লুকিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন । গ্রীষ্মকালীন ছুটির ফাঁকে
ম্যাসাচুসেটসের মার্থাস ভিনিয়ার্ড নামের একটি দ্বীপের ওই রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছেন
তিনি। অনেকদিন পর্যন্ত সাশার সহকর্মীরাও তাকে চিনতে পারেনি। পরে রেস্টুরেন্ট ঘিরে
সার্বক্ষণিক ছয়জন গোয়েন্দার অবস্থান বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলে। এদিকে বারাক
ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা বলেন,-"সন্তানদেরকে একটা বয়সের পরে রাজকীয় বিলাসিতা
ছাড়তে বাধ্য করেছি। কারণ তাদের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে হবে। অন্য দশটা মানুষের
মতোই বাঁচতে শিখতে হবে তাদের। বিশ্ব বিধাতা কাকে কিভাবে রাখবেন সেটা কেউ
জানেন না। উচ্চকন্ঠে বলব “ মা ” হল সন্তানদের বড় শিক্ষক। এবার আপনি আমাদের দেশের
রাজনীতিক এবং তাদের সন্তানদের কথা একবার ভাবুন। চিন্তাভাবনা বদলান সমাজ বদলাবে,
কোন সন্দেহ নাই।

————মোশারফ হোসেন