০১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
চট্টগ্ৰাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

Reporter Name
- Update Time : ০৬:২৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৯৮ Time View

আনিছুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে এক বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে, যা উভয় পক্ষের জন্য ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়। এই ঘটনাটি একটি সাধারণ বিবাদ থেকে দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয় এবং এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আহত হন। ক্ষয়ক্ষতি হয় স্হানীয়দের বসত বাড়ি ঘরে।
গত শনিবার ৩১শে আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখ রাতে ঘটনার সূত্রপাত হয় , যখন এক ছাত্রী তার নির্দিষ্ট সময়ের পরে মেসে ফিরলে সেখানকার দারোয়ানের সঙ্গে তার বাগ্বিতণ্ডা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দারোয়ান গেট খুলতে দেরি করায় এবং ছাত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করায় ছাত্রীটি রাগান্বিত হয়ে দারোয়ানকে থাপ্পড় মারে। এর জবাবে দারোয়ানও ছাত্রীকে থাপ্পড় মারেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে স্থানীয় কিছু মানুষ এবং ছাত্রীরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং সিদ্ধান্ত হয় যে পরদিন সকালে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান চেয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলেন। এর ফলে দারোয়ান ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এরপর শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে খুঁজতে তার গ্রামের দিকে ধাওয়া করেন। এই ধাওয়ার সময় গ্রামবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং এতে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী আহত হন।
এই হামলার খবর দ্রুত ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও অনেক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হন। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। স্থানীয় মসজিদে মাইকে গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হয় এবং উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা যখন দারোয়ানের গ্রামে পৌঁছায়, তখন তাদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক। এই হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতি আগে থেকেই বৈরী মনোভাব পোষণ করতেন।
সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে গুরুতরভাবে আহত কিছু শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। শিক্ষার্থীরা শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি চরম মানসিক চাপ ও ভীতির শিকার হন। সংঘর্ষ চলাকালে কিছু শিক্ষার্থী গ্রামবাসীদের দোকানপাট, বাড়ি এবং যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বিশেষত মাছবাজার থেকে সিকদার পাড়া পর্যন্ত এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। যেসব দোকান ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়, তাদের মালিকদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো হস্তক্ষেপ করে। হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই উভয় পক্ষ ধীরে ধীরে শান্ত হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। শিক্ষাউপদেষ্ঠা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় কিছু ব্যক্তির উস্কানি এবং ফেমাস হওয়ার প্রবণতা ঘটনাটিকে আরও জটিল করে তোলে। স্থানীয়দের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতি এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থানীয়দের প্রতি আস্থার অভাব ছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় উভয় পক্ষকে আরও ক্রুদ্ধ করে তোলে। Tasnim Farjana Khan তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন অনেকক্ষণ ধরে ভিডিও ফুটেজ দেখেছি আসল ঘটনা ফোকাস হয়েছে একেবারে কম।
তিনি এবং সচেতন মহল, শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের অভিভাবক জানিয়েছেন এই ঘটনার সঠিক বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। উভয় পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা উচিত। একই সাথে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো দরকার। দারোয়ান ও ছাত্রী, উভয়কেই মুখোমুখি করে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করা উচিত এবং যারা উস্কানি দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এই ঘটনার ফলে ছাত্র-ছাত্রী এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে যে অবিশ্বাস এবং দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে উভয়ের মধ্যে সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা অপরিহার্য
Tag :