০৯:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

কতটুকু সফল হচ্ছে রোজা?

Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
  • / ১৮৯ Time View

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অর্জিত হচ্ছে কি তাকওয়া?

কোন একটি বিশেষ লক্ষ্য ছাড়া কোন বিধানকেই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার উপর ফরজ করেন না। রোজা কতটুকু সফল সে বিচারটি করতে হবে সে লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে। প্রশ্ন হলো মাসব্যাপী রোজার সে লক্ষ্যটি কি? যে কোন ইবাদতের ন্যায় রোজারও লক্ষ্য হলো, ঈমানদারদের জান্নাতের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সেখানে কোন অযোগ্য ব্যক্তির স্থান নাই। জান্নাতে পৌছার অপরিহার্য গুণটি হলো ব্যক্তির তাকওয়া। তাকওয়া হলো জান্নাতের চাবি। এবং রোজার লক্ষ্যটি হলো, তাকওয়ার গুণে ব্যক্তিকে সমৃদ্ধ করা। সে লক্ষ্যটি ব্যক্ত করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা এভাবে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’’ -(সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। তাই রোজার গুরুত্ব বুঝতে হলে তাকওয়ার গুরুত্ব প্রথমে বুঝতে হবে।

প্রশ্ন হলো, তাকওয়া কি? তাকওয়া অর্থ ভয়। তবে সে ভয় এমন নয় যে তা হঠাৎ বাঘের সামনে পড়া ভীতুসন্ত্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় বাকশূণ্য করবে। সে ভয় এমনও নয় যা গভীর সমুদ্রে ঝড়ে পড়া জাহাজের যাত্রীর ন্যায় আতংকিত ও বিচলিত করবে। তাকওয়া হলো আল্লাহ-সচেতনতার এমন এক মানসিক অবস্থা যা সর্বদা স্মরণে রাখে জাহান্নামের আযাব। সে ভয় ফেরায় সকল প্রকার ভ্রষ্টতা ও পাপ থেকে এবং প্রেরণা জোগায় নেক-আমলে। তখন জন্ম নেয় আল্লাহকে খুশী করার সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা। চেতনায় সব সময় জগ্রত রাখে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবদেহীতার চেতনা। এমন চেতনায় জীবনের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহুর্ত মনে হয় মহান আল্লাহতায়ালার অমূল্য নেয়ামত রূপে এবং এ জীবন গণ্য হয় অবিরাম পরীক্ষাপর্ব রূপে। তখন বিরামহীন ব্যস্ততা বাড়ে সে পরীক্ষায় কি করে ভাল ভাবে কৃতকার্য হওয়া যায় -তা নিয়ে। মটর হাই্ওয়েতে দ্রুত গাড়ি চালানোর সময় যে ভয়টি সব সময় কাজ করে সেটি দুর্ঘটনার। সামান্য নিমিষের অসতর্কতায় চালকের ও অন্যান্য আরোহীর মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সে জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ভূলের প্রয়োজন পড়ে না। সামান্য ক্ষণের ভূল, অসচেতনতা বা ঘুমই সে জন্য যথেষ্ট। চালককে তাই প্রতি মুহুর্তে সজাগ থাকতে হয়; চোখ, কান ও মন খোলা রাখতে হয়। মৃত্যূর ভয়ে তাকে সর্বমুহুর্ত সতর্ক থাকতে হয়। চালকের জন্য এটাই হলো তাকওয়া।

আর মু’মিনের জীবনে তাকওয়া হলো সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত হওয়ার সার্বক্ষণিক ভয়। যে কোন মুহুর্তে বিচ্যুত হতে পারে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে; অবাধ্য হতে পারে তাঁর হুকুমের। রোজার মূল কাজ এমন ভয় তথা তাকওয়ার বৃদ্ধি। তাই তাকওয়া নিছক ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও যৌনতাকে দমিয়ে রাখার সামর্থ্য নয়, বরং সর্বপ্রকার জৈবিক,আত্মিক ও আর্থিক কুপ্রবৃত্তি দমনের প্রবল ঈমানী শক্তি। এমন তাকওয়া থেকেই প্রেরণা আসে আল্লাহপাকের হুকুমগুলি জানার এবং সে সাথে সেগুলি অনুসরণের। কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে তাকওয়া-সমৃদ্ধ সে ব্যক্তিটি তখন নিজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম রূপে গ্রহণ করে। কারণ সে বুঝে, অজ্ঞতা নিয়ে সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা অসম্ভব। ভয় এখানে অজ্ঞতার অন্ধকারে ভূল পথে হারিয়ে যাওয়ার। তাই তাকওয়া-সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য অসম্ভব হয় জাহেল বা অজ্ঞ থাকা। খাদ্যের সন্ধানের ন্যায় গুরুত্ব পায় জ্ঞানের সন্ধানও। কারণ হাজারো পথের মাঝে কোনটি সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ আর কোনটি ভ্রষ্টতার পথ -সেটি জানতে বা বুঝতে হলেও তো জ্ঞান চাই। পথচলায় যে সিগনাল বা বিধিনিষেধ থাকে সেগুলোও তো জানতে হয়। নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের মাঝে ইসলামের মৌলিক জ্ঞানে তাই কোন অজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন না। সাহাদের শতকরা শতভাগই ছিলেন আলেম।

মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান ও প্রত্যাশা

মাহে রমযান হলো রহমত ও মাগফেরাতের মাস। এ মাসেই নাযিল হয়েছিল পবিত্র কুর’আন -অর্থাৎ মর্তের বুকে নেমে এসেছিল মহান আল্লাহর নিজস্ব বাণী। এভাবে মানব জাতি পেয়েছিল মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামতটি – মূক্তি ও সফলতার

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

কতটুকু সফল হচ্ছে রোজা?

Update Time : ০৫:৩০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অর্জিত হচ্ছে কি তাকওয়া?

কোন একটি বিশেষ লক্ষ্য ছাড়া কোন বিধানকেই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার উপর ফরজ করেন না। রোজা কতটুকু সফল সে বিচারটি করতে হবে সে লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে। প্রশ্ন হলো মাসব্যাপী রোজার সে লক্ষ্যটি কি? যে কোন ইবাদতের ন্যায় রোজারও লক্ষ্য হলো, ঈমানদারদের জান্নাতের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সেখানে কোন অযোগ্য ব্যক্তির স্থান নাই। জান্নাতে পৌছার অপরিহার্য গুণটি হলো ব্যক্তির তাকওয়া। তাকওয়া হলো জান্নাতের চাবি। এবং রোজার লক্ষ্যটি হলো, তাকওয়ার গুণে ব্যক্তিকে সমৃদ্ধ করা। সে লক্ষ্যটি ব্যক্ত করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা এভাবে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’’ -(সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। তাই রোজার গুরুত্ব বুঝতে হলে তাকওয়ার গুরুত্ব প্রথমে বুঝতে হবে।

প্রশ্ন হলো, তাকওয়া কি? তাকওয়া অর্থ ভয়। তবে সে ভয় এমন নয় যে তা হঠাৎ বাঘের সামনে পড়া ভীতুসন্ত্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় বাকশূণ্য করবে। সে ভয় এমনও নয় যা গভীর সমুদ্রে ঝড়ে পড়া জাহাজের যাত্রীর ন্যায় আতংকিত ও বিচলিত করবে। তাকওয়া হলো আল্লাহ-সচেতনতার এমন এক মানসিক অবস্থা যা সর্বদা স্মরণে রাখে জাহান্নামের আযাব। সে ভয় ফেরায় সকল প্রকার ভ্রষ্টতা ও পাপ থেকে এবং প্রেরণা জোগায় নেক-আমলে। তখন জন্ম নেয় আল্লাহকে খুশী করার সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা। চেতনায় সব সময় জগ্রত রাখে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবদেহীতার চেতনা। এমন চেতনায় জীবনের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহুর্ত মনে হয় মহান আল্লাহতায়ালার অমূল্য নেয়ামত রূপে এবং এ জীবন গণ্য হয় অবিরাম পরীক্ষাপর্ব রূপে। তখন বিরামহীন ব্যস্ততা বাড়ে সে পরীক্ষায় কি করে ভাল ভাবে কৃতকার্য হওয়া যায় -তা নিয়ে। মটর হাই্ওয়েতে দ্রুত গাড়ি চালানোর সময় যে ভয়টি সব সময় কাজ করে সেটি দুর্ঘটনার। সামান্য নিমিষের অসতর্কতায় চালকের ও অন্যান্য আরোহীর মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সে জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ভূলের প্রয়োজন পড়ে না। সামান্য ক্ষণের ভূল, অসচেতনতা বা ঘুমই সে জন্য যথেষ্ট। চালককে তাই প্রতি মুহুর্তে সজাগ থাকতে হয়; চোখ, কান ও মন খোলা রাখতে হয়। মৃত্যূর ভয়ে তাকে সর্বমুহুর্ত সতর্ক থাকতে হয়। চালকের জন্য এটাই হলো তাকওয়া।

আর মু’মিনের জীবনে তাকওয়া হলো সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত হওয়ার সার্বক্ষণিক ভয়। যে কোন মুহুর্তে বিচ্যুত হতে পারে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে; অবাধ্য হতে পারে তাঁর হুকুমের। রোজার মূল কাজ এমন ভয় তথা তাকওয়ার বৃদ্ধি। তাই তাকওয়া নিছক ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও যৌনতাকে দমিয়ে রাখার সামর্থ্য নয়, বরং সর্বপ্রকার জৈবিক,আত্মিক ও আর্থিক কুপ্রবৃত্তি দমনের প্রবল ঈমানী শক্তি। এমন তাকওয়া থেকেই প্রেরণা আসে আল্লাহপাকের হুকুমগুলি জানার এবং সে সাথে সেগুলি অনুসরণের। কুর’আনের জ্ঞানার্জনকে তাকওয়া-সমৃদ্ধ সে ব্যক্তিটি তখন নিজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম রূপে গ্রহণ করে। কারণ সে বুঝে, অজ্ঞতা নিয়ে সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা অসম্ভব। ভয় এখানে অজ্ঞতার অন্ধকারে ভূল পথে হারিয়ে যাওয়ার। তাই তাকওয়া-সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য অসম্ভব হয় জাহেল বা অজ্ঞ থাকা। খাদ্যের সন্ধানের ন্যায় গুরুত্ব পায় জ্ঞানের সন্ধানও। কারণ হাজারো পথের মাঝে কোনটি সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ আর কোনটি ভ্রষ্টতার পথ -সেটি জানতে বা বুঝতে হলেও তো জ্ঞান চাই। পথচলায় যে সিগনাল বা বিধিনিষেধ থাকে সেগুলোও তো জানতে হয়। নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের মাঝে ইসলামের মৌলিক জ্ঞানে তাই কোন অজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন না। সাহাদের শতকরা শতভাগই ছিলেন আলেম।

মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান ও প্রত্যাশা

মাহে রমযান হলো রহমত ও মাগফেরাতের মাস। এ মাসেই নাযিল হয়েছিল পবিত্র কুর’আন -অর্থাৎ মর্তের বুকে নেমে এসেছিল মহান আল্লাহর নিজস্ব বাণী। এভাবে মানব জাতি পেয়েছিল মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামতটি – মূক্তি ও সফলতার