১০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

একাত্তরে যুদ্ধকে যে ভাবে অনিবার্য করা হলো এবং সুযোগ যেভাবে হাতছাড়া হলো বাঙালি মুসলিমের

মতামত
  • Update Time : ০৩:২২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৩৯ Time View

 একাত্তরের যুদ্ধ যেভাবে ডেকে আনা হলো

 

একাত্তরের যুদ্ধ পাকিস্তান সরকার ডেকে আনেনি। কারণ সে মুহুর্তে পাকিস্তানের জন্য সেরূপ একটি যুদ্ধের প্রয়োজনই ছিলনা। একটি দেশের সরকার একমাত্র তখনই যুদ্ধ শুরু করে যখন শত্রু দেশ দ্বারা আক্রান্ত হয় অথবা নতুন দেশ জয়ের স্বপ্ন দেখে। একাত্তরে কোন নতুন দেশ দখলের স্বপ্ন পাকিস্তান সরকারের ছিল না যে যুদ্ধ করবে। আর যুদ্ধে প্রস্তুতি থাকলে কি পূর্ব পাকিস্তানে একাত্তরের মার্চ মাসে মাত্র এক ডিভিশন সৈন্য অর্থাৎ ১৩ বা ১৪ হাজার সৈন্য রাখতো। বরং সে সময় ইয়াহিয়া সরকার ব্যস্ত ছিল নির্বাচন শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের । অথচ মুজিবের এজেন্ডা ছিল পাকিস্তান ভাঙা ও বিচ্ছিন্ন এক বাংলাদেশ নির্মাণ। তাই  ১৯৭১’য়ের যুদ্ধ ডেকে আনে শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ। কারণ যুদ্ধ ছাড়া মুজিবের পক্ষে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ বানানো অসম্ভব ছিল। ফলে তার পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না ক্ষমতায় যাওয়া। অথচ নির্বাচনি বিজয়ের পর ক্ষমতাপাগল মুজিবের পক্ষে ক্ষমতার বাইরে থাকা অসম্ভব ছিল। তাই আওয়ামী লীগের লোকেরাই মুজিবকে ক্ষমতায় বসাতে ভারতকে যুদ্ধে ডেকে আনে।

তাছাড়া মুজিবকে ক্ষমতায় বসানোর মধ্যে ভারতেরও বিশাল স্বার্থ ছিল। মুজিবকে ক্ষমতায় বসানোর অর্থই ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ভারতের পূর্ণ দখলদারি ও লুটপাটের অবাধ সুযোগ -যা মুজিব আমলে দেখা গেছে। বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে মুজিব যা কিছু নির্বাচল কালে বলেছে তা ছিল ভোটারদের ধোকা দেয়ার কৌশল মাত্র। গণতন্ত্রের প্রতি এতো দরদ থাকলে মুজিব কেন গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিবে কেন? কেন রক্ষিবাহিনী দিয়ে হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করবে? আর অর্থনৈতিক মুক্তি? মুজিব তো দিয়েছে চুরি-ডাকাতি, লুণ্ঠন, কালোবাজারী ও ভারতে সম্পদ পাচারের অর্থনীতি। ধ্বংস করেছে পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কলকারখানা ও ব্যাংকগুলিকে। ৮ আনা সের চাল খাওয়ানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে এনেছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ -যাতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষে প্রাণহানী হয়।       

 

যুদ্ধ কিভাবে অনিবার্য হলো?

 

মুজিবের রাজনীতির মূল এজেন্ডা ছিল পাকিস্তান ভাঙা ও এক বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ সৃষ্টি। সেটি ১৯৪৭ সালে থেকেই। মুজির তার সে এজেন্ডার কথাটি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারীর সোহরাওয়ার্দী উদ্দানের জনসভায় বলেছিল। এ নিবন্ধের লেখক মুজিবের সে উক্তিটি সেদিন নিজ কানে শুনেছিল। সেদিন মুজিবের উক্তিটি ছিল: “স্বাধীন বাংলাদেশ বানানোর লড়াই ১৯৭১ থেকে নয়, ১৯৪৭ থেকে শুরু করেছিলাম।” পাকিস্তান ভাঙার সে অভিন্ন এজেন্ডাটি ছিল ভারতেরও। ষাটের দশক থেকেই মুজিব ভারতীয় RAW এজেন্টদের সাথে মেলে পাকিস্তান ভাঙার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিল। ইতিহাসে এটিই আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানী সামরিক গোয়েন্দাদের কাছে মুজিবের সে ষড়যন্ত্র ধারা পড়ে। মুজিবকে গ্রেফতারা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।   

 

১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু মামলা তুলে নিলেও পাকিস্তান ভাঙার শেখ মুজিব ও ভারতের যৌথ প্রজেক্টের মৃত্যু হয়নি। বরং ১৯৭০ সালে মুজিবের বিশাল নির্বাচনী বিজয় সে আগরতলা প্রজেক্টে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। পাকিস্তান ভাঙার সে এজেন্ডাকে সফল করতেই মুজিব ও ভারত উভয়ে মিলে  ১৯৭১’য়ের যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই যুদ্ধে জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ রুখতে সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

ভারতের পক্ষ থেকে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ যে অনিবার্য ও অতি আসন্ন -সেটি প্রেসিডন্ট ইয়াহিয়া খান একাত্তরের সেপ্টম্বরে মাসে টের পান। তখন সে যুদ্ধ এড়াতে ঐ মাসেই তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার মি. জয় কুমার অটালকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে রেফারেন্ডামের প্রস্তাব দিয়ে ইন্দিরার সাথে আলোচনার কথা বলেন। মি. অটাল দিল্লি যান। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি প্রেসিডন্ট ইয়াহিয়া সে প্রস্তাব নাকোচ করে বলেন, ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিজয়ই সে স্বাধীনতার প্রশ্নে জনগণের রায়। অতএব নতুন কোন রেফারেন্ডামের প্রয়োজন নাই। (সূত্র:  Richard Sisson and Leo E. Rose; War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh, University of California Press, 1990.)

 

অথচ ইন্দিরা গান্ধির সে বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনটি স্বাধীনতার প্রশ্নে হয়নি। সে নির্বাচন হয়েছিল ৬ দফা ভিত্তিক স্বায়ত্বশাসন ও আঞ্চলিক বৈষম্যের ইস্যুতে। ইন্দিরা গান্ধি সে প্রস্তাব মেনে নিলে একাত্তরের রক্তাক্ত যুদ্ধ সহজেই এড়ানো যেত। তখন পাকিস্তানের হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র, সামরিক যান, ট্যাংক ও অন্যান্য মালামাল বাংলাদেশে থেকে যেত। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা দেয়ার নামে বাংলাদেশকে ভারতের প্রতি নতজানু হতে হতো না। সবই ঘটেছে ভারতের পরিকল্পনা মাফিক। ইয়াহিয়ার প্রস্তাব নাকোচ করে ভারত একটি যুদ্ধকে অনিবার্য করলো। পরিতাপের বিষয়, এ নিয়ে বাংলাদেশের বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বাঙালি কম্যুনিস্টগণ খামোশ। তারা একাত্তরের যুদ্ধের জন্য দোষ চাপায় পাকিস্তানের ঘাড়ে।   

 

 

ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা যেভাবে ব্যর্থ করা হলো

 

কথা হলো  পাকিস্তান মুজিবের লক্ষ্য গণতন্ত্র বাঁচানো ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলে কখনো একাত্তরের যুদ্ধের প্রয়োজন পড়তো না।  কারণ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভূট্টো এবং অন্যান্য দলের নেতারা মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে রাজী ছিল। কিন্তু রাজী ছিল না মুজিব ও তার দলের নেতাকর্মীরা। কারণ ২৫ মার্চ সামরিক এ্যাকশনের বহু আগে ৩ মার্চ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিল। এবং সিরাজুল আলম খান, আসম রব, আব্দুর রাজ্জাকের মত নেতারা মুজিবকে চাপ তারা দিচ্ছিল ইয়াহিয়া ও ভূট্টোর সাথে আলোচনা বর্জন করতে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করতে। এসব নেতারা এমন কি মুজিবের স্ত্রীকে দিয়েও মুজিবের উপর চাপ দিয়েছিল ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা পরিহার করতে – ছাত্রনেতারা সেসব কথা নিজেরাই প্রকাশ করেছে।

 

বস্তুত আলোচনা পরিহারের পথটি ছিল খোদ মুজিবেরও। সর্বশেষে শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার কাছে দাবী তুলেছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন ও সামরিক বাহিনী তুলে নিয়ে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের। পাকিস্তানর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টিই মুজিব আলোচনা থেকেই বাদ দেয়।  ইয়াহিয়ার কাছে মুজিবের সে প্রস্তাব যুদ্ধ ছাড়াই বিচ্ছিন্নতার কৌশল মনে হয়েছিল। এতে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে। মুজিবের অনুসারীরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে যুদ্ধ শুরু করে। এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীও সে যুদ্ধে জড়িত হয়। বস্তুত এটিই ছিল আগর তলা ষড়যন্ত্রের রোডম্যাপ যা বিজয় পায় ১৬ ডিসেম্বর।  ফলে একাত্তরের যুদ্ধ এবং যুদ্ধজনীত যত প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য দায়ী শেখ মুজিব ও ভারত। কারণ যুদ্ধ কখনোই ফুলের মালা নিয়ে হাজির হয়না।  যুদ্ধ মানেই প্রানহানী ও ক্ষয়ক্ষতি। তাই যুদ্ধকে যারা অনিবার্য করে তারাই সে ক্ষয়ক্ষতির জন্য মূল দায়ী।             

 

 

যে সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেল

 

অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ কখনোই ভারতের অধিনত গোলাম রাষ্ট্র হতো না। ৫৪টি নদীর পানি ভারতের হাতে লুণ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্রকে কবরে যেত হতো না। এবং আলেমদের গণহত্যা ও ফাঁসির মুখে পড়তে হতো না। দেশের সেনানীবাসে নির্মিত হতো না আয়না ঘর। সংঘটিত হতো না পিলখানায় ৫৭ জন অফিসার হত্যা এবং শাপলা চত্বরের গণহত্যার কাণ্ড। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি পরিণত হতো ৪৪ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক রাষ্ট্রে। সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহ পেত পারমাণবিক অস্ত্রধারী একটি অভিভাবক রাষ্ট্র। সম্প্রতি (১৭/৯/২০২৫ তারিখে) তেল সম্পদ সমৃদ্ধ সৌদি আরবের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান। এটিকে অনেকে মুসলিম ন্যাটো বলছে –যা পাল্টে দিবে আগামী দিনের ভূ-রাজনীতি।

বিশ্বজুড়ে এখন নিরাপত্তা সংকট। বিলুপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন। ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে প্রায় দুই বছর ধরে। ইসরাইলকে থামানো যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকায় ইসরাইল অপ্রতিরোধ্য। সংকটই সমাধানের জন্ম দেয়। তাই অনিবার্য হয়ে উঠেছে মুসলিম ন্যাটা। আশা করা হচ্ছে, এ মুসলিম ন্যাটোতে অচিরেই যোগ দিবে কাতার, আমিরাত, ওমান ও কুয়েতসহ অনেক মুসলিম দেশ। যোগ দিতে পারে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিশর। কারণ ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়ার এবং সর্বশেষে কাতারের উপর ইসরাইলী হামলার পর উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা এখন মহা সংকটে।

কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি, কিন্তু তাতে ইসরাইলী মিজাইল থেকে কাতার বাঁচেনি। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়েই ইসরাইল কাতারে হামলা করেছে। ফলে ভয় ঢুকেছে সৌদি আরবসহ ও তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর। তাই কদর বেড়েছে পারমাণিক শক্তিধর পাকিস্তানের। এখন তারা শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে পাকিস্তানে। তাতে পাকিস্তানে বাড়বে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।  তাই ভারত ও ইসরাইলে কাঁপন শুরু হয়েছে।  পাকিস্তানের জনশক্তি, সামরিক শক্তি ও পারমাণবিক প্রযু্ক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যের অঢেল তেল সম্পদ এ মুসলিম ন্যাটোকে শক্তিশালী করবে। এবং পাশে থাকবে  মার্কিন বিরোধী চীন এবং রাশিয়া। মুসলিম বিশ্বের জন্য এটি এক নতুন সম্ভাবনা।

অখণ্ড পাকিস্তানের মাঝে আজ পূর্ব পাকিস্তান থাকলে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমগণ সুযোগ পেত বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্বের প্রতিরক্ষা নীতিতে প্রভাব ফেলার অভুতপূর্ব  সুযোগ। তখন বিলুপ্ত হতো ভারত ভীতি। পূর্ব পাকিস্তান পেত উপসাগরীয় দেশ থেকে বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। কিন্তু পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসাতে বাঙালি মুসলিমের সে বিশাল সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে। আর এতে প্রচণ্ড খুশি একমাত্র শয়তান এবং শয়তানের মিত্র ইসলামের শত্রু পক্ষ। কারণ, যেখানেই বাঙালি মুসলিমের ক্ষতি সেখানেই তাদের আনন্দ। মুসলিম উম্মাহ ও বাঙালি মুসলিমের প্রকৃত শত্রুগণ সে আনন্দ নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর এলে প্রতিবছর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শক্তির সাথে মিলে পাকিস্তান ভাঙা নিয়ে উৎসব করে। ২০/০৯/২০২৫

–ফিরোজ মাহবুব কামাল

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

একাত্তরে যুদ্ধকে যে ভাবে অনিবার্য করা হলো এবং সুযোগ যেভাবে হাতছাড়া হলো বাঙালি মুসলিমের

Update Time : ০৩:২২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 একাত্তরের যুদ্ধ যেভাবে ডেকে আনা হলো

 

একাত্তরের যুদ্ধ পাকিস্তান সরকার ডেকে আনেনি। কারণ সে মুহুর্তে পাকিস্তানের জন্য সেরূপ একটি যুদ্ধের প্রয়োজনই ছিলনা। একটি দেশের সরকার একমাত্র তখনই যুদ্ধ শুরু করে যখন শত্রু দেশ দ্বারা আক্রান্ত হয় অথবা নতুন দেশ জয়ের স্বপ্ন দেখে। একাত্তরে কোন নতুন দেশ দখলের স্বপ্ন পাকিস্তান সরকারের ছিল না যে যুদ্ধ করবে। আর যুদ্ধে প্রস্তুতি থাকলে কি পূর্ব পাকিস্তানে একাত্তরের মার্চ মাসে মাত্র এক ডিভিশন সৈন্য অর্থাৎ ১৩ বা ১৪ হাজার সৈন্য রাখতো। বরং সে সময় ইয়াহিয়া সরকার ব্যস্ত ছিল নির্বাচন শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের । অথচ মুজিবের এজেন্ডা ছিল পাকিস্তান ভাঙা ও বিচ্ছিন্ন এক বাংলাদেশ নির্মাণ। তাই  ১৯৭১’য়ের যুদ্ধ ডেকে আনে শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ। কারণ যুদ্ধ ছাড়া মুজিবের পক্ষে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ বানানো অসম্ভব ছিল। ফলে তার পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না ক্ষমতায় যাওয়া। অথচ নির্বাচনি বিজয়ের পর ক্ষমতাপাগল মুজিবের পক্ষে ক্ষমতার বাইরে থাকা অসম্ভব ছিল। তাই আওয়ামী লীগের লোকেরাই মুজিবকে ক্ষমতায় বসাতে ভারতকে যুদ্ধে ডেকে আনে।

তাছাড়া মুজিবকে ক্ষমতায় বসানোর মধ্যে ভারতেরও বিশাল স্বার্থ ছিল। মুজিবকে ক্ষমতায় বসানোর অর্থই ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ভারতের পূর্ণ দখলদারি ও লুটপাটের অবাধ সুযোগ -যা মুজিব আমলে দেখা গেছে। বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে মুজিব যা কিছু নির্বাচল কালে বলেছে তা ছিল ভোটারদের ধোকা দেয়ার কৌশল মাত্র। গণতন্ত্রের প্রতি এতো দরদ থাকলে মুজিব কেন গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিবে কেন? কেন রক্ষিবাহিনী দিয়ে হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করবে? আর অর্থনৈতিক মুক্তি? মুজিব তো দিয়েছে চুরি-ডাকাতি, লুণ্ঠন, কালোবাজারী ও ভারতে সম্পদ পাচারের অর্থনীতি। ধ্বংস করেছে পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কলকারখানা ও ব্যাংকগুলিকে। ৮ আনা সের চাল খাওয়ানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে এনেছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ -যাতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষে প্রাণহানী হয়।       

 

যুদ্ধ কিভাবে অনিবার্য হলো?

 

মুজিবের রাজনীতির মূল এজেন্ডা ছিল পাকিস্তান ভাঙা ও এক বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ সৃষ্টি। সেটি ১৯৪৭ সালে থেকেই। মুজির তার সে এজেন্ডার কথাটি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারীর সোহরাওয়ার্দী উদ্দানের জনসভায় বলেছিল। এ নিবন্ধের লেখক মুজিবের সে উক্তিটি সেদিন নিজ কানে শুনেছিল। সেদিন মুজিবের উক্তিটি ছিল: “স্বাধীন বাংলাদেশ বানানোর লড়াই ১৯৭১ থেকে নয়, ১৯৪৭ থেকে শুরু করেছিলাম।” পাকিস্তান ভাঙার সে অভিন্ন এজেন্ডাটি ছিল ভারতেরও। ষাটের দশক থেকেই মুজিব ভারতীয় RAW এজেন্টদের সাথে মেলে পাকিস্তান ভাঙার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিল। ইতিহাসে এটিই আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানী সামরিক গোয়েন্দাদের কাছে মুজিবের সে ষড়যন্ত্র ধারা পড়ে। মুজিবকে গ্রেফতারা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।   

 

১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু মামলা তুলে নিলেও পাকিস্তান ভাঙার শেখ মুজিব ও ভারতের যৌথ প্রজেক্টের মৃত্যু হয়নি। বরং ১৯৭০ সালে মুজিবের বিশাল নির্বাচনী বিজয় সে আগরতলা প্রজেক্টে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। পাকিস্তান ভাঙার সে এজেন্ডাকে সফল করতেই মুজিব ও ভারত উভয়ে মিলে  ১৯৭১’য়ের যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই যুদ্ধে জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ রুখতে সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

ভারতের পক্ষ থেকে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ যে অনিবার্য ও অতি আসন্ন -সেটি প্রেসিডন্ট ইয়াহিয়া খান একাত্তরের সেপ্টম্বরে মাসে টের পান। তখন সে যুদ্ধ এড়াতে ঐ মাসেই তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার মি. জয় কুমার অটালকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে রেফারেন্ডামের প্রস্তাব দিয়ে ইন্দিরার সাথে আলোচনার কথা বলেন। মি. অটাল দিল্লি যান। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি প্রেসিডন্ট ইয়াহিয়া সে প্রস্তাব নাকোচ করে বলেন, ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিজয়ই সে স্বাধীনতার প্রশ্নে জনগণের রায়। অতএব নতুন কোন রেফারেন্ডামের প্রয়োজন নাই। (সূত্র:  Richard Sisson and Leo E. Rose; War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh, University of California Press, 1990.)

 

অথচ ইন্দিরা গান্ধির সে বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনটি স্বাধীনতার প্রশ্নে হয়নি। সে নির্বাচন হয়েছিল ৬ দফা ভিত্তিক স্বায়ত্বশাসন ও আঞ্চলিক বৈষম্যের ইস্যুতে। ইন্দিরা গান্ধি সে প্রস্তাব মেনে নিলে একাত্তরের রক্তাক্ত যুদ্ধ সহজেই এড়ানো যেত। তখন পাকিস্তানের হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র, সামরিক যান, ট্যাংক ও অন্যান্য মালামাল বাংলাদেশে থেকে যেত। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা দেয়ার নামে বাংলাদেশকে ভারতের প্রতি নতজানু হতে হতো না। সবই ঘটেছে ভারতের পরিকল্পনা মাফিক। ইয়াহিয়ার প্রস্তাব নাকোচ করে ভারত একটি যুদ্ধকে অনিবার্য করলো। পরিতাপের বিষয়, এ নিয়ে বাংলাদেশের বাঙালি ফ্যাসিস্ট, বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ও বাঙালি কম্যুনিস্টগণ খামোশ। তারা একাত্তরের যুদ্ধের জন্য দোষ চাপায় পাকিস্তানের ঘাড়ে।   

 

 

ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা যেভাবে ব্যর্থ করা হলো

 

কথা হলো  পাকিস্তান মুজিবের লক্ষ্য গণতন্ত্র বাঁচানো ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলে কখনো একাত্তরের যুদ্ধের প্রয়োজন পড়তো না।  কারণ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভূট্টো এবং অন্যান্য দলের নেতারা মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে রাজী ছিল। কিন্তু রাজী ছিল না মুজিব ও তার দলের নেতাকর্মীরা। কারণ ২৫ মার্চ সামরিক এ্যাকশনের বহু আগে ৩ মার্চ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিল। এবং সিরাজুল আলম খান, আসম রব, আব্দুর রাজ্জাকের মত নেতারা মুজিবকে চাপ তারা দিচ্ছিল ইয়াহিয়া ও ভূট্টোর সাথে আলোচনা বর্জন করতে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করতে। এসব নেতারা এমন কি মুজিবের স্ত্রীকে দিয়েও মুজিবের উপর চাপ দিয়েছিল ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা পরিহার করতে – ছাত্রনেতারা সেসব কথা নিজেরাই প্রকাশ করেছে।

 

বস্তুত আলোচনা পরিহারের পথটি ছিল খোদ মুজিবেরও। সর্বশেষে শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার কাছে দাবী তুলেছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন ও সামরিক বাহিনী তুলে নিয়ে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের। পাকিস্তানর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টিই মুজিব আলোচনা থেকেই বাদ দেয়।  ইয়াহিয়ার কাছে মুজিবের সে প্রস্তাব যুদ্ধ ছাড়াই বিচ্ছিন্নতার কৌশল মনে হয়েছিল। এতে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে। মুজিবের অনুসারীরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ভারতের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে যুদ্ধ শুরু করে। এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীও সে যুদ্ধে জড়িত হয়। বস্তুত এটিই ছিল আগর তলা ষড়যন্ত্রের রোডম্যাপ যা বিজয় পায় ১৬ ডিসেম্বর।  ফলে একাত্তরের যুদ্ধ এবং যুদ্ধজনীত যত প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য দায়ী শেখ মুজিব ও ভারত। কারণ যুদ্ধ কখনোই ফুলের মালা নিয়ে হাজির হয়না।  যুদ্ধ মানেই প্রানহানী ও ক্ষয়ক্ষতি। তাই যুদ্ধকে যারা অনিবার্য করে তারাই সে ক্ষয়ক্ষতির জন্য মূল দায়ী।             

 

 

যে সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেল

 

অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ কখনোই ভারতের অধিনত গোলাম রাষ্ট্র হতো না। ৫৪টি নদীর পানি ভারতের হাতে লুণ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্রকে কবরে যেত হতো না। এবং আলেমদের গণহত্যা ও ফাঁসির মুখে পড়তে হতো না। দেশের সেনানীবাসে নির্মিত হতো না আয়না ঘর। সংঘটিত হতো না পিলখানায় ৫৭ জন অফিসার হত্যা এবং শাপলা চত্বরের গণহত্যার কাণ্ড। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি পরিণত হতো ৪৪ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক রাষ্ট্রে। সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহ পেত পারমাণবিক অস্ত্রধারী একটি অভিভাবক রাষ্ট্র। সম্প্রতি (১৭/৯/২০২৫ তারিখে) তেল সম্পদ সমৃদ্ধ সৌদি আরবের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান। এটিকে অনেকে মুসলিম ন্যাটো বলছে –যা পাল্টে দিবে আগামী দিনের ভূ-রাজনীতি।

বিশ্বজুড়ে এখন নিরাপত্তা সংকট। বিলুপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন। ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে প্রায় দুই বছর ধরে। ইসরাইলকে থামানো যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকায় ইসরাইল অপ্রতিরোধ্য। সংকটই সমাধানের জন্ম দেয়। তাই অনিবার্য হয়ে উঠেছে মুসলিম ন্যাটা। আশা করা হচ্ছে, এ মুসলিম ন্যাটোতে অচিরেই যোগ দিবে কাতার, আমিরাত, ওমান ও কুয়েতসহ অনেক মুসলিম দেশ। যোগ দিতে পারে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিশর। কারণ ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়ার এবং সর্বশেষে কাতারের উপর ইসরাইলী হামলার পর উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলির নিরাপত্তা এখন মহা সংকটে।

কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি, কিন্তু তাতে ইসরাইলী মিজাইল থেকে কাতার বাঁচেনি। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়েই ইসরাইল কাতারে হামলা করেছে। ফলে ভয় ঢুকেছে সৌদি আরবসহ ও তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর। তাই কদর বেড়েছে পারমাণিক শক্তিধর পাকিস্তানের। এখন তারা শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে পাকিস্তানে। তাতে পাকিস্তানে বাড়বে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।  তাই ভারত ও ইসরাইলে কাঁপন শুরু হয়েছে।  পাকিস্তানের জনশক্তি, সামরিক শক্তি ও পারমাণবিক প্রযু্ক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যের অঢেল তেল সম্পদ এ মুসলিম ন্যাটোকে শক্তিশালী করবে। এবং পাশে থাকবে  মার্কিন বিরোধী চীন এবং রাশিয়া। মুসলিম বিশ্বের জন্য এটি এক নতুন সম্ভাবনা।

অখণ্ড পাকিস্তানের মাঝে আজ পূর্ব পাকিস্তান থাকলে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমগণ সুযোগ পেত বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্বের প্রতিরক্ষা নীতিতে প্রভাব ফেলার অভুতপূর্ব  সুযোগ। তখন বিলুপ্ত হতো ভারত ভীতি। পূর্ব পাকিস্তান পেত উপসাগরীয় দেশ থেকে বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। কিন্তু পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসাতে বাঙালি মুসলিমের সে বিশাল সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে। আর এতে প্রচণ্ড খুশি একমাত্র শয়তান এবং শয়তানের মিত্র ইসলামের শত্রু পক্ষ। কারণ, যেখানেই বাঙালি মুসলিমের ক্ষতি সেখানেই তাদের আনন্দ। মুসলিম উম্মাহ ও বাঙালি মুসলিমের প্রকৃত শত্রুগণ সে আনন্দ নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর এলে প্রতিবছর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শক্তির সাথে মিলে পাকিস্তান ভাঙা নিয়ে উৎসব করে। ২০/০৯/২০২৫

–ফিরোজ মাহবুব কামাল