ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে বাংলাদেশ কেন ব্যর্থ হলো? (পর্ব-১)
- Update Time : ০৮:৪৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ৩৮ Time View

ফিরোজ মাহবুব কামাল
পাকিস্তানের ব্যর্থতায় বাঙালি মুসলিমদের দায়
রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কৃষি উন্নয়ন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, সেতু ও কলকারখানা নির্মাণ নয়; বরং সেটি হলো দায়িত্ববান নাগরিক নির্মাণ। বড় বড় সাম্রাজ্য ভেঙে গেছে যখন সেসব সাম্রাজ্যে যথেষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল, বিশাল সামরিক বাহিনী এবং উন্নত ভৌতিক অবকাঠামো ছিল। রাষ্ট্র ভেঙে যায় যদি নাগরিকদের মাঝে সুস্থ দর্শন, দেশপ্রেম, সচেতনতা ও চরিত্র নির্মাণের কাজটি না হয়। তখন বিলুপ্ত হয় জনগণের মাঝে সংহতির সেতুবন্ধন। ইসলাম যখন শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়েছে এবং সে রাষ্ট্রকে দ্রুত এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে বিস্তৃত করেছে, তখন সে রাষ্ট্রের শুরুটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়ে হয়নি। উন্নত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোও নির্মিত হয়নি। শুরু হয়েছে উন্নত মানব নির্মাণ দিয়ে। বরং বলা যায় মানব নির্মাণে সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কাজটি সে সময়েই হয়েছে। বস্তুত সে আমলেই নির্মিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ।
পাকিস্তানের ব্যর্থতা নিয়ে যে কোন আলোচনায় সর্বপ্রথম আলোচনা করতে হয় বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতা নিয়ে। কারণ তারাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক। রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের সাফল্যের অর্থ, সমগ্র রাষ্ট্রের সাফল্য; আর সংখ্যাগরিষ্ঠের ব্যর্থতার অর্থ সমগ্র রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। পূর্ব পাকিস্তানীরা ছিল পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ; ফলে তাদের দায়ভারটি ছিল সবচেয়ে বেশী। ফলে পাকিস্তানের ব্যর্থতার জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী তারাই। তাই পাকিস্তানের ব্যর্থতার জন্য শুধু পশ্চিম পাকিস্তানীদের দোষ আবিষ্কার করলে পাকিস্তানের ব্যর্থতার কারণটি বুঝা যাবে না। অথচ অধিকাংশ বাঙালি পাকিস্তানী পাকিস্তানের ব্যর্থতার সকল দায় অবাঙালি পাকিস্তানীদের ঘাড়ে চাপায়। যেন নিজেরা নির্দোষ; শুধু ভুক্তভোগী। সেটি বাঙালি পাকিস্তানীদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সহজ কৌশল।
ব্যর্থতা মানব উন্নয়নে
অবাঙলি পাকিস্তানীদের ন্যায় বাঙালি পাকিস্তানীদেরও মূল ব্যর্থতাটি ছিল উন্নত মানব রূপে বেড়ে উঠায় ব্যর্থতা। এটিই ছিল পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। আর সে ব্যর্থতা ভয়ানক রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ডেকে আনে। এমন কি সে ব্যর্থতার কারণে ভারতের ন্যায় ভয়নাক বিদেশী শত্রুও পাকিস্তানের মাটিতে প্রবেশের সুযোগ পায়। ভারত ১৯৪৭ থেকে সেরূপ একটি মওকার অপেক্ষায় ছিল। যে কোন রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় মূলত মানব উন্নয়নে ব্যর্থতার কারণে। পাকিস্তানের মূল সমস্যা হলো, যে মহান ব্রত ও ভিশন নিয়ে দেশটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, পাকিস্তানের জনগণ সে ব্রত ও ভিশন নিয়ে সামনে এগুনোর মত বুদ্ধিবৃত্তিক ও চারিত্রিক যোগ্যতার অধিকারী ছিল না। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে নবীজী (সা:)’ সাফল্যের মূল কারণ, তিনি যোগ্য মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন মদিনায় রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ শুরু করার আগেই -সেটি মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান কালে। সে সুযোগ মুসলিম লীগ পায়নি। মুসলিম লীগ কাজ করেছে ব্রিটিশ শাসনের সেক্যুলার পরিবেশে। এবং নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল সেক্যুলার লোকেদের নিয়েই।
রাষ্ট্রের সর্ববিধ উন্নয়নে মানব উন্নয়ন ইঞ্জিনের কাজ করে। উন্নত মানের মানবগণ সমগ্র জনগণকে সাথে নিয়ে সামনে এগুয়। এ পৃথিবী পৃষ্ঠে সকল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এসেছে মানব উন্নয়নের পথ ধরেই। মানব উন্নয়নের সে কাজটি সম্পন্ন হয় চেতনার ভূবনে পরিশুদ্ধি সাধনের মধ্য দিয়ে। এটি আরেক মহাযুদ্ধ। অবিরাম যুদ্ধ এখানে জনগণের চিত্তের ভূগোল দখলে নেয়ার ও সে ভূগোল বিশুদ্ধ করার। এ যুদ্ধটি ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। এ যুদ্ধে মোক্ষম অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন। আল্লাহ তায়ালা এ যুদ্ধকে সুরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াতে সবচেয়ে বড় জিহাদ বলেছেন। ভূ-রাজনৈতিক দখলদারি আসে এ যুদ্ধে বিজয়ের পথ ধরে। মানব মনে পরিশুদ্ধি আনে কুর’আনের জ্ঞান। আর পরিশুদ্ধ মনের মানুষেরাই পরিশুদ্ধি আনে সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে। এবং গড়ে তোলে সমৃদ্ধ সভ্যতা। নবীজী (সা;) সে যুদ্ধটি তার মক্কী জীবনের ১৩ বছর ধরে করেছেন। এটিই হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের রোডম্যাপ। কিন্তু পাকিস্তান নবীজী (সার)’র রোডম্যাপের সে অংশটুকু অতিক্রম করেনি। ফলে গোড়াতেই ত্রুটি থেকে যায়।
মানব কল্যাণে মহান রব’য়ের আয়োজনটি অতি বিশাল ও সুপরিকল্পিত। সুস্থ দেহ নিয়ে বেড়ে উঠার জন্য যেমন অবারিত আলো-বাতাস, ফলমূল, খাদ্য ও পানীয় দিয়েছেন, তেমনি চিত্তের পরিশুদ্ধির জন্য দিয়েছেন পবিত্র কুর’আন। পাখি যেমন দুটি ডানার একটি ভেঙে গেলে উড়তে পারে না, তেমনি মানুষ শুধু দৈহিক বলে বড় কিছু করতে পারে না। বড় কিছু করার জন্য সুস্থ দেহ যেমন চাই, তেমনি চাই পরিশুদ্ধ মন। তাই যারা কুর’আনকে বাদ দিয়ে এগুতে চায়, তারা বেশী দূর এগুতে পারে না। তারা ইতিহাস গড়ে চরম ব্যর্থতার। পাশ্চাত্যের ইতিহাস সে ব্যর্থতায় ভরপুর। এবং মুসলিমদের ব্যর্থতার ইতিহাসও অতি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক। শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ কুর’আনকে বাদ দিয়ে বিগত প্রায় হাজার বছর ধরে শুধু ব্যর্থতারই ইতিহাস গড়েছে। সে ব্যর্থতা নিয়ে নীচে নামতে নামতে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৯৩টি রাষ্ট্রকে হারিয়ে দুর্বৃত্তিতে ৫ বার প্রথম হয়েছে। এই হলো বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতার নমুনা।
একই রূপ মানবিক ব্যর্থতা নিয়ে ১৯৭১’য়ে বাঙালি মুসলিমগণ খণ্ডিত করেছে উপমহাদেশের মুসলিমদের স্বপ্নের পাকিস্তানকে। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশীরা এখনো বুঝতে পারছে না যে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক ও চরিত্রিক দিক দিয়ে প্রচণ্ড অসুস্থ। তাদের সে অসুস্থতার মূল কারণ, তাদের চেতনায় কুর’আনী জ্ঞানের ভয়নাক অপুষ্টি। একমাত্র পবিত্র কুর’আনের জ্ঞাই সে অপুষ্টি দূর করতে পারে। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, সে কুর’আন বুঝতে তারা অক্ষম। ফলে তারা অক্ষম কুর’আন থেকে পুষ্টি নিতে। ফলে তাদের সে রুগ্নতার দ্রুত আরোগ্যেরও কোন পথ নাই।
ব্যর্থতা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ায়
মানব উন্নয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো জ্ঞান। শুধু পানাহারে বেঁচে থাকা যায় বটে, কিন্তু তাতে মানবিক গুণে বাঁচা ও বেড়ে উঠার কাজটি হয়না। তখন অসম্ভব হয় মুসলিম রূপে বাঁচার কাজটিও। সে জ্ঞানহীনতায় বরং সম্ভাবনা থাকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হওয়ার। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “উলাইয়িকা কা’আল আনয়াম, বাল হুম আদাল”। অর্থ: “এরাই হলো পশুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। যে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়, সে দেশে মানবরূপী পশুদের সংখ্যা যে বিশাল -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? এমন দেশেই তো আয়নাঘর নির্মিত হয়। গুম, খুন, গণহত্যা ও নির্বাচনের দিনে ভোটডাকাতি হয়। সে অভিশাপ থেকে বাঁচাতেই জ্ঞানার্জন ইসলামে ফরজ। এ ফরজ আদায় না হলে শুধু মুসলিম হওয়া নয়, মানব হওয়ার কাজটিও স ফল হয়না।
মুসলিমদের জন্য জ্ঞানের দুটি প্রধান উৎস হলো: এক). পরিত্র কুর’আন ও হাদীস; দুই). ইতিহাস বিজ্ঞান। মুসলিমকে জ্ঞানের তালাশ করতে হয় উভয় উৎস থেকেই। কুর’আন-হাদীসের পর জ্ঞানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হলো ইতিহাস বিজ্ঞান। ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয় না তারা একই বিপর্যয়ে বার বার পড়ে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার তাগিদ দিয়ে হুকুম দেয়া হয়েছে:
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌۭ فَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে বহু যুগ অতীত হয়ে গেছে; অতঃপর ভ্রমন করো জমিনে উপর, এবং অবলোকন করো সত্য অস্বীকারকারীদের সাথে কি হয়েছিল।”-(সুরা আল ইমরান ১৩৭)।
ইতিহাসের মধ্য দিয়ে মৃতরা কথা বলে; তারা ভয়ানক ব্যর্থতা ও বিপর্যের পথগুলির ব্যাপারে জীবিতদের সাবধান করে। সে সাথে পথ দেখায় সফলতারও। বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতার ইতিহাসে ভাবনার বিষয় যেমন অনেক; তেমনি শিক্ষা নেয়ার বিষয়ও অনেক। তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা তো তারাই নিতে পারে, যারা ইতিহাস ঘেঁটে সে ব্যর্থতাগুলিকে আবিষ্কার করতে জানে এবং সেগুলি নিয়ে ভাবতে শেখে। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা বিশাল। তারা যেমন নিজেদের ব্যর্থতাগুলির আবিষ্কারে আগ্রহী নয়, তেমনি আগ্রহী নয সেগুলি নিয়ে ভাবতে ও শিক্ষা নিতে। এমন জাতিরাই বার বার ব্যর্থতার ইতিহাস গড়ে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই ১৯৭১’য়ে বাঙালি মুসলিমগণ পৌত্তলিক কাফিরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করে। অথচ এই পৌত্তলিকগণই মুসলিমদের উপর নির্যাতন ও শোষনে ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনামলে ইংরেজদের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিল। ইংরেজ শাসনামলে বাঙালি মুসলিমদের কাঁধে জুলুমের দুটি নিষ্ঠুর জোয়াল ছিল। একটি ছিল ব্রিটিশের এবং অপরটি ছিল হিন্দু জমিদারদের। হিন্দু জমিদারদের জোয়ালটি ছিল অধিক নিষ্ঠুর। পাকিস্তান সে জোয়াল দুটি থেকে বাঙালিম মুসলিমদের মুক্তি দিয়েছিল। বিলুপ্ত করেছিল জমিদারি। কৃষকদের জমির মালিক বানিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ সে ইতিহাস সম্পূর্ণ ভুলে যায় এবং একাত্তরে তারা আবার ভারতীয় হিন্দুদের কোলে গিয়ে উঠে। এই হলো বাঙালি মুসলিমের ইতিহাস বিস্মৃতি।
পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার বড় কারণ হলো বাঙালি মুসলিমদের এই ইতিহাস বিস্মৃতি। এরূপ ইতিহাস বিস্মৃতির পরিণাম আদৌ ভাল হয়নি। বাঙালি মুসলিমদের শুধু পাকিস্তানকেই হারাতে হয়নি, মুজিব ও হাসিনার শাসনামালে গোলামীর সে হিন্দু জোয়ালটি বাঙালি মুসলিমের ঘাড়ে আবাব ফিরে আসে। ফলে মুজিবের আমলে আসে বাকশালী ফ্যাসিবাদ, রক্ষিবাহিনীর গণহত্যা, সীমাহীন ভারতীয় লুট, দুর্নীতি এবং দুর্ভিক্ষে ১৫ লাখের মৃত্যু। হাসিনার আমলে নেমে আসে গুম, খুন, নৃশংস নির্যাতন, গণহত্যা, সেনা হত্যা, ভোটডাকাতি, আয়নাঘর, ফাঁসি ও পরাধীনতার জোয়াল। ভারতীয় পরাধীনতার সে জোয়াল সরাতে ২০২৪’য়ের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতাকে বিশাল রক্তের কুরবানী দিতে হয়েছে। ১৪ শতের বেশী তরুনকে প্রান দিতে হয়েছে এবং ২২ হাজারের বেশীকে আহত হতে হয়েছে। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানীরা শত্রুদের চিনতে সে ভুল করেনি।
ব্যর্থতা নেতা নির্বাচনে
একটি দেশের জনগোষ্ঠির যোগ্যতা ধরা পড়ে নেতা নির্বাচনে। হিটলারের ন্যায় নৃশংস ফ্যাসিস্টকে নির্বাচনে বিজয়ী করার পাপ ভয়ানক। দেশ তখন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তেমনি ভয়ানক পাপ হলো শেখ মুজিবের ন্যায় বাকশালি ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্রের খুনি, ভারতীয় এজেন্ট, ইসলামের শত্রু ও দুর্বৃত্তদের লালনকর্তাকে ভোট দেয়ার। তখন সে পাপ রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের ন্যায় মহা বিপর্যয় ডেকে আনে। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়র অন্যতম কারণ জনগণের নেতা নির্বাচনে ব্যর্থতা। সে ভুল যেমন পূর্ব পাকিস্তানীরা করেছে মুজিবকে ভোট দিয়ে, তেমনি পশ্চিম পাকিস্তানীরাও করেছে ভূট্টোকে ভোট দিয়ে। জনগণের ভোটদান দেখে বুঝা যায় তাদের মগজে ইসলামী চেতনাশূণ্যর মাত্রা কতটা প্রকট। কাউকে ভোট দেয়ার অর্থ তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া। যার ভাবনা ও তাড়না মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়া, সে কি কখনো তাঁর রব’য়ের শরিয়ার ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী সেক্যুলারিস্ট নেতাকে ভোট দিতে পারে? ভোট দিলে সে কি মুসলিম থাকে? মুজিবের মত দুর্বৃত্তদের একমাত্র তারাই ভোট দিতে পারে যাদের রাজনৈতিক ভাবনায় পরকালে জবাবদেহীতার ভয় নাই।
অথচ বাঙালি মুসলিমের ভোট দেয়া দেখে মনে হয়, তাদের মনে আদৌ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয়তর হওয়ার ভাবনা নাই। তাদের ভাবনা হলো, পছন্দের কোন সেক্যুলারিস্ট বা বাঙালি ফ্যাসিস্ট প্রার্থীকে বিজয়ী করা -যারা শরিয়া আইন ও আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। এমন প্রার্থীরা যে শয়তানের খলিফা -সে বোধটুকুও তাদের নাই। তাদের মগজে যা কাজ করে তা হলো ইহজাগতিক স্বার্থ প্রাপ্তির ভাবনা। সে ভাবনা থেকেই এমন বাঙালি মুসলিমগণ পাকিস্তান আমলে ফ্যাসিস্ট মুজিব এবং বাংলাদেশ আমলে সেক্যুলার জিয়া, স্বৈরাচারি এরশাদ ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার ন্যায় অপরাধীদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে ও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে তাদের ইসলাম বিরোধী রাজনীতিকে। ইসলামের সাথে তাদের এ গাদ্দারীর কারণেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে নবীজী (সা:) প্রতিষ্ঠিত ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়নি। ফলে পাকিস্তান যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ব্যর্থতার পথে ধাবিত হয়েছে বাংলাদেশ।
























