১১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

ইসলামী ব্যাংকের ‘গোপন ছাঁটাই’ বন্ধ ও কর্মীদের পুনর্বহালের দাবি: চট্টগ্রামে তীব্র ক্ষোভ

Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫৯ Time View
আনিছুর রহমান 
নিজস্ব (প্রতিবেদক) চট্টগ্রাম:
​চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ: শ্রম আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণহারে বরখাস্ত এবং শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (IBBL) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ইং-এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী কর্মীরা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এই বিতর্কিত প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দু এখন চট্টগ্রাম।
কর্মকর্তারা ২৭ সেপ্টেম্বর এই বিতর্কিত পরীক্ষাটিকে আসলে গোপন ছাঁটাই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা শ্রম আইন, ব্যাংকের সার্ভিস রুলস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সংবাদ সম্মেলনের পরে তারা প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমকে এই বিষয়ে একটা স্মারকলিপি দেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
​আঞ্চলিকতার প্রশ্ন ও ছাঁটাইয়ের শিকার কর্মীদের দাবি
​আন্দোলনরত কর্মীদের অভিযোগের মধ্যে আঞ্চলিকতার বিষয়টিও জোরালোভাবে উঠে এসেছে। অনেকের মন্তব্য, এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলত “চট্টগ্রামের ছেলেদের ইসলামী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত” করা হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, কেন একমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের টার্গেট করে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে? ​ভুক্তভোগী কর্মীদের মূল দাবিগুলো হলো: ​হাইকোর্টের রায় মেনে বিতর্কিত এই পরীক্ষা বাতিল করে নিয়মিত পদোন্নতি পরীক্ষা চালু করতে হবে। ​ছাঁটাই আতঙ্কে থাকা কর্মীদের চাকরি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
​ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও চলমান আতঙ্ক ​অভিযোগ ও প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই পরীক্ষা আয়োজনে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই এবং এটি কোনো ছাঁটাই প্রক্রিয়া নয়। তাঁরা বলছেন, মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হবেন না। ব্যাংকিং কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এই মূল্যায়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে। তবে, কর্তৃপক্ষের এমন বক্তব্যের পরও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার মাঝে ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং তাঁরা তাঁদের চাকরি বাঁচাতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এবিষয়ে ​রাজনীতিবিদদের তীব্র নিন্দা: পুনর্বহালের দাবি জানালেন মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা
​চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে কর্মীর ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে অনেক রাজনীতিবিদ তাঁদের ভেরিফাইড ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে সরব হয়েছেন। তাঁরা মন্তব্য করেছেন, এই ধরনের কর্মী ছাঁটাই কোনো সভ্য দেশে ঘটতে পারে না এবং এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
​এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি কড়া স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি ছাঁটাইকৃত কর্মীদের পুনরায় চাকরি যোগদানের সুযোগ করে দেওয়া এবং অবিলম্বে তাঁদের পূর্ণবহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।
​মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ​”আমাদের চট্টগ্রামের সন্তানদের প্রতি ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পরিষদের বিমাতা সূলভ অন্যায় আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৭/৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বিনা-কারণে, বিনা-নোটিশে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে হয়রানি বা চাকরিচ্যূতির অপচেষ্টা অত্যন্ত অমানবিক। আমি ব্যাংকের অন্যায় আচরণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অন্যায় ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনর প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল। ইনশাআল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের দল আগামীতে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
​তাঁর মতো আরও অনেক রাজনীতিবিদই এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, যা এই ইস্যুটিকে আরও বেশি রাজনৈতিক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

ইসলামী ব্যাংকের ‘গোপন ছাঁটাই’ বন্ধ ও কর্মীদের পুনর্বহালের দাবি: চট্টগ্রামে তীব্র ক্ষোভ

Update Time : ০৫:১৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
আনিছুর রহমান 
নিজস্ব (প্রতিবেদক) চট্টগ্রাম:
​চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ: শ্রম আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণহারে বরখাস্ত এবং শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (IBBL) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ইং-এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী কর্মীরা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এই বিতর্কিত প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দু এখন চট্টগ্রাম।
কর্মকর্তারা ২৭ সেপ্টেম্বর এই বিতর্কিত পরীক্ষাটিকে আসলে গোপন ছাঁটাই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা শ্রম আইন, ব্যাংকের সার্ভিস রুলস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সংবাদ সম্মেলনের পরে তারা প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমকে এই বিষয়ে একটা স্মারকলিপি দেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
​আঞ্চলিকতার প্রশ্ন ও ছাঁটাইয়ের শিকার কর্মীদের দাবি
​আন্দোলনরত কর্মীদের অভিযোগের মধ্যে আঞ্চলিকতার বিষয়টিও জোরালোভাবে উঠে এসেছে। অনেকের মন্তব্য, এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলত “চট্টগ্রামের ছেলেদের ইসলামী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত” করা হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, কেন একমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের টার্গেট করে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে? ​ভুক্তভোগী কর্মীদের মূল দাবিগুলো হলো: ​হাইকোর্টের রায় মেনে বিতর্কিত এই পরীক্ষা বাতিল করে নিয়মিত পদোন্নতি পরীক্ষা চালু করতে হবে। ​ছাঁটাই আতঙ্কে থাকা কর্মীদের চাকরি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
​ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও চলমান আতঙ্ক ​অভিযোগ ও প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই পরীক্ষা আয়োজনে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই এবং এটি কোনো ছাঁটাই প্রক্রিয়া নয়। তাঁরা বলছেন, মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হবেন না। ব্যাংকিং কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এই মূল্যায়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে। তবে, কর্তৃপক্ষের এমন বক্তব্যের পরও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার মাঝে ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং তাঁরা তাঁদের চাকরি বাঁচাতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এবিষয়ে ​রাজনীতিবিদদের তীব্র নিন্দা: পুনর্বহালের দাবি জানালেন মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা
​চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে কর্মীর ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে অনেক রাজনীতিবিদ তাঁদের ভেরিফাইড ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে সরব হয়েছেন। তাঁরা মন্তব্য করেছেন, এই ধরনের কর্মী ছাঁটাই কোনো সভ্য দেশে ঘটতে পারে না এবং এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
​এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি কড়া স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি ছাঁটাইকৃত কর্মীদের পুনরায় চাকরি যোগদানের সুযোগ করে দেওয়া এবং অবিলম্বে তাঁদের পূর্ণবহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।
​মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ​”আমাদের চট্টগ্রামের সন্তানদের প্রতি ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পরিষদের বিমাতা সূলভ অন্যায় আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৭/৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বিনা-কারণে, বিনা-নোটিশে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে হয়রানি বা চাকরিচ্যূতির অপচেষ্টা অত্যন্ত অমানবিক। আমি ব্যাংকের অন্যায় আচরণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অন্যায় ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনর প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল। ইনশাআল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের দল আগামীতে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
​তাঁর মতো আরও অনেক রাজনীতিবিদই এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, যা এই ইস্যুটিকে আরও বেশি রাজনৈতিক এবং জনগুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে