১০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

আত্মঘাতী নাশকতা নিয়ে বাঙালি মুসলিমের উৎসব

Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৭৮ Time View

———-ফিরোজ মাহবুব কামাল

বাঙালি ফ্যাসিস্টদের ফিতনা ও নাশকতা

একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ, ভোটডাকাতি, গণতন্ত্রের কবর, ভারতীয় লুট, ১৯৭৪’য়ের দুর্ভিক্ষ, গুম-খুন-ফাঁসি, আয়নাঘর, বারংবার গণহত্যার ন্যায় একাত্তর পরবর্তী গুরুতর বিপর্যয়গুলি বুঝতে হলে প্রথমে আওয়ামী বাঙালি ফ্যাসিস্টদের ফিতনার ভয়াবহ নীল নকশাটি বুঝতে হবে। ফিতনা হলো এক ভয়ংকর নাশকতার কাণ্ড। সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলেছেন। ফিতনার নাশকতাটি মুসলিম উম্মাহর সংহতি, সম্পৃতি ও ভূ-রাজনৈতিক ঐক্যের বিরুদ্ধে। শয়তানের এজেন্ডাই তাদের এজেন্ডা। মুসলিম ভূমিতে এরা বিজয় আনে শয়তানের খলিফাদের -যেমন পৌত্তলিক খলিফাদের বিজয় এনেছিল একাত্তরে। ফিতনা অসম্ভব করে পূর্ণ ইসলাম পালন। এবং অসম্ভব করে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়া। ফিতনার নাশকতটি সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। ফিতনার ফলে জন্ম দেয় সংঘাত, হানাহানী ও রক্তারক্তি পূর্ণ এক অস্থির পরিস্থিতি। ফিতনা হলো ফ্যাসিস্টদের হাতিয়ার। একাত্তরে বাঙালি ফ্যাসিস্টগণ এমন এক ফিতনাকে স্বাধীনতার যুদ্ধের নাম দিয়েছিল। ফিতনার নাশকতা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন হলো, ফিতনার শুরু কি ভাবে? ফিতনার শুরু ভাষা, বর্ণ, গোত্র,ফেরকা, শ্রেণী ইত্যাদি পরিচয় ভিত্তিক নাশকতার ফ্যাসিবাদী উম্মাদনা থেকে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব মাতৃভাষা থাকে। সে মাতৃভাষা হতে পারে একটি স্থানীয় ভাষা। কিন্তু যখন সে স্থানীয় ভাষাকে মুসলিম উম্মাহর মাঝে আঞ্চলিকতাবাদী বা জাতীয়তাবাদী বিভক্তি নির্মাণের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা হয় -তখনই সেটি ফিতনায় পরিণত হয়। বাংলা ভাষাকে ফিতনার হাতিয়ার বানিয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্টরা। সে ফিতনার শেষ পরিণতি হলো ১৯৭১’য়ের পাকিস্তানের বিভক্তি। তাতে বাংলাদেশ পরিণত হলো ভারতের পদতলে এক অধিকৃত রাষ্ট্রে। বাংলাদেশীদের এখনো বাঁচতে হয় ভারত ভীতি নিয়ে।

আল্লামা মহম্মদ ইকবাল ও কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্নাহ -উভয়েরই মাতৃভাষা ছিল। আল্লামা ইকবালের মাতৃভাষা ছিল পাঞ্জাবী, এবং জিন্নাহর মাতৃভাষা ছিল গুজরাতী। কিন্তু তারা নিজেদের স্থানীয় ভাষাকে বিভক্তির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার না করে পক্ষ নেন ভারতীয় মুসলিমদের আন্তর্জাতিক ভাষা উর্দুর। তাদের লক্ষ্য ছিল মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও সম্পৃতি। উর্দু ছিল ভারতের যে কোন ভাষার চেয়ে সমৃদ্ধ। মানুষে মানুষে বিভক্তি মানেই ফিতনা -যা বাধাগ্রস্ত করে ঐক্যবদ্ধ উম্মাহ রূপে বেড়ে উঠাকে। ফিতনা কেন গুরুতর অপরাধ -সেটি আজকের মুসলিমদের বর্তমান বিপর্যয়ের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বুঝা যায়।

ঈমানদারের দায় হলো, তাকে সর্বদা একতার সূত্র খুঁজতে হয় এবং সযত্নে দূরে থাকতে হয় বিভক্তি থেকে। সে দায়বোধ দেখা গেছে আল্লামা মহম্মদ ইকবাল ও কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্নাহর মাঝে। তাই তারা উর্দুকে বেছে নিয়েছেন। একই কারণে ভারতীয় হিন্দুরা বেছে নিয়েছে হিন্দিকে। কিন্তু বাঙালি মুসলিমদের কাছে আল্লামা ইকবাল ও মহম্মদ আলী জিন্নাহর আন্তর্জাতিকতা ভাল লাগেনি। ভাল লাগেনি তাদের ঐক্যের চেতনাও। মুসলিম উম্মাহর একতা, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার চেয়ে তাদের কাছে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে নিজেদের স্থানীয় ভাষার পরিচয় নিয়ে বাঁচার গর্ব। নিজেদের স্থানীয় ভাষা বাংলাকে তারা পাকিস্তান ভাঙার কাজে ফিতনা সৃষ্টির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে। তাদের সে ফিতনার রাজনীতিকে বিজয়ী করতে একাত্তরের ৩রা ডিসেম্বরে বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় হিন্দুত্ববাদী ভারত; সে যুদ্ধে ভারত সফল হয় পাকিস্তান ভাঙার মধ্য দিয়ে।                                                                                                                                            

 

সবচেয়ে বড় নিয়ামত এবং সবচেয়ে বড় ফিতনা

ফিতনার লক্ষ্য, মহান আল্লাহ তায়ালার যা চান -সেটিকে অসম্ভব করা। যুদ্ধ এখানে মহার রব’য়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, ভাষা, বর্ণ, ফেরকা, মজহাব ও আঞ্চলিক পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে ঈমানদারগণ ঐক্যবদ্ধ হোক। তিনি চান, মুসলিমগণ শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণ করে নিজেদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করুক। কারণ, তিনি চান মুসলিমদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা। আর সেগুলি নিশ্চিত করায় শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিকল্প নাই। এজন্যই নবীজী (সা:) শুধু ঈমানদার মানুষ গড়ার কাজ করেননি, বিশাল রাষ্ট্র গড়ার কাজও করেছিলেন। সে রাষ্ট্র পরবর্তীতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র ও বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়।

বিশাল রাষ্ট্রই হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এ নিয়ামতটি না থাকলে বিপুল সংখ্যায় মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করেও মুসলিমদের ইজ্জত, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বাঁচেনা। আজ কি মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা কম? পরিতাপে বিষয় হলো, সে নিয়ামতটি বিলুপ্ত হওয়ায় ১৫০ কোটির বেশী মুসলিম আজ পিতৃহারা শিশুর মত। গাজা, কাশ্মীর, আরাকানের মজলুম মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। ইন্তেকালের সময় নবীজী (সা:) যে রাষ্ট্রটি ছেড়ে যান তা ছিল বাংলাদেশের চেয়ে ১৫ গুণের চেয়ে বৃহৎ। কিন্তু সেটিও আজ ভেঙে সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, আমিরাত, কাতার, বাহরাইন -এ ৬টি রাষ্ট্রে বিভক্ত। নিয়ামতের যারা এভাবে খেয়ানত করে তারা কি কখনো কল্যাণ পায়? মুসলিমদের জন্য বৃহৎ রাষ্ট্র নির্মাণের গুরুত্ব বুঝাতে মহান রব ভৌগলিক বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন।

মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা হলো ভৌগলিক বিভক্তি। অথচ ১৯৭১’য়ে বিভক্তির সে ফিতনাকে বেছে নিয়েছিল বাঙালি মুসলিমগণ। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এটি হলো বাঙালি মুসলিমদের বড় নাশকতা -যার নেতৃত্ব দিয়েছিল ভারতীয় আগরতলা ষড়যন্ত্রের সহযোগী শেখ মুজিব। ১৯১৭ সালে সে অভিন্ন ফিতনার পথটি বেছে নেয় আরব মুসলিমগণ; ফলে ৪০ কোটি আরব আজ ২২টি আরব রাষ্ট্রে বিভক্ত। আরবগণ মুসলিমগণ এখন ভুগছে ভৌগলিক বিভক্তির প্রতিশ্রুত আযাব -যার প্রতিশ্রুতি শোনানো হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। বিভক্তি আরবদের এতোটাই দুর্বল করেছে যে ৬০ লাখ ইসরাইলী ইহুদীর হাতে তারা লাগাতর মার খাচ্ছে। ইসরাইল এখন আরব দেশগুলির যেখানে সেখানে ইচ্ছামত বোমা ফেলছে। সে ইসরাইলী হামলা ৪০ কোটি আরব নীরবে সইছে; কোন আরব রাষ্ট্রের সামর্থ্য নাই ইসরাইলী হামলার প্রতিরোধে খাড়া হওয়ার। আরবদের জানমাল, ইজ্জত, আবরুর নিরাপত্তা এখন ইসরাইলীদের দয়ার উপর।

 

স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভিক্ষার বিষয় নয়

ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের হাতে সম্পদ পাহাড় থাকার অর্থ ডাকাত দলকে আমন্ত্রণ করা। এর প্রমাণ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরব দেশগুলি। বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী এদেশগুলির কোন নিরাপত্তা নাই। মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে কাতার বিশ্বেব সেরা। কিন্তু সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাকাত রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় ঘাঁটি সেখানেই। অথচ কয়েক দিন আগে (৯ সেপ্টম্বর, ২০২৫) সেখানে ইসরাইল মিজাইল নিক্ষেপ করে ৬ জনকে হত্যা করেছে এবং ৪ জনকে আহত করেছে। হামলার জবাবে কাতার ইসরাইলের  দিকে একটি পাথর ছুড়ার সাহসও দেখাতে পারিনি। সে সামর্থ্যও কাতারের নাই। তাছাড়া ইসরাইলের উপর হামলার অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলা। সেটি ইরান সম্প্রতি বুঝেঝে।

ইসরাইল যদি কাতারের রাজ প্রাসাদের উপর বোমা বর্ষণ করে তবুও কি কাতার জবাব দিতে পারবে? কাতারের প্রধানমন্ত্রী অসহায়ের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে নিজেদের গদীর নিরাপত্তা ভিক্ষা করতে।  কিন্তু নিরাপত্তা কি পাবে? বুঝতে হবে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভিক্ষার বিষয় নয়, সেটি নিজ সামর্থ্যে অর্জনের বিষয়। সে সামর্থ্য না থাকলে গোলাম ও অপমান নিয়ে বাঁচতে হয়।  সে গোলামী ও অপমান শুধু কাতারের রাজ পরিবারে নয়, সমগ্র আরবদের। বুঝতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মদদপুষ্ট ইসরাইল। কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি থাকলেও সে বিমান ঘাঁটির কাজ কাতারের নিরাপত্তা দেয়া নয়। বরং সে ঘাঁটিটি নির্মিত হয়েছে ইসরাইল ও মার্কিনীদের স্বার্থ পাহারা দিতে।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্বে সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজ মাস্তান রাষ্ট্র। শাসকদের গদীর নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরব, কাতার, আমিরাত, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনের ন্যায় তেল সমৃদ্ধ দেশ থেকে প্রতিবছর শত শত বিলিয়ন ডলার চাঁদা সংগ্রহ করেছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতা হলো, ইসারাইলকে দিয়েছে কাতারের উপর হামলার অনুমতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ  হলো ইসরাইলের স্বার্থকে পাহারা দেয়া; কাতার, সৌদি আরব, আমিরাত বা অন্য কোন আরব রাষ্ট্রের স্বার্থ তার কাছে গুরুত্বহীন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে শক্তিশালী ইসরাইলী লবিস্ট প্রতিষ্ঠান; তাদের কথা শুনে চলে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ কংগ্রেস সদস্যগণ। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মেনে চলতে হয় কংগ্রেস সদস্যদের মতামতকে।

ইসরাইল জানিয়ে দিয়েছে যেখানেই হামাস নেতাদের উপস্থিতি দেখবে, সেখানেই হামলা করবে। ঘোষণা দিয়েছে প্রয়োজনে কাতারের উপর আবার হামলা করবে। সামরিক দিক দিয়ে ইসরাইল হলো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। ইসরাইলকে রুখবার সামর্থ্য কারো নাই। সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরান, তিউনিসিয়াসহ যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ইসরাইল হামলা করেছে। ইসরাইলের জন্মই অবৈধ। মার্কিনীদের মদদে ইচ্ছামত সীমানা বাড়িয়ে চলেছে।  ইসরাইল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আরবদের বিভক্তির কারণে। বিভক্তদের মহান আল্লাহ তায়ালা এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে  Two-state solution  প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। অথচ ইসরাইল জানিয়ে দিয়েছে তারা ফিলিস্তিন নামে কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিবেনা। আরো বলেছে ফিলিস্তিন একমাত্র ইহুদীদের। ফিলিস্তিনীদের জন্য ইসরাইল একটি মাত্র সমাধান পেশ করা হয়েছে; তা হলো ফিলিস্তিন থেকে নির্মূল।            

প্রশ্ন হলো, আজ ফিলিস্তিনসহ আরব বিশ্বে যা কিছু ঘটছে -তা বাংলাদেশের জন্য অতি শিক্ষণীয়। একই অবস্থা হতে পারে বাংলাদেশেরও। কারণ, ভারত হলো আরেক ইসরাইল। ১৯৪৭ সালে জন্ম থেকে ভারত তার সামরিক শক্তির জোরে ভূগোল বাড়িয়েই চলেছে। ফলে ভারতে হাতে অধিকৃত হয়েছে হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদড় ও কাশ্মীর। এ বিশ্বে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। শাসন একমাত্র তারই যার শক্তি আছে। দুর্বলকে তাই পরাধীনতা না মেনে উপায় থাকে না। এজন্যই যা কিছু মুসলিমদের দুর্বল করে -সেটিকে মহান আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন। এবং যা কিছু মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করে সেটিকে ফরজ করেছেন। এজন্যই ইসলামে বিভক্তি হারাম এবং ফরজ হলো একতা ও মুসলিম রাষ্ট্রের ভূগোলকে প্রতিরক্ষা দেয়া। এবং হারাম হলো মুসলিম রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্রতর করার প্রতিটি যুদ্ধ। অথচ একাত্তরে সে হারাম যুদ্ধের পথকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। 

 

দেশ ভাঙার ফিতনা কখনোই স্বাধীনতার যুদ্ধ হয় না

কিন্তু ফিতনার নায়কদের কাছে মুসলিম উম্মাহর একতা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত কখনো ভাল লাগেনা। ভাষা, বর্ণ ইত্যাদি নানা পরিচয়ে তারা বিভক্তি চায়। তাদের কারণে মুসলিম বিশ্ব টুকরো টুকরো হয়েছে ও শক্তিহীন হয়েছে। এবং হারিয়েছে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা। এরা জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরায় এবং তাদেরকে জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী ও বর্ণবাদী রূপে গড়ে তোলে। তারা মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে মুসলিমদের যুদ্ধে খাড়া করে। ১৯১৭ সালে এরা যেমন কাফির ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে উসমানিয়া খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তেমনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভাঙতে ভারতের পৌত্তলিক বাহিনীর সাথে মিলে যুদ্ধ করেছে। তাদের এজেন্ডা হলো, শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। উসমানিয়া খেলাফত ভেঙে গেছে, ইসরাইল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং পাকিস্তান খণ্ডিত হয়েছে বস্তুত ফিতনা সৃষ্টিকারীদের ফেতনা বিজয়ী হওয়াতে। তাই একাত্তরের যুদ্ধকে স্বাধীনতার যুদ্ধ বললে ভারতের সেবাদাস বাঙালি ফ্যাসিস্টদের সৃষ্ট ফিতনা এবং পৌত্তলিক ভারতের বিজয়কে মহামান্বিত করা হয়। তাতে খুশি হয় শয়তান এবং আযাব অনিবার্য হয় মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে।      

গণহত্যা নানা দেশে, নানা ভাবে ও নানা সময়ে ঘটেছে। বাংলাদেশে গণহত্যা যেমন শেখ হাসিনার আমলে বার বার ঘটেছে। তেমনি মুজিবের আমলেও ঘটেছে। গণহত্যা বার বার ঘটছে ভারতে। সেটি যেমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে, তেমনি খৃষ্টান, শিখ, আদিবাসী এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। বার বার গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়াসহ পৃথিবীর বহু দেশে। উমাইয়া, আব্বাসিয়া ও উসমানিয়া খেলাফতের আমলেও গণহত্যার কাণ্ড ঘটেছে। যখন কোন একটি বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাষা, গোত্র, দল ও বর্ণ ভিত্তিক পরিচয়ের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয় -আন্তর্জাতিক আইনে সেটিই হলো গণহত্যা। বাঙালি পরিচয়ের কারণে হত্যা করা হলে যেমন গণহত্যা; তেমনি বিহারী বা ইসলামী পরিচয়ের কারণে কাউকে বিনা বিচার হত্যা করা হলে সেটিও বিশুদ্ধ গণহত্যা। একাত্তরে বাঙালি ও বিহারীদের যেভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে সেটি ছিল গণহত্যা। হাসিনার আমলে ২০০৯ সালে পিলখানায় সেনাদের এবং ২০১৩সালে শাপলা চত্বরের মুসল্লিদের যেভাবে হত্যা করা হলো -সেটিও ছিল গণহত্যা। তেমনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ছাত্রদের যেভাবে হত্যা করা হলো -সেটিও ছিল text book case of genocide তথা নির্ভেজাল গণহত্য।

 

ফিতনা কেন মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়। তবে ফিতনাকে কেন সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনে সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে মানব হত্যার চেয়েও জঘন্যতম অপরাধ বললেন -সেটি গভীর ভাবে ভাববার বিষয়। বিষয়টি গবেষণার বিষয়ও। ফিতনার নাশকতা গভীর, বহুমুখী ও সর্বনাশী। গণহত্যার লক্ষ্য, কিছু মানুষকে এ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে নির্মূল করা। কিন্তু সে হত্যাকাণ্ডের নায়কদের লক্ষ্য কখনোই কাউকে জাহান্নামে নেয়া নয়। কিন্তু জাহান্নামে নেয় ফিতনা সৃষ্টিকারীরা। কারণ, তাদের যুদ্ধ মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা বিরুদ্ধে। ফিতনা মাত্রই শয়তানের এজেন্ডা; লক্ষ্য, মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন। জাতি ধ্বংস হয় মানুষের চেতনা-চরিত্র ধ্বংসের কারণে। বিপুল সংখ্যায় প্রাণনাশ ঘটে সুনামী, ভূমিকম্প, মহামারী, সাইক্লোনে। কিন্তু তাতে একটি দেশ বা সভ্যতা ধ্বংস হয় না। কারণ সেগুলি মানুষের চেতনা, চরিত্র, ঈমান, আক্বীদা ধ্বংস করে না। 

ফিতনার নায়কগণ শুধু মানব গণহত্যায় থেমে থাকে না। একাত্তরে এদের হাতে শুধু লক্ষাধিক বিহারী এবং হাজার হাজার পাকিস্তানপন্থী রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা নিহত হয়নি। তারা বরং প্রচণ্ড নাশকতা ঘটিয়েছে বাংলাদেশীদের ঈমান, আক্বীদা, আমল, চরিত্র, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষেত্রেও। তারা প্লাবন এনেছে অশ্লিলতা, গুম, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার মার্কেট লুট, ফাঁসি ও আয়না ঘরের সংস্কৃতিতে। হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী ও চোর-ডাকাত হওয়ার পাশাপাশি তারা জনগণকে বাধা দিয়েছে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলায়। শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা এবং তাদের অনুসারীরা শুধু গণনিপীড়ন ও গণহত্যাই চালায়নি, অসম্ভব করেছিল পূর্ণ ইসলাম পালন ও ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠা। ঘরে জিহাদ বিষয়ক বই রাখা, ওয়াজের মাহফিল করা, কুর’আনের তাফসীর করা, মিডিয়ায় ইসলামের পক্ষে কথা বলা, শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী তোলা, ইসলামের নামে সংঘটিত হওয়া  -এগুলি মুজিব যেমন নিষিদ্ধ করেছিল, তেমনি হাসিনাও নিষিদ্ধ করেছিল। ইসলামের পক্ষে এরূপ কর্মগুলি পরিণত হয়েছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধে।

ফিতনা সৃষ্টিকারীদের কারণেই মুসলিম উম্মাহ আজ বিভক্ত ও শক্তিহীন। মুসলিম বিশ্বে সে ফেতনা সৃষ্টিকারীরা হলো জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, বর্ণবাদী ও রাজতন্ত্রী অপশক্তি। এরা মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও ইজ্জত নিয়ে ভাবে না, তাড়না শুধু নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার নিয়ে। তারা যেমন গণহত্যা ঘটিয়ে মুসলিমের দেহ কর্তন করে, তেমনি কর্তন করে মুসলিম উম্মাহর ভূ-রাজনৈতিক দেহ তথা অবকাঠামোকে। মুসলিম উম্মাহ আজ ৫০টির বেশী টুকরোয় বিভক্ত বস্তুত তাদের কারণেই। ফিতনা সৃষ্টিকারীরাই মূলত বিদয়াত সৃষ্টিকারী। এদের বিদ’য়াত যেমন মুসলিম ভূ-খণ্ডের বিভক্তি, তেমনি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ ও রাজতন্ত্র। এরা দূষণ ঘটায় মুসলিমদের আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইবাদতে এবং নিয়ন্ত্রণ করে ইসলামের বয়ান ও কুর’আন-হাদীস থেকে শিক্ষাদানকে। এভাবেই দূরে সরায় সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে। এদের গড়া প্রবল ফিতনা দেখা গেছে যেমন একাত্তরে, তেমনি দেখা গেছে একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে। 

মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে গুরুতর অপরাধ হলো, কোন একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা।  পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, একজন নিরপরাধ মানুষ যে হত্যা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলো। কিন্তু এরপর তিনি সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে ফিতনা সৃষ্টিকারীদের মানব হত্যাকারীদের চেয়েও জঘন্য বলেছেন।‌ কারণ, ফিতনা সৃষ্টিকারীরা হত্যা করে ইসলামের মূল মিশন ও শিক্ষাকে। এভাবে অসম্ভব করে ইসলামের পূর্ণ পালনকে অর্থাৎ জান্নাতের পথে চলা। একাজ কোন খুনি করেনা। ফিতনার কারণেই মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়েছে বটে, কিন্তু একটি রাষ্ট্রেও নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বেঁচে নাই। বেঁচে নাই মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরীয়া বিধান। বেঁচে নাই প্যান-ইসলামী মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। এবং বেঁচে নাই দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ। জান্নাতের পথে চলা অসম্ভব করে এবং সহজতর করে জাহান্নামের পথে চলা। ফেতনা সৃষ্টিকারীদের এটিই হলো সবচেয়ে বড় নাশকতা ও অপরাধ।

 

পক্ষপাতিত্ব ঘটনার বয়ানে

একাত্তরে ইসলামী দলগুলির প্রচেষ্টা ছিল, একদিকে যেমন গণহত্যা বন্ধ করা, অপরদিকে পাকিস্তান ভাঙার নাশকতাকে রুখে দেয়া। তারা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী  গঠন করে দেশের বেসামরিক জনবসতিতে পাক সেনাদের প্রবেশকে নিয়ন্ত্রিত করেছিল। তারা ময়দানে না থাকলে পাক আর্মির হাতে আরো অনেক বাঙালি নিহত হতো। কারণ, যুদ্ধরত আর্মির সামনে যারাই খাড়া হয় তারাই তাদের কাছে শত্রু মনে হয়। ফলে প্রাণহানী ঘটে।

 

একটি হারাম কর্ম আরেকটি হারামকে জায়েজ করে না 

প্রতিটি হত্যাই নিন্দনীয় -সেটি এক জনের হোক বা হাজার জনের হোক। কোন বিবেকবান মানুষই গণহত্যার পক্ষ নিতে পারে না। তবে গণহত্যার নিন্দার ব্যাপারেও বাংলাদেশে চরম পক্ষপাতিত্ব হয়েছে। অনেকে শুধু বাঙালি হত্যার বিষয়কে সামনে তুলে এনেছে। কিন্তু বাদ  দিয়েছে অবাঙালি তথা বিহারী হত্যার বিষয়। অথচ বাঙালি হত্যার চেয়েও বহু গুণ বেশি নিহত হয়েছে বিহারীরা। প্রতিটি বিহারীর গৃহ লুট ও বেদখল হয়েছে। অথচ বাঙালিদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি।‌ কিন্তু বিহারী নির্মূলের হত্যাকাণ্ড ও তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত নৃশংস অপরাধকে নিন্দা করা হয়নি। এমন কি ইতিহাসের বইয়েও সে বিহারী গণহত্যার উল্লেখ নাই।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, গণহত্যাকে কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান ভাঙা জায়েজ কি? অনেকে পাক বাহিনীর হাতে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডকে বাহানা বানিয়ে পাকিস্তান ভাঙাকে জায়েজ করে নেয়। ইসলামে গণহত্যা যেমন হারাম; তেমনি হারাম হলো মুসলিম দেশ ভাঙা। একটি হারামকে বাহানা বানিয়ে আরেকটি হারামকে জায়েজ করা যায় না। ইসলাম সেটির অনুমতি দেয়না।; গণহত্যা হলে তার বিচার করা যায়; ক্ষতিপূরণও দেয়া যায়। কিন্তু দেশ ভেঙে গেলে সেটির ক্ষতিপূরণের রাস্তা থাকে না।  এজন্যই একাত্তরের ইসলামী দলগুলির নেতাকর্মী, আলেম, পীর মাশায়েখগণ পাকিস্তান ভাঙাকে সমর্থন করেননি। শতাধিক অধ্যাপক, লেখক, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীও পাকিস্তান ভাঙার বিরোধীতার করে বিবৃতি দিয়েছেন। সে সময় দেওবন্দী আলেমদের শীর্ষ নেতা ছিলেন মাওলানা সিদ্দিক আহমদ সাহেব। তিনি ছিলেন নিজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এবং পটিয়া মাদ্রাসার প্রধান। দেওবন্দী আলেমদের আরেক নেতা ছিলেন কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতাহার আলী সাহেব। ইনিও ছিলেন নিজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা। তারা পাকিস্তান ভাঙাকে হারাম বলতেন। কোন একটি মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করার অর্থ মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করা। তাতে কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিপন্ন হয়। আজ মুসলিম উম্মাহ শক্তিহীন হয়েছে তো মুসলিম দেশগুলো ক্ষুদ্রতর হওয়াতে। সাইক্লোন, সুনামি, মহামারি ও ভূমিকম্পে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তাতে একটি জাতির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিপন্ন হয় না। ‌কিন্তু দেশ ভেঙে গেলে জাতি স্বাধীনতা হারায় এবং শত্রুর পদদলে পরাধীন হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরব দেশ ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তো সেটিই ঘটেছে।

 

যে ক্ষতি আর পূরণের নয়

পাকিস্তান আর্মির হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ফলে মুসলিম উম্মাহ যতটা দুর্বল হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি দুর্বল হয়েছে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়াতে। এজন্যই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালা ফিতনাকে হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলেছেন। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতো ৪২ কোটির জনসংখ্যার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক রাষ্ট্র। মুসলিম উম্মাহ পেত একটি সিভিলাইজেশনাল স্টেট। তখন দেশটির থাকতো বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার সমর্থ্য। পাকিস্তান দাঁড়াতে পারতো ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও আরাকানের মজলুম মুসলিমদের পাশে। রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে পাকিস্তানের চালকে আসনে থাকতো বাঙালি মুসলিমগণ।

ফলে একাত্তরের ফিতনার নাশকতায় শুধু পশ্চিম পাকিস্তানীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলিমগণও। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র ভাবনা নাই, তাদের কাছে একাত্তরের সে বিশাল নাশকতা কোন নাশকতাই নয়। তারা বরং সে নাশকতা নিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাথে ১৬ ডিসেম্বর এলে উৎসব করে।  

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

আত্মঘাতী নাশকতা নিয়ে বাঙালি মুসলিমের উৎসব

Update Time : ০৪:৫৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

———-ফিরোজ মাহবুব কামাল

বাঙালি ফ্যাসিস্টদের ফিতনা ও নাশকতা

একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ, ভোটডাকাতি, গণতন্ত্রের কবর, ভারতীয় লুট, ১৯৭৪’য়ের দুর্ভিক্ষ, গুম-খুন-ফাঁসি, আয়নাঘর, বারংবার গণহত্যার ন্যায় একাত্তর পরবর্তী গুরুতর বিপর্যয়গুলি বুঝতে হলে প্রথমে আওয়ামী বাঙালি ফ্যাসিস্টদের ফিতনার ভয়াবহ নীল নকশাটি বুঝতে হবে। ফিতনা হলো এক ভয়ংকর নাশকতার কাণ্ড। সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলেছেন। ফিতনার নাশকতাটি মুসলিম উম্মাহর সংহতি, সম্পৃতি ও ভূ-রাজনৈতিক ঐক্যের বিরুদ্ধে। শয়তানের এজেন্ডাই তাদের এজেন্ডা। মুসলিম ভূমিতে এরা বিজয় আনে শয়তানের খলিফাদের -যেমন পৌত্তলিক খলিফাদের বিজয় এনেছিল একাত্তরে। ফিতনা অসম্ভব করে পূর্ণ ইসলাম পালন। এবং অসম্ভব করে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্ম হওয়া। ফিতনার নাশকতটি সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। ফিতনার ফলে জন্ম দেয় সংঘাত, হানাহানী ও রক্তারক্তি পূর্ণ এক অস্থির পরিস্থিতি। ফিতনা হলো ফ্যাসিস্টদের হাতিয়ার। একাত্তরে বাঙালি ফ্যাসিস্টগণ এমন এক ফিতনাকে স্বাধীনতার যুদ্ধের নাম দিয়েছিল। ফিতনার নাশকতা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন হলো, ফিতনার শুরু কি ভাবে? ফিতনার শুরু ভাষা, বর্ণ, গোত্র,ফেরকা, শ্রেণী ইত্যাদি পরিচয় ভিত্তিক নাশকতার ফ্যাসিবাদী উম্মাদনা থেকে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব মাতৃভাষা থাকে। সে মাতৃভাষা হতে পারে একটি স্থানীয় ভাষা। কিন্তু যখন সে স্থানীয় ভাষাকে মুসলিম উম্মাহর মাঝে আঞ্চলিকতাবাদী বা জাতীয়তাবাদী বিভক্তি নির্মাণের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা হয় -তখনই সেটি ফিতনায় পরিণত হয়। বাংলা ভাষাকে ফিতনার হাতিয়ার বানিয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্টরা। সে ফিতনার শেষ পরিণতি হলো ১৯৭১’য়ের পাকিস্তানের বিভক্তি। তাতে বাংলাদেশ পরিণত হলো ভারতের পদতলে এক অধিকৃত রাষ্ট্রে। বাংলাদেশীদের এখনো বাঁচতে হয় ভারত ভীতি নিয়ে।

আল্লামা মহম্মদ ইকবাল ও কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্নাহ -উভয়েরই মাতৃভাষা ছিল। আল্লামা ইকবালের মাতৃভাষা ছিল পাঞ্জাবী, এবং জিন্নাহর মাতৃভাষা ছিল গুজরাতী। কিন্তু তারা নিজেদের স্থানীয় ভাষাকে বিভক্তির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার না করে পক্ষ নেন ভারতীয় মুসলিমদের আন্তর্জাতিক ভাষা উর্দুর। তাদের লক্ষ্য ছিল মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও সম্পৃতি। উর্দু ছিল ভারতের যে কোন ভাষার চেয়ে সমৃদ্ধ। মানুষে মানুষে বিভক্তি মানেই ফিতনা -যা বাধাগ্রস্ত করে ঐক্যবদ্ধ উম্মাহ রূপে বেড়ে উঠাকে। ফিতনা কেন গুরুতর অপরাধ -সেটি আজকের মুসলিমদের বর্তমান বিপর্যয়ের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বুঝা যায়।

ঈমানদারের দায় হলো, তাকে সর্বদা একতার সূত্র খুঁজতে হয় এবং সযত্নে দূরে থাকতে হয় বিভক্তি থেকে। সে দায়বোধ দেখা গেছে আল্লামা মহম্মদ ইকবাল ও কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্নাহর মাঝে। তাই তারা উর্দুকে বেছে নিয়েছেন। একই কারণে ভারতীয় হিন্দুরা বেছে নিয়েছে হিন্দিকে। কিন্তু বাঙালি মুসলিমদের কাছে আল্লামা ইকবাল ও মহম্মদ আলী জিন্নাহর আন্তর্জাতিকতা ভাল লাগেনি। ভাল লাগেনি তাদের ঐক্যের চেতনাও। মুসলিম উম্মাহর একতা, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার চেয়ে তাদের কাছে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে নিজেদের স্থানীয় ভাষার পরিচয় নিয়ে বাঁচার গর্ব। নিজেদের স্থানীয় ভাষা বাংলাকে তারা পাকিস্তান ভাঙার কাজে ফিতনা সৃষ্টির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে। তাদের সে ফিতনার রাজনীতিকে বিজয়ী করতে একাত্তরের ৩রা ডিসেম্বরে বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় হিন্দুত্ববাদী ভারত; সে যুদ্ধে ভারত সফল হয় পাকিস্তান ভাঙার মধ্য দিয়ে।                                                                                                                                            

 

সবচেয়ে বড় নিয়ামত এবং সবচেয়ে বড় ফিতনা

ফিতনার লক্ষ্য, মহান আল্লাহ তায়ালার যা চান -সেটিকে অসম্ভব করা। যুদ্ধ এখানে মহার রব’য়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, ভাষা, বর্ণ, ফেরকা, মজহাব ও আঞ্চলিক পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে ঈমানদারগণ ঐক্যবদ্ধ হোক। তিনি চান, মুসলিমগণ শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণ করে নিজেদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করুক। কারণ, তিনি চান মুসলিমদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা। আর সেগুলি নিশ্চিত করায় শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিকল্প নাই। এজন্যই নবীজী (সা:) শুধু ঈমানদার মানুষ গড়ার কাজ করেননি, বিশাল রাষ্ট্র গড়ার কাজও করেছিলেন। সে রাষ্ট্র পরবর্তীতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র ও বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়।

বিশাল রাষ্ট্রই হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এ নিয়ামতটি না থাকলে বিপুল সংখ্যায় মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ করেও মুসলিমদের ইজ্জত, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বাঁচেনা। আজ কি মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা কম? পরিতাপে বিষয় হলো, সে নিয়ামতটি বিলুপ্ত হওয়ায় ১৫০ কোটির বেশী মুসলিম আজ পিতৃহারা শিশুর মত। গাজা, কাশ্মীর, আরাকানের মজলুম মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। ইন্তেকালের সময় নবীজী (সা:) যে রাষ্ট্রটি ছেড়ে যান তা ছিল বাংলাদেশের চেয়ে ১৫ গুণের চেয়ে বৃহৎ। কিন্তু সেটিও আজ ভেঙে সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, আমিরাত, কাতার, বাহরাইন -এ ৬টি রাষ্ট্রে বিভক্ত। নিয়ামতের যারা এভাবে খেয়ানত করে তারা কি কখনো কল্যাণ পায়? মুসলিমদের জন্য বৃহৎ রাষ্ট্র নির্মাণের গুরুত্ব বুঝাতে মহান রব ভৌগলিক বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন।

মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা হলো ভৌগলিক বিভক্তি। অথচ ১৯৭১’য়ে বিভক্তির সে ফিতনাকে বেছে নিয়েছিল বাঙালি মুসলিমগণ। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এটি হলো বাঙালি মুসলিমদের বড় নাশকতা -যার নেতৃত্ব দিয়েছিল ভারতীয় আগরতলা ষড়যন্ত্রের সহযোগী শেখ মুজিব। ১৯১৭ সালে সে অভিন্ন ফিতনার পথটি বেছে নেয় আরব মুসলিমগণ; ফলে ৪০ কোটি আরব আজ ২২টি আরব রাষ্ট্রে বিভক্ত। আরবগণ মুসলিমগণ এখন ভুগছে ভৌগলিক বিভক্তির প্রতিশ্রুত আযাব -যার প্রতিশ্রুতি শোনানো হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। বিভক্তি আরবদের এতোটাই দুর্বল করেছে যে ৬০ লাখ ইসরাইলী ইহুদীর হাতে তারা লাগাতর মার খাচ্ছে। ইসরাইল এখন আরব দেশগুলির যেখানে সেখানে ইচ্ছামত বোমা ফেলছে। সে ইসরাইলী হামলা ৪০ কোটি আরব নীরবে সইছে; কোন আরব রাষ্ট্রের সামর্থ্য নাই ইসরাইলী হামলার প্রতিরোধে খাড়া হওয়ার। আরবদের জানমাল, ইজ্জত, আবরুর নিরাপত্তা এখন ইসরাইলীদের দয়ার উপর।

 

স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভিক্ষার বিষয় নয়

ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের হাতে সম্পদ পাহাড় থাকার অর্থ ডাকাত দলকে আমন্ত্রণ করা। এর প্রমাণ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরব দেশগুলি। বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী এদেশগুলির কোন নিরাপত্তা নাই। মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে কাতার বিশ্বেব সেরা। কিন্তু সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাকাত রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় ঘাঁটি সেখানেই। অথচ কয়েক দিন আগে (৯ সেপ্টম্বর, ২০২৫) সেখানে ইসরাইল মিজাইল নিক্ষেপ করে ৬ জনকে হত্যা করেছে এবং ৪ জনকে আহত করেছে। হামলার জবাবে কাতার ইসরাইলের  দিকে একটি পাথর ছুড়ার সাহসও দেখাতে পারিনি। সে সামর্থ্যও কাতারের নাই। তাছাড়া ইসরাইলের উপর হামলার অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলা। সেটি ইরান সম্প্রতি বুঝেঝে।

ইসরাইল যদি কাতারের রাজ প্রাসাদের উপর বোমা বর্ষণ করে তবুও কি কাতার জবাব দিতে পারবে? কাতারের প্রধানমন্ত্রী অসহায়ের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে নিজেদের গদীর নিরাপত্তা ভিক্ষা করতে।  কিন্তু নিরাপত্তা কি পাবে? বুঝতে হবে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভিক্ষার বিষয় নয়, সেটি নিজ সামর্থ্যে অর্জনের বিষয়। সে সামর্থ্য না থাকলে গোলাম ও অপমান নিয়ে বাঁচতে হয়।  সে গোলামী ও অপমান শুধু কাতারের রাজ পরিবারে নয়, সমগ্র আরবদের। বুঝতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মদদপুষ্ট ইসরাইল। কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি থাকলেও সে বিমান ঘাঁটির কাজ কাতারের নিরাপত্তা দেয়া নয়। বরং সে ঘাঁটিটি নির্মিত হয়েছে ইসরাইল ও মার্কিনীদের স্বার্থ পাহারা দিতে।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্বে সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজ মাস্তান রাষ্ট্র। শাসকদের গদীর নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরব, কাতার, আমিরাত, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনের ন্যায় তেল সমৃদ্ধ দেশ থেকে প্রতিবছর শত শত বিলিয়ন ডলার চাঁদা সংগ্রহ করেছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতা হলো, ইসারাইলকে দিয়েছে কাতারের উপর হামলার অনুমতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ  হলো ইসরাইলের স্বার্থকে পাহারা দেয়া; কাতার, সৌদি আরব, আমিরাত বা অন্য কোন আরব রাষ্ট্রের স্বার্থ তার কাছে গুরুত্বহীন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে শক্তিশালী ইসরাইলী লবিস্ট প্রতিষ্ঠান; তাদের কথা শুনে চলে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ কংগ্রেস সদস্যগণ। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মেনে চলতে হয় কংগ্রেস সদস্যদের মতামতকে।

ইসরাইল জানিয়ে দিয়েছে যেখানেই হামাস নেতাদের উপস্থিতি দেখবে, সেখানেই হামলা করবে। ঘোষণা দিয়েছে প্রয়োজনে কাতারের উপর আবার হামলা করবে। সামরিক দিক দিয়ে ইসরাইল হলো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। ইসরাইলকে রুখবার সামর্থ্য কারো নাই। সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরান, তিউনিসিয়াসহ যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ইসরাইল হামলা করেছে। ইসরাইলের জন্মই অবৈধ। মার্কিনীদের মদদে ইচ্ছামত সীমানা বাড়িয়ে চলেছে।  ইসরাইল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আরবদের বিভক্তির কারণে। বিভক্তদের মহান আল্লাহ তায়ালা এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে  Two-state solution  প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। অথচ ইসরাইল জানিয়ে দিয়েছে তারা ফিলিস্তিন নামে কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিবেনা। আরো বলেছে ফিলিস্তিন একমাত্র ইহুদীদের। ফিলিস্তিনীদের জন্য ইসরাইল একটি মাত্র সমাধান পেশ করা হয়েছে; তা হলো ফিলিস্তিন থেকে নির্মূল।            

প্রশ্ন হলো, আজ ফিলিস্তিনসহ আরব বিশ্বে যা কিছু ঘটছে -তা বাংলাদেশের জন্য অতি শিক্ষণীয়। একই অবস্থা হতে পারে বাংলাদেশেরও। কারণ, ভারত হলো আরেক ইসরাইল। ১৯৪৭ সালে জন্ম থেকে ভারত তার সামরিক শক্তির জোরে ভূগোল বাড়িয়েই চলেছে। ফলে ভারতে হাতে অধিকৃত হয়েছে হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদড় ও কাশ্মীর। এ বিশ্বে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। শাসন একমাত্র তারই যার শক্তি আছে। দুর্বলকে তাই পরাধীনতা না মেনে উপায় থাকে না। এজন্যই যা কিছু মুসলিমদের দুর্বল করে -সেটিকে মহান আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন। এবং যা কিছু মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করে সেটিকে ফরজ করেছেন। এজন্যই ইসলামে বিভক্তি হারাম এবং ফরজ হলো একতা ও মুসলিম রাষ্ট্রের ভূগোলকে প্রতিরক্ষা দেয়া। এবং হারাম হলো মুসলিম রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্রতর করার প্রতিটি যুদ্ধ। অথচ একাত্তরে সে হারাম যুদ্ধের পথকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। 

 

দেশ ভাঙার ফিতনা কখনোই স্বাধীনতার যুদ্ধ হয় না

কিন্তু ফিতনার নায়কদের কাছে মুসলিম উম্মাহর একতা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত কখনো ভাল লাগেনা। ভাষা, বর্ণ ইত্যাদি নানা পরিচয়ে তারা বিভক্তি চায়। তাদের কারণে মুসলিম বিশ্ব টুকরো টুকরো হয়েছে ও শক্তিহীন হয়েছে। এবং হারিয়েছে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা। এরা জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরায় এবং তাদেরকে জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী ও বর্ণবাদী রূপে গড়ে তোলে। তারা মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে মুসলিমদের যুদ্ধে খাড়া করে। ১৯১৭ সালে এরা যেমন কাফির ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে উসমানিয়া খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তেমনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভাঙতে ভারতের পৌত্তলিক বাহিনীর সাথে মিলে যুদ্ধ করেছে। তাদের এজেন্ডা হলো, শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। উসমানিয়া খেলাফত ভেঙে গেছে, ইসরাইল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং পাকিস্তান খণ্ডিত হয়েছে বস্তুত ফিতনা সৃষ্টিকারীদের ফেতনা বিজয়ী হওয়াতে। তাই একাত্তরের যুদ্ধকে স্বাধীনতার যুদ্ধ বললে ভারতের সেবাদাস বাঙালি ফ্যাসিস্টদের সৃষ্ট ফিতনা এবং পৌত্তলিক ভারতের বিজয়কে মহামান্বিত করা হয়। তাতে খুশি হয় শয়তান এবং আযাব অনিবার্য হয় মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে।      

গণহত্যা নানা দেশে, নানা ভাবে ও নানা সময়ে ঘটেছে। বাংলাদেশে গণহত্যা যেমন শেখ হাসিনার আমলে বার বার ঘটেছে। তেমনি মুজিবের আমলেও ঘটেছে। গণহত্যা বার বার ঘটছে ভারতে। সেটি যেমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে, তেমনি খৃষ্টান, শিখ, আদিবাসী এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। বার বার গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়াসহ পৃথিবীর বহু দেশে। উমাইয়া, আব্বাসিয়া ও উসমানিয়া খেলাফতের আমলেও গণহত্যার কাণ্ড ঘটেছে। যখন কোন একটি বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাষা, গোত্র, দল ও বর্ণ ভিত্তিক পরিচয়ের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয় -আন্তর্জাতিক আইনে সেটিই হলো গণহত্যা। বাঙালি পরিচয়ের কারণে হত্যা করা হলে যেমন গণহত্যা; তেমনি বিহারী বা ইসলামী পরিচয়ের কারণে কাউকে বিনা বিচার হত্যা করা হলে সেটিও বিশুদ্ধ গণহত্যা। একাত্তরে বাঙালি ও বিহারীদের যেভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে সেটি ছিল গণহত্যা। হাসিনার আমলে ২০০৯ সালে পিলখানায় সেনাদের এবং ২০১৩সালে শাপলা চত্বরের মুসল্লিদের যেভাবে হত্যা করা হলো -সেটিও ছিল গণহত্যা। তেমনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ছাত্রদের যেভাবে হত্যা করা হলো -সেটিও ছিল text book case of genocide তথা নির্ভেজাল গণহত্য।

 

ফিতনা কেন মানব হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়। তবে ফিতনাকে কেন সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর’আনে সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে মানব হত্যার চেয়েও জঘন্যতম অপরাধ বললেন -সেটি গভীর ভাবে ভাববার বিষয়। বিষয়টি গবেষণার বিষয়ও। ফিতনার নাশকতা গভীর, বহুমুখী ও সর্বনাশী। গণহত্যার লক্ষ্য, কিছু মানুষকে এ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে নির্মূল করা। কিন্তু সে হত্যাকাণ্ডের নায়কদের লক্ষ্য কখনোই কাউকে জাহান্নামে নেয়া নয়। কিন্তু জাহান্নামে নেয় ফিতনা সৃষ্টিকারীরা। কারণ, তাদের যুদ্ধ মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা বিরুদ্ধে। ফিতনা মাত্রই শয়তানের এজেন্ডা; লক্ষ্য, মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন। জাতি ধ্বংস হয় মানুষের চেতনা-চরিত্র ধ্বংসের কারণে। বিপুল সংখ্যায় প্রাণনাশ ঘটে সুনামী, ভূমিকম্প, মহামারী, সাইক্লোনে। কিন্তু তাতে একটি দেশ বা সভ্যতা ধ্বংস হয় না। কারণ সেগুলি মানুষের চেতনা, চরিত্র, ঈমান, আক্বীদা ধ্বংস করে না। 

ফিতনার নায়কগণ শুধু মানব গণহত্যায় থেমে থাকে না। একাত্তরে এদের হাতে শুধু লক্ষাধিক বিহারী এবং হাজার হাজার পাকিস্তানপন্থী রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা নিহত হয়নি। তারা বরং প্রচণ্ড নাশকতা ঘটিয়েছে বাংলাদেশীদের ঈমান, আক্বীদা, আমল, চরিত্র, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষেত্রেও। তারা প্লাবন এনেছে অশ্লিলতা, গুম, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার মার্কেট লুট, ফাঁসি ও আয়না ঘরের সংস্কৃতিতে। হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী ও চোর-ডাকাত হওয়ার পাশাপাশি তারা জনগণকে বাধা দিয়েছে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলায়। শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা এবং তাদের অনুসারীরা শুধু গণনিপীড়ন ও গণহত্যাই চালায়নি, অসম্ভব করেছিল পূর্ণ ইসলাম পালন ও ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠা। ঘরে জিহাদ বিষয়ক বই রাখা, ওয়াজের মাহফিল করা, কুর’আনের তাফসীর করা, মিডিয়ায় ইসলামের পক্ষে কথা বলা, শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী তোলা, ইসলামের নামে সংঘটিত হওয়া  -এগুলি মুজিব যেমন নিষিদ্ধ করেছিল, তেমনি হাসিনাও নিষিদ্ধ করেছিল। ইসলামের পক্ষে এরূপ কর্মগুলি পরিণত হয়েছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধে।

ফিতনা সৃষ্টিকারীদের কারণেই মুসলিম উম্মাহ আজ বিভক্ত ও শক্তিহীন। মুসলিম বিশ্বে সে ফেতনা সৃষ্টিকারীরা হলো জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, বর্ণবাদী ও রাজতন্ত্রী অপশক্তি। এরা মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও ইজ্জত নিয়ে ভাবে না, তাড়না শুধু নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার নিয়ে। তারা যেমন গণহত্যা ঘটিয়ে মুসলিমের দেহ কর্তন করে, তেমনি কর্তন করে মুসলিম উম্মাহর ভূ-রাজনৈতিক দেহ তথা অবকাঠামোকে। মুসলিম উম্মাহ আজ ৫০টির বেশী টুকরোয় বিভক্ত বস্তুত তাদের কারণেই। ফিতনা সৃষ্টিকারীরাই মূলত বিদয়াত সৃষ্টিকারী। এদের বিদ’য়াত যেমন মুসলিম ভূ-খণ্ডের বিভক্তি, তেমনি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ ও রাজতন্ত্র। এরা দূষণ ঘটায় মুসলিমদের আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইবাদতে এবং নিয়ন্ত্রণ করে ইসলামের বয়ান ও কুর’আন-হাদীস থেকে শিক্ষাদানকে। এভাবেই দূরে সরায় সিরাতাল মুস্তাকীম থেকে। এদের গড়া প্রবল ফিতনা দেখা গেছে যেমন একাত্তরে, তেমনি দেখা গেছে একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে। 

মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে গুরুতর অপরাধ হলো, কোন একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা।  পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, একজন নিরপরাধ মানুষ যে হত্যা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলো। কিন্তু এরপর তিনি সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে ফিতনা সৃষ্টিকারীদের মানব হত্যাকারীদের চেয়েও জঘন্য বলেছেন।‌ কারণ, ফিতনা সৃষ্টিকারীরা হত্যা করে ইসলামের মূল মিশন ও শিক্ষাকে। এভাবে অসম্ভব করে ইসলামের পূর্ণ পালনকে অর্থাৎ জান্নাতের পথে চলা। একাজ কোন খুনি করেনা। ফিতনার কারণেই মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়েছে বটে, কিন্তু একটি রাষ্ট্রেও নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বেঁচে নাই। বেঁচে নাই মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরীয়া বিধান। বেঁচে নাই প্যান-ইসলামী মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। এবং বেঁচে নাই দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ। জান্নাতের পথে চলা অসম্ভব করে এবং সহজতর করে জাহান্নামের পথে চলা। ফেতনা সৃষ্টিকারীদের এটিই হলো সবচেয়ে বড় নাশকতা ও অপরাধ।

 

পক্ষপাতিত্ব ঘটনার বয়ানে

একাত্তরে ইসলামী দলগুলির প্রচেষ্টা ছিল, একদিকে যেমন গণহত্যা বন্ধ করা, অপরদিকে পাকিস্তান ভাঙার নাশকতাকে রুখে দেয়া। তারা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী  গঠন করে দেশের বেসামরিক জনবসতিতে পাক সেনাদের প্রবেশকে নিয়ন্ত্রিত করেছিল। তারা ময়দানে না থাকলে পাক আর্মির হাতে আরো অনেক বাঙালি নিহত হতো। কারণ, যুদ্ধরত আর্মির সামনে যারাই খাড়া হয় তারাই তাদের কাছে শত্রু মনে হয়। ফলে প্রাণহানী ঘটে।

 

একটি হারাম কর্ম আরেকটি হারামকে জায়েজ করে না 

প্রতিটি হত্যাই নিন্দনীয় -সেটি এক জনের হোক বা হাজার জনের হোক। কোন বিবেকবান মানুষই গণহত্যার পক্ষ নিতে পারে না। তবে গণহত্যার নিন্দার ব্যাপারেও বাংলাদেশে চরম পক্ষপাতিত্ব হয়েছে। অনেকে শুধু বাঙালি হত্যার বিষয়কে সামনে তুলে এনেছে। কিন্তু বাদ  দিয়েছে অবাঙালি তথা বিহারী হত্যার বিষয়। অথচ বাঙালি হত্যার চেয়েও বহু গুণ বেশি নিহত হয়েছে বিহারীরা। প্রতিটি বিহারীর গৃহ লুট ও বেদখল হয়েছে। অথচ বাঙালিদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি।‌ কিন্তু বিহারী নির্মূলের হত্যাকাণ্ড ও তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত নৃশংস অপরাধকে নিন্দা করা হয়নি। এমন কি ইতিহাসের বইয়েও সে বিহারী গণহত্যার উল্লেখ নাই।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, গণহত্যাকে কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান ভাঙা জায়েজ কি? অনেকে পাক বাহিনীর হাতে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডকে বাহানা বানিয়ে পাকিস্তান ভাঙাকে জায়েজ করে নেয়। ইসলামে গণহত্যা যেমন হারাম; তেমনি হারাম হলো মুসলিম দেশ ভাঙা। একটি হারামকে বাহানা বানিয়ে আরেকটি হারামকে জায়েজ করা যায় না। ইসলাম সেটির অনুমতি দেয়না।; গণহত্যা হলে তার বিচার করা যায়; ক্ষতিপূরণও দেয়া যায়। কিন্তু দেশ ভেঙে গেলে সেটির ক্ষতিপূরণের রাস্তা থাকে না।  এজন্যই একাত্তরের ইসলামী দলগুলির নেতাকর্মী, আলেম, পীর মাশায়েখগণ পাকিস্তান ভাঙাকে সমর্থন করেননি। শতাধিক অধ্যাপক, লেখক, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীও পাকিস্তান ভাঙার বিরোধীতার করে বিবৃতি দিয়েছেন। সে সময় দেওবন্দী আলেমদের শীর্ষ নেতা ছিলেন মাওলানা সিদ্দিক আহমদ সাহেব। তিনি ছিলেন নিজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এবং পটিয়া মাদ্রাসার প্রধান। দেওবন্দী আলেমদের আরেক নেতা ছিলেন কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতাহার আলী সাহেব। ইনিও ছিলেন নিজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা। তারা পাকিস্তান ভাঙাকে হারাম বলতেন। কোন একটি মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করার অর্থ মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করা। তাতে কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিপন্ন হয়। আজ মুসলিম উম্মাহ শক্তিহীন হয়েছে তো মুসলিম দেশগুলো ক্ষুদ্রতর হওয়াতে। সাইক্লোন, সুনামি, মহামারি ও ভূমিকম্পে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তাতে একটি জাতির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিপন্ন হয় না। ‌কিন্তু দেশ ভেঙে গেলে জাতি স্বাধীনতা হারায় এবং শত্রুর পদদলে পরাধীন হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরব দেশ ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তো সেটিই ঘটেছে।

 

যে ক্ষতি আর পূরণের নয়

পাকিস্তান আর্মির হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ফলে মুসলিম উম্মাহ যতটা দুর্বল হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি দুর্বল হয়েছে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়াতে। এজন্যই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ তায়ালা ফিতনাকে হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ বলেছেন। অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতো ৪২ কোটির জনসংখ্যার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক রাষ্ট্র। মুসলিম উম্মাহ পেত একটি সিভিলাইজেশনাল স্টেট। তখন দেশটির থাকতো বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার সমর্থ্য। পাকিস্তান দাঁড়াতে পারতো ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও আরাকানের মজলুম মুসলিমদের পাশে। রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে পাকিস্তানের চালকে আসনে থাকতো বাঙালি মুসলিমগণ।

ফলে একাত্তরের ফিতনার নাশকতায় শুধু পশ্চিম পাকিস্তানীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলিমগণও। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র ভাবনা নাই, তাদের কাছে একাত্তরের সে বিশাল নাশকতা কোন নাশকতাই নয়। তারা বরং সে নাশকতা নিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাথে ১৬ ডিসেম্বর এলে উৎসব করে।