১১:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিপলস টিভি ৬

আঁধার কাটুক নৈতিক আলোয়: জনগণ থেকেই আসুক সুস্থ রাজনীতির সূর্যোদয়

Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১১৮ Time View
আনিছুর রহমান 
নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম):
আমরা প্রায়শই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ হই এবং একজন ভালো নেতার অভাব বোধ করি। কিন্তু একটি গভীর সত্য হলো, রাজনীতিবিদরা আকাশ থেকে পড়েন না; তারা আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। তারা আমাদের মধ্য থেকেই উঠে আসেন। তাই, রাজনীতিতে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে হলে কেবল রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা না করে, আমাদের নিজেদের নৈতিকতা ও মানসিকতার উন্নতির দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
সমাজ ও রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনীতি সমাজের মূল্যবোধ, আদর্শ এবং আচরণেরই প্রতিফলন। যখন একটি সমাজে দুর্নীতি, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা এবং অনৈতিকতা প্রাধান্য পায়, তখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একজন রাজনীতিবিদ তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই তার মূল্যবোধ ও আদর্শ গ্রহণ করেন। ভালো নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রথম সুযোগটি আসে জনগণের হাতে—ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু যখন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর চেয়ে টাকা, ক্ষমতা বা ব্যক্তিগত সুবিধা দেখে ভোট দেওয়া হয়, তখন অযোগ্য ও অসৎ রাজনীতিবিদরাই জিতে যান।
এই ধরনের ভোটের সংস্কৃতি সৎ প্রার্থীদের রাজনীতিতে আসা কঠিন করে তোলে এবং অসৎদের উৎসাহিত করে। যখন সমাজে দুর্নীতিবাজদের প্রতি এক ধরনের নীরব সমর্থন থাকে, তখন রাজনৈতিক নেতারা অনৈতিক কাজ করতে ভয় পান না। কারণ তারা জানেন, সমাজ তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো কঠোর সমালোচনা বা প্রতিবাদ করবে না।
id
অনেক সময় আমরা নিজেরাই নিজেদের সুবিধা পেতে অনৈতিক পথ অবলম্বন করি, যেমন সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দেওয়া। রাজনীতিবিদরা জনগণের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করেন। তাই, রাজনীতির মূল পরিবর্তনের জন্য জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন অপরিহার্য। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, কিন্তু এর সুফল স্থায়ী। প্রতিটি নাগরিককে প্রথমে নিজেদের জীবনে সততা ও নৈতিকতার চর্চা করতে হবে।
এটি ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু হতে পারে, যেমন ট্রাফিক আইন মেনে চলা, সঠিকভাবে কর প্রদান করা, বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। যখন ব্যক্তিগত সততা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়বে, তখন তা একটি সম্মিলিত শক্তি তৈরি করবে।
আমাদেরকে কেবল ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ বা অর্থ উপার্জনের চিন্তা না করে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য চিন্তা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। যখন একটি সমাজ উন্নত চিন্তার অধিকারী হয়, তখন তারা সৎ, যোগ্য এবং দূরদর্শী নেতৃত্বকে বেছে নিতে আগ্রহী হয়।
যদি জনগণ তাদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সৎ নেতৃত্বকে উৎসাহিত করে, তাহলে রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। জনগণ যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, তখন রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন। জনগণের এই পরিবর্তিত মানসিকতা ও চাপ বর্তমান রাজনীতিবিদদের নিজেদের আচরণের পরিবর্তন করতে বাধ্য করবে। কারণ, তারা বুঝবেন যে অসৎ ও অনৈতিকভাবে আর টিকে থাকা সম্ভব নয়।  যদি বর্তমান রাজনীতিবিদরা পরিবর্তন না হন, তবে নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং জনকল্যাণমুখী নেতৃত্ব উঠে আসবে। এই নতুন নেতৃত্ব সমাজের উন্নত মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি হবে।
রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ভুল। এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মূল চাবিকাঠি জনগণের হাতে। যখন জনগণ নিজেদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা এবং উন্নত চিন্তার বিকাশ ঘটাবে, তখন রাজনীতি আপনা-আপনিই ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, কোনো সমাজই তার জনগণের চেয়ে ভালো বা খারাপ হতে পারে না।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thedailysarkar@gmail.com

About Author Information

আঁধার কাটুক নৈতিক আলোয়: জনগণ থেকেই আসুক সুস্থ রাজনীতির সূর্যোদয়

Update Time : ১১:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
আনিছুর রহমান 
নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম):
আমরা প্রায়শই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ হই এবং একজন ভালো নেতার অভাব বোধ করি। কিন্তু একটি গভীর সত্য হলো, রাজনীতিবিদরা আকাশ থেকে পড়েন না; তারা আমাদের সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। তারা আমাদের মধ্য থেকেই উঠে আসেন। তাই, রাজনীতিতে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে হলে কেবল রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা না করে, আমাদের নিজেদের নৈতিকতা ও মানসিকতার উন্নতির দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
সমাজ ও রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনীতি সমাজের মূল্যবোধ, আদর্শ এবং আচরণেরই প্রতিফলন। যখন একটি সমাজে দুর্নীতি, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা এবং অনৈতিকতা প্রাধান্য পায়, তখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একজন রাজনীতিবিদ তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই তার মূল্যবোধ ও আদর্শ গ্রহণ করেন। ভালো নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রথম সুযোগটি আসে জনগণের হাতে—ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু যখন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর চেয়ে টাকা, ক্ষমতা বা ব্যক্তিগত সুবিধা দেখে ভোট দেওয়া হয়, তখন অযোগ্য ও অসৎ রাজনীতিবিদরাই জিতে যান।
এই ধরনের ভোটের সংস্কৃতি সৎ প্রার্থীদের রাজনীতিতে আসা কঠিন করে তোলে এবং অসৎদের উৎসাহিত করে। যখন সমাজে দুর্নীতিবাজদের প্রতি এক ধরনের নীরব সমর্থন থাকে, তখন রাজনৈতিক নেতারা অনৈতিক কাজ করতে ভয় পান না। কারণ তারা জানেন, সমাজ তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো কঠোর সমালোচনা বা প্রতিবাদ করবে না।
id
অনেক সময় আমরা নিজেরাই নিজেদের সুবিধা পেতে অনৈতিক পথ অবলম্বন করি, যেমন সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দেওয়া। রাজনীতিবিদরা জনগণের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করেন। তাই, রাজনীতির মূল পরিবর্তনের জন্য জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন অপরিহার্য। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, কিন্তু এর সুফল স্থায়ী। প্রতিটি নাগরিককে প্রথমে নিজেদের জীবনে সততা ও নৈতিকতার চর্চা করতে হবে।
এটি ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু হতে পারে, যেমন ট্রাফিক আইন মেনে চলা, সঠিকভাবে কর প্রদান করা, বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। যখন ব্যক্তিগত সততা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়বে, তখন তা একটি সম্মিলিত শক্তি তৈরি করবে।
আমাদেরকে কেবল ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ বা অর্থ উপার্জনের চিন্তা না করে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য চিন্তা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। যখন একটি সমাজ উন্নত চিন্তার অধিকারী হয়, তখন তারা সৎ, যোগ্য এবং দূরদর্শী নেতৃত্বকে বেছে নিতে আগ্রহী হয়।
যদি জনগণ তাদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সৎ নেতৃত্বকে উৎসাহিত করে, তাহলে রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। জনগণ যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, তখন রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন। জনগণের এই পরিবর্তিত মানসিকতা ও চাপ বর্তমান রাজনীতিবিদদের নিজেদের আচরণের পরিবর্তন করতে বাধ্য করবে। কারণ, তারা বুঝবেন যে অসৎ ও অনৈতিকভাবে আর টিকে থাকা সম্ভব নয়।  যদি বর্তমান রাজনীতিবিদরা পরিবর্তন না হন, তবে নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং জনকল্যাণমুখী নেতৃত্ব উঠে আসবে। এই নতুন নেতৃত্ব সমাজের উন্নত মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি হবে।
রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ভুল। এটি একটি সামগ্রিক সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মূল চাবিকাঠি জনগণের হাতে। যখন জনগণ নিজেদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা এবং উন্নত চিন্তার বিকাশ ঘটাবে, তখন রাজনীতি আপনা-আপনিই ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, কোনো সমাজই তার জনগণের চেয়ে ভালো বা খারাপ হতে পারে না।