১০:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অহংকার জ্ঞানকে নষ্ট করে, নীতিকে পুড়িয়ে দেয়, আর সম্পর্ককে গলিয়ে দেয়।

Reporter Name
- Update Time : ১১:৪৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৩ Time View

একজন মানুষ যখন অহংকারে অন্ধ হয়ে পড়ে, তখন সে শুধু নিজের পথ হারায় না বরং অন্যকেও বিভ্রান্ত করে, সম্পর্ক ধ্বংস করে, শ্রদ্ধার বাগান পুড়িয়ে দেয়। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক মারাত্মক মানসিক ব্যাধি বাসা বেঁধেছে অহংকার। এই অহংকার শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎকেও গ্রাস করতে পারে। যখন মানুষ অহংকারে অন্ধ হয়ে যায়, তখন সে আর সত্য দেখতে পারে না, শ্রদ্ধা দিতে পারে না, দায়িত্ব বুঝতে পারে না। বরং সে হয়ে ওঠে বিভ্রান্তির উৎস, সমাজবিনাশের হাতিয়ার।
অহংকার মানে নিজেকে বড় মনে করা, অন্যদের ছোট ভাবা, শ্রদ্ধা না দেখানো, এবং সত্যের সামনে চোখ বন্ধ রাখা। একজন অহংকারী মানুষ ভাবেন আমি ছাড়া সবই গৌণ আমার কথাই শেষ কথা আমি ভুল করতে পারি না। এই চিন্তা তাকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়। একদিন আমরা সবাই পৃথিবীর বুকে নাম লিখে চলে যাবো। অথচ অহংকারী মানুষ নিজের সাময়িক অবস্থান, শক্তি বা জনপ্রিয়তাকে চিরস্থায়ী মনে করে বসে।মিথ্যা অহংকার থেকে জন্ম নেয় ভুল তথ্য, গুজব, অর্ধসত্য।যখন কেউ নিজেকে অলজ্ঞানী’ ভাবে, তখন সে অন্যের মতামতকে মূল্যায়ন করে না। তার জ্ঞান হয় সীমিত, কিন্তু আত্মবিশ্বাস হয় অসীম। ফলে সে ভুল বলেও নিজের কথাকে সত্য বলে চালিয়ে দেয় এইভাবেই সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
অহংকারী মানুষ শ্রদ্ধা ভাঙে, সম্মান নষ্ট করে।
শিক্ষক, পিতা-মাতা, সিনিয়র, অভিজ্ঞ মানুষ সবাইকে সে তুচ্ছ করে। ফলে সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধার চর্চা কমে যায়। ছোটরা বড়দের ভয় করে, শ্রদ্ধা করে না। আর বড়রা নিজেদের ছোট ভাবা শুরু করে দেন।
সম্প্রীতি নষ্ট হয়, সৃষ্টি হয় বিভাজন।
অহংকারী মানুষ কখনও একতা পছন্দ করে না, কারণ সেখানে তার আধিপত্যের সুযোগ কমে যায়। তাই সে মানুষে মানুষে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে, দলের মধ্যে বিভক্তি আনে, পরিবারে দ্বন্দ্ব ছড়ায়।
ইসলামে অহংকারকে অত্যন্ত গর্হিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন. নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও গর্বিত মানুষকে পছন্দ করেন না।রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
যার অন্তরে এক তিল অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।এখানে বোঝা যায়, অহংকার শুধু নৈতিক সমস্যা নয়, বরং ঈমানের পরিপন্থী একটি রোগ।
পারস্পরিক শ্রদ্ধা একটি সমাজের ভিত্তি। যখন শিক্ষককে শ্রদ্ধা করা হয় না, বাবা-মায়ের কথা অবজ্ঞা করা হয়, সহকর্মীদের তুচ্ছ মনে করা হয়, তখনই শুরু হয় সামাজিক অবক্ষয়।
একটি পরিবার টিকে থাকে শ্রদ্ধা ও সহনশীলতায়। একটি প্রতিষ্ঠান চলে শ্রদ্ধা ও শৃঙ্খলায়। একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাও দাঁড়িয়ে থাকে বিনয়ী নেতৃত্বের উপর। অহংকার এসে যখন এই সম্পর্কগুলোতে ফাটল ধরায়, তখন আর কিছুই নিরাপদ থাকে না।
এক রাজনীতিক, যিনি মনে করেন তার সিদ্ধান্তই সঠিক, সবার সমালোচনা করলেও নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেন না তার অবক্ষয় হয় দ্রুত।এক শিক্ষার্থী, যে নিজের কিছু অর্জন দেখিয়ে শিক্ষকের অপমান করে, একসময় হারিয়ে যায় অহংকারের অন্ধকারে।
এক উদ্যোক্তা, যে কিছু সফলতা পেয়ে সবার পরামর্শ অগ্রাহ্য করে, শেষমেশ ধ্বংস হয় তারই গড়া প্রতিষ্ঠান।পরিবারে বিনয়ের শিক্ষা দিন শিশুরা যেন ছোটবেলা থেকেই শেখে বড় হওয়া মানেই অহংকারী হওয়া নয়। তাদের শেখাতে হবে, সম্মান আদায় করা নয়, দেওয়া উত্তম গুণ।
আজ যারা বিনয়ী, তারাই সমাজের শান্তির উৎস। তাদের দেখা উচিত অনুকরণীয় দৃষ্টিতে। অহংকারীকে নয়, অনুসরণ করতে হবে নম্র মানুষদের। আমাদের সবার ভেতরেই কিছু অহংকার লুকিয়ে আছে শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, কিংবা আত্মিক। আমরা কি সেই অহংকার চিনে তা ভাঙার চেষ্টা করি?মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অহংকারবিরোধী বয়ান দিন
এই বিষয়টি যেন শুধু বক্তৃতায় নয়, শিক্ষায় ও কর্মে প্রতিফলিত হয়।
একজন মানুষ যখন অহংকারে অন্ধ হয়ে পড়ে, তখন সে শুধু নিজের পথ হারায় না বরং অন্যকেও বিভ্রান্ত করে, সম্পর্ক ধ্বংস করে, শ্রদ্ধার বাগান পুড়িয়ে দেয়। অথচ, বিনয় এমন এক গুণ, যা শুধু আপন মর্যাদা বাড়ায় না, সমাজকে করে আলোকিত।
আমরা যদি একটি শ্রদ্ধাশীল, শান্তিপূর্ণ, উন্নত সমাজ চাই, তাহলে অহংকারকে বর্জন করতে হবে। নিজের ভেতরের আমি কে একটু নিচে নামিয়ে দিতে হবে, অন্যের ভালোকে স্বীকার করতে শিখতে হবে।যে বিনয়ী, সে বড় আর যে অহংকারী, সে অন্ধ।আর অন্ধের নেতৃত্বে সমাজ কোনোদিন আলোর মুখ দেখে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই কথাগুলোর উপরে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমাদের অন্তর থেকে হিংসা অহংকার দোষ মুক্ত মানুষ হিসেবে আমাদেরকে কবুল করে নিন। হে আল্লাহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের ভিতর কোন অহংকার যেন না থাকে সেই তৌফিক দান করুন। এবং বিনয়ী শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি হিসেবে আমাদেরকে কবুল করুন আমিন
লেখক ও সাংবাদিক গুলজার হানিফ
Tag :